রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৬ খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১০

news paper

নিজস্ব সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ২৪-১০-২০২১ দুপুর ১১:৫

10Views

কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালীর ক্যাম্পের দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ মাদরাসায় ছয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে গুলি ও কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার (২২ অক্টোবর) থেকে শনিবার (২৩ অক্টোবর) বিকেল ৩টা পর্যন্ত একাধিক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক (এসপি) শিহাব কায়সার খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, হত্যার ঘটনায় নিহত আজিজুল হকের বাবা নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে ২৫ জনের নাম ও অজ্ঞাত আরো ২০০-২৫০ জনের বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় মামলা করেন। এ মামলার এজাহারনামীয় পাঁচজন ও সন্দেহজনক পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। শিগগির বাকিদেরও আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।

গ্রেপ্তাররা হলেন- মজিবুর রহমান (১৯), দিলদার মাবুদ ওরফে পারবেজ (৩২), মোহাম্মদ আইয়ুব (৩৭), ফেরদৌস আমিন(৪০), আব্দুল মজিদ (২৪), মোহাম্মদ আমিন (৩৫), মোহাম্মদ ইউনুস ওরফে ফয়েজ (২৫), জাফর আলম (৪৫), মোহাম্মদ জাহিদ (৪০), মোহাম্মাদ আমিন (৪৮)। এর মধ্যে মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে উখিয়া থানায় আরেকটি মামলা করেন।

গত শুক্রবার (২২ অক্টোবর) ভোর সোয়া ৪টার দিকে উখিয়ার এফডিএমএন ক্যাম্প-১৮ এইচ-৫২ ব্লকের দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ মাদরাসায় মুখোশ পরা একদল দুর্বৃত্ত প্রবেশ করে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এরপর গুলিবিদ্ধদের কুপিয়ে এবং জবাই করে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। ধারালো অস্ত্রের কোপে নিহত বেশ কয়েকজনের হাতের আঙ্গুলসহ বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

নিহতরা হলেন- ক্যাম্প-১২, ব্লক-জে ৫ এর বাসিন্দা ওই মাদ্রাসার শিক্ষক হাফেজ মো. ইদ্রিস (৩২), ক্যাম্প-৯ ব্লক-২৯ এর মৃত মুফতি হাবিবুল্লাহর ছেলে ইব্রাহিম হোসেন (২৪), ক্যাম্প-১৮ ব্লক-এইচ-৫২ এর স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষার্থী আজিজুল হক (২২) ও মো, আমিন (৩২)। হাসপাতালে মৃতরা হলেন- ক্যাম্প-১৮, ব্লক-এফ-২২ এর মাদ্রাসাশিক্ষক নুর আলম ওরফে হালিম (৪৫), এফডিএমএন ক্যাম্প-২৪ এর মাদ্রাসাশিক্ষক হামিদুল্লাহ (৫৫)।

প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহত স্বজনদের দাবি, মুহিবুল্লাহর হত্যাকারী কথিত আরসার (আল-ইয়াকিন নামেও পরিচিত) সন্ত্রাসীরাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

রোহিঙ্গাদের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র দাবি করে, রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক সব মাদ্রাসার কথিত আরসা নিয়ন্ত্রণ নিতে চেষ্টা চালাচ্ছে। সেই লক্ষ্যে প্রতিটি মাদ্রাসার পরিচালনায় দুজন আরসা সদস্যকে কমিটিতে রাখার প্রস্তাব দেয় তারা (আরসা নেতারা)। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা তাতে রাজি হননি। যদিও এরই মধ্যে অনেক মাদ্রাসার দুর্বৃত্ত সংগঠন আরসার নিয়ন্ত্রণে বলে দাবি করেছে সূত্রটি।

এসব বিষয়ে এবিপিএন-৮ এর অধিনায়ক (এসপি) শিহাব কায়সার খান বলেন, যেসব বিষয়গুলো উঠে এসেছে সেসব গুরুত্ব সহকারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। অপরাধি রোহিঙ্গাদের কেউ আশ্রয় দিচ্ছে এমন প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুক্রবারের ঘটনার সঙ্গে মুহিবুল্লাহ হত্যার যোগসূত্র আছে কি না তা অধিকতর তদন্তের বিষয়।

ক্যাম্পে কর্মরত ১৪ এপিবিএন অধিনায়ক এসপি নাইমুল হক বলেন, ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে এটা সঠিক। কিন্তু ক্যাম্পে কোনো দুর্বৃত্ত সংগঠনের অস্তিত্ব নেই। যদিও নানা সংগঠনের নামে এরা অপকর্ম চালানোর চেষ্টা করে তারা, সেটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আমরা সবকিছু নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি।


আরও পড়ুন