অবৈধ পন্থায় দীপক কুমার উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ : পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হয়েও ভুয়া নিয়োগে উপ-সহকারী প্রকৌশলী
প্রকাশিত: ২৬-৯-২০২১ বিকাল ৭:২১
ভুয়া নিয়োগে দীপক কুমার সরকারকে উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে চাকরি দিয়েছেন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। জানা যায়, ২০০৬ সালে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অধীনে উপসহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) হিসেবে যোগদান করেন তিনি। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ২০০৬ সালে ৫০ জন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) নিয়োগ দেন। উক্ত নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা ৬-১০-২০০৬ ইং তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। এই লিখিত পরীক্ষার ফলাফল ১৯-১০-২০০৬ ইং তারিখে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত এই লিখিত পরীক্ষার ফলাফলে দীপক কুমার সরকার উত্তীর্ণ হয়নি।
অনুসন্ধানে সকালের সময়ের হাতে তৎকালীন প্রকাশিত দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার বিজ্ঞপ্তির কাটিং আসলে সেখানেও দীপক কুমারের রোল নম্বর খুঁজে পাওয়া যায়নি। তারপরও তিনি উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি পেয়ে যান। জানা যায়, তৎকালীন জামাত-বিএনপি সরকারের সময় অসৎ উপায় অবলম্বন করে তিনি চাকরিতে যোগদান করেন। শুধু এখানেই থেমে থাকেনি দীপক কুমার সরকারের অনিয়ম। তিনি উপর মহলকে ম্যানেজ করে উপ-সহকারী প্রকৌশলী থেকে সহকারি প্রকৌশলীর প্রমোশন না নিয়েই একবারে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী বনে যান।
এ বিষয়ে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি সকালের সময়কে বলেন, এটা অনেক আগের ঘটনা। আমি ওই সময় ছিলাম না। তবে এখন যেহেতু জানতে পারছি, এটা অবশ্যই আমরা তদন্ত করে দেখব।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অধীনে যোগদান করার পর তিনি দেশের বিভিন্ন জেলায় উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি করেছেন। দীপক কুমার সরকার ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এর মাধ্যমে চাকরিতে যোগদান করেন। এখনও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং নিপুন রায় চৌধুরীর সাথে সখ্যতা রয়েছে। ২০১০ সালে থেকে সে উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদ হতে সহকারি প্রকৌশলী পদে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন না করে সরাসরি অবৈধ উপায়ে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী পদে চলতি দায়িত্ব পালন করছেন। দীপক কুমার সরকার ২০১৯ সাল পর্যন্ত যশোরে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে কয়েক মাসের জন্য রাজশাহীতে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আরো জানা যায়, দীপক কুমার সরকার তৎকালীন গৃহায়নের চেয়ারম্যান রাশেদুজ্জামানকে ম্যানেজ করে উৎকোচের বিনিময়ে মিরপুর-২ নম্বরের গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের বিভাগীয় কার্যালয়ে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হিসাবে যোগদান করেন এবং এখনো দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। অথচ বুয়েট, রুয়েট, চুয়েট, কুয়েট ইত্যাদি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা মেধাবীরা বৈধ পদোন্নতি প্রাপ্তরা ঢাকার বাইরে ও কমগুরুত্বপূর্ণ উপবিভাগে কাজ করে যাচ্ছেন। দীপক কুমার সরকার আর্থিক ঘুষের বিনিময়ের মাধ্যমে মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের জমিতে একাধিক মালিকানাধীন ভবন তৈরিতে সহায়তা করেছেন। পুরো মিরপুর জুড়ে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের জমিতে যে সকল স্থাপনা আছে সেইসকল স্থাপনা থেকে মাসিক চাঁদা উঠিয়ে নিজে আত্মসাৎ করছেন।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, দীপক কুমার’র মত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে প্রভাব খাটিয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পদায়নের ফলে প্রকৃত উন্নয়ন ব্যাহতসহ বিভিন্ন প্রকল্পের আর্থিক ক্ষতি, প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধিসহ কাজের ত্রুটি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এতে করে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ তার কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ এবং দেশের জনগণ এবং ক্ষুণ্ন হচ্ছে সরকারের সম্মান।
দীপক কুমার সরকার জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন কর্মচারীর নামে প্লট বরাদ্দ নিয়ে তাদের কাছ থেকে অল্প টাকায় নিজের নামে নিয়েও প্লট ব্যাণিজ্যে লিপ্ত হয়েছেন। ২০১৬ সালে মো. কামাল হোসেন এর কাছ থেকে একটি প্লট ক্রয় করেন। কামাল হোসেন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের একজন কর্মচারী। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, দীপক কুমার যশোরে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর পূর্বের ভুয়া ফিজিবিলিটি রিপোর্ট করিয়ে যশোরের মফস্বল এলাকায় সুউচ্চ ভবন অনুমোদন করিয়ে মনঃপূত ঠিকাদার দিয়ে নিজে অর্থ আত্মসাৎ করে। এছাড়াও দীপক কুমার তার বোন এবং বোনের স্বামীকে অনৈতিকভাবে সরকারি বরাদ্দ করে দিয়েছেন, যার প্রমাণ ১৪/০৪/২০ইং তারিখে নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় রাজশাহী একজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন। অভিযোগে বলা হয়, প্রকৌশলী দীপক সরকার তার বোন জামাই শ্যামল কুমার রায় একজন সরকারি স্কুল শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও ব্যবসায়ী হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে একটি প্লট বরাদ্দ করে দেন।
দীপক কুমার সরকার এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের সময় আমার রোল নম্বরটি ভুলক্রমে বাদ পড়ে। এটা স্বাভাবিক ভুল হতেই পারে এটা কোন সমস্যা না। পরবর্তীতে তো স্যারেরা ঠিক করেছেন। তিনি বিভিন্ন সাংবাদিকদের সাথে তার গভীর সম্পর্ক আছে বলে প্রতিবেদককে জানান।