মেজর জিয়ার পরিকল্পনায় দুই জঙ্গিকে ছিনতাই

news paper

আব্দুল লতিফ রানা

প্রকাশিত: ২২-১১-২০২২ দুপুর ১১:৪৯

9Views

আদালত পাড়া থেকে দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ১৮ জন জঙ্গি অংশগ্রহণ করেছিল। জঙ্গি নেতা মেজর (বহিষ্কৃত) সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়ার পরিকল্পনায় আদালত থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে আদালতের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের একজন পরিদর্শকসহ পাঁচজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

অপরদিকে ফাঁসিরদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা তদন্তে পুলিশ সদর দপ্তর পৃথক চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। একজন ডিআইজিকে প্রধান করে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় ২০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২১ জনকে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ। মামলায় হাজিরা দিতে আসা ১২ জন জঙ্গির মধ্যে দুজনকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর বাকি ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিন করে রিমান্ডে নিয়ে তদন্ত করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ।

অপরদিকে সোমবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাস্থল এবং আশপাশের এলাকার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় ২০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২১ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। আর ওই মামলায় ১০ জনকে ১০ দিন করে রিমাণ্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাছাড়া, এ ঘটনায় একজন পরিদর্শকসহ ৫ জন পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন- সিএমএম আদালতের হাজতখানার কোর্ট ইন্সপেক্টর মতিউর রহমান, হাজতখানার ইনচার্জ (পরিদর্শক) নাহিদুর রহমান ভূঁইয়া, আসামিদের আদালতে নেওয়ার দায়িত্বরত পুলিশের এটিএসআই মহিউদ্দিন, পুলিশ সদস্য শরিফ হাসান ও আবদুস সাত্তার।

ফাঁসিরদণ্ডপাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। আর রোববার বিকাল থেকে ঢাকার সিজেএম আদালত পাড়াসহ রাজধানীজুড়ে টহল বাড়ানো হয়। পুরান ঢাকার অলিগলির সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ঘটনায় শিগগিরই জড়িতদের গ্রেফতার করা হবে বলে জানান তিনি।তিনি বলেন, ছিনিয়ে নেওয়া দুজন নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (সাবেক আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) সদস্য। তারা জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন এবং লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। এই জঙ্গি সংগঠনের নেতা মেজর (বরখাস্ত) সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া। তার পরিকল্পনায় ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত একাধিক লেখক, প্রকাশক, ব্লগার ও সমকামী অধিকারকর্মীকে হত্যা করা হয়। 

রোববার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনাল থেকে আট জঙ্গিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাচ্ছিলেন পুলিশ সদস্যরা। তাদেরকে নিয়ে সিজেএম আদালতের প্রধান ফটকে যান, এসময় হাতকড়া পরা দুই জঙ্গি তাদের নিরাপত্তায় থাকা পুলিশের এক সদস্যকে মারধর শুরু করেন। মুহূর্তের মধ্যে আশপাশে থাকা তাদের সহযোগী জঙ্গীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পুলিশের ওপর হামলা এবং স্প্রে ছিটিয়ে আদালতের প্রধান ফটকের উল্টো দিকের গলি দিয়ে মোটরসাইকেল যোগে দুই জঙ্গি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির ও মো. আবু ছিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিবকে নিয়ে পালিয়ে যায়। 

এদিকে আদালত থেকে ফাঁসিরদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা পুলিশ সদর দপ্তর পৃথক ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। একজন ডিআইজিকে প্রধান করে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সোমবার পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. মনজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ কমিটিকে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। আর চার সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অডিট) মো. আমিনুল ইসলাম। সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম মেট্রো) মো. হাসানুজ্জামান। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- সিটিটিসির যুগ্ম কমিশনার ড. এ এইচ এম কামরুজ্জামান ও সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মেট্রো সাউথ) মো. আনিচুর রহমান। এর আগে রোববার ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তারকে প্রধান করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

অপরদিকে আদালত থেকে দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার পর পেশাদার অপরাধীরা যেন বারবার অপরাধ করতে না পারে সেজন্য নজরদারি বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। রোববার রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ মিলনায়তনে অক্টোবর মাসের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় তিনি এসব নির্দেশনা দেন। ডিএমপি কমিশনার বলেন, মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে ঘটনাস্থল সংরক্ষণ ও আলামত সংগ্রহ করতে হবে। পেশাদার অপরাধীরা যেন বারবার অপরাধ করতে না পারে সেজন্য নজরদারি বাড়াতে হবে। 

ঢাকা মহানগরে যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় কোতোয়ালি থানা পুলিশ বাদী হয়ে এ মামলা করেন। কোতোয়ালি থানার ওসি মিজানুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন। রোববার দুপুরে দুটি মোটরসাইকেল যোগে চারজন লোক এসে পুলিশের চোখে স্প্রে করে ঢাকার নিম্ন আদালত থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়। তারা জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য।

এই দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে ১০ লাখ করে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে সরকার। তাদের গ্রেফতারে রাজধানীতে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।এছাড়া, আদালত প্রাঙ্গণ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ফাঁসিরদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গির আগের অপরাধের ধরন, তাদের আত্মীয়-স্বজন ও বিভিন্ন সময়ে চলাফেরা সবকিছু পর্যালোচনা করছে র‌্যাব। সোমবার র‌্যাবের সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

র‌্যাব জানায়, ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গি ও তাদের সহযোগীদের ধরতে র‌্যাবের সব ইউনিট কাজ করছে। আদালত প্রাঙ্গণ, অন্যান্য জায়গা, সিসিটিভি ফুটেজ এবং বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে তারা। পাশাপাশি গোয়েন্দা কার্যক্রম চলছে। জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের প্রধান মেজর (বরখাস্ত) সৈয়দ জিয়াউল হকের পরিকল্পনায় ১৮ সহযোগী মিলে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়েছেন বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। 

ডিএমপির ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, ছিনিয়ে নেওয়া দুজন নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (সাবেক আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) সদস্য। তারা জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন এবং লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। এই জঙ্গি সংগঠনের নেতা মেজর (বরখাস্ত) সৈয়দ জিয়াউল হক। যারা পরিকল্পনায় ২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত একাধিক লেখক, প্রকাশক, ব্লগার ও সমকামী অধিকারকর্মীকে হত্যা করা হয়।

 


আরও পড়ুন