বিএসটিআই এর ইঁদুর বিড়াল খেলা!

অবৈধ বৈদ্যুতিক বল্ব তৈরী ও বাজারজাতে নজরুলের বিশেষ সিন্ডিকেট

news paper

জাহিদুল ইসলাম শিশির

প্রকাশিত: ২১-১১-২০২১ দুপুর ২:৪৯

14Views

সরকারের অধিকাংশ নিয়ম অমান্য করে দেশব্যাপি অবৈধ ও নিম্নমানের  বৈদ্যুতিক বাল্ব তৈরী ও বাজারজাত করে চলেছে একটি বিশেষ সিন্ডিকেট। বৈদ্যুতিক বাল্ব উৎপাদকারী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে দেব্যাপী  গড়ে ওঠা অবৈধ এ সিন্ডিকেটের  কারণে একদিকে বিদ্যুতের খরচ বাড়ছে অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে বড় অংকের রাজস্ব। সরকার এ খাত থেকে বছরে কোটি কোটি  টাকা রাজস্ব হারালেও নিয়ন্ত্রণকারি সংস্থা বিএসটি আই এর কোন কোন কর্মকর্তার পকেট ভারি হওয়ার কারণে   কর্মকর্তারা এ নিয়ে  ইঁদুর বিড়াল খেলায় মেতে রয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

বৈদ্যুতিক বাল্ব উৎপাদকারী একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এসকল কারখানার একটি বড় অংশই চলছে তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগ দিয়ে। সেই সাথে তাদের অনেক প্রতিষ্ঠানেরই নেই বাজারজাত করণে বিএসটিআই এর অনুমোদন। নেই ফায়ার  বা পরিবেশের কোন কাগজপত্র। শ্রমিকদের জন্য বাধ্যতামূলক শ্রম অধিদপ্তরের  লাইসেন্স নেই অধিকাংশ কারখানার। এ কারণে কোন দূর্ঘটনা ঘটলেও শ্রম মন্ত্রণালয়ের শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড বা সরকারের কোন খাত থেকে সহযোগিতা প্রাপ্তির  কোন সুযোগ নেই এ খাতে কর্মরত শ্রমিকদের। 

নিয়মের বাইরে থেকে কেন  তারা ব্যবসা করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে এ খাতের কয়েকজন ব্যবসায়া দৈনিক সকালের সময়কে জানান, তারা নিয়ম নেমেই ব্যবসা করতে আগ্রহী। কিন্তু সমিতির কয়েকজন নেতা বিশেষ করে সভাপতি নজরুল ইসলাম তাদের নিয়মের মধ্যে যেতে অনুৎসাহিত করেন। তিনি বলেন, তিনি থাকতে আর কারো কাছে বা সরকারের কোন এজেন্সির কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তিনি সব দেখবেন। কোন প্রতিষ্ঠানের  লোকজন বা গণমাধ্যমের কেউ এলে তিনিসহ সমিতির নেতারা তা দেখে থাকেন। এ কারণে তারা সব সময় নিয়মের বাইরেই থাকছেন। এজন্য মাসে একটি পরিমাণ টাকা সমিতির ফান্ডে জমা করা হয়। কিন্তু সে টাকার জন্য সমিতি থেকে তাদের কোন মানি রিসিট দেয়া হয় না। সব হয় সমিতির সভাপতি নজরুলের নামে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমিতির সদস্য তালিকা ও তালিকার বাইরে থাকা শতাধিক কোম্পানীর অধিকাংশই তার নেতৃত্বে আবাসিক এলাকার মাঝে কারখান গড়েছেন । সেই সাথে অধিকাংশ কারখানায় ব্যবহৃত হচ্ছে অবৈধ গ্যাসের সংযোগ। অবৈধ গ্যাসের সংযোগ ও আবাসিক ভবনে কারখানা স্থাপিত হওয়ায়  যে কোন মুহুর্তে বড় ধরণের দূর্ঘনার আশঙ্কা করছেন অনেকেই। 

তথ্য অনুসন্ধ্যানে জানা যায়, নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা অবৈধ ও নিম্নমানের বাল্বের  কারণে সরকারের বিদ্যুৎশ্রয়ী  দৃষ্টিভঙ্গি মার খাচ্ছে। সেই সাথে  এলইডি লাইট বা এনার্জি সেভিংস লাইটও বাজারে মার খাচ্ছে। জানা যায়, এসকল অবৈধ ও নিম্মমানের কারখানাগুলোতে জিএলএস  সিস্টিমের ( জেনারেল লাইট সিস্টেম) লাইটগুলো অত্যন্ত কম খরচে তৈরী হচ্ছে।  আর বিশেষ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে সারা দেশের প্রত্যন্ত বাজারগুলোতে। 

তথ্য অনুসন্ধ্যানে আরো জানা গেছে, এ সকল কোম্পানীর অধিকাংশরই বিএসটিআই , ফায়ার বা পরিবেশ বা কারখানা অধিদপ্তরের  অনুমোদন না থাকলেও তারা নকল বিএসটিআই এর সিল ব্যবহার করছে অনেকেই। এ সব বিষয় নিয়ে এসটিআই এর সাথে কথা বলে জানা গেছে অধিকাংশ কারখানার উৎপাদিত পণ্যের বিএসটিআই রেজিস্ট্রেশন নেই। তবে কেউ কেউ রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন দিয়ে বসে আছে।  তারা রেজিস্ট্রেশন পাবে কিনা তারও কোন ঠিক নেই, কিন্তু তারা বিএসটিআই এর সিল নকল  করে ব্যবহার করছেন। আর দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের পরামর্শেই তারা বলে বেড়াচ্ছেন তারা আবেদন দিয়েছেন অনুমোদন না দিলে সে দায় একান্তই বিএসটিআই এর। আবেদনকেই মোক্ষম হাতিয়ার বানিযে নির্বিঘ্নে ব্যবসা করছেন তারা। এতে সমিতি ও দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা লাভবান হলেও মার খাচ্ছে সরকারের মোটা অংকের রাজস্ব। বিএসটিআই সূত্রে জানা গেছে ,এ রকম করার কারণে সম্প্রতি নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে থাকা সমবায় সমিতি লি. এ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে  জরিমানা করেছে বিএসটিআই । আরো প্রতিষ্ঠানগুলোতে সহসা অভিযান পরিচালিত হবে বলে বিএসটিআই সূত্রে জানা গেছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসটিআই এর সহকারি পরিচালক গোলাম রাব্বানী দৈনিক সকালের সময়কে বলেন, আমরা এসব বিষযে খোঁজ খবর নিয়েছি।কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান করে জরিমানা করা হয়েছে। আমাদের লোকজন মাছে যাচ্ছে। সহসা এ ব্যাপারে জোরালো অভিযান চালানো হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

তিনি  বলেন, আমাদের কর্মিরা মাঠে গিয়ে ইতোমধ্যে বাল্ব প্রস্তুত কারক সমিতির সদস্য বা নন সদস্যদের খোঁজ নিচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠান কিসের ভিত্তিতে কি ভাবে চলছে সে বিষয়ে  খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। তিনি গণমাধ্যম কর্মিদের কাছে এ সংক্রান্ত কোন তথ্য ব তালিকা থাকলে তাকে সরবরাহ করে সহযোগিতার আহবান  জানান। এ সকল বিষয়ে জানতে চাইলে কথিত সমবায় সমিতি লি.  এর সভাপতি নজরুল ইসলাম দৈনিক সকালের সময়কে বলেন, তারা দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করছে। কখনো কোন সমস্যা দেখা দেয়নি। সম্প্রতি  বিএসটিআইসহ বিভিন্ন সংস্থার লোকজন এ নিয়ে তাদের জিজ্ঞাসা করছে। এতে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মকর্তারা সমস্যায় আছে। সমিতির সদস্যরা তার কাছে সহযোগিতা চাইলে সমিতির নেতা হিসেবে তার দায়িত্ব তাদের পাশে দাঁড়ানো। তিনি বলেন, সরকারের সকল সংস্থার সাথে বোঝাপড়া করেই তাদের ব্যবসা করতে হয়।  এ নিয়ে গণমাধ্যমের  মাথা ব্যথা থাকা উচিৎ নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।  এ দিকে বিএসটিআই এর অনুমোদন না থাকার পরও কোন কোন প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর ধরে কীভাবে ব্যবসা করছে এমন প্রশ্নের জবাবে বিএসটিআই এর সহকারি পরিচালক গোলাম রাব্বানী জানান, আমাদের জনবলের সংকট রয়েছে।  বিএসটিআই এর কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই যে সব প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করছে তাদের ব্যাপারে আইনের ব্যাখা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন,  আইন অমান্য করে কারো ব্রবসা করার সুযোগ নেই। অঅমরা বিষয়টা দেখছি। 


আরও পড়ুন