নোমান গ্রুপের অভিনব জালিয়াতি

৭৬ সালে মৃত ব্যক্তি দলিল সই করলেন ৭৯ সালে!

news paper

সাজেদা হক

প্রকাশিত: ২২-১১-২০২২ দুপুর ৪:৫৯

52Views

দলিল জাতিয়াতির মাধ্যমে নোমান গ্রুপের বিরুদ্ধে আরও সাত হাজার কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর বরাবর পাঠানো একটি আবেদনে এ অভিযোগ করা হয়। এতে বলা হয়, জমির কথিত দাতা কবির আহমেদ খান ১৯৭৬ সালে মারা যান। কিন্তু তাকে জীবিত দেখিয়ে তার সই জাল করে ১৯৭৯ সালে একটি দলিল তৈরি করে নোমান গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম। এই দলিল দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয় গ্রুপটি; যা আজও ফেরত দেয়নি তারা। এ সংক্রান্ত মামলা চলছে হাইকোর্টে। তবে রহস্যজনক কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক নীরব রয়েছে। 

অভিযোগে বলা হয়, গাজীপুরের টঙ্গী পাগাড় মৌজার সি.এস ও এস.এ ৪১৭, ৪৮০, ৫০২, ৫০৪, ৫০৬, ৫০৭, ৫০৯ এবং ৫১২ দাগের আনুমানিক ২০ বিঘা সম্পত্তির উপর নোমান গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান জাবের এন্ড জুবায়ের ফেব্রিক্স লিমিটেড, জাবের এন্ড জুবায়ের ফ্যাশন লিমিটেড ও নোমান ফ্যাশন ফেব্রিক্স লিমিটেড। অভিযোগকারী দাবি করেন, ওই সম্পত্তির মূল মালিক ছিলেন পরেশ নাথ সরকার গং। তিনি ৩০/০১/১৯৭০ তারিখে জয়দেবপুর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে ১০৮২ নং সাব কবলামূলে ওই ২০ বিঘা সম্পত্তি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান বরাবরে বিক্রয় করে চিরতরে নিঃস্বত্ত্ববান হয়ে যান। পরবর্তীকালে ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশ হলে ব্যাংকের নাম হয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন ওই স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের যাবতীয় দায় দেনা ও সম্পত্তি বাংলাদেশ ব্যাংকের উপর বর্তালেও ইতঃপূর্বে বর্ণিত ১০৮২ দলিলের সম্পত্তি বিক্রয় বাংলাদেশ ব্যাংকের অগোচরে থেকে যায়। উক্ত বিষয় সম্পর্কে অবগত থাকার পরও নোমান গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ওই সম্পত্তি দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেন। নোমান গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাংলাদেশ ব্যাংক ইম্লোয়েজ কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটির লিমিটেড এর পক্ষে গোলাম কবির খানকে দাতা এবং ঢাকা গুলশান ২৪ নং রোডের ৮৭ এভিনিউ নিবাসী মরহুম আব্দুস সামাদের পুত্র এস এম এ আহাদ ও আহাদের স্ত্রী আমিনা খাতুনকে গ্রহীতা সাজিয়ে তফশিলভুক্ত সম্পত্তি বিগত ১৯/১১/১৯৭৯ তারিখে ঢাকা সদর রেজিস্ট্রার অফিসে একটি দলিল নিবন্ধন করেন; যার নং ৪৩১৯৫। ওই দলিলের দাতা গোলাম কবির খান; যিনি বাংলাদেশ ব্যাংক ইমপ্লোয়েজ কো-অপারেটিভ সোসাইটি হাউজিং লিমিটেডের পক্ষে দাতা হিসেবে স্বাক্ষর করেন বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক ইমপ্লোয়েজ কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেডের কোনো রেজুলেশনে কিংবা রেজিস্টার্ড ক্ষমতাপত্র বা অন্য কোনোভাবে জমি হস্তান্তরের ক্ষমতা তাকে দেওয়া হয়নি। ফলে ৪৩১৯ নং দলিলের মাধ্যমে স্বত্ব হস্তান্তর প্রশ্নবিদ্ধ এবং অবৈধ। এছাড়াও গোলাম কবির খান একজন পাকিস্তানী নাগরিক এবং তিনি বিগত ১৯৭৬ সালে মারা গেছেন বলে জানা যায়। কিন্তু ১৯৭৯ সালে তার স্বাক্ষরে দলিল করা হয়। সুতরাং তার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে বলে মনে করেন অভিযোগকারী।
অভিযোগে আরও বলা হয়, নোমান গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম উল্লেখিত তফশিল এসএম এ আহাদ ও আহাদের স্ত্রী আমিনা খাতুনের কাছ থেকে নোমান গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান নোমান স্পিনিং মিলস লিমিটেড ও নোমান টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের নামে বিগত ১৬/০১/১৯৯৬ তারিখে যে দলিল (নং ২২৮ ও ২৩০) তৈরি করেন; তা জাল। ওই জাল দলিল ব্যবহার করে নোমান স্পিনিং মিলস লিমিটেড ও নোমান টেক্সটাইলের নামে ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (পল্টন শাখা) থেকে প্রায় ১ হাজার ৫ শত কোটি টাকা ঋণ নেয়। সেই ঋণের কথা গোপন রেখে একই সম্পত্তি বিগত ১৬/০৬/২০০৫ তারিখে জাবের এন্ড জুবায়ের ফেব্রিক্স লিমিটেডের কাছে বিক্রি করেন। টঙ্গী সাব রেজিস্ট্্ির অফিসে দলিল নং ২১৯১ ও ২১৯২ নং। দলিল দুটির দাতা এবং গ্রহীতা দুই কলামে কোম্পানির পক্ষে নুরুল ইসলাম স্বাক্ষর করেন। ওই ২১৯১ ও ২১৯২ নং দলিলমূলে জাবের এন্ড জুবায়ের ফেব্রিক্স এর নামে ব্যাংকের ম্যানেজার ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজস করে ডাচ বাংলা ব্যাংক (দিলকুশা শাখা) থেকে  প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ঋণ নেন। এছাড়াও জাবের এন্ড জুবায়ের ফেব্রিক্স লিমিটেড, জাবের এন্ড জুবায়ের ফ্যাশন ফেব্রিক্স এর নামে সোনালী ব্যাংক (মতিঝিল প্রধান কার্যালয়), রুপালী ব্যাংক (দিলকুশা প্রধান কার্যালয়), অগ্রণী ব্যাংক (দিলকুশা প্রধান কার্যালয়), বেসিক ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, আইপিডিসি, আইডিএলসি ফিন্যান্স লিমিটেড এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেড থেকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। 
অভিযোগে নোমান গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে জাল জালিয়াতির অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন জানিয়েছেন অভিযোগকারী।
     


আরও পড়ুন