পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ৮ জুলাই

news paper

সাঈদ ইব্রাহিম,পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ৬-৭-২০২২ বিকাল ৬:৫৫

14Views

দখিনের একমাত্র আলোকিত বাতিঘর পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি)’র ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ৮ জুলাই। কৌশর পেরিয়ে যৌবনে পর্দাপণ করা ক্যাম্পাসটি নিজস্ব ঐতিহ্য ও স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে ইতিমধ্যে প্রযুক্তি নির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে পদার্পণ করতে যাচ্ছে গৌরবময় সাফল্যের ২২ বছরে।
 
২০০০ সালের ০৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবহেলিত দক্ষিণ বঙ্গের জনগণের উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলায় সাবেক পটুয়াখালী কৃষি কলেজের অবকাঠামোতে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। বিজ্ঞানমুখী শিক্ষার প্রসার, উচ্চশিক্ষার সুযোগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যথাযথ গুরুত্ব প্রদানসহ গবেষণার সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি ও কৃষি ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে পটুয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী দৈনিক সকালের সময়কে বলেন, ২০০০ সালে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিনাঞ্চলে উচ্চশিক্ষার যে বীজ রোপণ করেছিলেন তা আজ দখিনের আলোর বাতিঘর নয় দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বর্হিবিশ্বেও আলো ছড়াচ্ছে। একটি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কৃষি, বিজ্ঞান, প্রকৌশল আর প্রযুক্তিশিক্ষার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। আধুনিক ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কয়টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছেন তার মধ্যে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম।

বিশ^বিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম রুবেল জানান, প্রতিষ্ঠার পর হতে বিশ্ববিদ্যালয়টি আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রসর অবদানের জন্য আজ দেশ-বিদেশে বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছে। প্রাথমিকভাবে কৃষি, সিএসই ও বিবিএ ৩টি অনুষদে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় যা সময়ের পরিক্রমায় আজ ৮টি অনুষদের অধীনে (কৃষি অনুষদ, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ, বিজনেস এ্যাডমিনিস্ট্রেশন অনুষদ, মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ, এ্যানিমাল সায়েন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদ, পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদ, নিউট্রিশন এন্ড ফুড সায়েন্স অনুষদ এবং ল এন্ড ল্যান্ড এ্যাডমিনিস্ট্রেশন অনুষদ) শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
এই ৮টি অনুষদের অধীনে ৯টি ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে। ৮৯.৯৭ একর আয়তনের ওপর প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে স্নাতক পর্যায়ে ৩৬৯১ জন, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ৪৫১ জন এবং পিএইচডি পর্যায়ে ২৪ জন ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়নরত আছে। শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ২৫৩ জন শিক্ষক, ১৮৩ জন কর্মকর্তা ও ৫২৯ জন কর্মচারী নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।

শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধা প্রদানের জন্য ৫টি ছাত্র হল এবং ৩টি ছাত্রী হল রয়েছে।

ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত দৈনিক সকালের সময়কেপ  বলেন, সেশনজটমুক্ত এ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে দক্ষ গ্রাজুয়েট তৈরী করার লক্ষ্যে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পবিপ্রবির কৃষি অনুষদের শিক্ষকগণ দেশের কৃষিতে সমৃদ্ধি আনয়নকল্পে ফসলের নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন করে তা কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
দক্ষিণবঙ্গের সর্ববৃহৎ শিক্ষালয় হিসেবে সুনামের সঙ্গেই এর অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে। এ ক্যাম্পাসের হাজার হাজার প্রাক্তন শিক্ষার্থী দেশ-বিদেশের নানা প্রতিষ্ঠানে উচ্চতর পদে কর্মরত রয়েছে। এটি নিম্ন-মধ্যবিত্ত এবং গরিব পরিবার থেকে আসা শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার জন্য আদর্শ স্থান। বাস্তবিকভাবেই পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলা শহরের দৈনন্দিন খরচ অন্যান্য বড় শহরের তুলনায় কম। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ব্যয়ও অস্বচ্ছল পরিবারের সামর্থ্যের মধ্যে রাখা হয়েছে। প্রায় সকল শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন ব্যবস্থা চালু রয়েছে। তারপরেও বরিশাল বিভাগীয় শহর এবং পটুয়াখালী জেলা শহর থেকে আসা-যাওয়ার জন্য রয়েছে সাশ্রয়ী পরিবহন ব্যবস্থা।
তিনি বলেন, পবিপ্রবিকে ডিজিটাল ক্যাম্পাসে পরিণত করা হয়েছে।  লাইব্রেরি আধুনিকায়নের বহুবিধ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে প্রায় স্থবির শিক্ষা কার্যক্রমকে সচল করার লক্ষ্যে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা গ্রহন এবং শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে একটি রিকভারি প্লান তৈরি করা হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বমানের দক্ষ গ্রাজুয়েট তৈরীর জন্য আউটকাম বেইজড কোর্স-কারিকুলাম তৈরীর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে এ এলাকার বিভিন্ন প্রান্তিক চাষীদের চাষাবাদের ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, তথ্য-প্রযুক্তির প্রসার, মৎস্যজীবীদের উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে মাছ চাষ, মাছের পরিচর্যা ও সংরক্ষণ, গবাদী পশু পালন ও চিকিৎস্যা সুবিধা প্রদান, খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ে সচেতনতা তৈরীর লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ প্রদানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
এ ছাড়াও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে সিএসই অনুষদ এবং কৃষি ব্যবসা ও বিপনণ ব্যবস্থপনার জন্য বিজনেস এ্যাডমিনিস্ট্রেশন অনুষদ একত্রে কাজ করে চলছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংস্থার অর্থায়নে প্রায় ৮৪ টি গবেষণা প্রকল্প চলমান রয়েছে। এ সব গবেষণা প্রকল্প থেকে আহরিত জ্ঞান দেশের উন্নয়নের কাজে লাগানো হচ্ছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়টির উত্তরোত্তর উন্নয়নের জন্য বর্তমানে প্রায় সাড়ে-চারশত কোটি টাকার অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।
তিনি আরো জানান, এ প্রকল্পের আওতায় দুইটি ১০তলা আবাসিক হল ও একটি ১০তলা একাডেমিক ভবন নির্মিত হবে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ও অবোকাঠামোগত ব্যাপক উন্নতি সাধিত হবে। সমুদ্র ভিত্তিক অথনৈতিক কার্যক্রম (বøু -ইকোনমি) জোরদারকল্পে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় ‘‘মেরিন সায়েন্স এন্ড রিসার্স ইনস্টিটিউট’’ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের ২০৪১ সালের ভিশন “উন্নত বাংলাদেশ” গঠনের লক্ষ্যে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বলেও দাবী করেন তিনি।

তিনি আরো জানান, পবিপ্রবি ক্যাম্পাসের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো ক্যাম্পাসের সৌর্ন্দয। এর প্রকৃতির অপরূপ শোভা আর দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো যে কোনো মানুষকেই বিমোহিত করবে। এ ক্যাম্পাসে রয়েছে সারি সারি নারিকেল গাছসহ হরেক রকমের গাছ-গাছালি। ক্যাম্পাসের ভেতরে রয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নিজ হাতে রোপন করা একটি সুন্দর বকুল গাছ। রয়েছে কয়েকটি প্রশস্ত লেক যা ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য অনেকাংশে বৃদ্ধি করেছে।
প্রশাসনিক ভবনের সম্মুখে স্থাপন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ ভাস্কর্য ও মুর‌্যাল, ৭ বীরশ্রেষ্ঠের আবক্ষ ভাস্কর্য ও ‘‘জয়বাংলা” নামে একটি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি ভাস্কর্য। ক্যাম্পাসটি দশর্নীয় স্থান হিসেবেও ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে।

প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে অনেক পযর্টক ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে ভিড় জমায়।

প্রতি বছরের মত এ বছরও ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস” আনন্দঘন পরিবেশে পালিত হবে। এগিয়ে যাবে দক্ষিণ বাংলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ এই প্রত্যাশা ব্যাক্ত করেন তিনি।

আরও পড়ুন