১১ মাসে ৫১ শতাংশ কমেছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি

news paper

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৮-৬-২০২২ সকাল ৯:২৬

18Views

অতিমাত্রায় সুদ পরিশোধ ও ঋণের লাগাম টানতে সঞ্চয়পত্রে নানা শর্ত জুড়ে দিয়েছে সরকার। ফলে কমেছে বিক্রির পরিমাণ। এতে সরকারের এ খাতের ঋণও কমে গেছে। জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে ৯৭ হাজার ৩৫০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র জমা হয়েছে। এরমধ্যে মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধ করা হয়েছে ৭৯ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। এ সময়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের ৩৬ হাজার ২৮ কোটি টাকা মুনাফা পরিশোধ করা হয়েছে। এ অর্থ জনগণের করের টাকা।

অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত পুরনো সঞ্চয়পত্রের মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধের পর এ খাতে সরকারের নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৯ হাজার ২২৯ কোটি টাকা বা ৫১ শতাংশেরও বেশি কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১১ মাসে নিট বিক্রি ছিল ৩৭ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতিমাত্রায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে নানা শর্ত জু‌ড়ে দি‌য়ে‌ছে সরকার। এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে সুদহার কমানো হয়েছে। আবার ঘোষণার বাইরে সঞ্চয়পত্র থাকলে জেল-জরিমানার বিধান করা হয়েছে। এ কারণে অনেকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমিয়েছেন।

একক মাস হিসেবে চলতি বছরের মে মাসে ৭ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র জমা হয়েছে। এ সময় মূল অর্থ ও মুনাফা পরিশোধ হয়েছে ৭ হাজার ২২৬ কোটি টাকা, যার মধ্যে গ্রাহকদের মুনাফা পরিশোধ করা হয়েছে ৩ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা। মে মাসে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৩৮ কোটি টাকা।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে এ খাত থেকে সরকার নিট ৩২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে। ১১ মাসে অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে নিয়েছে ৫৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ ঋণ।

আসছে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেবে বলে ঠিক করেছে সরকার। গত ৯ জুন জাতীয় সংসদে  স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ তথ্য জানান। তিনি আগামী অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুদহার অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করেছেন।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘স্বল্পআয়ের লক্ষ্যভিত্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য উচ্চ সুদহারের সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ব্যবস্থা রাখা হলেও উচ্চআয়ের বিনিয়োগকারীরা এ স্কিমসমূহের সুবিধা নিচ্ছিল বেশি। সে কারণে আমরা ইতোপূর্বে বিক্রয় ব্যবস্থাপনা অটোমেশন করেছিলাম। যার ফলে নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ক্ষমতা সীমিত হয়েছে। এ ছাড়াও, সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও টিআইএন নম্বর প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘সংস্কার প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র হতে প্রাপ্ত মুনাফার উপর নির্ভরশীল স্বল্প-আয়ের মানুষের স্বার্থ সমুন্নত রেখে ১৫ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সীমা ভেদে ১ থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত মুনাফার হার কমানো হয়। এতে করে সঞ্চয়পত্র বাবদ সরকারের সুদ ব্যয় কমলেও ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীদের ক্ষেত্রে মুনাফার হার একই থাকবে।’

২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ৪২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল সরকার, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ৪৯ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরকার ঋণ নিয়েছিল ৪৬ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নিয়েছিল ৫২ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা।


আরও পড়ুন