অনিরাপদ সড়ক নিরাপদ রাখতে অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকদের দৌরাত্ম্য কমান

news paper

আবির সুজন

প্রকাশিত: ১৯-১১-২০২২ দুপুর ২:৩৮

8Views

নিরাপদ সড়ক বাংলাদেশে যেন এক স্বপ্ন। আর সেই স্বপ্নকে হাওয়ায় উড়িয়ে দিতে যোগ হয়েছে অপ্রাপ্তবয়স্ক চালক।রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক চালক। নিরাপত্তাহীন করে তুলেছে সড়ক,মহাসড়ক।

গ্রামে-মফস্বলে স্কুলগামী শিক্ষার্থীরা  মোটরসাইকেল নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সড়কে। দুর্ঘটনায় নিজের প্রাণই দিচ্ছে না, ঝুঁকিতে ফেলছে অন্যদের।

সারাদেশে বর্তমানে পরিবহন খাতে শ্রম দিচ্ছে প্রায় ১ লাখ ৫৫৫ শিশু-কিশোর। এর একটি অংশ চালক ও চালকের সহকারী। লেগুনা, থ্রি-হুইলার, নসিমন, করিমন, ভটভটি, মাটি-ইট-বালু বহনকারী ট্রাকে শিশু চালকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। অপ্রাপ্তবয়স্ক, অদক্ষ, অবৈধ চালক দিয়ে যখন গণপরিবহন চালানো হয় তখন স্বাভাবিকভাবেই এরা যানজটের দিকে লক্ষ্য করে না, নিরাপত্তার ইস্যুটাও তাদের চিন্তায় থাকে না। তাদের চোখ কিন্তু রাস্তার দিকে থাকে না, চোখ থাকে যাত্রীর দিকে কখন মাঝ রাস্তায় কে ওঠার জন্য হাত জাগায়। এদের না আছে লাইসেন্স, না আছে কোনো সংকেত সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা। সীমাবদ্ধ হাতের স্টিয়ারিং আর পায়ের ব্রেকে উড়ছে।

আইন অনুযায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদনকারীর ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পাস হতে হবে। অপেশাদার লাইসেন্সের জন্য ন্যূনতম ১৮ বছর এবং পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য বয়স ন্যূনতম ২১ বছর হতে হবে। অথচ ১৪-১৫ বছরেই পেশাদার হিসেবে চালকের আসনে বসে যাচ্ছে অনেক শিশু-কিশোর। সড়কের নিয়ম-কানুন না জানা, প্রশিক্ষণের অভাব, কম বয়সের কারণে প্রতিযোগিতার মানসিকতায় হরহামেশা দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে এসব চালক।

এই ছোট শিশুদের দিয়ে কম টাকায় গাড়ি চালিয়ে নেওয়া যায় বলে মালিকদের ব্যবসা ভালোই হচ্ছে। যান চালিয়ে  উপার্জনের টাকা দিয়ে অধিকাংশ কিশোররা মাদক ও নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। এদের মধ্যে শিক্ষার ছোঁয়া না থাকায় এদের দ্বারা রাস্তাঘাটে স্কুল-কলেজপড়ুয়া ছাত্রীরা ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছে।এসব কিশোর কোনো প্রকার লাইন্সেস ছাড়াই তারা বসছে চালকের আসনে। প্রতিদিন গড়ে ৯ শতাধিক ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে, যার বড় অংশই শিশু শ্রমিকের অংশগ্রহণের কারণে। গবেষণা সংস্থাটির হিসাবে পরিবহন খাতে রাজধানী ঢাকায় ৩৬ হাজার ৫০, চট্টগ্রামে ১৯ হাজার ৫০, খুলনায় ১৪ হাজার ৩৮০, বরিশালে ৮ হাজার ২৬০, সিলেটে ৮ হাজার ৩৪০, রাজশাহীতে ৬ হাজার ৩৫০, রংপুরে ৫ হাজার ৫৬৫ ও ময়মনসিংহে ৪ হাজার ১৬০ শিশু-কিশোর। 

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যানে প্রায় ৭৩ শতাংশ লেগুনা চালায় অপ্রাপ্তবয়স্করা। অন্যান্য যানবাহনে বিশেষ করে মোটরচালিত রিকশায় অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকের সংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশ।তাছাড়া

অনেকে সন্তানদের হাতে গাড়ির চাবি তুলে দিচ্ছে। কেউ কেউ সন্তানের বীরত্ব দেখতে পাশে সওয়ার হচ্ছেন। এই যে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই, সন্তানের হাতে গাড়ি চাবি তুলে দিচ্ছি,কিন্তু সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হলেও পথে কীভাবে গাড়ি চালাচ্ছে, তার বন্ধু কারা, সে মাদকাসক্ত কি না, এদিকে নজর দেয়ার দায়িত্ব অভিভাবকদের নেই বললেই চলে।শুধু তাই নয় এসব বাহনের চালক শহরের পুঁজিপতিদের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সন্তান। এদের কেউ মাদকাসক্ত, কেউ বেপরোয়া পুঁজিতে বেপরোয়া।অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও লাইসেন্সবিহীন এ চালকরা রাজাধানীর হাইওয়ে রোডগুলোতে যাত্রী পরিবহন করে চলছে প্রসাশনের নাকের ডগায়। প্রশাসন যেন ওদের চোখেই দেখছে না। তথ্য মতে, প্রশাসনকে সাপ্তাহিক ও মাসিক কিস্তি দিয়ে প্রতিটি গাড়ি প্রভাবশালী ও ক্ষমতাশীন ব্যক্তি লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন বিভিন্ন রোডে দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে আসছে।ফলে নিরাপত্তাহীন করে তুলেছে সড়ক-মহাসড়ক গুলোকে

সহযোগী থাকাবস্থায় চালকদের সঙ্গে সমন্বয় গড়ে তুলে নামমাত্র ড্রাইভিং শিখে একটা সময় নিজেরাই ড্রাইভিং শুরু করে এসব চালক।শুধু অল্প পুঁজিতে অধিক মুনাফার লোভেই একশ্রেণীর পরিবহন মালিক এসব অদক্ষ কিশোর চালকদের হাতে যানবাহন তুলে দিচ্ছেন। এতে তারা একদিকে যেমন ওইসব কিশোরদের মৃত্যু ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছেন, একই সঙ্গে অদক্ষ চালকদের ভুলে সড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা, ঝড়ছে অসংখ্য তাজা প্রাণ।অপ্রাপ্তবয়স্ক এসব চালক কানে হেডফোন লাগিয়ে পাশে সমবয়সী আরেকজনকে বসিয়ে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালায়।

তাই অনিরাপদ সড়ককে  নিরাপদ রাখতে এসব অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকদের হাতে গাড়ির স্টিয়ারিং তুলে দেয়া থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে।সড়ক পরিবহন আইন শুধু  কাগজ-কলমে সীমাবদ্ধ না রেখে তার যথাযথ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। রাজধানীতে শিশু চালকদের গাড়ি চালানো কোনোভাবেই ট্রাফিক বিভাগের জন্য মর্যাদার কথা নয়। তাদের কুম্ভকর্ণের ঘুম থেকে জাগাতে হবে।

প্রশিক্ষণহীন অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছে যানবাহন দিয়ে তাদের হাতে মানুষ মারার অধিকার তুলে দেওয় থেকে বিরত থাকতে হবে। সড়ক পরিবহন আইনটি কঠোরভাবে বাস্তবায়ন হলে রাস্তায় অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকও থাকত না, দুর্ঘটনাও কমে যেত। যেসব যানবাহন মালিক অপ্রাপ্তবয়স্কদের দিয়ে গাড়ি চালান, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।এ ছাড়া নতুন যারা পেশাদার লাইসেন্স নিতে আসছেন তাদের বাধ্যতামূলক ডোপ টেস্ট করাতে হবে।তাছাড়াও প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে,পাঠ্যবইয়ে এই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে,মোট কথা সবাইকে সচেতন হতে হবে।আর সচেতনতার সৃষ্টি করতে হবে।

আবির সুজন 

ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগ 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় 

সভাপতি, জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি ফিচার কলাম এন্ড কন্টেন্ট রাইটার্স 

মোবাইল; ০১৭৯২৮০৩৮০০

ইমেইল; abirsuzon4@gmail.com


আরও পড়ুন