নিউইয়র্কে প্রদর্শিত হলো বীর মুক্তিযোদ্ধা নওফেল স্মরণে প্রামাণ্যচিত্র

news paper

নিজস্ব সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ৯-১১-২০২২ দুপুর ১:৫০

26Views

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে, বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হন মাত্র সতেরো থেকে আঠারোতে পা দেওয়া অসীম সাহসী যুবক মেজবাহ উদ্দিন নওফেল। ৯ই ডিসেম্বরে ফরিদপুর জেলা সদরের করিমপুরে পাকিস্তানি হানাদারের বিরুদ্ধে  দিনভর যুদ্ধ করেন কাজী  সালাউদ্দিন ও মেজবাহ উদ্দিন নওফেলের নেতৃত্বাধীন মুক্তিযোদ্ধারা। লক্ষ্য একটাই, প্রিয় মাতৃভূমিকে শত্রু মুক্ত করা। তুমুল গোলাগুলির এক পর্যায়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে সবুজের কপালে লাল টিপ পরিয়ে দেন বাংলা মায়ের সূর্য সন্তান মেজবাহ উদ্দিন নওফেল। আমরা কয়জনেইবা জানি,  কয়জনেইবা স্মরণ করি নওফেলের আত্মত্যাগের কথা! মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন বিসর্জন দেওয়া আরও লক্ষ মায়ের সন্তানদের মতো নওফেল যেন ইতিহাস থেকে হারিয়ে না যায়, সেই দুরূহ কাজীটিই করেছেন করেছেন প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা নাদিম ইকবাল। তৈরি করেছেন প্রামাণ্যচিত্র  "Nowfel Never Dies"।  

যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের আয়োজনে গত ৬ই নভেম্বর ২০২২ রবিবারে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের জুইস সেন্টারে প্রদর্শিত হল নাদিম ইকবালের প্রামাণ্যচিত্র "Nowfel Never Dies”। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি, একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক বীর মুক্তিযোদ্ধা ডঃ নুরুন নবী। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত দেশবরেণ্য কবি আসাদ চৌধুরী। 

নিউইয়র্কের বাঙালী কমিউনিটির বীর মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের উপস্তিতিতে ভরপুর জুইস সেন্টারে অনুষ্ঠানের শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের টাইটেল স্পন্সরে নির্মিত 'ফিরে এসো বঙ্গবন্ধু' সঙ্গীত চিত্রটি দেখানো হয়। এর পরেই পরিবেশন করা হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা নওফেলকে নিয়ে নাদিম ইকবালের নির্মিত ৪০ মিনিটের প্রামাণ্য চিত্র "Nowfel Never Dies"। পিন পতন নীরবতায় ছল ছল চোখে উপস্থিত সবাই প্রামাণ্য চিত্রটি দেখেন এবং নওফেলের করুন বীরত্বগাথার ইতিহাস জেনে অনেকেই আবেগাফ্লুত হয়ে পরেন। এই অনন্য অসাধারণ প্রামাণ্য চিত্রটি তৈরি ও যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধুর পরিষদের অনুষ্ঠানে প্রদর্শনের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সভাপতি ডঃ নুরুন নবী নির্মাতা নাদিম ইকবালকে ধন্যবাদ জানান এবং আবেগাফ্লুত হয়ে যেন নাদিম ইকবালের মাঝেই নওফেলকে দেখতে পাচ্ছিলেন।  

প্রধান অতিথির বক্ত্যবে খ্যাতিমান কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, পৃথিবীতে একমাত্র আমরাই ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছি। আবারও ১৯৭১ সালে অনেক রক্ত আর আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জন করেছি  স্বাধীনতা। গৌরবময় এই অর্জন যেমন আনন্দের, তেমন বেদনার। মুক্তিযুদ্ধের সাথে জড়িয়ে আছে বিজয় গাঁথার পাশাপাশি নির্যাতন-নিপীড়ন গণহত্যার বীভৎসতা। এই প্রামাণ্যচিত্র থেকে বুঝা যায় স্বাধীনতা অর্জনটা কত ত্যাগের বিনিময়ে হয়েছে। এই ভাষা, এই দেশ রক্ষার, স্বাধীনতার চেতনা জাগ্রত রাখার দায়িত্ব আমাদের সকলের। 

অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দাড়িয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এসময় মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইমাম বলেন প্রামাণ্য চিত্রটি দেখে আমি বারবার একাত্তরে ফিরে যাচ্ছিলাম। নওফেলের মতো আরও কতো বীর সন্তানেরা আমাদের থেকে হারিয়ে গেছে। আমাদের সকলের বয়স বারে, ধীরে ধীরে আমরা মৃত্যুর দিকে ধাবিত হই। কিন্তু নওফেল? নওফেল যেই মুহূর্তে শহীদ হয়েছে, সেই মুহূর্তেই তার বয়স স্থির হয়ে গেছে। বাংলার আর বাঙালির ইতিহাসে নওফেলের বয়স আর বাড়বে না, চির যুবক হয়েই সে আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবে। 

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব লুতফুর নাহার লতা বলেন স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর হয়ে গেলো, মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী অনেক বীরের কথা আমাদের জানা নেই। এখন যেসব মুক্তিযোদ্ধারা বেঁচে আছেন, তারাও ধীরে ধীরে প্রকৃতির নিয়মে আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন। কিন্তু আমরা যদি তাদের ত্যাগের কথা ধরে রাখতে না পারি, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমরা তেমন কিছু দিতে পারব না। তাই আসুন আমরা খুঁজে খুঁজে তাদের ত্যাগের কথা, তাদের বীরত্বগাথা সংরক্ষণ করি।  

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন প্রামাণ্য চিত্র নির্মাতা নাদিম ইকবাল, শুক্লা গাঙ্গুলি, প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ, সমাজ চিন্তক বেলাল বেগ। কবিতা আবৃত্তি করেন গোপন সাহা ও স্বাধীন মজুমদার। পুরো অনুষ্ঠানটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বীকৃতি বড়ুয়া এবং সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন ডঃ জিনাত নবী, ফাহিম রেজা নুর, জাকিয়া ফাহিম, মাহাবুবুর রহমান টুকু।


আরও পড়ুন