প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষপে কামনা 

রাজারবাগ পীর সাহবেরে পক্ষে সমমনা ১৩ ইসলামী দলের প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন

news paper

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

প্রকাশিত: ২৮-১১-২০২১ রাত ৯:৫১

12Views

জামায়াত-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অতন্দ্র প্রহরী, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে হক্ব দরবার শরীফ রাজারবাগ শরীফের বিরুদ্ধে অব্যাহত মিডিয়া ক্যুর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পক্ষপাতদুষ্ট রিপোর্ট এবং সিআইডির ভুল তদন্ত প্রত্যাখান করে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে বাংলাদেশ আওয়ামী উলামা পরিষদসহ সমমনা ১৩টি দলের প্রতিবাদ সভা ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে শনিবার (২৭ নভেম্বর) সকাল ১০টায় ‍এ প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
 
সমাবেশে বক্তারা বলেন, বর্তমানে রাজারবাগ দরবার শরীফের বিরুদ্ধে যে মিডিয়া ক্যু চলছে তাতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ধর্মপ্রাণ জনগোষ্ঠী মর্মাহত। কারণ, রাজারবাগ দরবার শরীফের পীর সাহেব ১৯৭১ সালে ছাত্রাবস্থায় মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। খাদ্য সহায়তা ও আর্থিক সহায়তা করেছেন। উনার আপন ভাই ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনরাও মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। পীর সাহেবের মেজো ভাই হাফিজুর রহমান হারুণ সেক্টর-২-এর অধীনে ক্র্যাক প্লাটুনের একজন গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আবেদন, তিনি যেন জামায়াত-জঙ্গিবাদবিরোধী হক্ব দরবার শরীফ, রাজারবাগ শরীফের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে যথাযথো ব্যবস্থা নেন।

সমাবেশে বক্তারা ‍আরো বলেন, ‘৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলার সক্রিয় অবস্থানের কথা আগেই বলা হয়েছে। তার মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময় এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থেকেছে। ১৯৯০ সালে যুদ্ধাপরাধীদের চ্যালেঞ্জ করে এবং ১ লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করে রাজারবাগ শরীফ থেকে বই প্রকাশিত হয়। যুদ্ধাপরাধ, মৌলবাদ, সন্ত্রাসবাদসহ তাবৎ ধর্ম ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে লেখা হয়। এছাড়া সন্ত্রাসবাদ ও যুদ্ধাপরাধবিরোধী লেখা নিয়মিত ছাপা হয়।  

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ১৯৯১ সালে মাসিক আল বাইয়্যিনাত প্রকাশিত হলে ১২তম সংখ্যায়ই অর্থাৎ ১৯৯৩ সংখ্যায়ই যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং তাদের বিচারের দাবি জানানো হয়। এরপর জোটভুক্ত কথিত ইসলামী নেতা সাইকুল হাদীছ, চরমোনাই ফজলুর করীম গং তথা নামধারী ইসলামী নেতা ও তাদের ধর্ম ব্যবসায়ী রাজনীতির বিরুদ্ধে অনবরত লেখা লেখা হয়।

বক্তারা বলেন, ১৯৯৬ সালে দৈনিক আল ইহসান প্রকাশিত হলে একই ভাবে যুদ্ধাপরাধ, সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদবিরোধী প্রচারণা চালানো হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে ‘ইসলামের নামে ভোট দেয়া নাজায়েজ’, ‘যারা ইসলামের নামে ভোট চায় তারা ধর্ম ব্যবসায়ী’ সার্বিক ব্যানার হেডলাইন করে বারবার প্রচার করা হয়। সারাদেশেও প্রচার করা হয়। যুদ্ধাপরাধী গো আযম, মইত্যা রাজাকার, মইজ্জা রাজাকার ইত্যাদির বিরুদ্ধে বিশেষ ক্রোড়পত্র ছাপা হয়। সারাদেশে যুদ্ধাপরাধী-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে এবং যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষেও অসংখ্যবার পোস্টারিং করা হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, অতীতে দেইল্লা রাজাকার রাজারবাগ শরীফের বিরুদ্ধে জঙ্গি অপবাদ দিয়েছিল। আজকে মিডিয়া ও প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা দেইল্লা রাজাকারের বংশধররা আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

তারা বলেন, রাজারবাগ শরীফের পীর সাহেবের জঙ্গিবাদের সহিত সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রমাণিত হয় না। তাকে শত্রুতাবশত জঙ্গিবাদের সহিত সম্পৃক্ততার অপবাদ দিয়ে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। অনুসন্ধানে তিনি জঙ্গিবাদবিরোধী প্রতীয়মান হয়। ডিসি (ডিবি-দক্ষিণ) (গোঃঅপঃবিঃ) স্মারক নং- যুঃকঃ(গোঃঅপঃবিঃ)/৪৫-২০০৮/অংশ-১১৯৯ তারিখ-৮/১০/০৯ইং।

বক্তারা ‍আরো বলেন, দৈনিক আল ইহসান ও মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকা দুটি বরং জঙ্গি তৎপরতার বিরুদ্ধে একটি বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর এবং পীর সাহেব, উনার পত্রিকা অফিসের স্টাফ, মাদরাসার ছাত্র এবং শিক্ষকগণ জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে জড়িত আছে- এমন কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ তদন্তকালে পাওয়া যায়নি এবং তারা আদর্শগত ও ধ্যান-ধারণাগতভাবে একান্ত জঙ্গিবাদবিরোধী বলে প্রতীয়মান হয়। স্মারক নং-৪৬৯২-২/ডিসি (ডিবি দক্ষিণ)  (গোঃ অপঃবিঃ) তাং-১২-১০-০৯ইং।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক অধিশাখা-২ থেকে ২০২৬ সালের ৩০ আগস্টের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দৈনিক আল ইহসান ও মাসিক আল বাইয়্যিনাত এবং রাজারবাগ দরবার শরীফ জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ ও জামায়াতের বিরুদ্ধে ক্ষুরধার অবস্থানে। স্মারক নং-৪৪.০০.০০০০.০৭৫.০৬.০১১.১৬-৬৪৭।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক অধিশাখা-২ থেকে ২০১০ সালের ২১ শে জুলায়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আনজুমানে আল বাইয়্যিনাত/উলামা আনজুমানে আল বাইয়্যিনাত, বাংলাদেশ নামীয় সংস্থাটি সম্পর্কে কোনো বিরূপ মন্তব্য নেই। স্মারক নং-স্বম(রাজ-২)/গোপ্র-ধউস/৪-১/২০০৯-২৪।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, মতিঝিল থানার ওসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তদন্তকালে দেখা যায়, রাজারবাগের পীর সাহেব তিনি নালিশী সম্পত্তিতে মসজিদ-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাছাড়া সারাদেশে তার অসংখ্য মুরিদান রয়েছে। তিনি বা তার মুরিদগণ জঙ্গি তৎপরতায় লিপ্ত, এ ধরনের অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। স্মারক নং-৩৩৫ ডিসি মতিঝিল, তারিখ-১৪-০৮-০৯।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, স্থানীয় সাংসদ জনাব রাশেদ খান মেনন ও কমিশনার জঙ্গিবাদ-জামায়াতবিরোধী অবস্থানের জন্য সব সময় ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তাদের কাছে এ যাব‍ৎ রাজারবাগ দরবার শরীফের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আসেনি।  

তারা বলেন, মিডিয়ায় অনুপ্রবেশ করা এসব জামায়াতী রিপোর্টাররাই রাজারবাগ শরীফ সম্পর্কে অব্যাহত মিডিয়া ক্যু চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি তারা হাইকোর্ট এবং আইনমন্ত্রীর নামেও রাজারবাগ শরীফকে জড়িয়ে মিথ্যাচার করে মিডিয়া ক্যু করে যাচ্ছে। এনটিভিসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় গত ৫ অক্টোবর নিউজ হেডিং করা হয়েছে, ‘রাজারবাগ পীরের সব আস্তানা বন্ধের নির্দেশ হাইকোর্টের’। অথচ বাস্তবিকপক্ষে এরকম কোনো নির্দেশই দেয়নি হাইকোর্ট। একই ভাবে তারা গত ১০ অক্টোবর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আইনমন্ত্রীর এক অনুষ্ঠানের বরাত দিয়ে রাজারবাগ শরীফের বিরুদ্ধে নিউজ করেছে যে, ‘রাজারবাগ পীরের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি আইনমন্ত্রীর’। অথচ এই নিউজের বিষয়ে আইনমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আইনমন্ত্রী নিজেই বলেছেন তিনি রাজারবাগ শরীফ নিয়ে এরকম কোনো বক্তব্য দেননি।

বক্তারা বলেন, কোথাও নিউজ হচ্ছে ৪৯ মামলা, কোথাও ৮০০ মামলা। কোথাও ৭ হাজার একর, কোথাও নিউজ হচ্ছে ৬ হাজার একর, কোথাও ৩ হাজার একর আবার কোথাও ১ হাজার একর জমি দখল। মূলত এসব তথ্য বৈপরীত্যই প্রমাণ করে যে, এসবই জঙ্গি-জামায়াতবিরোধী শতভাগ সুন্নতী আমলের হক্ব দরবার শরীফ রাজারবাগ শরীফের বিরুদ্ধে অব্যাহত মিডিয়া ক্যু।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, রাজারবাগ দরবার শরীফ সম্পর্কে সিআইডির মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে কিভাবে মিথ্যা রিপোর্ট দিতে পারল তা ভাবতেও অবাক লাগে। সিআইডি রিপোর্ট দিয়েছে, রাজারবাগ দরবার শরীফের পেছনে ৩ শতাংশ জমির ওপর তিনতলা বাড়ি দখলের জন্য কাঞ্চনের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। অথচ প্রকৃত সত্য হলো, রাজারবাগ দরবার শরীফের পেছনে ৩ শতক জায়গায় কোনো বাড়িও নেই এবং কোনো তিনতলা বিল্ডিংও নেই। এরূপ মিথ্যা তথ্য রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা সিআইডি কী করে হাইকোর্টে প্রেরণ করতে পারল, এটা তদন্তের জন্য আমরা মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।

তারা বলেন, রাজারবাগ শরীফ সম্পর্কে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন যে রিপোর্ট দিয়েছে সেটাই বর্তমান পৃথিবীতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সবচেয়ে বড় উদাহরণ। কারণ, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সম্পূর্ণ রিপোর্টে কোথাও রাজারবাগ শরীফের কোনো বক্তব্য নেই, রাজারবাগ শরীফের সাথে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি এবং কোনো জিজ্ঞাসাও করা হয়নি, আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি।

সমাবেশে বক্তাদের তরফ থেকে রাজারবাগ শরীফের বিরুদ্ধে মিডিয়া ক্যু ও মিথ্যা প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে মাননীয় তথ্যমন্ত্রী, মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিশেষত, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররম মসজিদের প্রধান মুয়াজ্জিন আলহাজ মাওলানা ক্বারী কাজী মাসউদুর রহমান, সম্মিলিত ইসলামী গবেষণা পরিষদের সভাপতি হাফেজ মাও. আ. সাত্তার, বাংলাদেশ ওলামা লীগের সেক্রেটারি আলহাজ মাও. আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আল্লামা শোয়াইব আহমদ।

আরো উপস্থিত ছিলেন- আব্দুস সবুর কাঞ্চনপুরী, মুহম্মদ আল আমিন কুরাইশী, মাওলানা মোকাম্মেল হোসেন, মাওলানা রফিকুল আলম সিদ্দিকী আল কুরাইশী, মাওলানা সৈয়দ ওমর ফারুকসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জ্বীবিত ১৩টি সমমনা দলের নেতৃবৃন্দ।


আরও পড়ুন