যে কারণে পড়বেন লোকপ্রশাসন

news paper

ইউছুব ওসমান, জবি

প্রকাশিত: ৪-১-২০২২ দুপুর ৪:৫২

104Views

লোকপ্রশাসন হলো সরকার প্রণীত নীতি ও আইনসমূহের জনকল্যাণার্থে বাস্তবায়ন এবং প্রয়োগের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। অন্য কথায় লোকপ্রশাসন হচ্ছে- রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সেবা জনগণের জন্য নিশ্চিত করতে রাজনীতিবিদগণের গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া। আমেরিকার ২৮ তম রাষ্ট্রপতি থমাস উড্রো উইলসনকে লোক প্রশাসনের জনক বলা হয়।

সরকারের নীতির পরিকল্পনা থেকে নীতি গঠন, সরকারি প্রশাসনের রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, আইন ইত্যাদি হচ্ছে লোক প্রশাসনের বিচরিত এলাকা। মোটা দাগে বলতে গেলে, লোকপ্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে সরকার। সরকারের কার্যক্রমের এমন কোন বিশেষ জায়গা নেই যেটি লোক প্রশাসনের বহির্ভূত। যেকোনো প্রতিষ্ঠানের সফলতা ও ব্যর্থতা নির্ভর করে একজন প্রশাসকের উপরে। প্রশাসক দক্ষ হলে যেমন একটি প্রতিষ্ঠান সফলতার শিখরে পৌঁছায়, তেমনি অদক্ষ প্রশাসক প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রেও লোকপ্রশাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশ্বব্যাপী রয়েছে বিষয়টির ব্যাপক পরিধি এবং ব্যবহারিক কর্মক্ষেত্র। এছাড়াও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিসিএস পরীক্ষায় ক্যাডারগুলোতে লোকপ্রশাসনের ছাত্ররা বিশেষ অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন। কিন্তু বিষয়টি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণার অভাবে অনেক শিক্ষার্থীই জানেনা এই বিভাগে কেন পড়া উচিত।

লোকপ্রশাসন বিভাগে কী পড়ানো হয়?

লোকপ্রশাসন বিভাগের একজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুতে তাত্ত্বিক কিছু বিষয় পড়ানো হয়। প্রশাসনের একেবারে তাত্ত্বিক দিকগুলোর পাশাপাশি সমাজবিজ্ঞানের মূল যে বিষয়গুলো আছে, যেমন- অর্থনীতি, সমাজতত্ত্ব, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয় পড়ানো হয়।

এছাড়া হিসাববিজ্ঞান, তথ্য-প্রযুক্তি সম্পর্কেও একটা প্রাথমিক ধারণা দেয়া হয়। পরবর্তীকালে ব্যবহারিক দিক, যেমন বাংলাদেশের প্রশাসন ও রাজনীতির ইতিহাস, স্থানীয় সরকার ইত্যাদি সম্পর্কে জানানো হয়।

এসবের পর শিক্ষার্থীরা একটু তুলনামূলক আলোচনায় ঢুকে পড়ে। অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের লোকপ্রশাসনের তুলনার পাশাপাশি ব্যবসার সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু বিষয়, যেমন মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, ব্যাংক ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি পড়তে হয়। চতুর্থ বর্ষের পড়ালেখা হয় গবেষণামূলক। প্রশাসনের ব্যাপারে সাম্প্রতিক যে অগ্রগতিগুলো হয়েছে, সেগুলো সম্পর্কেও জানানো হয়।

কোথায় পড়া যাবে লোকপ্রশাসন?

লোকপ্রশাসন বিভাগটি সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। তাছাড়া বাংলাদেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও সরাসরি এই নামে নেই। আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত কোনো কলেজেও এটি অধ্যয়ন করা হয় না।

যে সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লোকপ্রশাসন বিষয়টি পড়ানো হয়, সেগুলো হলো- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।

এছাড়াও আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগটিকে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের  উচ্চ পর্যায়ের বিভাগ হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে।

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি জনপ্রশাসনে স্নাতক (বিপিএ) এবং স্নাতক প্রোগ্রাম (এমপিএ) উভয়ই শুরু করেছে। এছাড়াও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় পাবলিক পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্স (এমপিপিজি) এবং এমএইচডি-তে এমএ করার সুযোগ দিচ্ছে।

এই বিষয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীরা BSS (Bachelor of Social Science) এবং স্নাতকোত্তর সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা MSS (Master of Social Science) ডিগ্রিপ্রাপ্ত হন। প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই এই বিষয়টির রয়েছে আলাদা কদর। তাই এই বিষয়ে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীরা সকলের কাছে একটু অন্যরকম দৃষ্টিতে থাকে এবং আলাদা সম্মান পায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাদের বিচরণ লক্ষ্যনীয়।

চাকরির ক্ষেত্র হিসেবে লোকপ্রশাসন কেমন?

প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই রয়েছে প্রশাসন। সুতরাং, লোকপ্রশাসনের পরিসর অত্যন্ত বিস্তৃত। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়গুলোর মধ্যে লোকপ্রশাসন বিষয়ের নামে একটি মন্ত্রনালয় আছে এবং সেই জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ে (Ministry of Public Administration) লোকপ্রশাসন পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছে লোভনীয় পদে চাকরির সুযোগ।

এছাড়া বিশেষ সুযোগ রয়েছে সরকারি কর্ম কমিশনে। বিসিএসে যতগুলো ক্যাডার রয়েছে, এর মধ্যে প্রশাসন, পুলিশ, সিভিল সার্ভিস ক্যাডারে চাকরি পান এ বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা। এ ছাড়া দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা, প্রশাসন, প্রশিক্ষণ, গবেষণা ইত্যাদি বিভাগে তাঁরা অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন।

বাংলাদেশে কর্মরত বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, মানবাধিকার সংস্থা, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন, ব্যাংক, বিমা ও বিভিন্ন এনজিওতে এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভালো বেতনে কাজ করছেন। অনেকে আবার কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা পেশায় চাকরি করছেন।

দেশের বাইরে যেমন যুক্তরাজ্য, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে এ বিভাগের ডিগ্রিধারীরা এখন ভালো বেতনে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন।

গবেষণায় ও বিদেশে উচ্চশিক্ষায় লোকপ্রশাসন-

এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সংস্থার সাথে সহযোগিতামূলক গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন। ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করে থাকে। এছাড়া চিন ও ভারতেও রয়েছে এই বিষয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ।

বর্তমানে বিশ্বের নামকরা অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এই বিষয়ে অনলাইনে কোর্স করার সুযোগ করে দিচ্ছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- আমেরিকান ইউনিভার্সিটি, পয়েন্ট পার্ক ইউনিভার্সিটি, জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারেলিনা ইত্যাদি। এছাড়াও ইউরোপের অনেকগুলো দেশে বৃত্তি নিয়ে উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ রয়েছে।

লোকপ্রশাসন যাদের পড়া উচিৎ-

দেশ ও জনগনের সেবা করার মানসিকতা আছে, এমন লোকেদেরই এই বিভাগে পড়া উচিৎ। বিশেষ করে আমাদের দেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এটি বেশি প্রয়োজন। কাজের বিনিময়ে উপরি পাওয়ার মানসিকতা যাদের নেই তাদেরই লোকপ্রশাসন পড়া উচিৎ। সে বিজ্ঞান, ব্যবসা কিংবা মানবিক যে শাখারই হোক না কেন। একজন প্রশাসনিক ব্যক্তি সততার সাথে তার দায়িত্ব পালন করলে প্রতিষ্ঠান যেমন লাভবান হয়, তেমনই ব্যাপকভাবে দেশের উন্নয়ন ঘটতে থাকে। সেবার ব্রত ধারণ করা, দেশ ও জনগণকে নিয়ে চিন্তাশীল মানু্ষদেরই এই বিষয়ে পড়া উচিৎ 


আরও পড়ুন