বিএনপি দেশের জনগণের টাকা লুট করে খেয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

news paper

শাহেদ ফেরদৌস হিরু, কক্সবাজার

প্রকাশিত: ৭-১২-২০২২ রাত ৯:২৯

12Views

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জিয়া সরকার, এরশাদ সরকার ও খালেদা জিয়া সরকার ক্ষমতায় থেকে কি করেছে? কিছুই করেনি বরং বাংলাদেশের মানুষের টাকা লুট করে খেয়েছে। বিএনপি ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না। গাড়িতে আগুন বাসে আগুন, রেলে আগুন, লঞ্চে আগুন। তিন হাজার মানুষকে আগুনে পুড়িয়েছে তারা। ৫শ মানুষ খুন করেছে, সাড়ে তিন হাজার গাড়ি ধ্বংস করেছে।

বুধবার ৭ নভেম্বর কক্সবাজার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি কথা বলতে চাই, জামায়াত বিএনপি এদেশে কি দিয়েছে? অগ্নি সন্ত্রাস, খুন, হত্যা, লুটপাট, মানিলন্ডারিং, দেশের টাকা বিদেশে পাচার, চোরাকারবারি। এগুলো তারা পারে। খালেদা জিয়ারা গরীবের টাকা আত্মসাৎ করেছিল বলে তারা আজকে সাজাপ্রাপ্ত আসামী। আর তার ছেলে তারেক রহমান বাংলাদেশের টাকা বিদেশে পাচারের মামলা ৭ বছর সাজা প্রাপ্ত আসামী। তাকে ২০ কোটি টাকা দিতে হবে। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার উপর বারবার আঘাত করা হয়েছে কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমি বেঁচে যায়। আমি দমে যায়নি। আমরা যখন শান্তির জন্য সমাবেশ করেছিলাম সেদিন দিন দুপুরে খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া গ্যাং আমাদের উপর হামলা চালিয়েছিল। যে গ্রেনেড যুদ্ধে ব্যবহার হয়, সে গ্রেনেড আমাদের উপর ব্যবহার করা হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক মন্দার কারনে অনেক উন্নত দেশ এখন নিজেকে অর্থনীতি মন্দার দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ এখনো অর্থনীতির দিক দিয়ে শক্তিশালী আছে। ব্যাংকে টাকা আছে। ৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রিজার্ভ আছে। যেখানে খালেদা জিয়ার আমলে ছিল ২.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমরা বিনা পয়সায় করোনার টিকা দিয়েছি। অনেক ধনী দেশ পয়সা নিয়ে টিকা দেয়। যারা এখনো দ্বিতীয় বা তৃতীয় ডোজ নেননি তারা টিকা দিয়ে দিবেন। যাতে করে করোনার বিস্তার না হয়। করোনাকালীন  সময় এবং রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিদেশে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গিয়েছে। তারপরও মানুষের যাতে কষ্ট না হয় তার ব্যাবস্থা করেছি।

জনসভায় উপস্থিত মানুষের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারের মানুষ আপনাদের ভোট বৃথা যায়নি। আজকে আপনারা তাকিয়ে দেখুন কক্সবাজারের দিকে। কেউ দাবি না করেও আমি সব দিয়েছি। আজকেও ২৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেছি ৪টি প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছি। অথচ জাতির পিতাকে হত্যার পর জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে কক্সবাজারের মানুষের কোন উন্নয়ন করে নি।

লবন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন বিরোধী দলে ছিলাম তখন লবন চাষীদের নিয়ে সম্মেলন করেছিলাম। ক্ষমতায় আসার পর লবন চাষীদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। লবন শিল্পের বিকাশ এবং লবন চাষিরা যাতে আরো আধুনিক পদ্ধতিতে যাতে লবন উৎপাদন করতে পারে আমরা সে পদক্ষেপও নিচ্ছি। এবং লবন চাষীদের একটা বোর্ড গঠনের ব্যবস্থা করছি। যাতে নিজের দেশের চাহিদা মিঠিয়ে বিদেশে লবন রফতানি করা যায়। 

তিনি বলেন, মহেশখালীর মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর হচ্ছে। সোনাদিয়াতে ইকোপার্ক নির্মাণ করে দেয়া হবে। টেকনাফ সাবরাংসহ কক্সবাজারে ছয়টি কক্সবাজারে বিশেষ অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। যেখানে বিদেশী পর্যটক নির্বিঘ্নে ঘুরতে পারবেন।

তিনি বলেন, কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক মানের বিমান বন্দরের নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের দিকে । ১৯৯১ সালের বন্যায় উদ্বাস্তদের জন্য খুরুশকুলে আবাসন নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। সেখানে তাদের জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। শুধু তাই না খুরুশকুলে একটি আধুনিক শুটকি মহল তৈরি করা হবে। যেখানে শুকটি বাজার, শুটকি তৈরি, শুটকি রাখা যাবে। বিদেশীরাও বাজারটি দেখতে আসবেন। সমুদ্র সম্পদ কাজে লাগানোর জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি। সিলেট থেকে কক্সবাজার, রাজশাহী থেকে কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহজ যোগাযোগের জন্য বিমান চলাচল ব্যবস্থা করেছি। রেল স্টেশনের কাজ শেষের দিকে। 

আ'লীগের সভাপতি আরো বলেন, রোহিঙ্গারা যেন দ্রুত তাদের দেশে ফিরে যায় সে চেষ্টাও আমরা করছি। কুতুবদিয়া মহেশখালীতে ভাঙ্গন রোধ গাইড নির্মাণ করা হবে। মেরিন ইউনিভার্সিটি নির্মাণ করেছি। কক্সবাজারে একটি ক্রীড়া কমপ্লেক্সও করা হবে। কক্সবাজারের মানুষের মনের কথা আমি জানি বলেই দাবি না করলেও আমি উন্নয়ন করেছি। কক্সবাজার আমার অন্তরে আছে। কক্সবাজারকে সুন্দর ও পরিকল্পিতভাবে সাজাতে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ করেছি। কক্সবাজারে আরো দুটি অর্থনীতি জোন করা হবে মহেশখালী কুতুবদিয়াতে। আমাদের লক্ষ্য থাকবে দেশের উন্নয়ন করা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এক কোটি মানুষকে বিশেষ কার্ড দিয়েছি। সেই কার্ডের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে চাল,ডাল,চিনি,তেল ও নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে পারবে। নিম্নবিত্তদের জন্য মাত্র পনেরো টাকায় চালের ব্যাবস্থা করেছি। কোন মানুষ যাতে কষ্ট না পায়। আর যারা বৃদ্ধ বা কোন কাজ করতে পারে না তাদের জন্য ভিজিবি ও ভিজিএফ এর মাধ্যমে বিনা পয়সায় মাসে ত্রিশ কেজি করে চালের ব্যাবস্থা করেছি। অর্থাৎ বাংলাদেশে একটি মানুষও যাতে  কষ্ট না পায় সে ব্যাবস্থা করেছি। 

বাংলাদেশের প্রত্যেকটা গ্রাম শহরের সব সুযোগ সুবিধা পাবে। গ্রামের প্রতিটি মানুষকে উন্নত জীবন দেওয়া হবে এটিই আমার একমাত্র লক্ষ্য। তাই প্রতিটি গ্রামে রাস্তা-ঘাট, কালভার্ট-ব্রিজ, সড়কপথ, নৌ-পথ ও রেলপথের উন্নয়ন করে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আজকে ইন্টারনেট ব্রডব্যান্ড প্রতিটি গ্রামে পৌছে গেছে। যারা বিদেশে থাকে তাদের জন্য ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছি। যাতে তারা স্বজনদের কাছ থেকে দেখতে পারেন। প্রত্যেকের হাতে হাতে মোবাইল ফোনের ব্যাবস্থা করেছি। দশ টাকায় কৃষকদের ব্যাংক একাউন্ট করার সুযোগ করে দিয়েছি। দুই কোটি কৃষক কৃষি উপকরণ কার্ডের মাধ্যমে কমদামে সার ও বীজ কিনতে পারে। প্রতিটি গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিক করে তিয়েছি। সেখানে ৩০ প্রকার ঔষধ ব্যবস্থা করেছি। মা হওযার আগে নিরাপদ প্রসবের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এমন কি কর্মজীবী মহিলাদের মাতৃত্বকালীন ভাতা, বয়স্কভাতা,বিধবাভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতা দিয়ে মানুষকে সাহায্য করেছি।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আমার কোন চাওয়া পাওয়া নেই। বাবা-মা ভাই সব হারিয়েছি। সব হারিয়ে আমি রিক্ত নিঃস্ব। শুধু বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমার বাবা রক্ত দিয়েছে জীবন দিয়েছে। সারাটা জীবন সংগ্রাম করেছে। দেশের মানুষের জন্য আমার মা জীবন দিয়েছে। আমার ভাইয়েরা জীবন দিয়েছে। আমি আর আমার ছোটবোন সব হারিয়েছি। এই হারানোর বেদনা কি কঠিন আপনজন যারা হারায় তারাই জানে। আজকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যদি বেঁচে থাকতেন দশ বছরের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হতো। কিন্তু সেটা আমাদের ভাগ্যে হয়নি। তবে আমরা জাতির পিতার আদর্শ নিয়েই কাজ করতেছি। তার সেই লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছি আমরা। দেশের মানুষের কল্যানের জন্য কাজ করায় আমার একমাত্র কাজ। 

ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্যেশ্যে তিনি বলেন, আমরা দুই কোটি তেপ্পান্ন লাখ ছাত্র-ছাত্রীদের বৃত্তি দেওয়ার ব্যাবস্থা করেছি। বিনা পয়সায় বই দিয়েছি। যাতে আমাদের ছেলেরা উন্নত শিক্ষা নিতে পারে। উচ্চ শিক্ষার জন্য শিক্ষা সহায়তা ডেস্ক থেকে সহায়তা প্রদান করি যাতে আমাদের সন্তানরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশের মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। 

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করেছি ২০২০ সালে। ২০২১ সালে স্বাধীনত সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছি। আর তখনই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে। আজকে উন্নয়ন দেশের মর্যাদা পেয়ে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে আমরা বিশ্বের কাছে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। এ দেশের একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবেনা। একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। একটি মানুষ বা একটি পরিবার যদি ভূমিহীন বা গৃহহীন থাকেন নাম ঠিকানা দিবেন আমরা বিনা পয়সায় ঘর তৈরী করে দিব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দেশে কোন মানুষ গৃহহারা থাকবে না, কোন মানুষ জীবীকাহীন থাকবে না, কোন মানুষ অভূক্ত থাকবে না, কোন মানুষ অশিক্ষিত থাকবে না, প্রত্যেকের জীবন মান উন্নত হবে।

জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন বলে কক্সবাজারে উন্নয়ন করতে পেরেছি। পরপর তিনবার ক্ষমতায় আসতে পেরেছি। ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিভাবে গণতন্ত্রিক পদ্ধতি আছে বলেই এ দেশে উন্নয়ন হচ্ছে। বাংলাদেশ উন্নতশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। আগামী ২০২৪ সালে প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনেও আমি আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই।


আরও পড়ুন