মাঠে নামছে ছাত্রলীগ

news paper

সাজেদা হক

প্রকাশিত: ২৩-১১-২০২২ দুপুর ১২:৯

8Views

ডিসেম্বর মাস নিয়ে রাজনীতিতে একটা শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টনে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। অনুমতির জন্য তারা ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে আবেদনও করেছেন। তবে এখনো অনুমতি মেলেনি। এদিকে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করলে বিএনপি’কে প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ শীর্ষ নেতারা। যুবলীগ সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ অবশ্য ১১ নভেম্বর থেকে মাঠ দখলে রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে ডিসেম্বর ঘিরে এখন চাঙা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠন ছাত্রলীগ। এ মাসের শুরুতেই তারা মাঠে নামছে। কেননা, ২ থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংগঠনটির কেন্দ্র এবং কয়েকটি শাখার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তবে অনেকেই মনে করেন, বিএনপিকে প্রতিরোধ করার জন্যই সিডিউল করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মাঠে রাখা হচ্ছে। 

জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সম্মেলন ৩ ডিসেম্বর এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা ছাত্রলীগের যৌথ সম্মেলন ২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় এ খবর দিয়েছেন। সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ৩০তম জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন ও প্রস্তুতি উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তারিখ ঘোষণা করেন। জয় বলেন, কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলন হবে অপরাজেয় বাংলায় এবং ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণ শাখা ছাত্রলীগের যৌথ সম্মেলন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন আগামী ৮ ডিসেম্বর রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং ৯ ডিসেম্বর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি ইবরাহীম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান হৃদয়, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের আহমেদসহ সংগঠনের পদপ্রত্যাশী  নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগের এসব কর্মকাণ্ডের ওপর ভর করেই আন্দোলন প্রতিরোধের নতুন ছক তৈরি করছে আওয়ামী লীগ। গোটা ডিসেম্বর মাস জুড়েই মাঠে থাকবে ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তবে অগ্রণী ভূমিকায় থাকবে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকবেন বলে সকালের সময়’কে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন। 

এর আগে ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর দুই মাস পর ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ গঠিত হয়েছিল। দুই বছর মেয়াদি কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২১ সালের ৩১ জুলাই। ২৬ নভেম্বর মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। অনিবার্য কারণে এ সম্মেলন পিছিয়ে গেছে ১৫ ডিসেম্বর করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সাংগঠনিক নেত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ সম্মেলন আগে পরে হতে পারে। শুধু মহিলা আওয়ামী লীগ কিংবা ছাত্রলীগই নয় ২৪ ডিসেম্বরের মেয়াদোত্তীর্ণ সব সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনি বলেন, এখনই সুনির্দিষ্ট তারিখ বলা যাবে না। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যখন সুবিধা হবে, তখনই সম্মেলনগুলোর তারিখ নির্ধারিত হবে।

এছাড়া স্বাধীনতা চিকিৎসক ফোরাম, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, মৎস্যজীবী লীগ, তাঁতী লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনেরও সম্মেলন হবে আওয়ামী লীগের ২৪ ডিসেম্বর জাতীয় সম্মেলনের আগে হবে। মোট কথা ১০ ডিসেম্বরের আগে এবং পরে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে সম্মেলন এবং নানা কর্মসূচি নিয়ে সক্রিয় থাকতে চায় আওয়ামী লীগ ও তার ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো।

জানা গেছে, আগামী ২৯ নভেম্বর রাষ্ট্রীয় সফরে জাপান যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা; ফিরবেন ৩ ডিসেম্বর। সে কারণে গত মঙ্গলবার গণভবনে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি ৩ ডিসেম্বরের বদলে অন্য কোনো তারিখে সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দেন। তিনটি সম্মেলনই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হবে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। তিনটি সম্মেলনেই উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগের মাঠ দখলের পরিকল্পনার কেন্দ্রে আছে ২৪ ডিসেম্বর সংগঠনটির জাতীয় সম্মেলন। তার আগে মূল সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের জাতীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সম্মেলন শেষ করবে। আর এইসব সম্মেলনে তারা নেতা-কর্মীদের ব্যাপক সমাবেশ ঘটাতে চায়। এরইমধ্যে ২৯ অক্টোবর রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের দিন ঢাকায় আওয়ামী লীগ ঢাকা জেলার সম্মেলন করে শেরেবাংলা নগরে। আওয়ামী লীগের ওই সম্মেলন ছিলো বিএনপির সমাবেশের বিরুদ্ধে প্রথম শোডাউন। 

ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট হাফেজ আহমেদ বলেন, ‘শুধু সম্মেলন নয়, আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমরা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নানা কর্মসূচি পালন করব। এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি। আমাদের সঙ্গে ভ্রাতৃপ্রতিম ছাত্রলীগ-যুবলীগও আছে। আমরা সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক মিছিল সমাবেশ করছি। বিএনপির কর্মসূচির ব্যাপারে আমরা সতর্ক আছি।’

আর কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিন উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু বলেন, আমরা প্রস্তুত আছি। বিএনপি রংপুর বিভাগে যে সমাবেশ করেছে তার চেয়ে বড় সমাবেশ যেকোনো জেলায় করতে পারি। ২৪ ডিসেম্বর ঢাকায় জাতীয় কাউন্সিলের দিন সারাদেশ থেকে কাউন্সিলর ছাড়াও দলীয় নেতা-কর্মীদের ঢল নামবে বলেও জানান তিনি।

তবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বিভিন্ন গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা কোথাও বিএনপির সমাবেশের পাল্টা সমাবেশ বা প্রতিরোধ করছি না। তবে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর কেউ যদি নির্বাচন প্রতিরোধ করতে মাঠে নামে তাহলে আমরাও মাঠে নামব তাদের প্রতিরোধ করতে।


আরও পড়ুন