এরদোগানের ভূরাজনৈতিক কৌশল এবং পশ্চিমা বিশ্ব 

news paper

রায়হান আহমেদ তপাদার

প্রকাশিত: ৩-১২-২০২২ দুপুর ৪:৪৭

7Views

অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকায় একসময় ব্যঙ্গ করে তুরস্ককে ইউরোপের রুগ্ন মানুষ বলা হতো। সেই তুরস্ককে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করেন এরদোগান। তিনি ২০০৩ সালে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন।অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বীকৃতি হিসেবে মধ্যবিত্তের সমর্থন নিয়ে তিনি আধুনিক তুরস্কের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের শাসকে পরিণত হন।১৯৭০ সাল থেকেই অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা ও মন্দা দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিল এরদোগানের দল। 

শেষ পর্যন্ত ২০০২ সালে জনগণ এরদোগানের একেপিকে ক্ষমতায় বসায়। এক দশকের এই সমৃদ্ধি অর্জনের পথে এরদোগান অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে পশ্চিমাদের দিকে সুসম্পর্ক রেখে চলেছেন। এবং আগামী নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যেকোনো মূল্যে অর্থনীতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে চান এরদোগান। নিজের শুরুর সাফল্যের সময়কার প্রতিবেশীদের সঙ্গে শূন্য সমস্যানীতিতে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন এরদোগান। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আঙ্কারার বৈদেশিক-নীতি তৈরির একটি স্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়েছে কৌশলগত স্বায়ত্ত- শাসন। অর্থাৎ যাকে বলা যায়, অন্যদের ভয়ভীতি বা প্রভাব দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে নিজের মতো এগিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা অর্জনের আকাঙ্ক্ষা। এই ধারণাটি তুরস্ককে তাঁর বৈদেশিক নীতিতে প্রতিফলিত করতে এতটাই তাড়িত করেছে যে, দেশটি যখন সিরিয়া, লিবিয়া এবং পূর্ব ভূমধ্যসাগরে অনমনীয় ও একতরফাভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার পর প্রতিবেশীদের দ্বারা বিচ্ছিন্নতার হুমকিতে পড়েছিল, তখন ক্ষমতাসীন দলের অভিজাতরা সেই সম্ভাব্য বিচ্ছিন্নতাকে উৎকৃষ্ট একাকিত্ব বলে প্রশংসা করতে শুরু করেছিলেন। তবে গত কয়েক বছরে তুরস্ক প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বাসনের জন্য বাস্তবভিত্তিক কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকার নজির বিহীন উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব ও মুদ্রার অবমূল্যায়নের মুখে পড়েছে। 

পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে কিছু লাভ করা গেলে তা দেশের রাজনীতিতে কিছু চাপ কমিয়ে দেয় এবং ক্ষমতাসীন দল কিছুটা হলেও বিশ্বাসযোগ্যতা ধার পায়। আঙ্কারার নতুন প্লেবুকটি ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য দেশগুলোর পাশাপাশি সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইসরায়েল এবং মিসরের মতো আঞ্চলিক মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করছে বলে মনে হচ্ছে। একদিকে অপেক্ষাকৃত সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং রাজনৈতিক সংস্কারের মিশ্রণ তুরস্ককে কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে দিয়েছে; অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক হেভি হিটারদের ভূমিকা ক্ষয়িষ্ণুতার দিকে যাচ্ছে। ঠিক এমন সময় ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে মধ্যস্থতার ভূমিকা তুরস্ককে নতুন একটি প্রভাববিস্তারী অবস্থানে নিয়ে গেছে। পশ্চিমকে চ্যালেঞ্জ করার মতো রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন একটি বিকল্প আঞ্চলিক ব্যবস্থার যে ইউরেশীয় দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে তাকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আনা আন্তর্জাতিক নিন্দা কিছুটা ক্ষুণ্ন করেছে বলে মনে হয়। বিশ্বে আরেকটি বিশেষ সামরিক অভিযান চলছে। রাশিয়ার পরিচালিত ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণ অভিযান সেটা নয়; এ কারণে সেটা পশ্চিমাদের মনোযোগের বিষয় হতে পারেনি। তুরস্কের নাগরিকদের ওপর কুর্দি সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে, এমন অভিযোগে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান অপারেশন ক্ল-সোর্ড বা তরবারি নখর নামে বিশেষ এই সামরিক অভিযান শুরু করেছেন। এ অভিযানে উজ্জীবিত করা হচ্ছে জাতীয় আবেগ। কুর্দিদের ওপর যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হচ্ছে, সেগুলোর নামকরণ করা হচ্ছে কুর্দি হামলায় নিহত তুর্কিদের নামে আঙ্কারার বলছে, সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল ও ইরাকে কুর্দি অধ্যুষিত এলাকায় তুরস্কের বিমান হামলা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে। সম্প্রতি ইস্তাম্বুলের সড়কে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে, তার জন্য কুর্দি সন্ত্রাসীদের দায়ী করেছেন তাঁরা। এ হামলার জন্য আরও বড় মূল্য চুকাতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আঙ্কারার কর্মকর্তারা। ধারণা করা হচ্ছে, বিশেষ অভিযানের এটা প্রথম ধাপের হামলা। 

২০২২ সালে কুর্দি অধ্যুষিত এলাকায় তুরস্কের এটা তৃতীয়বারের মতো হামলা। তুরস্কের সুলতান এরদোগান সিরিয়ার কুর্দি অধ্যুষিত এলাকায় স্থলহামলারও প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। যদিও কূটনৈতিক সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, এ ধরনের স্থল-অভিযান এখনই শুরু হচ্ছে না। তবে তুরস্কের বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে অনড় যে আগে হোক কিংবা পরে হোক,সিরিয়ায় স্থলবাহিনীর অভিযান অনিবার্য।কৌশলী সুলতান এরদোগানের সামনে এখন বিবেচনার জন্য দুটি বিষয় রয়েছে। আগামী বছর নির্বাচন। সিরিয়ায় সামরিক অভিযান এ ক্ষেত্রে তাঁর পক্ষেই যাবে। দ্বিতীয়টি রাশিয়ার সঙ্গে তুরস্কের অতি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এর একটা বড় তাৎপর্য হলো ভূরাজনৈতিক ও ভূ-অর্থনৈতিক। এরদোগান ভালো করেই জানেন যে তাঁকে নিরস্ত করতে মস্কো সম্ভাব্য সব পথেই এগোবে। দৃষ্টান্ত হিসেবে, রাশিয়া একেবারে শেষ মুহূর্তে ইন-আল-আরবে রাশিয়া-তুরস্ক যৌথ মহড়া বাতিল করেছে। ইউফ্রেটিস নদীর পূর্ব দিকের ইন-আল-আরব ভূকৌশলগত কারণে খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে রাশিয়ার মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করছেন এরদোগান। ফলে সর্বোচ্চ লাভবান হচ্ছে আঙ্কারা। তুরস্কের এই অবস্থান ঝুঁকির মধ্যে পড়ুক, তা চান না এরদোগান। তুরস্কের সুলতান ভেলকিবাজিতে ওস্তাদ। তিনি খুব গভীরভাবে বিশ্বাস করেন যে রাশিয়া ও ন্যাটোকে শেষ পর্যন্ত আলোচনার টেবিলে নিয়ে যেতে পারবেন তিনি। তাতে অবসান হবে ইউক্রেন যুদ্ধের। এরদোগানের ভাবনায় আরও বেশ কিছু বিষয় রয়েছে। তুরস্ক-ইসরায়েল সম্পর্ক, দামেস্কের পুনর্মিলন, দেশের মধ্যে ইরানের নাজুক পরিস্থিতি, তুরস্ক-আজারবাইজান সম্পর্ক, ভূমধ্যসাগর অঞ্চলের ক্রমাগত রূপান্তর, ইউরেশিয়ার একত্রকরণ-এসব ইস্যুতে শীর্ষে থাকতে চান এরদোয়ান। ন্যাটো ও ইউরেশিয়া ঘিরে যত বাজি আছে, তার সব কটিই ধরতে চান তুরস্কের সুলতান। তরবারির নখর অভিযান শুরুর সবুজ সংকেত এরদোগান দিয়েছেন উড়োজাহাজে থাকা অবস্থায়। সে সময় বালিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলন শেষে তিনি আঙ্কারায় ফিরছিলেন। 

সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দেখা হওয়ার পরদিনই এটি ঘটেছে। যদিও তুরস্কের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে দেওয়া বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বিশেষ অভিযানের ব্যাপারে বাইডেনের সঙ্গে এরদোগানের আলোচনা হয়নি। বিবৃতিতে বলা হয়, বাইডেন কিংবা পুতিনের সঙ্গে অভিযানের ব্যাপারে আমাদের কোনো আলোচনা হয়নি। তাঁরা দুজনেই ইতিমধ্যেই জানতেন, আমরা এ অঞ্চলে এ ধরনের ঘটনা যেকোনো মুহূর্তে ঘটাতে পারি। বালিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনের এক ফাঁকে বাইডেন-এরদোগান বৈঠকে কিংবা আকস্মিকভাবে ডাকা জি-৭-এর সভায় এরদোগানের বিশেষ অভিযান নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, এ বিষয়ে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে কোনো বিবৃতি আসেনি। পোল্যান্ডে এস-৩০০ ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বস্তের ঘটনায় জি-৭-এর সেই তাৎক্ষণিক সভা ডেকেছিল ওয়াশিংটন। সভায় উপস্থিত কোনো পক্ষই এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করেনি সেখানে তুরস্কের বিশেষ অভিযান নিয়ে কথা উঠেছিল কি না। সেই সভায় তুরস্ককেও ডাকা হয়নি। হতে পারে এটি এরদোগানকে গভীরভাবে ক্ষুব্ধ করেছে। এ কারণেই এরদোগান যখন বলেছেন, তরবারির নখর কেবল শুরু হলো, সেটা কোনো বিস্ময়কর ঘটনা নয়। আইনসভায় জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একেপি) আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে এরদোগান বলেছেন, আমাদের দক্ষিণের সব সীমান্ত আমরা বন্ধ করে দেব। একটি নিরাপত্তা করিডর তৈরি করব, যেটা সম্ভাব্য সব ধরনের হামলা থেকে দেশকে রক্ষা করবে। আঙ্কারা এরই মধ্যে ড্রোন হামলা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেসের সদর দপ্তরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। গোষ্ঠীটির কমান্ডাররা খুব দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, তুরস্কের স্থল অভিযানের অন্যতম লক্ষ্যবস্তু হলো কোবান অঞ্চল। খুব তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, এই প্রথমবারের মতো এমন একটি এলাকায় তুরস্ক হামলা করল, যার খুব কাছেই মার্কিন ঘাঁটি অবস্থিত। 

২০২৩ সালের নির্বাচনের আগে জাতীয়তাবাদী আবেগ চাঙা করার এমন সুযোগ কেন হাতছাড়া করবেন এরদোগান। তুরস্কে অর্থনৈতিক বিপর্যয় সত্ত্বেও নির্বাচনে জেতার বড় মওকা এখন সুলতানের সামনে। বর্তমানে পরিস্থিতিতে বিমান হামলা ছাড়া কোবানে স্থলবাহিনীর উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে রাশিয়ার সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কের সমীকরণটা প্রাধান্য পাচ্ছে। অবশ্য কোবানের চেয়ে ইউফ্রেটিস নদীর পশ্চিম তীরের মানবিজ ও তেল রিফাত রাশিয়ার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সম্ভাব্য সালাফি-জিহাদি হামলা থেকে আলেপ্পোকে রক্ষা করতে হলে এ দুটি এলাকা নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। চলমান যুদ্ধ যে ধোঁয়াশার জন্ম হয়েছে তাতে মনে হতে পারে, রাশিয়া কুর্দিদের তুরস্কের বোমার মুখে ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সেটা ঘটার সুযোগ কম। কেননা, সিরিয়ার কুর্দি অধ্যুষিত এলাকায় রাশিয়ানদের তুলনায় আমেরিকানদের প্রভাব অনেক বেশি। সে কারণে একমাত্র আমেরিকানরাই কুর্দিদের তুরস্কের কাছে বিক্রি করে দিতে পারে। পরাবাস্তব বলে মনে হলেও একটা বাস্তবতা হলো, আঙ্কারা ও মস্কো সিরিয়ার জনগণের ভাগ্যের বিপর্যয়ের জন্য একটা সমাধান ইতিমধ্যে খুঁজে পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের উপস্থিতি তাদের জন্য বাধা। কেননা, মার্কিন সেনারা সিরিয়া থেকে তুরস্কে চুরি করে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া তেলের বহর আটকে দেন। রাশিয়ান ও সিরিয়ানরা বিষয়টি সব সময় আলোচনা করেন। মার্কিনিদের হটিয়ে দেওয়ার মতো শক্তি দামেস্কের নেই। ভূরাজনীতি ও ভূ-অর্থনীতির সবটাই নিজের পক্ষে নেওয়ার জন্য যা যা করার দরকার, সবটাই করবেন এরদোগান। সিরিয়ার কুর্দিদের ওপর এখন তাঁর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। সিরিয়া থেকে তুরস্কে তেল পৌঁছতে কোনো বাধা থাক, সেটা চান না এরদোগান। এদিকে তুরস্কের বায়কার কোম্পানি রাশিয়াকে বায়রাক্টার ড্রোন সরবরাহ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ইউক্রেন এই ড্রোন রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে। তবে এ বিষয়ে দুই নেতার মধ্যে সামরিক প্রযুক্তি সহায়তার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। 

কিন্তু এরদোগান এর মধ্য দিয়ে সম্ভবত ওয়াশিংটনকে একটা বার্তা দিতে চায়। সেটা হলো, উত্তর সিরিয়ার কুর্দি নিয়ন্ত্রিত পিপলস’স ডিফেন্স ইউনিটের সঙ্গে যুদ্ধে বাধা দেওয়া হলে আমরা রাশিয়াকে ড্রোন বিক্রি করব অথবা মস্কোর সঙ্গে যৌথভাবে ড্রোন নির্মাণে কোম্পানি খুলব।এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলে সেটা ন্যাটোর সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কে বিরাট প্রভাব পড়বে। ২০১৯ সালে রাশিয়ার এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কেনায় এমনিতেই ওয়াশিংটনের সঙ্গে আঙ্কারার সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন কোনো উত্তেজনায় জড়িয়ে পড়া এরদোগানের পছন্দ নাও হতে পারে। ওয়াশিংটনের সঙ্গে জোটগত মৈত্রী এবং মস্কোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্পর্ক-এ রকম ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে চাইতে পারেন এরদোগান। ন্যাটোর অন্য সদস্যদের মতো রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পথে যায়নি আঙ্কারা। আবার রাশিয়া থেকে জ্বালানি কেনাও বন্ধ করেনি। এ ছাড়া রাশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্দার নোভাক জানিয়েছেন, পুতিন ও এরদোগান বৈঠকে তুরস্ক রাশিয়ার কাছ থেকে রুবলে প্রাকৃতিক গ্যাস কিনতে সম্মত হয়েছে। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞার ভেতরেই রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠান রস অ্যাটম সম্প্রতি তুরস্কের মেরসিন প্রদেশে ২০০০ কোটি ডলারে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ৫০০ কোটি ডলার ভর্তুকি দিয়েছে। ২০২৩ সাল নাগাদ এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে তুরস্কের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ১০ শতাংশ উৎপাদিত হবে। মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষেত্রে আঙ্কারা এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্রগুলোর একটি। এরপরও বিদেশনীতির ক্ষেত্রে তুরস্ক উল্লেখযোগ্য মাত্রায় স্বাধিকার দেখিয়ে যাবে। একই সঙ্গে রাশিয়ার সঙ্গে একটি বাস্তবসম্মত মৈত্রীও বজায় রেখে চলবে। তুরস্কের এই অবস্থানের কারণে অন্তত স্বল্প মেয়াদের জন্য মস্কো ওই অঞ্চলে অনিবার্যভাবেই আঞ্চলিক ক্রীড়নক হিসেবে থাকছে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে ক্রেমলিন মধ্যপ্রাচ্য, ককেশাস ও কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে ভূরাজনৈতিকভাবে তুরস্কের অধস্তন অংশীদার হয়ে যাবে।

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট, যুক্তরাজ্য 


আরও পড়ুন