সংসদে এমপি আশেকের প্রস্তাব

জোরালো হচ্ছে পদ্মার ফেরি কুতুবদিয়া চ্যানেলে চলাচলের দাবি

news paper

নজরুল ইসলাম, কুতুবদিয়া

প্রকাশিত: ২৮-৬-২০২২ দুপুর ৩:৪৪

3Views

স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ার পর ওই রুটের ২৯টি ফেরি থেকে অন্তত দু-একটি ফেরি কুতুবদিয়া-মগনামা রুটে চলাচলের দাবি তুলেছেন দ্বীপের দেড় লক্ষাধিক মানুষ। তাদের দাবি, মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন কুতুবদিয়া চ্যানেল পার হচ্ছেন হাজার হাজার নারী-পুরুষ। পারাপারের জন্য যে নৌযানগুলো এই চ্যানেলে দেয়া হয়েছে, সেগুলোতে ন্যূনতম নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ফলে প্রাণ হাতে নিয়ে প্রতিনিয়ত ঘাট পারাপার করছেন যাত্রীরা।
 
স্থানীয়দের অভিমত, বর্ষা মৌসুমে কুতুবদিয়া চ্যানেল পার হওয়ার অভিজ্ঞতা নতুন কারো একবার হলে সে জীবনেও এ পথে আর যাতায়াত করতে চাইবে না। কুতুবদিয়া দ্বীপটিতে দেড় লাখ মানুষের বসতি। সরকারের অবকাঠামোগত উন্নয়ন চলমান রয়েছে দ্বীপে। বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ চলছে। সড়কেরও সংস্কার কাজ চলছে। বিদ্যুতায়নের জন্য খুঁটিতে তারসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি লাগানো হচ্ছে। তারপরও কুতুবদিয়া চ্যানেলের কারণে উন্নত যোগাযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন এখানকার বাসিন্দারা। বিপদসংকুল পরিস্থিতিতেও লক্কর-ঝক্কর নৌকা ও ট্রলারে করে নদী পার হতে হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। স্বাধীনতার ৫২ বছরেও এই নৌপথে ফেরি সার্ভিস চালু না হওয়ায় আক্ষেপ রয়েছে তাদের।
 
সম্প্রতি ভবিষ্যতে চালুর জন্য ১৯টি নতুন ফেরি রুট চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই তালিকায় কুতুবদিয়া চ্যানেলের নাম না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কুতুবদিয়ার অবহেলিত জনসাধারণ।
 
এদিকে, স্থানীয় জনগনের দাবির বিষয়টি জাতীয় সংসদে গুরুত্বের সাথে উপস্থাপন করেছেন কুতুবদিয়া-মহেশখালী আসনের এমপি আশেক উল্লাহ রফিক।  তিনি কক্সবাজার -মহেশখালী ও কক্সবাজার -কুতুবদিয়া রুটে ফেরির চালুর দাবি করেছেন। 
 
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দুর্বল ও অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে খেসারত দিতে হচ্ছে তাদের। যুগের পর যুগ ধরে এই নৌরুটে ফেরি চালুর দাবি জানানো হলেও তাদের কথার কোনো মূল্যায়ন হয়নি এ পর্যন্ত। ভবিষ্যতে হবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তারা জানিয়েছেন, "কুতুবদিয়া চ্যানেলে ফেরি চাই " দাবিটি জোরালো হচ্ছে। দাবিটি বাস্তবায়ন হবে বলে আশাবাদী তারা।
 
তবে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক বোদ্ধারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা যুক্তি দিয়ে এখানে ফেরি চালু না হওয়ার পেছনে অনেক কারন দেখানোর চেষ্টা করছেন। তাদের মতে কুতুবদিয়া - মগনামা পারাপারের জন্য ফেরি চাওয়াটা কাল্পনিক। এ দাবি কখনো পূরণ হবে না। 
 
কুতুবদিয়া উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি হুমায়ুন সিকদার বলেন, 'সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি দ্বীপবাসী। ফেরি সার্ভিস চালু অনেক দিনের দাবি এখানকার বাসিন্দাদের। কার কথা কে শোনে! ফেরি চালু হলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আনা-নেওয়ার চাহিদা পূরণ হবে। মানুষের খরচও কমবে। কিন্তু একটি সিন্ডিকেট উন্নয়ন চায় না। তাদের এমন জঘন্য কার্যক্রমে কষ্ট পাচ্ছে কুতুবদিয়ার হাজার মানুষ। ঘাট ইজারাদারদের কালো ইশারায় ফেরি সার্ভিস চালু করা হচ্ছে না।’  
 
এছাড়া ইজারাদার সিন্ডিকেট সাধারণ মানুষজনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। মগনামা-কুতুবদিয়া ঘাট পারপারে টুলসহ নিয়ম মোতাবেক ২০ টাকা ডেনিশ বোট ভাড়ার মধ্যে ইজারাদার ৩০ টাকা নিচ্ছে।  স্পিডবোটে ৭০ টাকার জায়গায় নিচ্ছে ১০০ টাকা। ফলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় হচ্ছে দ্বীপবাসিকে। অথচ চারদিক সমুদ্রে ঘেরা এ উপজেলায় উৎপাদিত হয়ে থাকে নানা ধরনের অর্থনৈতিক  পণ্য। কিন্তু দ্রুত পরিবহনের সুযোগ না থাকায় প্রতিবছর আর্থিকসহ বিবিধ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে কৃষকরা। 
 
চট্টগ্রাম, চকরিয়া ও কক্সবাজার থেকে পণ্য পরিবহনের জন্য বড়ঘোপ-মগনামা নৌ রুটের নদীতে ফেরি সার্ভিস চালুর দাবি এলাকার বিভিন্ন পেশার মানুষের।
 
জানা যায়, ২০০৮ সালে কুতুবদিয়ার বাসিন্দা সাবেক সচিব আ,ম,ম নাসির উদ্দিনের প্রচেষ্টায়  সী ট্রাক চালু হয়েছিল। কিন্তু কয়েকমাস পার না হতেই সেই সী ট্রাক অদৃশ্য কারণে বন্ধ হয়ে যায়।
 
 বর্তমানে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌ রুটে আটটি এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে ২১টি ফেরি চলাচল করছে। এই দুই রুটে মোট ফেরি আছে ২৯টি। পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ার  পর ওইসব ফেরি ও লঞ্চের কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
 
স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালুর পর মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও শরীয়তপুরের কাঁঠালবাড়ির মধ্যে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
তাই ভবিষ্যতে চালুর জন্য ১৯টি নতুন ফেরি রুট চিহ্নিত করা হয়েছে। আবার বর্তমানে চালু রুটেও ফেরির সংখ্যা বাড়ানো হবে বলেও জানা গেছে। প্রস্তাবিত এসব রুটের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ থেকে গাইবান্ধার বালাসী ঘাট, মানিকগঞ্জের আরিচা থেকে পাবনার নরাদহ, পিরোজপুরের বেকুটিয়া থেকে চরখালী, কক্সবাজার থেকে মহেশখালী, বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ থেকে হিজলা এবং বরগুনা থেকে আমতলী।
 
সূত্রে জানা গেছে, কুতুবদিয়া চ্যানেলের দূরত্ব ৩ কিলোমিটারের মত হবে । এই পাড়ি দিতে স্পীড বোটে সময় লাগে ৫ থেকে ৭ মিনিট। ডেনিশ বোটে ২০ থেকে ৩০ মিনিট। কিন্তু খরচ দূরত্ব ও সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। আবার ঝুঁকিও বেশি। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, এই নৌ রুটে মালামাল নিয়ে পারাপার হওয়া বিষণ কষ্টের।  এমনকি উন্নত চিকিৎসার জন্য মুমূর্ষ রোগী নদী পার হতে গিয়ে মারা যাওয়ার ঘটনাও কম নয়।
তাই এই ঘাটে ফেরি সার্ভিস চালুর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় কয়েক লক্ষাধিক বাসিন্দা।

আরও পড়ুন