উদ্যোক্তা জীবনের ছোটগল্প

সাধারণ সরবরাহকারী থেকে তৈরি হলো খাদ্যপণ্যের সফল ব্র্যান্ড সেভরি ও স্বাদ

news paper

ফয়েজ রেজা

প্রকাশিত: ১৮-১-২০২৩ দুপুর ১১:৫৯

45Views

দুই হাজার এগার সালের আগে লিটন আকন্দ ছিলেন একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী। দুই হাজার তেইশ সালে তিনি দেশের একজন প্রতিষ্ঠিত তরুণ শিল্প উদ্যোক্তা। বর্তমানে তাঁর গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠান সেভরি ফুড লিমিটেড এ কাজ করছেন প্রায় দেড় শতাধিক কর্মী। সাভারের বিরুলিয়ায় সেভরি ফুড এর কারখানা। সেভরি ফুড এর পণ্য দেশের ভোক্তাদের চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি রপ্তানী হচ্ছে মালয়েশিয়া, মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। সেভরি ফুড এর সফলতার পেছনের কথা তুলে ধরেছেন- ফয়েজ রেজা

‘প্রতিটি মানুষের ভেতরে একটি আগুনের উৎস আছে। সে আগুন জ্বালাতে হবে নিজেকেই। অন্য কেউ পারবে না সে আগুন জ্বালাতে।’ এমন দার্শনিক কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই প্রকাশ করেন শিল্প উদ্যোক্তাদের ভেতরের সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলার জন্য। ব্যবসায় মাঝেসাঝে শ্রাবণের মেঘের মতো যে হতাশা আসে, তা কাটানোর জন্য। সেভরি ফুড লিমিটেড ও স্বাদ এর প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: লিটন আকন্দ। তিনি তাঁর ভেতরের সম্ভাবনা বা আগুনের উৎস টের পেয়েছিলেন আগেই। সে সম্ভাবনা তিনি সফলতায় রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছেন। দশ বছরের ব্যবধানে তিনি একটি দেশের প্রতিষ্ঠিত ফুড ব্র্যান্ড সেভরি ও স্বাদ এর প্রতিষ্ঠাতা। ব্যবসা শুরু করার পর অতি অল্পদিনে কিভাবে দেখলেন সফলতার মুখ? প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান- ‘পণ্য উৎপাদন থেকে বিপণন, পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ থেকে প্রতিষ্ঠানের আয় ব্যয়ের হিসেব, সব বিষয় নিজে দেখভাল করি। কর্মীদের সাথে সার্বক্ষণিক কাজ করি। এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছি।’ 

ব্যবসা শুরু করার আগে একটি জাপানিজ প্রতিষ্ঠানে অর্থ মহাব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করতেন তিনি। বাংলাদেশে খাদ্যপণ্য তৈরির বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহ করতে প্রতিষ্ঠানটি। সেই সময় তাঁর মনে হয়েছিল তিনি নিজেও শুরু করতে পারেন এমন একটি ব্যবসা। সেই ভাবনা ও কাজের অভিজ্ঞতা থেকে শুরু করেন। ব্যবসা শুরু করার সময় খুব বড় আশা বা প্রত্যাশা ছিল না। তখন স্বপ্ন দেখেছিলেন- নিজের একটি প্রতিষ্ঠান থাকবে। প্রতিষ্ঠানে ১০ থেকে ১৫ জন কর্মী কাজ করবেন। আজকের দিতে তিনি সে স্বপ্ন ছাড়িয়ে গেছেন। নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন আরও বড় পরিসরে। বর্তমানে তাঁর প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে প্রায় দেড় শতাধিক কর্মী। তাঁর প্রতিষ্ঠানে তৈরি করা খাদ্য পণ্য রপ্তানি হচ্ছে দেশের বাইরে। 

মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্ছে অনেক বাঙালি বসবাস করেন। সেখানে বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা আছে। সে চাহিদা পূরণের জন্য কাজ করছে সেভরি ফুড। ফলে দেশের বাজার ছাড়াও দেশের বাইরে বাজারে সেভরি ফুড এর চাহিদা বাড়ছে। এটাই কি একমাত্র কারণÑ উত্তরে সেভরি ফুড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান- আমরা ভালো মানের খাদ্য পণ্য তৈরি করার চেষ্টা করি। মানুষ একবার সেভরি ফুড এর পণ্য  কেনার পর যেন বারবার কেনার আগ্রহ প্রকাশ করে, সেজন্য পণ্যের মান সঠিক রাখার চেষ্টা করি। এ কারণে ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে সেভরি ফুড ও স্বাদ এর পণ্যেও ক্রেতা সংখ্যা।’ 

খাদ্যপণ্য সরবরাহ ও প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেভরি ব্যান্ড এর যাত্রা শুরু হয় ২০১৭ সালে। শুরুর দিকে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত খাদ্যপণ্য তৈরির প্রতিষ্ঠান যেমন- স্কয়ার ফুড এন্ড বেভারেজ, এসিআই, অলিম্পিক, ওয়েল ফুডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে খাদ্যপণ্য প্রস্তুত করার উপকরণ সরবরাহ করতেন। বর্তমানেও সরবরাহকারী হিসেবে সফলতার স্বাক্ষর রাখছেন। এর পাশাপাশি নিজে প্রতিষ্ঠা করেছেন ফুড ব্র্যান্ড। যার গ্রহণযোগ্যতাও বাড়ছে। লিটন আকন্দ জানান- ২০১১ সাল থেকে আমরা মানসম্মত কাঁচামাল বিভিন্ন বৃহৎ প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করি এবং আমাদের পণ্যের গুনমান সর্বোচ্চ পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে মোড়কজাত করে থাকি। এই বিষয়কে সামনে রেখে আমারা আমদের বাজারজাত পরিকল্পনাকে সেভাবে নির্ধারণ করি। যা বাজারের অন্যান্য স্বনামধন্য পণ্যের পাশাপাশি সেভরি ফুড আলাদা একটি জায়গা করে নিতে পেরেছে।

আজকের দিনে ব্যবসায় সফল লিটন আকন্দ। শুরুর পথ ছিল নানা ধরণের চ্যালেঞ্জের। বড় বড় এবং প্রতিষ্ঠিত ফুড ব্র্যান্ড এর পাশাপাশি একটি নতুন ফুড ব্র্যান্ড হিসেবে মানুষের আস্থার জায়গায় আসতে পারাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়। গুণগত মানের ভালো পণ্য ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করে তিনি সে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছেন। ব্যবসার অগ্রগতিতে চ্যালেঞ্জ আছে এখনও। শুরুর দিকে চ্যালেঞ্জের ধরণ ছিল এক রকম। বর্তমানে চ্যালেঞ্জের ধরণ বদলেছে। দ্রব্যমূল্যেও উর্ধ্বগতিসহ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ব্যবসার পরিকল্পনা সাজাতে হচ্ছে। 

বর্তমানে সারাদেশে সেভরি ফুডের পণ্য পৌছানোর ইচ্ছা নিয়ে কাজ করছেন। ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, বগুড়া, রংপুর ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যাচ্ছে সেভরি ফুড এর পণ্য। বাজারে পাওয়া যাচ্ছে হট টমেটো সস, সুইট চিলি সস, মটর ভাজা, ডাল ভাজা, চানাচুর, বিভিন্ন ধরনের টোষ্ট, সুগন্ধি চিনিগুরা চাল, সরিষার তেল, গুড়া মশলা ও বেকিং পণ্য সামগ্রী। 


আরও পড়ুন