শিক্ষাব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে শিক্ষার মান ও উন্নয়ন 

news paper

রায়হান আহমেদ তপাদার

প্রকাশিত: ৩-১২-২০২২ দুপুর ৪:৫৪

75Views

একমাত্র শিক্ষাই মানুষকে অন্য প্রণিজগৎ থেকে পৃথক করেছে। জীবনকে অর্থবহ করতে শিক্ষার মাধ্যমে মানুষকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলার প্রয়োজন পড়ে। এ শিক্ষা যে কোনো জাতি গঠনের মূলভিত্তি। সুশিক্ষা যেমন সামাজিক ও জাতীয় উন্নয়নের চাবিকাঠি, কুশিক্ষা ও অব্যবস্থাপনা তেমনি জাতীয় দুর্দশা, ক্রমাবনতি ও ক্রম-ধ্বংসের চলিকাশক্তি-পারস্পরিক দুষ্টচক্র। 

প্রকৃত শিক্ষা সামাজিক ও জাতীয় উৎকর্ষ ও উন্নতিকে ত্বরান্বিত করে এবং কালক্রমে পারস্পরিক ক্রমোন্নতির মাধ্যমে জাতিকে শীর্ষে পৌঁছে দেয়। এভাবে শিক্ষার মাধ্যমে মানবসম্পদ গড়তে পারলে দেশকে ক্রমাগত সুখ-শান্তি, সমৃদ্ধি ও প্রাচুর্যে পরিপূর্ণ করা সম্ভব। শিক্ষা ও উন্নয়ন একে অন্যের পরিপূরক ও পরিপালক বুদ্ধিমান প্রাণী বলে জন্মবধি মানুষ অনুসন্ধানী।অনুসন্ধান মানুষের জিজ্ঞাসু মনের পিপাসা মেটায়। আরও কোনো বিষয়ে জানার আগ্রহ সৃষ্টি করে। বার বার মানুষ একই ঘটনা শুনতে শুনতে, দেখতে দেখতে মনের অজান্তেই কোনো একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়। এ অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানই গবেষণা। কোনো বিষয়ে অনুসন্ধান অধিক শিক্ষাকে ত্বরান্বিত করে। যে শিক্ষায় গবেষণা নেই, মনে মনে ভাবনা নেই-সে শিক্ষা অচল ও ভঙ্গুর। গবেষণাহীন বা অনুসন্ধানবিহীন শিক্ষা স্রোতহীন জলাশয়ের শামিল। অনুসন্ধান সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করে। পৃথিবীর যেকোনো দেশে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য শিক্ষা দেশের বৃহত্তম পরিসর। তাই শিক্ষাব্যবস্থাকে যথাযথ কাঠামোর মধ্যে রাখতে হবে। দেশ কত উন্নত হবে অথবা রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ কতটুকু উন্নয়নের পথে ধাবিত হবে তা বোঝা যায় শিক্ষা-সংক্রান্ত পরিকল্পনার ভেতর দিয়ে। শিক্ষা এবং শিক্ষার মান কথা দুটির ভিন্ন তাৎপর্য রয়েছে। শিক্ষা বলতে শুধু শিক্ষিত জাতি গঠন কিন্তু দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হলে শিক্ষার মান নিশ্চিত প্রয়োজন। 

বর্তমানে বহুল উচ্চারিত শব্দ হলো মানসম্মত ও গুণগত শিক্ষা। শিক্ষা দেওয়া ও গ্রহণ করার সাধারণ রীতি যেটা শুধু শিক্ষিত খেতাবের জন্য কিন্তু একজন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে গেলে প্রয়োজন মানসম্মত শিক্ষা। 

তাই শিক্ষার মান উন্নয়ন প্রয়োজন। যদি শিক্ষার মান উন্নয়ন করা যায় তাহলে দেশের উন্নয়ন ও দ্রুত গতিতে হবে। আমাদের বর্তমান শিক্ষার প্রেক্ষাপট কী? শিক্ষার গুণগত মান কতটা বজায় থাকছে? প্রশ্নগুলোর যৌক্তিকতা আছে। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন এবং প্রতিটি নাগরিকের শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য ব্যাপক প্রয়াস চালানো হচ্ছে। তবে কোথাও যেন এই প্রশ্নগুলো থেকেই যাচ্ছে সবার মনে। শিক্ষাকে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও অনেক ছেলেমেয়ে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। প্রাথমিক স্তরে এসব ছেলেমেয়ের অংশগ্রহণ লক্ষ করা গেলেও মাধ্যমিক স্তর শেষ হওয়ার আগেই এরা লেখাপড়ার ইতি টেনে দেয় বেঁচে থাকার লড়াইয়ে নেমে বিভিন্ন জীবিকার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। অনেকে আবার শিক্ষার গণ্ডি পেরিয়ে ও চাকরির অপেক্ষায় বসে থাকে, যার ফলে বেকারত্ব নামক শব্দটা বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষার গুণগতমান যদি ঠিক থাকে তাহলে সেই শিক্ষাকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে শিক্ষিত জনগোষ্ঠী নিজেদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে নিতে পারবে। সমকালীন চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে প্রথাগত শিক্ষার চেয়ে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব বেশি, তাই শিক্ষাকে কারিগরি শিক্ষার দিকে চালিত করা জরুরি।

২০৩০ সালের মধ্যে মানসম্মত ও সর্বজনীন মাধ্যমিক শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্য এসডিজি-৪ এ উল্লেখ আছে। যত দ্রুত সম্ভব উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থাকে জাতীয়করণ করা জরুরি। শিক্ষার গুণগত মানের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গ্রহণ করে কতটুকু উপকৃত হচ্ছে তা দেখা জরুরি এবং শুধু জিপিএ-৫ ও পাসের হার বৃদ্ধি করা নয় শিক্ষার্থীরা কতটুকু কার্যকর জ্ঞান অর্জন করতে পারছে সেটাই মুখ্য বিষয়। 

বর্তমানে আমাদের অভিভাবকরা জিপিএ-৫-কে বেশি গুরুত্ব দেয় তাদের সন্তানরা জিপিএ-৫ পেয়েছে কি না এটাতে তাদের বেশি মাথাব্যথা কিন্তু আসলে প্রকৃত শিক্ষা বলতে কতটুকু অর্জন করতে পারছে সেটা নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। অভিভাবকসহ সবার উচিত শিক্ষার্থীরা স্তরভিত্তিক যোগ্যতা কতটুকু অর্জন করতে পারছে তা অনুধাবন করা। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী শিক্ষা খাতে জাতীয় বাজেটের কমপক্ষে বিশ শতাংশ অথবা জিডিপির ছয় শতাংশ বরাদ্দের কথা বলা আছে। কিন্তু বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে জাতীয় বাজেটের তেরো থেকে পনেরো শতাংশের মধ্যে থাকলেও জিডিপি মাত্র আটাশ শতাংশ। এতে দেখা গেছে, জাতীয় বাজেটের হিসাবে বা জিডিপি উভয় ক্ষেত্রে আমাদের বরাদ্দ আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের চেয়ে নিছক কম। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাজেটের আকার বড় করলেও শিক্ষা খাতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে কম। দেশের শিক্ষাবিদরা এই অপ্রতুল বরাদ্দকে গুণগতমানের শিক্ষাব্যবস্থা এবং সামগ্রিক উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় হিসেবে অভিহিত করেছেন। উন্নত দেশগুলো তাদের বাজেট আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের চেয়েও অনেক বেশি। অর্থাৎ ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ শতাংশ বরাদ্দ দেয় শিক্ষা খাতে, সেখানে আমাদের দেশে বরাদ্দ দেওয়া হয় মাত্র পনেরো শতাংশ। এজন্য চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চলমান যুগে যে পরিমাণ দক্ষ ও সৃজনশীল জনবল প্রয়োজন,তা আমরা এখনো গড়ে তুলতে পারিনি। অথচ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে এমন মানবসম্পদ সৃষ্টি করা, যারা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা গুলো অর্জনে নিজ নিজ দেশের জন্য সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারবে। কারণ, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রাসমূহ একে অপরের সঙ্গে এমনভাবে সংযুক্ত যে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত, দক্ষ, কর্মঠ, প্রগতিশীল ও উদ্ভাবনী চেতনার মানবসম্পদ দ্বারাই এ লক্ষ্যগুলো অর্জন করা সম্ভব। 

বর্তমান যুগে দক্ষ ও সৃজনশীল জনশক্তি গডে তুলতে প্রয়োজন আধুনিক প্রযুক্তি সমন্বিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে এখনো আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধি হচ্ছে না। শিক্ষা খাতে টেকসই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন আর প্রয়োজনের তুলনায় বাজেটের যে স্বল্পতা বরাবরের মতো হতাশই করেছে। আসছে সরকারের অর্থব্যবস্থার মূল চালিকা শক্তি নামে খ্যাত বাজেট। অথচ শিক্ষা জাতির উন্নতির অন্যতম পূর্বশর্ত। দেশের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন অনেকাংশেই শিক্ষাব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল। যথাযথ শিক্ষাজ্ঞান ছাড়া কৃষি, সেবা, স্বাস্থ্য, সামাজিক উন্নয়ন যে খাতই হোক না, সেটার গুণগত প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব নয়। কিন্তু প্রত্যাশিত মানের শিক্ষা অর্জনের জন্য সার্বিক যে ইতিবাচক পরিবেশ প্রয়োজন তা থেকে বাংলাদেশ এখনো বেশ কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। এর সবচেয়ে বড় কারণ আমাদের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী এবং তাদের জন্য শিক্ষার প্রত্যাশিত মান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ে নানান অন্তরায় রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অন্তরায় বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ। উন্নত দেশগুলো উন্নয়নের পেছনে বাজেটে শিক্ষা খাতের বরাদ্দ একটা বড় ধরনের অবদান রয়েছে। পৃথিবীতে এমন একটা দেশের উদাহরণ পাওয়া যাবে না, যারা জিডিপির ৪ শতাংশের নিচে বরাদ্দ রেখে শিক্ষায় উন্নত হয়েছে। উন্নত দেশগুলোতে গবেষণা ও উন্নয়ন নামে আলাদা একটা খাত আছে, যা শিক্ষা খাতের বাইরে। বাজেট স্বল্পতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন উদ্ভাবন ও গবেষণা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য হচ্ছে। এজন্য আর্থিক সচ্ছল থাকা বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে, যা প্রমাণ করে দেয় দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উচ্চশিক্ষায় আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ও পরিবেশবান্ধব কাঠামোর অপ্রতুলতা। অন্যদিকে উচ্চশিক্ষায় বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী আজ হতাশা আর বেকারত্বের জাঁতাকলে পিষ্ট। 

বেকারত্বের গ্লানিময় অন্ধকার ভবিষ্যতের চিন্তায় অনেক বিশ্ববিদ্যালয়পডুয়া শিক্ষার্থী আজ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে, যা দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নের পথের অন্তরায়। তাছাড়া করোনা অতিমারির ফলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় যে অবক্ষয় হয়েছে, সে রেশ এখনো বিনিদ্রিত হয়নি। 
বর্তমান যেহেতু তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর যুগ তাই শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি ও বিজ্ঞানকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্প্রসারণশীল হলেও শিক্ষার গুণগত মানের ক্রমাগত অবনতি লক্ষ করা যায় উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার মান যথাযথ রাখাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু অনেক সময় ক্লাসের সংখ্যা এত বেশি হয় যে, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে তেমন কোনো ভালো মানের গবেষণা হয় না। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার জন্য খুব বেশি বরাদ্দ না থাকলেও, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় গবেষণার জন্য ভালো বরাদ্দ পাওয়া যায়। তবে এসব বরাদ্দ কতটা গবেষণায় ব্যয় হয় তা সন্দেহ রয়েছে। এখনই সময় শিক্ষার মান উন্নয়নের দিকে দৃষ্টিপাত করা আর শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য সর্বপ্রথম যে বিষয়টি দরকার তা হলো সুষ্ঠু পরিকল্পনা। শিক্ষার মান উন্নয়নে শুধু সরকার নয় একজন নাগরিক হিসেবে অভিভাবকদেরও কিছু দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে। অপরদিকে শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় না দেওয়া অভিভাবকদের অন্যতম দায়িত্ব। সন্তানের যতটুকু মেধা, দক্ষতা আছে সে ততটুকু নিয়েই শিক্ষা গ্রহণ করবে। উত্তম শিক্ষার জন্য প্রয়োজন অনুকূল পরিবেশ। তাই শিক্ষার মান উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মানসম্মত ও গুণগত মানের শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। তরুণ এই জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করতে পারলে নিঃসন্দেহে অনেক কিছু হবে চিরায়ত নিয়মেই। দীর্ঘদিন অব্যবস্থাপনার মধ্যে থেকে এবং সস্তা জনপ্রিয়তার পেছনে ছুটতে গিয়ে শিক্ষা-মানের এ অবনতি। 

শিক্ষার মান নামানো যত সহজ, বাড়ানো বেশ কঠিন। শিক্ষকরা প্রতিটি শ্রেণির জন্য ত্রিপক্ষীয় শিক্ষক-ছাত্র-অভিভাবক সম্বন্ধ তৈরি করবেন। তাদের সঙ্গে নিয়মিত বসবেন। অভিভাবককে সংশ্লিষ্ট ছাত্রছাত্রীর পারফরম্যান্স জানাবেন। প্রয়োজনে অভিভাবককে মোটিভেট করবেন, ছাত্রছাত্রীর উন্নয়নে এগিয়ে আসতে বলবেন। শিক্ষা প্রশাসন অভিভাবক ট্রেনিংয়ের অবশ্যই ব্যবস্থা করবে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অভিভাবকমহলের প্রত্যক্ষ, আন্তরিক ও সক্রিয় যোগাযোগব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। বর্তমান সমাজব্যবস্থায় অভিভাবকদের সহযোগিতা ছাড়া শুধু শিক্ষকের একার পক্ষে ছাত্রছাত্রীর শিক্ষাদান সম্ভব নয়। বর্তমান যুগে প্রযুক্তিগত পরিবেশ ছাড়া বর্তমান ব্যক্তি-সমাজ-রাষ্ট্র-সভ্যতা অচল। বর্তমান কর্মের হাতিয়ার প্রযুক্তি। যে সমাজে প্রযুক্তির ব্যবহার যত বেশি, সে সমাজ তত সমৃদ্ধ। শিক্ষাঙ্গনে যেখানে যতটুকু দরকার প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে ও শেখাতে হবে। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পরিবেশ একটা বিষয়। এ দেশের অধিকাংশ স্কুল-মাদ্রাসায় গণহারে শ্রেণিকক্ষে বসিয়ে অগণিত ছাত্রছাত্রীকে একসঙ্গে দায়সারা পাঠদান করা হয়। মাধ্যমিক পর্যায়ে সাবজেক্ট ওয়াইজ শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই এব্যাপারে কর্তৃপক্ষের মনোযোগ আকর্ষণ খুবই জরুরী। অন্যতায়,এভাবে চলতে চলতে হাউজ-টিউটরের কাছে পড়া বাধ্যতামূলক ও অবশ্যম্ভাবী একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে বা বলা যায় হাউজ-টিউটরের ভূমিকা স্কুলে পড়ার তুলনায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে। এ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে স্কুলের পড়া স্কুলেই শিখিয়ে দিতে হবে। ছাত্রছাত্রীকে স্কুলে বেশি সময় ধরে রাখতে হবে। পড়া আদায় করে নিতে হবে। এতে ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসশিক্ষায় মনোযোগী হবে এবং হাউজ-টিউটরের প্রতি নির্ভরতা ক্রমেই কমবে। আমাদের মনে রাখতেই হবে, আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আগামীর পৃথিবীটা ওদের হতে। যাদের নিয়ে আমরা অহর্নিশী স্বপ্নে বিভোর থাকি, সেই শিশুদের রাষ্ট্রীয় সম-অধিকার প্রদানে সরকারকে চিন্তা করতে হবে। রাষ্ট্রের সব নাগরিকের রাষ্ট্রীয় সব সুবিধা ভোগ করা গণতান্ত্রিক অধিকার। সে অধিকার থেকে শিশুদের বঞ্চিত রাখা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

লেখক : গবেষক ও কলামিস্ট


আরও পড়ুন