অতিথি পাখির আগমনে মুখরিত রাউজানের জনপদ

news paper

আমির হামজা, রাউজান

প্রকাশিত: ৪-১২-২০২১ বিকাল ৫:৪৭

21Views

সাত সাগর তের নদী পেরিয়ে রাউজানে আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখিরা। প্রতি বছর শীত এলে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা হাজার হাজার অতিথি পাখির অভয়ারণ্য হয়ে ওঠে রাউজানের প্রতিটি জনপদ। সকালে সূর্য ওঠার সাথে সাথে দীঘিতে দলে দলে আসতে শুরু করে শীতপ্রধান দেশ থেকে আসা অতিথি পাখিরা। সারাদিন সকাল হতে সূর্য ঘুমিয়ে পড়ার আগ পর্যন্ত এসব অজনা পাখি লস্করদীঘিতে দাপিয়ে বেড়ায়। মনের আনন্দে সারাদিন দীঘির জলরাশিতে মনের সুখে তাদের কিচির-মিচির ডাকে মুগ্ধ করছে দীঘির পরিবেশ।

চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলায় হাজার হাজার অতিথি পাখির এখন মিলন মেলা বসেছে ঐতিহাসিক কদলপুর গ্রামের লস্কর উজির দীঘিতে। শীতের আমেজ যতই বাড়ছে সাথে সাথে বেড়ে চলছে অতিখি পাখির আগমন। সারাদিনই উপজেলার কদলপুর গ্রামের ও পাহাড়তলী এলাকাজুড়ে কিচির-মিচির ডাকে মুখরিত হয়ে উঠেছে ওই এলাকাসহ স্থানীয় গ্রামের চারদিক। সারাদিন পাখিগুলো দীঘিতে খেলাধূলা করার পর সূয ডুবার পরেই দীঘি থেকে চলে গিয়ে গ্রামের বিভিন্ন গাছপালায় রাত কাটান। সকালে হলে আবারও দলবেঁধে দীঘিতে অবস্থান করেন। এই দিঘী গিরে যেন পরিণত হয়েছে পাখিদের এক মিলন মেলা।

সরেজমিনে দেখাযায়, অপরূপ সৌর্ন্দযের লীলাভূমি কদলপুর গ্রামের ঐতিহাসিক লস্কর উজির দিঘী। এই দীঘি নিয়ে রয়েছে এক বাদ শাহের ইতিহাস। আজ থেকে কয়েকশত বছর আগে লস্কর নাম সেই বাদশা এই দেশের শাসক ছিলেন। মোগল ও ব্রিটিশ আমলে রাউজানের প্রভাবলালী উজির নাজির ছিল এই নাম করা লস্কর জমিদার।

জানা গেছে, ৬০ একর আয়তনের এই বিশাল দীঘির পশ্চিম পাড়ে রয়েছে নামকরা অলির মাজার। এছাড়াও ওই দীঘির পূর্ব পাড়ে হয়েছে সুন্দর একটি মসজিদ। দীঘির পাড়ে রয়েছে দেখার মতো অসংখ্য সবুজ গাছের বাগান।

এদিকে শীতের মৌসুম আসার পর থেকেই প্রতিদিন হাজারো অতিথি পাখি দলবেঁধে আসতে শুরু করেছে এখানে। সূর্যদয়ের সাথে সাথে শুরু হয় নাম জানা-অজানা পাখির কিচির-মিচির ডাক। চলতে থাকে সারাদিন রাতেও দলবেঁধে ছুটে বেড়ায় স্থানীয় এলাকাজুড়ে। দেখা যায়, মাজে মধ্য আকাশের বুকে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়তে থাকা অতিথি পাখির দল। এসব পাখির কিচির-মিচির ডাকে মুখরিত হয়ে ওঠে স্থানীয় এলাকার চারদিক। আবার কখনো দলবেঁধে উড়ে বেড়ান দীঘির পানির ওপর দিয়ে। হাজার হাজার অতিথি পাখির কোলাহলে পুরো এলাকা এখন মুখরিত।

এ বিষয়ে চুয়েট বার্ড ক্লাবের পরিচালক ও উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মো. ফজলুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের মানুষ অতিথিপরায়ণ। সবকিছুর বেলায় এটি প্রযোজ্য। পাখিরা যখন অতিথি হয়ে আসে তখন আমাদের দায়িত্ব বেড়ে যায়। তারা যে আশায় আসে সে আশা পূরণে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। এর মাধ্যমে আমরা অতিথি পাখিবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে পারব। বাংলাদেশকে নিরাপদ গন্তব্য হিসেবে ধরে নিয়ে সৌন্দর্যের পসরা বসাতে আসবে পাখিরা। 

জানা যায়, শীতপ্রধান দেশগুলোতে এই সময় ব্যাপক পরিমাণে শীতের মাত্রা ও তুষারফাত হয়। ফলে পাখিগুলোর খাদ্য সংকটে পড়ে। জীবন বাঁচাতে এবং খাদ্যের সন্ধানে এসব অতিথি পাখি আমাদের দেশে চলে আসে।

স্থানীয়রা জানান, শীতের শুরুতেই সবুজ ও গোলাপি রাউজান নামে খ্যাত কদলপুরে প্রতি বছরের মতো এবারো আসতে শুরু করেছে নানা দেশ থেকে অতিথি পাখির দল। ঝাঁকে ঝাঁকে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আসতে শুরু করেছে আমাদের গ্রামে। এসব ভিনদেশি অতিথি পাখি হয়ে উঠেছে রাউজানসহ স্থানীয় এলাকার মানুষের কাছে বিনোদনের অন্যতম এক মাধ্যম।
    
স্থানীয় লোকজন আরো জানান, গত কয়েক বছর ধরে আমাদের এই গ্রামে এসব পাখি এই দীঘিতে আসে। এসব পাখির দৃশ্য আমাদের মনে আনন্দ দেয়। আমার আনন্দ পাই, কারণ এরকম দেশি-বিদেশি পাখির দৃশ্য আর কোথাও দেখা যায় না। এরা এখানে অনেক নিরাপদে আছে। এমন মনোরম দৃশ্য আমাদের মুগ্ধ করেছে। বিশেষ করে এই দীঘিতে পাখির একটি অন্যতম নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে গড়ে উঠেছে, তা না দেখলে বিশ্বাসই করা যাবে না। এ দৃশ্য উপভোগ করতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে লস্কর উজির দীঘিতে ছুটে আসেন শত শত মানুষ।


আরও পড়ুন