একজন মাহাথির মোহাম্মদ এবং মালয়েশিয়া নির্বাচন 

news paper

রায়হান আহমেদ তপাদার

প্রকাশিত: ২৮-১১-২০২২ দুপুর ১২:৫৫

11Views

মালয়েশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি অন্যতম প্রধান মুসলিম দেশ। তিনটি সালতানাত ও ১৩টি রাজ্যের সমন্বয় গঠিত মালয়েশিয়া। এর আয়তন ৩ লাখ ২৯ হাজার ৮৪৫ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা ৩ কোটি ২০ লাখ। রাজা হলেন রাষ্ট্রপ্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী হলেন সরকারপ্রধান। দীর্ঘ দিন ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনাধীনে থাকার পর ১৯৫৭ সালের ৩১ আগস্ট রক্তপাতহীন প্রক্রিয়ায় মালয় স্বাধীনতা লাভ করে। তখন থেকে মালয়েশিয়ার সরকার ও রাজনীতিতে ইসলাম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। মালয়েশিয়ার অর্থনীতি হচ্ছে মুক্তবাজার অর্থনীতি। মালয়েশিয়ার সরকারি ভাষা হচ্ছে মালয়। এ ছাড়াও ১৩০টি ভাষা প্রচলিত আছে। 

মালয়েশিয়াতে শরিয়াহ আইনের পাশাপাশি সিভিল কোর্টও রয়েছে। সাধারণত মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্য শরিয়াহ আইনের প্রচলন। যদি কেউ চায় সাধারণ আইনের আশ্রয়ও নিতে পারে। মালয়েশিয়া সাংবিধানিকভাবে প্রত্যেক ধর্মের সমঅধিকার নিশ্চিত করেছে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশ থেকে মুক্তি লাভের পর ১৯৬৩ সালের সেপ্টেম্বরে স্বাধীন মালয় যুক্তরাষ্ট্র, স্বশাসিত সিঙ্গাপুর, পূর্বতন ব্রিটিশ উপনিবেশ সারাওয়াক ও সাবা (উত্তর বোর্নিও) একত্রিত হয়ে মালয়েশিয়া যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৬৫ সালের আগস্ট মাসে সিঙ্গাপুর মালয়েশিয়া যুক্তরাষ্ট্র পরিত্যাগ করে। মালয়েশিয়ার ইতিহাস খুবই প্রাচীন। মালয়েশিয়ার সাধারণ নির্বাচনে কোনো দল বা জোটই সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন নিশ্চিত করতে পারেনি। 

তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এ নির্বাচনের ফল শেষ পর্যন্ত ঝুলন্ত পার্লামেন্টে গিয়ে ঠেকেছে। ১৯ নভেম্বর মালয়েশিয়ার সাধারণ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ২০ নভেম্বর মালয়েশিয়ার নির্বাচন কমিশন বলেছে, ২২২ সদস্যবিশিষ্ট পার্লামেন্টে আনোয়ার ইব্রাহিমের দল পাকাতান হারাপান (পিএইচ) জোট ৮২টি আসনে জয় নিশ্চিত করেছে। আর মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের দল পেয়েছে ৭৩ আসন। সরকার গঠন করতে দলগুলোকে ২১ নভেম্বরের মধ্যে প্রয়োজনীয় ১১২টি আসন নিশ্চিত করতে হবে। তবে দেশটির বিরোধী জোট দাবি করেছে, সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন তারা নিশ্চিত করতে পেরেছে। 

পাকাতান হারাপানের নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম বলেছেন, দেশটির পরবর্তী সরকার গঠনের জন্য তাঁর জোটের যথেষ্ট আসন রয়েছে। তাঁর জোট সরকার গঠন করলে তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন। তবে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পেরিকাতান ন্যাসিওনাল (পিএন) দলের প্রধান মুহিউদ্দিন ইয়াসিনও সরকার গঠনের বিষয়ে আশাবাদী। তিনি বলেছেন, সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় সমর্থন পেতে তিনি আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। জাতীয়তাবাদী ডানপন্থী থেকে অতি ডানপন্থী রাজনৈতিক দল। ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে মালয়েশিয়ার প্রাচীনতম দল। ইউএমএনও একসময় মালয়েশিয়ার গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি নামে পরিচিত ছিল। ১৯৫৭ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ার প্রতিটি প্রধানমন্ত্রী ইউএমএনও প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তারা সুন্নি ইসলামের সমর্থক। মালয়েশিয়ায় এই দলের লাখ লাখ সমর্থক-কর্মী রয়েছে। 

উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ার বড় বড় রাজনৈতিক নেতারা তুলনামূলক অনেক সৎ। তাদের বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারি, অর্থপাচার, প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ বা হারাম উপায়ে অর্জন বিষয়ে অভিযোগ নেই। জনাব মাহাথির, আনোয়ার ইব্রাহিমের মতো ক্ষমতা পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নেই। তারা সবার সাথে কথা বলেন ও সবার উন্নয়নের কথা ভাবেন। আনোয়ার বা মাহাথির দেহরক্ষী ছাড়াই সর্বত্র যাতায়াত করেন। তবে রাজনীতিতে চাল বা পলিটিক্যাল করাপশন বলে যে কথা রয়েছে সেটি মালয় রাজনীতিতেও রয়েছে। পর্যবেক্ষকরা অনুমান করছেন, ইউএমএনও সভাপতি জাহিদ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিবের মধ্যে ব্যক্তিগত অংশীদারিত্ব রয়েছে। অপরাধমূলক দুর্নীতির শাস্তি বহাল রাখা হলে তাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে। তারপরও একই দলের নেতারা তাদের কোনো ছাড় দিতে নারাজ। সহ-সভাপতি বলেন, গত চার বছর ধরে আমরা নিজেরাই পিছিয়ে পড়েছি। আমরা লড়াই করছি। মালয়েশিয়ার রাজনীতি এখন উত্তপ্ত। রাজনীতিতে অনেক কথাই আছে, মালয়েশিয়ার বেলায় রাজনীতিতে কেউ বন্ধু নয়, যেন একে অপরের শত্রু। এটিই প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে এবারের নির্বাচনে। 

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়েও পক্ষগুলো গরম গরম কথা বলছেন।ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল সিভিল সার্ভেন্টস, ব্যুরোক্র্যাটস ও বেসামরিক কর্মচারীরা আগামী সাধারণ নির্বাচনে একটি পরিচ্ছন্ন সরকার প্রতিষ্ঠার আশা প্রকাশ করেছেন বলে জানায়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল মালয়েশিয়ার স্থানীয় চ্যাপ্টার সভাপতি মুহাম্মদ মোহন বলেন, হুইসেল বাজানো, তদন্ত, মামলা, অডিট রিপোর্ট উদ্ধার এবং দুর্নীতিবাজদের কঠোর ও ন্যায্য শাস্তি প্রদান থেকে শুরু করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকারি কর্মচারীরা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, কারো লেজুড়বৃত্তি করেনি। আদালত নিরপেক্ষ থেকে দেশকে দেউলিয়াত্ব থেকে রক্ষা করেছে। চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স হিসেবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবশ্যই সব ধরনের চাঁদাবাজি, হুমকি, ভোট কেনা, সরকারি সম্পদ ও যন্ত্রপাতির অপব্যবহার এবং নির্বাচন কমিশন ও এমএসিসিকে সব ধরনের ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয়ে রিপোর্ট করতে হবে। 

অবশ্যই আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মনে করিয়ে দিতে হবে যে, একটি বিলুপ্ত সংসদ আইনশৃঙ্খলাবিহীন রাষ্ট্র নয়। ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি মালয়েশিয়ার (ইউটিএম) আইন ও নীতির সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ ফাতি ইউসুফ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংসদ ভেঙে যাওয়া থেকে শুরু করে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পরে একটি নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত দেশ পরিচালনা করবে। তিনি রূপরেখা দেন যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের জন্য কোনো আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন নেই। তিনি জানান, মালয়েশিয়ায় এই বিষয়ে কোনো লিখিত গাইডলাইন নেই। কিন্তু সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাথে সঙ্গতি রেখে সাংবিধানিক রীতিনীতি কিছু সীমাবদ্ধতার সাথে মেনে চলতে হবে। মুহাম্মাদ ফাতি বলেন, সীমাবদ্ধতার মধ্যে নির্বাহীর ক্ষমতার ওপর নিষেধাজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যার ভূমিকা সরকারি বিষয়গুলো মসৃণভাবে পরিচালনা নিশ্চিত করার জন্য মৌলিক প্রশাসনিক ভূমিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। 

তিনি আরো গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন-প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভার সদস্যদের বড় নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়ার অনুমতি দেয়া উচিত নয় যা একটি নতুন সরকারের দিকে পরিচালিত করতে পারে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সাধারণ নির্বাচনে প্রচারণার সময় রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনের জন্য সরকারি তহবিল ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে পারে না। জাতীয় অধ্যাপক পরিষদের সদস্য অধ্যাপক নিক আহমদ কামাল জানান, ফেডারেল সরকারের প্রধান নীতি হচ্ছে-সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত না হলে কোনো ব্যয় করা যাবে না।এবারের নির্বাচনে আরো একটি উল্লেখযোগ্য ইস্যু মাহাথির মোহাম্মদ নিজে। তিনি ফের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ২০০৩ সাল পর্যন্ত টানা ২২ বছর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মাহাথির। দেশটির আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে নিজ সংসদীয় আসন লঙ্কাবি থেকে লড়বেন ৯৭ বছরের এই প্রবীণ রাজনীতিক। প্রধানমন্ত্রিত্বের লড়াইয়ে কে অংশ নেবেন সে ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেননি, তবে এ জন্য পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে হবে। 

২০১৮ সালে যখন তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে তার সরকারের পতন হয়। রাজা প্রশাসনিক কার্যক্রমে মনোনিবেশ করলে বিভিন্ন গুঞ্জন শুরু হয়। আনোয়ার ইব্রাহিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দেখিয়ে সরকার গঠন করতে চাইলে রাজা প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। এমনকি রাজার ক্ষমতাবহির্ভূত কাজ অবৈধ ঘোষণার ও রাজার কর্মপরিধি শক্তভাবে বেঁধে দেয়ার আওয়াজ ওঠে। এরকম চরম মুহূর্তেও নির্বাচনের আওয়াজ উঠলে মাহাথির মোহাম্মদ আর নির্বাচনে অংশ নেবেন না বলে জানান। তবে তিনি প্রচার করেন, দেশের সঙ্কট মুহূর্তে তাকে সহায়তার জন্য ডাকা হলে তিনি দেশের জন্য কাজ করবেন। রাজনৈতিক সঙ্কট ও চরাই উৎরাইয়ের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন শুরু হলে তিনি হঠাৎ করে অংশগ্রহণ করার কথা ঘোষণা করেন। তিনি বর্তমানে অসুস্থ ও কয়দিন আগে আইসিইউ থেকে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন। পাকাতানের আনোয়ার ইব্রাহিম ও তার সহযোগীরা মাহাথিরকে আর বিশ্বাস করছেন না, তার সাথে জোট বাঁধছেন না। 

আসন্ন নির্বাচনে তার দল ১২০টি সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এই মুহূর্তে বন্যার কারণে তিনি তার নির্বাচনী এলাকা লঙ্কাবিতে রয়েছেন। বিরোধীরা তাকে এবার তার এলাকায় অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। কোথাও দুর্নীতি না হলেও নির্বাচন কমিশন নিয়ে অনেকেই সোচ্চার হয়েছেন। সেটি বিরাট বাজেট। নির্বাচন কমিশন এক হাজার মিলিয়ন আরএম অর্থাৎ বাংলাদেশী মুদ্রায় টাকা ২১ হাজার ৭০০ মিলিয়ন চেয়ে পাঠিয়েছে। নির্বাচন শুরু হলে এই ব্যয় বা দাবি আরো বেড়ে যাবে এমনই বলছেন সমালোচকরা। এশিয়ার অনেক দেশের মতো মালয়েশিয়ার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অস্বচ্ছ কার্যক্রমে অনেকে অসন্তুষ্ট। ইসির বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল গনি সালেহ তার পূর্বসূরিদের মতো একই রকম। একটি ভালো নির্বাচনের মহৎ লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য যাদের নিযুক্ত হয়েছে তারা নজরদারি, স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতার ভক্ত নয়, মালয়েশিয়ার জন্য এটি দুঃখজনক। কমিশনের লোকজন যতটা সম্ভব একা থাকতে পছন্দ করেন; মনে করেন এবং আশা করেন যে মালয়েশিয়ার জনগণ ফলাফল বিশ্বাস করবে। 

এ ছাড়া ঘণ্টা বাজানো হলে জনগণের মেনে নেয়া ছাড়া করার কিছু থাকে না। যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন কমিশনের চেয়েও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী, প্রয়োজনে কমিশনকে সব প্রমাণ করতে বা দেখাতে হয়। এশিয়ার দেশগুলোতে তেমন ব্যবস্থা নেই। মিয়ানমারে সু চির সময় যে ফলাফল দিয়েছিল আজ সু চিসহ তারাই জেলে রয়েছে। মালয়েশিয়ার থিঙ্ক ট্যাঙ্ক অনুভব করছে, বিতর্কিত বিষয় থেকে নির্বাচন কমিশনকে দূরে থাকতে হবে এবং আস্থার ঘাটতি দূর করতে হবে। মালয়েশিয়ানদের মধ্যে ২২২টি সংসদীয় জাতিতে সম্পূর্ণ বিশ্বাস তৈরি না করে কোনো বিপর্যয় সৃষ্টির কুটকৌশল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। ইসি চেয়ারম্যান বিদেশী ভোটারদের বিষয়ে নীরব। ইসি কি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে? ফিলিপাইন ও ভারতের কাছে কি সেগুলো নেই? খোদ যুক্তরাষ্ট্রে ভোটিং মেশিনের ফলাফল অগ্রাহ্য করে বুশ কি হাতে গণনা করা ফলাফল নিয়ে প্রেসিডেন্ট হননি? 

ইসি ওদিকে মনস্থির করে আছে। ক্ষমতাসীনরা উত্তর দিতে চায় না। ক্ষমতার ব্যবহারকে যৌক্তিক দেখায় তা যতই অর্থহীন হোক। উত্তর দিতে বাধ্য করার অন্যতম হাতিয়ার হলো নির্বাচন। এটি সম্ভবত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জনগণের সর্বোত্তম ও একমাত্র হাতিয়ার। বিশ্লেষকদের মতে, মুহিউদ্দিনের জোট বারিসান ও অন্য একটি দলের সমন্বয়ে সরকার গঠন করবে। তবে আনোয়ার বা মুহিউদ্দিন কেউই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারলে সংখ্যালঘু সরকারও গঠিত হতে পারে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন। মুহিউদ্দিন জানান, তিনি আনোয়ারের দল ছাড়া অন্য যেকোনো দলের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী। সাধারণত রাজা প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের ক্ষমতা ব্যবহার করেন না। তবে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক টানাপোড়েনের মাঝে রাজার প্রভাব বেড়েছে। ২০২০ সালে অভিজ্ঞ নেতা মাহাথির মোহাম্মদের সরকারের পতন হলে রাজা আল-সুলতান মুহিউদ্দিনকে পরবর্তী নেতা হিসেবে নির্বাচন করেন। 

এর আগে তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন কার পেছনে আছে তা জানতে ২২২ জন আইনপ্রণেতার সাক্ষাৎকার নেন। মুহিউদ্দিনের জোটেরও পতন হলে তিনি ইসমাইলকে নির্বাচন করেন। মুহিউদ্দিন রোববার জানান, তিনি রাজপ্রাসাদ থেকে সরকার গঠনের নির্দেশনা পেয়েছেন, কিন্তু এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত জানাননি। আনোয়ার জানান, তিনি রাজার কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে তার সমর্থন চাইবেন। বিশ্লেষকদের মতে, মালয়েশিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা চলতে থাকবে। গত কয়েক বছরে ৩ জন প্রধানমন্ত্রী দেশটিকে স্থিতিশীলতা এনে দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। দেশটিতে রাজনৈতিক পালাবদলের হাওয়া বইছে। স্বাধীনতা লাভের পর ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রায় ৬০ বছর ইউএমএনও ও বারিসান জোট ক্ষমতায় ছিল। বিশ্লেষকদের মতে, পরবর্তী জোট কোনো শক্তিশালী সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ফলে জোটের সদস্যদের মধ্যে বিবাদ চলতে থাকবে এবং এতে দেশের অর্থনীতির ক্ষতি হতে পারে।

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট 


আরও পড়ুন