শোকাবহ আগস্ট নিয়ে ববি শিক্ষার্থীদের ভাবনা

news paper

জাকির হোসেন, ববি

প্রকাশিত: ১৫-৮-২০২২ রাত ৮:৫৫

30Views

বিশ্ব মানবতার ইতিহাসের ঘৃণিত,বর্বর,নৃশংসতম হত্যাকান্ডের অন্যতম একটি ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার স্বপরিবারের লোকদের হত্যা৷এটি শুধু একটি হত্যাকান্ড নয় বরং একটি দেশের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেওয়ার পূর্বপরিকল্পনা৷স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ট নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছিলো বাংলাদেশ৷ঠিক তখনই একদল মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ও বিদেশী ঘাতক শত্রুদের চক্রান্তে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে হত্যা করে৷পনোরই আগস্ট বাঙালী জাতির জন্য লজ্জার ও কলংকিত অধ্যায়৷শোকাবহ এই আগস্ট নিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরেছেন দৈনিক সকালের সময় পত্রিকার ববি প্রতিনিধি মো.জাকির হোসেন৷


"১৫ আগস্ট বাঙালী জাতির কালো অধ্যায়"

১৫ আগস্ট বাঙালীর ইতিহাসে এক বেদনাবিধুর ও বিভীষিকাময় দিন। বাঙালী জাতির কাছে আগস্ট মানেই শোকের মাস, বেদনার মাস। এই শোকের মাসে জাতির পিতার প্রতি রইলো গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে জাতি পৃথিবীর বুকে বীর বাঙালী উপাধি লাভ করল।১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে সেই বীর বাঙালী পৃথিবীর বুকে পরিচয় লাভ করল পিতৃহন্তা জাতি হিসেবে। বাঙালীর মহাদ্রোহের মহা নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কে কারাগারে রেখেও স্পর্শ করার সাহস পায় নি পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। সেই মহানায়ক কে সপরিবারে হত্যা করে নরপিশাচরা। কিন্তু মহানায়ককে মুছে ফেলা যায় না। তিনি বাঙালীর ইতিহাসে অম্লান হয়ে থাকবেন চিরকাল।


শাহজাদী
শিক্ষার্থী,বাংলা বিভাগ,বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়


"১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুর স্বপরিবারে  হত্যাকান্ড গণহত্যার সামিল ’’

বাংলার ইতিহাসে পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট ন্যাক্কারজনক এবং জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলার অবিসংবাদিত নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ওপর।

সেই হত্যাকাণ্ড থেকে পরিত্রাণ পায়নি ৪ বছরের শিশু সুকান্ত বাবু, ১০ বছরের শিশু শেখ রাসেল ও আরিফ সেরনিয়াবাত। রক্ষা পায় নাই মহিয়সী নারী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধু আমার মা আরজু মণি সেরনিয়াবাতসহ নিরীহ অবলা নারী সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল। এ দিক দিয়ে বিচার করলে এই হত্যাকাণ্ড গণহত্যার সামিল। কারণ সেদিন নারী-শিশু নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছিল।

এই হত্যাকাণ্ড ছিল সুদূরপ্রসারী এক পরিকল্পিত। এর মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতার সূর্য সম্পূর্ণরূপে উদিত হওয়ার পূর্বেই আকস্মিকভাবে অস্তমিত করা হয়েছিল। নস্যাৎ করা হয়েছিল বাঙালির দুই শতাধিক বছরের স্বাধীনতার আকাঙ্খা। এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত শত্রুরা প্রতিশোধ নিয়েছিল বাঙালি জাতির উপর। এই হত্যাকাণ্ড ছিল ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীতাকারী দেশি-বিদেশী পরাজিত শক্তির প্রতিশোধ। ১৯৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুকে পশ্চিম পাকিস্তানীরা ফাঁসি দেওয়ার চেষ্টা করেও ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে মামলাটি প্রত্যাহারে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা বাধ্য হয়।বঙ্গবন্ধু এক অদম্য বাঙালী৷তিনি থাকবেন বাংলার মাটি ও মানুষের হৃদয়ে চিরকাল৷

রাজু মোল্লা
শিক্ষার্থী,মার্কেটিং বিভাগ,বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

 

"এক অপরিচিত বাংলাদেশ"

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট।মাত্র তিন বছর সাড়ে সাত মাসের ব্যবধানে একটি স্বাধীন দেশের পরিচিতি পাল্টে যায়।পাল্টে যায় দেশের চিত্র।
১০ জানুয়ারি সকালটা ছিলো বাঙালীর জীবনে অত্যন্ত আনন্দমুখর ও বহু প্রত্যাশিত সকাল;কারণ বাঙালীর প্রিয় নেতা নিজ দেশে ফিরবেন। আর ১৫ আগস্টের সকাল ছিলো একেবারে অন্যরকম বিষাদমাখা! প্রতিদিনের পাখির গানে জেগে ওঠা সকাল সেদিন জেগে ওঠেছিলো পাখির কান্নাভেজা আর্তনাদে।

"আল্লাহর দোহাই আমাকে জানে মেরে ফেলবেন না"-সেদিন রাসেলের এই আর্তচিৎকারও পাষাণ খুনীদের মন টলাতে পারেনি। সপরিবারে হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুকে।শুরু হয় বাঙালীর কালো অধ্যায়। এই অধ্যায় শুধুমাত্র ব্যক্তি মুজিবকে শেষ করার জন্য শুরু হয়নি,এই অধ্যায় ছিলো জাতির স্বাধীনতার শক্তিকে হত্যার অপচেষ্টা। কিছু কাপুরুষ বাঙালী,যাদের জন্য বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন,সেই কাপুরুষেরাই তাঁকে খুন করে একটি আদর্শ শেষ করতে চেয়েছিলো।কিন্তু বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সর্বময়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সকালের অপরিচিত বাংলাদেশ আজকে ২০২২-এ এসে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নব্বই ভাগ পরিচিত। আজ ১৫ আগস্ট পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করি সর্বকালের সেরা এই মহান নেতাকে।

ফারহানা আফসার মৌরী 
শিক্ষার্থী,ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগ,বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়


"শোকাবহ আগস্ট" বাঙালি জাতির কালো অধ্যায়

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একই মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ। যেখানে একটি ছাড়া অন্যটি অর্থহীন। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিকনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ভূখণ্ড পেয়েছে। সেই মহান নেতাকে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট রাতের আঁধারে নৃশংসভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে এই স্বাধীন বাংলায় কালো অধ্যায়ের সূচনা হয়। স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক মহলের সেই হত্যাকান্ড বাংলার আকাশকে শোকের ভারে ভারী করে তোলে। সেদিন নিস্তব্ধভাবে থমকে দাড়িয়েছিল বাংলার আকাশ জমিন। ঘাতকচক্র শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করে ক্ষান্ত হয়নি বরং তাদের যন্ত্রণাময়ী অস্ত্রের আঘাতে প্রাণ হারাতে হয়েছে তার সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তার ৩ সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেলসহ আরও অনেকের। সৌভাগ্যক্রমে সেদিনের এই নৃশংসতা থেকে বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহেনা। ঘাতকবাহিনী ভেবেছিল বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারকে হত্যার মধ্য দিয়ে আবারও দেশকে পরাধীন করতে। কিন্তু তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও তার স্বপ্ন ও আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন আর আদর্শের স্মৃতিরেখায় দেশ আজ উন্নয়নের দাড়পান্তে। বাংলার মানুষের মাঝে চিরকাল অমর থাকুক বঙ্গবন্ধুর সেই পবিত্র আদর্শ ও স্বপ্ন। 

মোঃ আবু তাহের 
শিক্ষার্থী,উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ,বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

 

বাংলার ইতিহাসের অন্ধকারতম রাত"

মানব সভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণ্য নৃশংসতম হত্যাকান্ডের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনটি। এই দিনে কতিপয় ঘাতকচক্রের হাতে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা,  সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। তার হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে দেশে শুরু হয় স্বৈরতান্ত্রিক শাসন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ ২৩ বছরের আন্দোলনের পর উদিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। তার বিচক্ষণ নেতৃত্বে গড়ে ওঠে দেশের সাংবিধানিক কাঠামো যা নিমিষেই ধূলিসাৎ করে দেয় স্বাধীনতা বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীরা। ১৫ আগষ্ট হত্যাযজ্ঞে রক্ষা পায়নি বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের প্রানও। ১১ বছর বয়সী শিশু রাসেলকে নির্মমভাবে বুলেটের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত করে হত্যাকারীরা। অতঃপর মুহূর্তের মধ্যে বাংলার আকাশে ঘনিয়ে এলো শোকের ছায়া। আপামর বাঙালির হৃদয় বিদারক কান্নায় কেপে উঠলো বাংলার মাটি। পথে-প্রান্তরে শুরু হয়ে গেল বাঙালির হাহাকার তাদের প্রিয় নেতা হারানোর শোকে। হত্যাকারীরা চেয়েছিল এদেশে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে, তার আদর্শকে মুছে ফেলতে বাঙালির হৃদয় থেকে। কিন্তু মৃত্যুু কখনোই এই মহার নেতার কার্যক্রমকে বিনষ্ট করতে পারবে না। প্রজন্মের পর প্রজন্ম শেখ মুজিবুর রহমানের অবিনাশী চেতনা ও আদর্শ প্রবহমান থাকবে। বঙ্গবন্ধুর অবদান কখনোও ইতিহাস মুছে ফেলতে পারবে না, ইহা চিরস্মরণীয় বাঙালির হৃদয়ে।

সুস্মিতা দত্ত অথৈ
শিক্ষার্থী,সমাজবিজ্ঞান বিভাগ,বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়


"শোকাবহ আগষ্টে আহত হই"

বাঙালীর জীবনে আগস্ট শোকাবহ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবসহ পরিবার-পরিজন ও নিকটজনদের নৃশংস ও বর্বরতার সঙ্গে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। যে জাতির জন্য জাতির পিতা প্রাণ উৎসর্গ করতে দ্বিধা করেননি, যিনি দেশকে এগিয়ে নিতে সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন, যার সুযোগ্য নেতৃত্বে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছিলাম, তারা সেদিন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার-পরিজনকে হত্যা করে দেশের ইতিহাসকে কলুষিত করেছে। দেশের অগ্রযাত্রাকে পেছনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ঘাতকেরা সুনিপুণভাবে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারকে পৈশাচিকভাবে হত্যা করে বাঙালী জাতির অগ্রগতি, প্রগতি ও উন্নয়নকে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল।

অথচ এদেশের মানুষের মানবিক ও আর্থিক উন্নয়নের জন্য সমগ্র জীবনকে তিনি ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে বলিষ্ঠভাবে কাজ করে গেছেন। এদেশের মৃত্তিকায় মিশে আছে বাঙালীর জন্য তাঁর অন্তহীন ভালবাসা, মমত্ববোধ এবং উন্নয়ন করার জন্য উদগ্র বাসনা। দীর্ঘদিন পরে হলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের বিচার হয়েছে। যারা বিদেশে রয়ে গেছে তাদের এখনও প্রাপ্য শাস্তি কার্যকর করা যায়নি। পৃথিবীর ইতিহাসে এটি একটি নিকৃষ্টতম হত্যাকান্ড । বঙ্গমাতা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সকল প্রেরণার উৎস। ঘাতকেরা তাকেও হত্যা করে। মোশতাক-জিয়া-চাষীর নেতৃত্বে বিপথগামী সেনাদের তারা যেভাবে পরিচালনা করে কার্যোদ্ধার করেছিল তাতে দেশ ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তে বাংলার স্বাধীনতাকে বিনষ্ট করতে চেয়েছিল। যারা এ হত্যাকান্ডে জড়িত ছিল তারা দেশ ও সমাজের শত্রু। অচিন্তনীয়ভাবে এ হত্যাকান্ড বিশ্ব বিবেককে তাড়িত করেছিল।

সুজন আহমেদ
শিক্ষার্থী,ইতিহাস ও সভ্যতা বিভাগ,বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়


আরও পড়ুন