বিভাগীয় কক্ষে একাই সংসার পেতেছেন জবি শিক্ষক

news paper

ইউছুব ওসমান, জবি

প্রকাশিত: ২২-৯-২০২২ বিকাল ৫:৩২

6Views

বিভাগের নিজ অফিস কক্ষেই কাটাচ্ছেন রাত, রয়েছে সিঙ্গেল খাট সহ কাথা, বালিশ এমনকি বেডশিটও। নাওয়া খাওয়া সহ দিন-রাত ২৪ ঘন্টাই এখানে থাকছেন তিনি। বলছিলাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের বিগত ১৫-২০ দিনের দৈনন্দিন জীবনযাপনের ঘটনা। ওই শিক্ষকের নাম অধ্যাপক মো. জহির উদ্দিন আরিফ। তিনি মার্কেটিং বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান। প্রশাসনের বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে না জানিয়েই বিভাগের নিজ অফিস কক্ষে নিয়মবহির্ভূতভাবে অবস্থান করছেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষকদের রাত্রিযাপন করার কোনো নিয়ম নেই। এই নিয়মের তোয়াক্কা না করে অধ্যাপক মো. জহির উদ্দিন আরিফ বিগত ২০ দিন ধরে ধরে বিভাগের নিজ অফিস কক্ষে রাত্রিযাপন করছেন। তিনি বিভাগেই রাতে ঘুমানোর জন্য শনিবার দুইটি বালিশও কিনে এনেছেন। বালিশ কিনে ওই শিক্ষকের বিভাগের নাদিম নামে এক স্টাফ লিফট দিয়ে যাওয়ার সময় প্রথমে লিফট ম্যান ও পরবর্তীতে নিরাপত্তাকর্মীর নজরে আসেন। এরপরই বিষয়টি সামনে আসতে শুরু করে। যদিও তিনি যে এখানে থাকছেন তা আরও অনেক আগে থেকেই সন্দেহ করেছিলেন নিরাপত্তা প্রহরীরা। পরবর্তীতে তারা বিষয়টি সিকিউরিটি অফিসারকে জানালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে তা অবহিত করেন।

বিভাগ থেকে জানা যায়, অধ্যাপক মো. জহির উদ্দিন আরিফ শারীরিকভাবে অসুস্থ। কোনো অঘটন ঘটলে তার দায়ভার কে নিবে তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে। শিক্ষকের এমন কাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। একজন শিক্ষক অনুমতি ব্যতীত বিভাগে রাত্রিযাপন করতে পারেন কিনা তা নিয়েও নানা মহলে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।

অধ্যাপক মো. জহির উদ্দিন আরিফ অত্যন্ত জেদি প্রকৃতির একজন মানুষ বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সূত্রে জানা গেছে। তিনি অবিবাহিতও। তার বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগও রয়েছে যদিও তা পরবর্তীতে প্রমাণিত হয়নিন। বিভাগের চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে তিনি শোকজও হয়েছেন বলে জানা যায়। তিনি আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীলদলের নেতা, দুইবার কোষাধ্যক্ষও হয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষকের অফিস কক্ষের ভিতরে বসার চেয়ার ও টেবিলের পেছনেই একটি সিঙ্গেল বেড গুছানো রয়েছে। সেখানেই তিনি রাত্রিযাপন করেন। রয়েছে বেডশিট এমনকি কাথা-বালিশ ও।

রাত্রিযাপনের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে অধ্যাপক মো. জহির উদ্দিন আরিফ বলেন, আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং বাসা দূরে। আমাকে বিভিন্ন পরীক্ষার খাতা দেখা এবং রিসার্চের কাজে অনেক রাত পর্যন্ত কাজ করতে হয়। এইসব কাজের জন্যেই আমাকে এখানে রাতযাপন করা লাগে।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে ক্যাম্পাসে থাকতেই পারে। আমার তো টাকা পয়সার অভাব না যে আমাকে এখানে থাকাই লাগবে। আমি বিভিন্ন প্রেশারে থাকি এবং আমার কাজের জন্যেই এখানে থাকি।

থাকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিয়ম বা অনুমতি নিয়েছেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কাজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করার অনুমতি নেই এই বিষয়ে আমি জানি না। কোনো প্রজ্ঞাপন বা বিজ্ঞপ্তি থাকলেও আমাকে দিবেন।

এর আগে ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাত্রিযাপনে নিষেধাজ্ঞা ‍জারি করে বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামান স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কোনো একাডেমিক ভবনে কেউ বসবাস বা রাত্রিযাপন করতে পারবে না।” নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ক্যাম্পাসে রাত সাড়ে ১০টার পর শিক্ষার্থীদের অবস্থানে নিষেধাজ্ঞাও দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিষয়টি নিয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শেখ রফিকুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার পর তিনি অসুস্থতার দোহাই দিয়ে বিভাগে দেখা করতে বলেন।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, বিভাগ থেকে আমাকে কিছু জানায়নি। বিষয়টি তো আমাকে জানানো উচিত। সমস্যা হলে লিখিত জানানো দরকার। আমি বিভাগে বলেছি লিখিত দিতে। অন্যথায় আমি উপাচার্যের নিকট উত্থাপন করবো।

বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হককে অবহিত করলে  তিনি বলেন, আমাকে কেউ এ বিষয়ে জানায়নি। আমি রেজিস্ট্রারের সাথে কথা বলবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানালে তিনি বলেন, ঠিক আছে দেখি আমি জানবো। জানার পর কথা বলবো।


আরও পড়ুন