টাঙ্গাইল : যে জেলায় কবিতার ফুল ফোটে

news paper

রাশেদ খান মেনন, টাঙ্গাইল

প্রকাশিত: ১-৬-২০২২ দুপুর ১২:৭

115Views

ইতিহাস ঐতিহ্যের এক প্রাচীন জনপদ টাঙ্গাইল। এই জেলাটি যেমন উপমহাদেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগের জন্মলগ্নের সাথে জড়িত(আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক  শামসুল হক দুজনই টাঙ্গাইলের অধিবাসী),জেলাওয়ারী হিসাবে মুক্তিযোদ্ধার  সংখ্যা এই জেলাটিতে সর্বাধিক। সন্ন্যাস আন্দোলন,ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন এবং ভাষা আন্দোলনে এই জেলার ভূমিকা ইতিহাসস্বীকৃত। নদী চর খালবিল বেষ্টিত এই জেলাটি তাঁতশিল্প,কাসাশিল্প,মৎসশিল্পে সমৃদ্ধ।যমুনা ধলেশ্বরী বংশাই নদী ঘেরা,শালবনের সৌন্দর্যমাখা এই জেলাটি কেবল ভূ-প্রকৃতি কিংবা গৌরবদীপ্ত রাজনৈতিক ইতিহাসের জন্যই নয়, শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি এবং শিক্ষায় এই জেলাটির ভূমিকা অনন্য এবং ঈর্ষনীয়। অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ টাঙ্গাইলকে বলেছেন কবিধাম,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই জেলাকে ঘোষণা করেছেন সংস্কৃতির নগরী হিসাবে।বলা হয়ে থাকে টাঙ্গাইল জেলার পথে প্রান্তরে কবিতার ফুল ফোটে। 
 
ষোড়শ শতাব্দীর প্রথমার্ধ থেকে টাঙ্গাইলে কবিতা চর্চার ইতিহাস পাওয়া যায়।ধারণা করা হয় শ্রীরায় বিনোদ এবং মুকুন্দ ভারতী -এই দুজন টাঙ্গাইলের প্রাচীন কবি।১৯১৫ সালে টাঙ্গাইল জেলায় জন্মগ্রহণ করেন 'ধর্মের পাঁচালী' ও 'কালিকা পুরাণ' খ্যাত কবি চন্ডীপ্রসাদ নেউগী। কবি আব্দুল হামিদ ইউসুফজাই এবং হেমচন্দের জন্মস্থান টাঙ্গাইল,সন্তোষের জমিদার প্রমথনাথ রায় চৌধুরী ছিলেন প্রখ্যাত কবি ও নাট্যকার। কাব্য ও নাটক মিলিয়ে তাঁর গ্রন্থের সংখ্যা কুড়িটি।টাঙ্গাইলের সন্তান বঙ্কিম চন্দ্র সেন ছিলেন 'আনন্দবাজার' ও 'দেশ' পত্রিকার সম্পাদক। চল্লিশ দশকের উল্লেখযোগ্য কবি মুফাখখারুল ইসলাম, যার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থের নাম 'জালালী কবুতর'। চল্লিশ দশকের আরেকজন বিখ্যাত কবি ছিলেন নরেশ গুহ,দুই বাংলাতেই তিনি ছিলেন সমান জনপ্রিয় ও সমাদৃত। কবি ও গবেষক আশরাফ সিদ্দিকী ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক এবং প্রেস ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান।লোকসাহিত্য নিয়ে রয়েছে তাঁর বিস্তর গবেষণা। পঞ্চাশের প্রখ্যাত কবি সাইয়িদ আতীকুল্লাহ,লোকমান হোসেন ফকির,আব্দুস সাত্তার, তারাপদ রায়ের জন্ম টাঙ্গাইল জেলায়। সাইয়িদ আতীকুল্লাহ ছিলেন একাধারে কবি ও গল্পকার।'বুধবার রাতে' গল্পগ্রন্থটির জন্য তিনি পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার। তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে 'আমাকে ছাড়া অনেক কিছু','আঁধির যত শত্রু মিত্র','অদম্য পথিকের গান'ইত্যাদি।লোকমান হোসেন ফকির ছিলেন মূলত গীতিকার। উপমহাদেশের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী ভূপেন হাজারিকার কণ্ঠে তার লেখা ' আমায় একজন সাদা মানুষ দাও যার রক্ত সাদা' গানটি তুমুল জনপ্রিয়। বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি আব্দুস সাত্তার কেবল কবি হিসাবে নয়, আদিবাসীদের উপর গবেষণার জন্যও সমাদৃত,তার রচিত গ্রন্থের সংখ্যা শতাধিক। প্রখ্যাত কবি তারাপদ রায় জন্মেছিলেন টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলার এলাসিন গ্রামে। তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।তার গ্রন্থের সংখ্যা অসংখ্য,তার সমগ্র রচনা জুড়েই প্রিয় স্বদেশ, চারাবাড়ি পোড়াবাড়ি, শ্যামাবাবুর খাল তথা টাঙ্গাইলের জন্য স্মৃতিকাতরতা দেখতে পাই।এই শক্তিমান কবির অসংখ্য কবিতার অজস্র পংক্তি কাব্যানুরাগীদের মুখে মুখে ফেরে।
 
দশকওয়ারী বিচারে ষাটের দশক যেন টাঙ্গাইলকে দান করেছে অকৃপণ হস্তে। মীর আবুল খায়ের,রফিক আজাদ,অরুনাভ সরকার, বুলবুল খান মাহবুব, আল মুজাহিদী,যোগব্রত চক্রবর্তী, আবু কায়সার, সাযযাদ কাদির, শাহনুর খান,মাহবুব সাদিক-এরা প্রত্যেকেই টাঙ্গাইলের সন্তান। মীর আবুল খায়ের অকাল প্রয়াত,ছিলেন টাঙ্গাইল আধুনিক কবি সঙ্ঘের সভাপতি। রফিক আজাদ এই দশকের উজ্জ্বলতম কবিদের একজন।কবিতায় নিজস্ব বোধ,সামাজিক ও রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা ও ব্যক্তিজীবনের টানাপোড়েনের আধুনিক প্রক্ষেপণ, সেই সাথে অক্ষরবৃত্ত আঠারমাত্রার সুনিপুণ প্রয়োগ তাকে করেছে স্বতন্ত্র,অনন্যউচ্চতায় আসীন।বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি অরুনাভ সরকার ছিলেন শুদ্ধ ভাষাচর্চা এবং নন্দনতত্ত্বের পূজারী,'নগরে বাউল','কেউ কিছুই জানে না','নারীরা ফেরে না' কবির উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ।  কবি ও রাজনীতিক বুলবুল খান মাহবুব ছিলেন ঐতিহাসিক স্যাড জেনারেশনের অন্যতম প্রবক্তা, তার লেখা পংক্তি একসময় দেয়ালে দেয়ালে স্লোগান হিসাবে ব্যবহৃত হতো- 'একুশ আমার রক্তে বাজায় অস্থিরতার সুর/বিপ্লব জানি মহামহীরুহ,একুশেতে অঙ্কুর'। একসময়ের তুখোর ছাত্রনেতা এবং ডাকসাইটে সাহিত্য সম্পাদক আল মুজাহিদী,ষাটের অন্যতম প্রধান কবি, একুশে পদকসহ তিনি বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।'হেমলকের পেয়ালা, 'ধ্রুপদ ও টেরাকোটা, কারাগারের কবিতা তার উল্লেখযোগ্য রচনা।সব্যসাচী লেখক আবু কায়সার পেশাগত জীবনে ছিলেন প্রথিতযশা সাংবাদিক। প্রধানত কবি হলেও গদ্যরচনায় ছিলেন সিদ্ধহস্ত।তার রচিত কিশোর উপন্যাস 'রায়হানে রাজহাঁস' বহুল পঠিত একটি গ্রন্থ।অকাল প্রয়াত কবি শাহনূর খান এর কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা দুইটি,'স্মৃতিতে নেই স্বপ্নেও নেই' এবং 'অহংকারের সমান'। কবি সাযযাদ কাদির ছিলেন পদ্য ও গদ্য উভয়েই পারদর্শী, সাংবাদিক হিসাবেও ছিলেন অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে 'যথেচ্ছ ধ্রুপদ ',রৌদ্রে প্রতিধ্বনি''দরোজার কাছে নদী'ইত্যাদি।বাংলা একাডেমি পুরস্কার জয়ী কবি মাহবুব সাদিক একাধারে কবি ও প্রাবন্ধিক হিসাবে সমাদৃত। বুদ্ধদেব বসু এবং জীবনানন্দের কবিতার ওপর তার রয়েছে বিস্তর গবেষণা।পেশাগত জীবনে অধ্যাপক ড.মাহবুব সাদিক একজন সাহিত্যপন্ডিত হিসাবে পরিচিত। 
 
সত্তরের দশক মুক্তির দশক,বিজয়ের দশক। মুক্তির আনন্দ কিংবা প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির দোলাচলে এ দশকের বেশিরভাগ কবিতাই উচ্ছ্বাসময়, আবেগসর্বস্ব,স্লোগানমুখর। আনন্দের বিষয় হচ্ছে টাঙ্গাইল এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এ দশক টাঙ্গাইলকে উপহার দিয়েছে প্রতিষ্ঠিত কয়েকজন কবি যারা শুদ্ধ কাব্যচর্চায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। মাহমুদ কামাল, জাহাঙ্গীর ফিরোজ,আলমগীর রেজা চৌধুরী, সোহরাব পাশা,মাহবুব বারী, মাহবুব হাসান,যুগলপদ সাহা,আলম তালুকদার, আবু মাসুম এ দশকের উল্লেখযোগ্য কবি ও লেখক।মাহমুদ কামাল কেবল কবি ও প্রাবন্ধিক হিসাবেই নয় একজন অভিভাবক হিসাবে টাঙ্গাইলের সাহিত্য চর্চাকে বেগবান করতে তিনি নিরলস নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। টাঙ্গাইলের আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসবটি সম্ভবত এই উপমহাদেশের বৃহত্তম কবিতা উৎসব, টাঙ্গাইল সাহিত্য সংসদ নিয়মিত আয়োজন করছে পাক্ষিক স্বরচিত কবিতা পাঠ প্রতিযোগিতা। আর এসবের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন একজন শুদ্ধাচারী ছান্দসিক কবিতাসাধক-মাহমুদ কামাল,যিনি ব্যাকরণসিদ্ধ প্রকরণের সাথে আধুনিকতার সংমিশ্রণ ঘটিয়ে এই মুহূর্তে বাংলা কবিতার এক স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন।প্রথম কাব্য 'পরকীয়া ' থেকে শুরু করে 'গোপনেরও সৌন্দর্য আছে ' পর্যন্ত তিনি বিষয় আঙ্গিক ও প্রকরণে এনেছেন যুগোপযোগী পরিবর্তন।  জাহাঙ্গীর ফিরোজ কবি হিসাবে স্বাতন্ত্রের অধিকারী, তার একটি লাইন কাব্যপ্রেমিকদের মুখে মুখে ফেরে-'কেন এই পাসপোর্ট, কাঁটাতার কাঁটাতার খেলা/ পৃথিবী আমার,আমি হেঁটে যাব'।কবির উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে 'বদ্ধ মাতাল রোদে',চাকুরিজীবীদের কোনও স্পার্টাকাস নেই',ছেড়া টুকরো মেঘ, 'লালনের পাখি উড়ে যায়' ইত্যাদি। মাহবুব বারী আত্মমগ্ন কবি,তার কবিতাগ্রন্থ 'অধরা এবং ঈশ্বরের ছবির ওপর পাঠে এ ধারণা স্পষ্ট হয়। কবিতায় মিথের ব্যবহারে অনন্য কবি মাহবুব হাসান,'তন্দ্রার কোলে হরিণ','নিসর্গের নুন' তার উল্লেখযোগ্য রচনা,কবিতার পাশাপাশি তিনি প্রচুর প্রবন্ধ লিখেছেন।।আলমগীর রেজা চৌধুরী আপাদমস্তক রোমান্টিক কবি। মূলত কবি হলেও তিনি গল্প,উপন্যাস রচনায় সিদ্ধহস্ত, সাংবাদিক হিসাবেও অনুসরণযোগ্য। প্রবাহমান ছন্দের কবি সোহরাব পাশা জাতীয় পত্র-পত্রিকা ও লিটল ম্যাগাজিনের জনপ্রিয় মুখ। যুগলপদ সাহার কবিতায় স্মৃতিকাতরতা এবং নৈসর্গিক আবেদন নান্দনিক অবয়বে ধরা দেয়। আলম তালুকদার মূলত শিশু সাহিত্যিক, অজস্র গ্রন্থের প্রণেতা সদ্য প্রয়াত সদাহাস্য মুখ এই মানুষটি সাহিত্যাঙ্গনে তুমুল জনপ্রিয় একজন।
 
আশির দশকে টাঙ্গাইল জেলায় বেশ কয়েকজন উজ্জ্বল কবি লেখকের আবির্ভাব ঘটেছে।এদের মধ্যে  সমরেশ দেবনাথ,আলীম মাহমুদ,কাজী খোদেজা বেগম,শ্যামল সেন,ফেরদৌস সালাম,রতন মাহমুদ, রোকেয়া ইসলাম, শামসেত তাবরেজী,শফিক ইমতিয়াজ, জাহিদ মুস্তাফা,শরীফ শাহরিয়ারের নাম উল্লেখযোগ্য। এই দশকটিতে মূলত প্রথার দেয়াল ভেঙে কবিতাকে বিমূর্তবাদের দিকে ধাবিত করার প্রচেষ্টা এবং একই সাথে লিটল ম্যাগাজিন কেন্দ্রিক সাহিত্য আন্দোলনের প্রবনতা টের পাওয়া যায়।টাঙ্গাইলের এই দশকের লেখকদের মধ্যে আলীম মাহমুদ চর্যাপদকে সঠিক রাগে সুরারোপ করে ইতিমধ্যে আলোচনায় এসেছেন।রোকেয়া ইসলাম একই সাথে গদ্য ও পদ্যে সমান স্বাচ্ছন্দ্য,তার নির্দেশনায় পরিচালিত 'বৃহস্পতির আড্ডা' এ সময়ের আলোচিত সাহিত্য সংগঠন। শফিক ইমতিয়াজ কবিতা বিশেষত ছড়ায় ভীষণ জনপ্রিয়, শামসেত তাবরেজী কবি ও চিত্রশিল্পী হিসাবে আলোচিত।
 
নব্বই দশকে টাঙ্গাইলের সাহিত্যাঙ্গনে কবিতায় একটা খরাভাব দেখা গেলেও কথাসাহিত্য ও প্রবন্ধে বেশ উজ্জ্বলতা দেখা যায়।এ ক্ষেত্রে দুজনের নাম অবশ্য উল্লেখ্য। একজন বহুমাত্রিক লেখক,প্রাবন্ধিক,ভ্রামণিক,সাংবাদিক ও সৃজনশীল প্রকাশনা আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিত্ব  খান মাহবুব এবং অন্যজন এ সময়ের উজ্জ্বল ও আলোচিত কথাশিল্পী রাশেদ রহমান। খান মাহবুব অসংখ্য জনপ্রিয় গ্রন্থের রচয়িতা,এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ হচ্ছে 'টাঙ্গাইল জেলার ইতিহাসঃ জেলা পরিচিতি টাঙ্গাইল' মওলানা ভাসানীর রচনা, টাঙ্গাইলের অজানা ইতিহাস, ময়মনসিংহের মেয়েলী গীত,বইমেলা ও বই সংস্কৃতি,রোহিঙ্গানামা,করোনার কারসাজি ইত্যাদি। রাশেদ রহমান এ সময়ের আলোচিত গল্পকার। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, গ্রামীণ পটভূমিতে সাধারণ মানুষের সুখ দুঃখ হাসি কান্না মিলন বিচ্ছেদ তার গল্পের প্রধান উপজীব্য। তার রচিত গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে 'দেশে আর্মি নামলে যে গল্পের জন্ম হয়' ঈশ্বরের চোখে জল,ছিনতাইকারীর চোখ,বিষলক্ষার ছুরি,কুঞ্জ ও কালনাগ,রাতের করতলে মাতাল চাঁদ,ইত্যাদি। তার রচিত উপন্যাস 'শহীদ সতীশচন্দ্র দাস সড়ক,পতিতামঙ্গল,'জলকুসুমের আখ্যান' সমকালে তুমুল সমাদৃত। 
 
নব্বই এর অনুর্বরতা কাটিয়ে শূন্য ও প্রথম দশক টাঙ্গাইলের কবিতাঙ্গনে ধনধান্য পুষ্পভরা। বিমূর্তবাদের শৈল্পিক বিকাশ,চিত্রকল্পের অভিনবত্ব, চমক সৃষ্টির আড়ম্বরপূর্ণ সমাপ্তি নিয়ে এ সময়ে টাঙ্গাইলের কবিতা স্বকীয়তার স্বাক্ষর রেখে চলছে। এ সময়ের উল্লেখযোগ্য কবিদের মধ্যে সোহেল হাসান গালিব,স্বপন সৌমিত্র,শারদুল সজল,আযাদ কামাল,তানিয়া বখ্শ,কুশল ভৌমিক, নাসরিন রশীদ, এমরান হাসান,রুদ্র মোস্তফা,মাহফুজ মুজাহিদ, বিদ্যুৎ খোশনবিশ,কাশীনাথ মজুমদার ইত্যাদি। 
 
কেবল কবিতা বা গল্প নয় নাটকেও টাঙ্গাইল এর অবদান জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃত। মন্থথ রায়,নাট্যজন গোলাম আম্বিয়া নূরী,নাট্যজন মামুনুর রশীদ, তৌফিক আহমেদ যারা অসংখ্য জনপ্রিয় এবং মঞ্চ নাটকের রচয়িতা।এছাড়াও চলচ্চিত্র এবং নাটকের বেশ কয়েকজন গুণী অভিনেতা অভিনেত্রীর জন্ম টাঙ্গাইল জেলায়, এদের মধ্যে আব্দুর রহমান রক্কু,মামুনুর রশীদ,মান্না,অমিত হাসান,খালেদ খান,তারানা হালিন,নিশোর নাম উল্লেখযোগ্য। শিক্ষাক্ষেত্রে টাঙ্গাইল সবসময়ই অগ্রসরমাণ। এখানে জন্মেছেন শিক্ষাবিদ ও সুসাহিত্যিক প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ,উপমহাদেশের প্রথম নারী গ্রাজুয়েট বেগম ফজিলাতুন্নেছা, শিক্ষানুরাগী দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা,সংস্কৃতি হিতৈষী মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ফজলুর রহমান খান ফারুক,কিংবদন্তী মুক্তিযোদ্ধা ও সুলেখক বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকীসহ আরও অনেক অনেক জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিবর্গ। টাঙ্গাইল শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির উর্বর ভূমি। যমুনা ধলেশ্বরী আর বংশাই নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠা এই প্রাচীন জনপদে আক্ষরিক অর্থে নয় বাস্তবিকই কবিতার ফুল ফোটে। 
 
 
কুশল ভৌমিক
সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ 
কুমুদিনী সরকারি কলেজ, টাঙ্গাইল।

আরও পড়ুন