গোবিন্দগঞ্জের ধর্মপুরে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহাৎসব

news paper

গোবিন্দগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৪-৬-২০২১ দুপুর ২:৩০

28Views

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের রাখালবুরুজ ইউনিয়নের ধর্মপুরে ১০টির বেশি পয়েন্টে নির্বিচারে চলছে ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে দিন-রাতে অবৈধ বালু উত্তোলন, বিক্রি ও পরিবহন। এতে গ্রাম, সড়ক ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে। অজ্ঞাত কারণে প্রসাশন দেখেও না দেখার ভান করছে। অবৈধভাবে নদী থেকে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলনে হুমকির মুখে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ, ব্রিজ, স্মৃতিসৌধসহ ফসলি জমি ‍এবং ৩৩ হাজার ভোল্টের বৈদ্যুতিক টাওয়ার।

সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার রাখালবুরুজ ইউনিয়নের ধর্মপুরে ১৫-২০টি ড্রেজার দিয়ে চলছে অনবরত বালু উত্তোলন। এসব পয়েন্টে ড্রাম ট্রাক, ট্রাক্টর সারিবদ্ধভাবে আনা-নেয়ার লম্বা লাইন দেখে যে কারো মনে হবে ওই স্থানে বালুমহাল আছে। আর যত্রতত্র বালু উত্তোলনের ফলে রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে একদিকে যেমন চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়ছে, অপরদিকে ধুলার স্তূপ পড়ে গেছে এলাকার বসতবাড়িতে। ফলে বাসাবাড়িগুলো বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

ভুক্তভোগী এলাকাবাসী বলছেন, আমাদের আসবাবপত্র ধুলায় একাকার, খাবার খেকে বসলে যদি ট্রাক যায় তাহলে খাওয়া বন্ধ রাখতে হয়। প্রতিবাদ করে লাভ নেই, যারা সমাজের মাথা তারাই এ কাজ করছে। তাই আমাদের সহ্য করা ছাড়া উপায় নাই। তা না হলে এলাকা ছাড়তে হবে। এমনি কয়েক দিন পর বন্যা এলে বাড়িঘড় থাকবে না। আল্লাহ ছাড়া কেউ নেই আমাদের। একেক বালুদস্যু বালু তুলে সড়কের পাশে পাহাড় পরিমাণ জমিয়ে রেখেছে। ধুলা-বালুর মধ্যে চলাচল করায় শ্বাসকষ্টজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে জনসাধারণ। শুধু তাই নয়, সড়ক-মহাসড়ক দিয়ে বেপরোয়াভাবে ড্রাম ট্রাক ও ট্রাক্টর চলাচল করায় হরহামেশা ঘটছে দুর্ঘটনা। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী তাদের চলাচলের রাস্তাঘাট, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নষ্ট হওয়ায় প্রশাসনের কাছে একাধিকবার অভিযোগ করেও অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ না হওয়ায় লিখিত অভিযোগপত্র নিয়ে ঘুরছেন প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে। আর বালুদস্যুরা অসাধু কিছু লোকের সাথে আ‍ঁতাত করে নির্বিচারে বালুর ব্যবসা করে আসছে। এই বালু উত্তোলনে শুধু ক্ষতিই নয়, সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব্য হারাচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, এলাকার কুখ্যাত বালুদস্যু শামীম মাস্টার, মাহাবুর, মোস্তাাফিজুর, তারিক চৌধুরী, জাহিদ চৌধুরী, নুনু মেম্বার, স্বাধীন ও মিলনসহ আরো কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তি ভূমি অফিসের পাশে নদী থেকে দীর্ঘদিন থেকে বালু উত্তোলন করছে। আমরা স্থানীয় তহসিলদার ও উপজেলা ভূমি অফিসে অভিযোগ করেছি কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

এ বিষয়ে স্থানীয় তহসিলদার সুজন মিয়া বলেন, আমি কী করব? আমার করার কিছুই নেই। সর্বোচ্চ ক্ষমতা এসিল্যান্ড স্যারের। তিনি চাইলেই বন্ধ করতে পারবেন। তিনি আরো বলেন, আপনারা আমাকে ফোন দিয়ে বিরক্ত করবেন না, আমাকে আমার কাজ করতে দিন। তবে এসব বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট নাজির হোসেন বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে সংশ্লিষ্ট তহসিলদারকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া আছে এবং আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাঈদ সকালের সময়কে বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এর‍ই মধ্যে বেশকিছু স্থানে অভিযান চালিয়ে জরিমানা ও নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখনো যেসব স্থানে অবৈধ বালু উত্তোলন করা হচ্ছে সেসব স্থানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী জোরদার অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণে প্রসাশনের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।


আরও পড়ুন