লোক দেখানো আমল আল্লাহ কবুল করেন না

news paper

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২০-১১-২০২১ দুপুর ১:৫৭

24Views

ইবাদত করার জন্যই আল্লাহ তাআলা মানব সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু মহামূল্যবান এই ইবাদত অনেক সময় বান্দার সামান্য ভুলের কারণে অর্থহীন হয়ে যায়। কেউ ইচ্ছে করে ভুল করে, আবার কেউ অনিচ্ছায় ও অজ্ঞাতসারে ভুল করে।

ইবাদত আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ হওয়া জরুরি। এটি পরকালে আমল আল্লাহর কাছে যথাযথ মূল্যায়ন লাভের প্রধান শর্ত। সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে যাতে জাগতিক কোনো উদ্দেশ্য না থাকে। এছাড়াও স্বার্থ জড়িয়ে না ফেলা, বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ ত্রুটি— এসব থেকেমুক্ত হতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘তাদের কেবল একনিষ্ঠ হয়ে আল্লাহর ইবাদতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ (সুরা বাইয়িনাহ, আয়াত : ৫)

লোক দেখানো আমল জাহান্নামে যাওয়ার কারণ

এছাড়াও ইবাদত হতে হবে, আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সুন্নত অনুযায়ী। এটাও ইবাদতের পূর্বশর্ত।  অন্যদিকে আবশ্যিকভাবে ইবাদত আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশ্যে করা যাবে না। যেমন : মানুষের প্রশংসা, সামাজিক প্রভাব-প্রতিপত্তি, কারো দৃষ্টি আকর্ষণ ইত্যাদির মোহে ইবাদত করা। ইসলামী পরিভাষায় একে রিয়া এবং বাংলা ভাষায় ‘লোক-দেখানো’ বা ‘প্রদর্শনপ্রিয়তা’ বলা হয়।

প্রদর্শনপ্রিয়তা নিয়তের অসততা, যা ইবাদতকে মূল্যহীন করে দেয়। প্রদর্শনের উদ্দেশ্য যা-ই হোক না কেন, তার পরিণতি ভয়াবহ। এমন ইবাদত আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। পরকালে এসব ইবাদত ব্যক্তির জন্য বোঝা ও আক্ষেপের কারণ হবে। এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) কিয়ামতের দিন লোক-দেখানো আমলকারীদের বিচারের একটি চিত্র তুলে ধরেছেন, যাতে একজন শহীদ (আল্লাহর পথে জীবন উৎসর্গকারী), একজন কোরআনের শিক্ষক ও একজন দানবীরের আলোচনা এসেছে। যারা খ্যাতি ও সুনামের মোহে জিহাদ, কোরআন শিক্ষা ও দান করত। তারা তাদের আমলের প্রতিদান থেকে বঞ্চিত হয়। আল্লাহ তাদের বলেন, ‘তোমরা যা চেয়েছ পৃথিবীতে তা পেয়েছ। সুতরাং আজ আমার কাছে তোমাদের কোনো প্রাপ্য নেই।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৫২৭)

লোক-দেখানো আমল শিরকও বটে

আল্লাহর রাসুল (সা.) রিয়াকে ছোট শিরক (আল্লাহর অংশীদার নির্ধারণ) বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি তোমাদের ব্যাপারে ছোট শিরক নিয়ে যতটা ভয় পাচ্ছি, অন্য কোনো ব্যাপারে এতটা ভীত নই।’ তারা (সাহাবি) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, ছোট শিরক কী? তিনি বলেন, রিয়া বা প্রদর্শনপ্রিয়তা। আল্লাহ কিয়ামতের দিন বান্দার আমলের প্রতিদান প্রদানের সময় বলবেন, ‘তোমরা পৃথিবীতে যাদের দেখাতে তাদের কাছে যাও। দেখো তাদের কাছে তোমাদের কোনো প্রতিদান আছে কি না?’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২২৫২৮)
পবিত্র কোরআনেও আল্লাহ লোক-দেখানো ইবাদত থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাতের আশা রাখে, সে যেন সৎ কাজ করে এবং তার প্রভুর ইবাদতে কাউকে অংশীদার না করে।’ (সুরা কাহাফ, আয়াত : ১১০)

লোক-দেখানো নামাজির জন্য ধ্বংস

অন্য আয়াতে যারা লোক-দেখানো ইবাদত করে তাদের নিন্দা করে বলা হয়েছে— 

‘ধ্বংস সেসব নামাজির জন্য, যারা তাদের নামাজের ব্যাপারে উদাসীন, যারা প্রদর্শন, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস দেওয়া থেকে বিরত থাকে।
(সুরা মাউন, আয়াত : ৪-৭)
উল্লিখিত আয়াত ও হাদিসের আলোকে ইসলামী জ্ঞানতাপসরা রিয়াকে কবিরা গুনাহ (বড় পাপ) ও হারাম বলেছেন। আল্লামা ইবনে কায়্যিম (রা.) কবিরা গুনাহের তালিকার প্রথমে রিয়ার আলোচনা করেছেন।

ইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেছেন, ‘জেনে রাখো, নিশ্চয় প্রদর্শনপ্রিয়তা হারাম। প্রদর্শনকারী আল্লাহর নিকট অপছন্দনীয়। আয়াত, হাদিস ও পূর্ববর্তী আলেমদের বক্তব্য দ্বারা তা প্রমাণিত।’ (ইহয়াউ উলুমিদ্দিন : ২/৪৮০)


আরও পড়ুন