রাজনীতি মাঠে গড়াচ্ছে

news paper

সিরাজুল ইসলাম

প্রকাশিত: ১১-৫-২০২২ দুপুর ৩:১

29Views

দু’য়েকটি দল ছাড়া প্রায় সব রাজনৈতিক দল ঝিমিয়ে পড়েছিল। ‘প্রেস রিলিজ ও সংবাদ সম্মেলনে’ সীমাবদ্ধ ছিল তাদের কার্যক্রম। সেই  অবস্থা থেকে বের হয়ে আসছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং অন্যতম বৃহৎ দল বিএনপি। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে দলের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র সংশোধনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদকে। এ উপলক্ষে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের তথ্য হালনাগাদ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াকে। যত দ্রুত সম্ভব সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগ, যুব মহিলা লীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এদিকে, সারাদেশে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাদের ওপর ‘সরকারি দলের হামলার’ প্রতিবাদে ১২ ও ১৪ মে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার দুপুরে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথ সভা শেষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এছাড়া উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মধ্যে। মির্জা ফখরুলের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে সংবিধান অনুসারে। দর কষাকষি করে কোনো লাভ হবে। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় বিএনপি নির্বাচনে আসবে- ওবায়দুল কাদেরের এ বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেছেন, ওবায়দুল কাদেরকে বিএনপিতে যোগ দিয়ে বিএনপির সিদ্ধান্ত নিতে দায়িত্ব নিতে হবে। আমরা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বলেছি, বর্তমান অবৈধ শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না।

জানা গেছে, যত দ্রুত সম্ভব সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠন ছাত্রলীগ, যুব মহিলা লীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। গতকাল মঙ্গলবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে সহযোগী সংগঠনগুলোর বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয় বলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ছাত্রলীগ, যুব মহিলা লীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন আয়োজন করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। তারা আওয়ামী লীগ অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে কথা বলে আমাদের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিডিউল নেবে। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি অনুযায়ী সম্মেলনের তারিখ নির্ধারিত হবে। বৈঠকে উপস্থিত তিন সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দুয়েক দিনের মধ্যে আওয়ামী লীগের দপ্তর সেলের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারিখ নির্ধারণের জন্য নির্দেশনা দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন কাদের। আওয়ামী লীগের সম্পাদক মণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, সম্পাদক মণ্ডলীর সভায় আওয়ামী লীগের সম্মেলন সামনে রেখে গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র সংশোধনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদকে। ২৩ জুন দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাসান মাহমুদকে। এ ছাড়া দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের তথ্য হালনাগাদ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ছাত্রলীগের সর্বশেষ ২৯তম জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে। নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন ছাড়াই শেষ হয় সম্মেলন। তার আড়াই মাস পর ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি চূড়ান্ত করেন; যা ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। পরে চাঁদাবাজির অভিযোগে সমালোচনার মুখে থাকা রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রলীগের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। একই সময়ে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রথম সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। পরে ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তাদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুব মহিলা লীগের প্রথম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৪ সালের ৫ মার্চ। তখন নাজমা আক্তারকে সভাপতি ও অপু উকিলকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০১৭ সালের ১৭ মার্চে সংগঠনটির দ্বিতীয় জাতীয় সম্মেলনে সভাপতি পদে নাজমা আক্তার ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অপু উকিল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পুনঃনির্বাচিত হন। আর ২০১৭ সালের ৪ মার্চ সম্মেলনের মাধ্যমে মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন সাফিয়া খাতুন, সাধারণ সম্পাদক হন মাহমুদা বেগম। তার আগের সম্মেলন হয়েছিল ২০০৩ সালের ১২ জুলাই। ওই সম্মেলনে আশরাফুন্নেসা মোশাররফ সভাপতি ও ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা সাধারণ সম্পাদক হন। পরে পিনু খান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন।

সরকার সংবিধান থেকে নড়বে না: বিএনপির উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের অধীনেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো দরকষাকষি করে লাভ নেই। মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সম্পাদকমন্ডলীর সদস্যদের সঙ্গে দলের সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বৈঠকের আগে তিনি এ কথা বলেন। কাদের বলেন, বিএনপিকে বলব, দর কষাকষি করবেন না। কোনো লাভ নেই, দর কষাকষি করে। সরকার সংবিধান থেকে নড়বে না। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যেভাবে নির্বাচন হয়, ঠিক সেভাবেই সরকার নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবে। তিনি বলেন, বিএনপি যেসব কথা বলছে, দর কষাকষির জন্য বলছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন, নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতা পরিবর্তনের আর কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচনে যদি জনগণ আপনাদের ভোট দেন, নির্বাচিত করে বা আমরা হেরেও যাই, তারপরও এই নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে সব সময় থাকবো। জনগণকে আস্থায় নিয়ে ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল নির্বাচন আমরা করব। জনগণের ইচ্ছায় ক্ষমতার পরিবর্তন হবে। বিএনপিকে আমরা বলব, এদিক-সেদিক দর কষাকষি না করে, নির্বাচনে আসুন।

বিএনপির নির্বাচনে আসার বিকল্প নেই উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপির নেতারা ভালো করেই জানেন, দলের অস্তিত্ব রক্ষায় তাদের নির্বাচনে আসতেই হবে। তাদের হাতে কোনো বিকল্প নেই। সরকার ৩০০ আসনেই ইভিএম চায় জানিয়ে কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ দলগতভাবে ৩০০ আসনে ইভিএম চায়। নির্বাচন কমিশন তার সক্ষমতা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। তারা যদি না পারে, সেটা ভিন্ন কথা।

আসন্ন নির্বাচনের বিষয়ে কাদের বলেন, সরকারের পদত্যাগ নয়, সংবিধান অনুযায়ী যথা সময়ে নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। অবাধ-সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার কমিশনকে সহায়তা করবে। নির্বাচনে সরকারের কোনো কর্তৃত্ব থাকবে না। কর্তৃত্ব থাকবে নির্বাচন কমিশনের। সরকারের যে সব ডিপার্টমেন্ট নির্বাচনের বিষয়টা ডিল করবে সবকিছুই তখন নির্বাচন কমিশনের অধীনে চলে যাবে। সরকারের নির্দেশনায় তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও চলবে না। তারাও নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকবে। তিনি বলেন, ফখরুল সাহেব বলেছেন- ইভিএম তো পরের ব্যাপার, আগে পদত্যাগ। নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর। তারপর নির্বাচন।

কাদের বিএনপির উদ্দেশে প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেন, ইভিএম পরের ব্যাপার কেন? আপত্তি কোথায়? পৃথিবীর বহু দেশে ইভিএমে নির্বাচন হচ্ছে। আপনারা কি নির্বাচনে কারচুপি করতে চান? কারচুপি, জালিয়াতি এড়ানোর জন্যই ইভিএম ব্যবস্থা হচ্ছে। এছাড়া আধুনিক আর কোনো পদ্ধতি নেই, নির্বাচনে কারচুপি-জালিয়াতি ঠেকানোর। এখানে আপত্তি কেন থাকবে? পদত্যাগ কেন করতে হবে? কি কারণে, আমরা কি অন্যায় করলাম? আমরা বলতে চাই জনগণের কথা। দেশের মানুষ ১৩ বছর বিএনপি ও তাদের জোটের হাঁকডাক শুনেছে। কিন্তু পানি ঘোলা করে অবশেষে তারা ডায়লগেও এসেছেন প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে। নির্বাচনেও অংশ নিয়েছেন। এবারও সেই একই কথা নতুন করে বলছেন।

কুমিল্লায় আওয়ামী লীগ নেতাদের গুলি করার বিষয়টি তুলে কাদের বলেন, কুমিল্লায় এলডিপির মহাসচিবের ওপরে হামলা হয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব একটি বিবৃতি দিয়েছেন। আমরা প্রথমত বলতে চাই, এ হামলার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথাযথ তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেবেন। শেখ হাসিনার আমলে কোনো ধরনের অপকর্মকারীদের ছাড় দেননি। এখানেও কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। এতে কোনো সন্দেহ নাই।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এ ঘটনাকে অভিযুক্ত করে ফখরুল সাহেব অন্ধ সমালোচনা বিষদগার করেছেন। স্বভাবসুলভ বরাবরের মতোই। লক্ষণীয় বিষয় হলো এলডিপির মহাসচিব নিজ হাতে আমাদের কৃষক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুজন কর্মীকে গুলি করেছেন। তারা এখনো হাসপাতালে। এ বিষয়ে ফখরুল সাহেব একটি শব্দও বলেননি। পুরোপুরি চেপে গেছেন। এটা কি রাজনৈতিক সততা? এটা কি গণতন্ত্র? এ ধরনের সত্য গোপনের, হত্যা, সন্ত্রাসের রাজনীতি প্রশ্রয় দেন এবং লালনের কাজটি তারা করে আসছেন জন্মলগ্ন থেকে। ক্ষমতায় থাকা কালেও তারা এটি করেছেন। ফখরুল সাহেব আজকাল সব কিছু একচক্ষু হরিণের মত দেখেন। না হলে এলডিপির মহাসচিবের গুলি ছোড়ার বিষয়টি তিনি দেখতে পেতেন। তার বিবৃতি জনগণ প্রত্যাখান করেছে। সত্য লুকিয়ে শিবের গীত গাওয়ার জন্য। তিনি বিবৃতিতে আরেকটি বিষয় আবিষ্কার করেছেন, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে নাকি এগুলোর বিষয়ে ইন্ধন জোগানো হচ্ছে। বিএনপির রাজনৈতিক কৌশলের বিষয়ে কাদের বলেন, জনগণের ধারণা ক্ষমতা লিপ্সায় বিএনপির মহাসচিব পলিটিক্যাল হেলোসিনেশনে ভুগছেন। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে হামলার পরিকল্পনা করা, সন্ত্রাস চালানো, গ্রেনেড হামলা, আগুন সন্ত্রাস এসব তাদেরই চর্চা। আওয়ামী লীগ এসব অপচর্চা, অপরাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। তিনি বলেন, সন্ত্রাসের পথ তারাই বেছে নেয়, যারা ব্যালটে আস্থা হারিয়ে নির্বাচন বিমুখ হয়। ষড়যন্ত্র তাদের হাতিয়ার, তারা গণতন্ত্রের পথে না হেঁটে ক্ষমতায় যেতে চোরাগলি খুঁজে বেড়ায়। বিএনপির রাজনীতি জনগণ প্রত্যাখান করেছে।

এদিকে, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় বিএনপি নির্বাচনে আসবে বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দেওয়া বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল। তিনি বলেছেন, ওবায়দুল কাদেরকে বিএনপিতে যোগ দিয়ে বিএনপির সিদ্ধান্ত নিতে দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বলেছি, বর্তমান অবৈধ শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না। এর মধ্যে এতোটুকু ফাঁকফোকর নেই। এই সরকারকে যেতে হবে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের পরেই একটি অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। মঙ্গলবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় এক যৌথসভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। আগামী সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে ইভিএমের সক্ষমতা নেই, নির্বাচন কমিশনের দেওয়া মন্তব্যের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন যা বলার বলে দিয়েছেন, এখানে আমাদের বলার তেমন কিছু আছে বলে মনে হয় না। এই সরকার সচেতনভাবে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এই দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে। বিএনপি’র সিনিয়র নেতাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল ঈদের পরে আন্দোলন কাকে বলে দেখিয়ে দেব, এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের সবকিছুই আন্দোলনের অংশ, আমরা যা কিছু করছি তাই আন্দোলন। আন্দোলন বলতে আপনারা কি বোঝেন তা জানি না, আমরা যারা আন্দোলন করি তারা বুঝি আন্দোলন মানেই জনগণকে সম্পৃক্ত করা। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কর্মসূচি দিয়েছি এটাও আন্দোলনের কর্মসূচি, জিয়াউর রহমানের শাহাদৎবার্ষিকী উপলক্ষে যে কর্মসূচি দিয়েছি সেটাও আন্দোলনের কর্মসূচি। অস্থির হবেন না, আপনারা যেটা দেখতে চান সেটা খুব শিগগিরই দেখতে পাবেন। সয়াবিন তেলের মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই সরকারের পরিবর্তন হলে দ্রব্যমূল্যসহ সবকিছুই মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আসবে, নিয়ন্ত্রণ হবে। শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি থেকে বর্তমান সরকারের শিক্ষা নেওয়া উচিত কি না জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার শিক্ষা নিতে জানে না, যদি জানত তাহলে এই দশ বছরে শিক্ষা নিতে পারত। শ্রীলঙ্কাতে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে সব, আর এরা বঙ্গোপসাগরে ঝাঁপিয়ে পড়বে।

১২ ও ১৪ মে বিক্ষোভ করবে বিএনপি: সারাদেশে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাদের ওপর ‘সরকারি দলের হামলার প্রতিবাদে’ আগামী ১২ ও ১৪ মে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। মঙ্গলবার দুপুরে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথ সভা শেষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে আপনারা লক্ষ্য করেছেন, সারাদেশে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপির সিনিয়র নেতাদের থেকে শুরু করে অন্যান্য বিরোধী দলের নেতাদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে একটা সন্ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। কুমিল্লার দাউদকান্দিতে স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ওপর হামলা ও তার বাসভবনে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের আক্রমণ এবং পরে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

একই সঙ্গে কুমিল্লার চান্দিনায় এলডিপি মহাসচিব সাবেক মন্ত্রী রেদোয়ান আহমেদের গাড়িতে হামলা ও তাকে গ্রেফতার, ফেনীতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক জয়নাল আবেদীনের ওপর হামলা, পটুয়াখালীর সদস্য সচিব শিদাংশু সরকারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেওয়াসহ সাতক্ষীরা, নারায়ণগঞ্জ, পটুয়াখালীর নেতাদের ওপর হামলা করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। আমরা এসব ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এসব সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে আগামী ১২ মে ঢাকা মহানগরে এবং ১৪ মে সারাদেশে জেলা পর্যায় বিক্ষোভ সমাবেশের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

এর আগে নয়া পল্টনে বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে যৌথ সভা হয়। এতে বিএনপির রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, এবিএম মোশাররফ হোসেন, তাইফুল ইসলাম টিপু, তারিকুল ইসলাম তেনজিং, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, হেলেন জেরিন খান, মহানগর বিএনপির আমিনুল ইসলাম, যুব দলের সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেন, মঞ্জরুল ইসলাম মঞ্জু, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাইদ আহমেদ খান, শফিকুল ইসলাম চৌধুরী মিলন, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মজিবুর রহমান, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, উলামা দলের নজরুল ইসলাম তালুকদার, সেলিম রেজা, জাসাসের লিয়াকত আলী, জাকির হোসেন রোকন, ছাত্রদলের কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল উপস্থিত ছিলেন। 

 


আরও পড়ুন