অতিরিক্ত পণ্যবাহী ট্রাক-কার্গোভ্যান ও গাড়ির অনিয়ন্ত্রিত চলাচলে যানজট

news paper

মোসা. শাহানারা খাতুন

প্রকাশিত: ৯-৯-২০২১ দুপুর ১১:৬

52Views

ঢাকা হলো বিশ্বের অন্যতম জনবহুল শহর। ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী হওয়ায় এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস-আদালত, শিল্প-কারখানা, সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়; সবই ঢাকাকেন্দ্রিক।  কর্মসংস্থানের  জন্য বিভিন্ন পেশার মানুষ ঢাকায় নিত্য বসতি স্থাপন করে। যানবাহন ও লোকসংখ্যার তুলনায় রাস্তাঘাট বাড়ছে না। অতিরিক্ত জনসংখ্যা ও যানবাহনের চাপ অপর্যাপ্ত রাস্তা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। 

যানজটের অন্যতম কারণের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো অতিরিক্ত বোঝাই মালবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যান। ১০ চাকার ট্রাক, ১২ চাকার ট্রাক, ১৮ চাকা, ২৬ চাকার গাড়িগুলো চলার নিয়ম হলো রাত ৯টার পর থেকে সকাল ৬টার মধ্যে রাজধানীর ঢাকা, গাজীপুরে  ঢুকতে হবে এবং বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় মালামাল আনলোড করতে হবে।

ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চালকদের সাথে কথা বললে জানা যায়, বাণিজ্যিক শহর চট্টগ্রাম থেকে রাজধানী ঢাকা, গাজীপুরের বিভিন্ন কারখানায় মালামাল আনা-নেয়া এবং কাঁচামাল পরিবহনসহ বাণিজ্যিক কাজে মহাসড়কে রাতভর চলাচল করতে হয়। দিনের বেলায় ঢাকা শহরে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ঢুকতে কিংবা বের হতে দেয়া হয় না। নির্দিষ্ট সময়ের আগে ঢাকা পৌঁছে মালামাল আনলোড করতে না পারলে ওই দিন শহর থেকে গাড়ি নিয়ে সন্ধ্যা ছাড়া বের হওয়া যায় না। শহরে যানজট দেখা দিলে দুই-তিন দিন রাস্তায় পড়ে থাকতে হয়।

এখন প্রশ্ন হলো- যে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান সকাল ৬টায় শহরে পৌঁছানোর কথা, সেই ট্রাক যদি ২-৩ দিন জ্যামে পড়ে থাকে এবং এই জ্যামের কারণই হলো অতিরিক্ত পণ্যবাহী  ট্রাক, কাভার্ডভ্যান। দক্ষ চালকের অভাবে সঠিক সময়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারে না বিধায় রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়।

মোটরযান আইন অনুসারে, একজন চালক একটানা ৫ ঘণ্টার বেশি ভারী যানবাহন চালাতে পারে না। তবে  দিনে ৮ ঘণ্টা এবং সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টার বেশি চালাতে দেয়া যাবে না। এজন্য যানবাহনের তুলনায় চালকের সংখ্যা বেশি থাকা জরুরি।  অথচ দেশের ৩৮ শতাংশের বেশি ভারী যানবাহনেরর চালকের কোন লাইসেন্স নাই। 

বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের ( বিআরটিএ) তথ্যমতে, ৩৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ যানবাহন চলছে ভুয়া চালক দিয়ে। বেশিরভাগ স্থানে অতিরিক্ত পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলের কারণে রাস্তায় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। বহন ক্ষমতার অতিরিক্ত পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলের কারণে ভাঙছে সড়ক ও মহাসড়ক। পণ্য পরিবহনে সরকারের এক্সেল লোড নীতিমালা থাকলেও কেউ তা মানছে না।

এক্সেল লোড নীতিমালা ২০১২-এ নির্ধারিত ওজনের চেয়ে বেশি মাল পরিবহন করলে সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। শূন্য দশমিক ১ শতাংশের বেশি পণ্য পরিবহনে এ জরিমানা দিতে হবে। ২০ শতাংশের বেশি পণ্য পরিবহনে ১২ হাজার টাকা জরিমানা গুনতে হয়। একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে দ্বিগুণ জরিমানা এবং অতিরিক্ত দুই হাজার টাকা দিতে হবে।

বাংলাদেশর আইন অনুযায়ী একটি সিঙেল এক্সেল ১০ টন লোড বহন করার ক্ষমতা থাকলেও মহাসড়কগুলোতে যানবাহনে প্রায় ২০ টন এক্সেল লোডের ট্রাক চলাচল করছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সড়ক, মহাসড়ক, ব্রিজ। সড়কের কয়েকটি স্থানে ওভারলোড নিয়ন্ত্রণে যন্ত্র বসানো হলেও তা ঠিকভাবে এখনো কার্যকর হয়নি।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাড়তি ওজনের পণ্যবাহী যান থেকে টাকা নিয়ে তা চলতে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত যানজট। একই রাস্তায় দ্রুতগতির গাড়ি, নিম্নগতির রিকসা, ভ্যান, অটোরিকসা চলাচল করার কারণে সৃষ্টি হয় যানজটের। যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট হয়। এতে হাজার হাজার কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের গাড়ি যথাসময়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজে পৌঁছাতে পারে না। এভাবে যানজটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিশ্ব ও জাতীয় অর্থনীতি।


আরও পড়ুন