সাহিত্য
|

প্রকাশিত: ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২১ || ০৫:০২:০১
বসন্ত এসে গেছে.
আকাশে বহিছে প্রেম,
নয়নে লাগিল নেশা.
কারা যে ডাকিল পিছে! বসন্ত এসে গেছে।
আজ ১লা ফাল্গুণ । দিন মাসের হিসেবে বসন্ত এসে গেছে। কিন্তু বসন্ত কোথায় এসেছে? প্রকৃতিতে? নাকি আমাদের মনে? ফ্যাশন হাউসগুলোতে, নাকি কেবল ফেসবুকের পাতায়?
ঢাকা শহরে ঘরে বসে বসন্ত এলে প্রকৃতিতে যে রঙের খেলার কথা মাথায় আসে সেটা কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। শীত কমে আসা ছাড়া অন্য শীতের দিনের সাথে কোনো পার্থক্যও থাকে না।
আমাদের ছোটবেলায় পলাশ ফুটলো কি না এর সাথে বসন্তের আগমনের একটা সম্পর্ক ছিলো। পলাশ ফুটেছে কী না? এই খবর রাখতে হতো স্বরস্বতীপুজার কারণে। স্কুলের, পাড়ার বাড়ির পুজায় পলাশ ফুল লাগবে। তাই বিকেলে মাঝে মাঝেই ঠাকুরমা পাঠাতো দেখে আয়তো রাস্তার ওপারের বাড়িটাতে পলাশ ফুটলো কী না? নাকি এবারও কলি দিয়েই পুজো দিতে হবে?? ওখানে গিয়ে দেখতাম পলাশ গাছে কমলা রঙা রুপ। বিকেলের রাঙা আলোর সাথে মিশে আগুনের মতো লাগছে। বুঝতাম সত্যি বসন্ত এসেছে? শুধু কী পলাশ!
আমাদের পাশের বাড়ির শিমুল গাছটা লাল। অশোকগাছটাও কমলা রঙা। আর সোনালু-পুরো গাছটাই হলুদ। সকালের রোদের সাথে মিলেমিশে একটা অবর্ণনীয় কাঁচা সোনা রঙ! শুধু কী তাই, পুকুর পাড়ের মান্দার গাছগুলোতেও কমলা-লাল-খয়েরি ফুলের সমারোহ। শীত কমে আসার আরাম আর মিষ্টি একটা হাওয়া মাঝে মাঝে। সেই হাওয়ায় ফুলের গন্ধ ভেসে আসতো বুঝতাম সতি বসন্ত এসে গেছে!
গ্রামে-মফস্বলেও আজ আর পলাশ-শিমুল-সোনালু-অশোক নেই। ওখানে এখন শুধুই কাজের গাছ মেহগনি-রেইনট্রি আর চাম্বল। সবই একরকম। রঙের বৈভব নেই। তবুতো ঢাকাশহরে এখনও বেঁচে আছে কিছু শিমুল, জারুল, পলাশ আর অশোক।
তবু বসন্ত আসবে। আসবে ফেসবুকের পাতায়। ছবিতে ভরে যাবে সবার টাইমলাইন। হলুদ, কমলা শাড়ি পরা হাসিমুখ। আমাদের ছেলে-মেয়েরা বড় হয়ে জানবে ১লা ফাল্গুণ মানে বসন্ত এসে গেছে। এবার হলুদ-কমলা শাড়ি কিনতে হবে । শাড়ি পড়ে ফেসবুকের পাতায় ছবি দিতে হবে। কারণ শিমুল-অশোক-সোনালু পলাশকে আমরা কেটে ফেলেছি। ওদের ইউটিউবে দেখে নেবে না হয়। ছবিতো আছে! আর কোকিলের কুহুতান । তাও আছে। গানগুলোও থাকবে হয়তো!
ফাগুন, হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান--
তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান--
আমার আপনহারা প্রাণ আমার বাঁধন-ছেড়া প্রাণ॥
তোমার অশোকে কিংশুকে
অলক্ষ্য রঙ লাগল আমার অকারণের সুখে,
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
বাসন্তি সাহা
কর্মসূচি পরিচালক, দর্পন, ঢাকা।