আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি

news paper

সিরাজুল ইসলাম

প্রকাশিত: ১৮-১-২০২৩ বিকাল ৬:২

1Views

চাঁপাইনবাবগেঞ্জর শিবগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে সাব-রেজিস্ট্রার মো. ইউসুফ আলীর উপর হামলার ঘটনায় নিরাপত্তা ঘাটতির বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। সারা দেশে রেজিস্ট্রার ও সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে জরুরি ভিত্তিতে সশস্ত্র আনসার সদস্য নিয়োগ এবং সিসি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। সোমবার রাতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে দেখা করে সংগঠনের নেতারা এ দাবি জানান। মন্ত্রী তাদের দাবি পূরণ এবং হামলায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে হামলার শিকার সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীকে মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিন এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তাকে ঢাকায় আনা হয়। অন্যদিকে সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীর দুর্নীতি ও ঘুস বাণিজ্যের প্রতিবাদে এদিন শিবগঞ্জে মানববন্ধন করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
বাংলাদেশ রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বিআরএসএ) মহাসবিচ এস. এম. শফিউল বারী বলেন, তারা সোমবার রাতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে দেখা করেছেন। তারা সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীর উপর হামলার বিচার দাবি করেন। একই সঙ্গে সারা দেশের সব রেজিস্ট্রার ও সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানান। তারা সব অফিসে সশস্ত্র আনসার সদস্য মোতায়েন এবং সিসিটিভি স্থাপনের দাবি জানান। মন্ত্রী তাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। একই সঙ্গে তদন্ত সাপেক্ষে ইউসুফ আলীর উপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছেন। ওই হামলায় শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল হায়াত জড়িত বলে তারা দাবি করেন। এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেছেন, তদন্তে তার জড়িত থাকার প্রমাণ মিললে তার বিরুদ্ধেও আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে তিনি লিখিত সুপারিশ করবেন। ন্যাক্কারজনক হামলায় একজন প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা (সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী) গুরুতর জখম বা আহত হওয়ায় দেশের সব সাব-রেজিস্ট্রার সরকারি দপ্তরের স্বীয় দায়িত্ব পালনে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে বিআরএসএ নেতারা মন্ত্রীকে জানিয়েছেন। 
এদিকে, ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশ রেজিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অহিদুল ইসলাম এবং মহাসচিব এস.এম. শফিউল বারী সাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১০ জানুয়ারি এজলাশ কক্ষে চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার মো. ইউসুফ আলীর ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল হায়াত তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন। তার উস্কানি ও নির্দেশে দুর্বৃত্তরা হকি স্টিক ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে তিনি মারাত্মক জখম হন। প্রত্যক্ষদর্শী এবং একটি অডিও ক্লিপের বরাত দিয়ে ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে এস. এম. শফিউল বারী বলেন, শিবগঞ্জ উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের একজন পিয়ন কিছুদিন আগে মারা গেছেন। তার দুইজন স্ত্রী রয়েছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। তাদের একজন কিছুদিন ধরে পেনশনের জন্য প্রত্যায়নপত্র চাচ্ছিলেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী প্রত্যায়নপত্র দিচ্ছিলেন না। এতে ওই নারীর স্বজনরা ক্ষিপ্ত হন এবং ইউএনও আবুল হায়াতের কাছে অভিযোগ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হন ইউএনও। এক পর্যায়ে তিনি সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে আসেন এবং এজলাসেই তিনি সাব-রেজিস্ট্রারের সাথে তর্কে লিপ্ত হন। এক পর্যায়ে তিনি সাব-রেস্ট্রিারের কলার ধরে মারপিট করেন। পরে তার নির্দেশে তার সঙ্গে আসা লোকজন হকি স্ট্রিক ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ইউসুফ আলীর উপর হামলা করেন। এতে তার মারাত্মক জখম হয়। ইউএনও তার মোবাইল  ফোনও ছিনিয়ে নেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে তারা কর্মবিরতি পালন করেন।
অভিযোগের বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হায়াত ওই দিন ‘সকালের সময়’কে বলেন, তিনি হামলার ঘটনায় জড়িত নন। উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়ে তিনি সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়েছিলেন দুপুর ১টার দিকে। হামলা হয়েছে বিকাল ৪টায়। হামলার খবর পেয়ে তিনি পুলিশ পাঠিয়ে সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীকে উদ্ধার করান এবং হাসপাতালে পাঠান। এক প্রশ্নে তিনি বলেন, মৃত এলএমএসের স্ত্রীও মারা গেছেন। তার একটি প্রতিবন্ধী মেয়ে রয়েছে। আমি তাকে প্রত্যয়নপত্র দেয়ার জন্য সুপারিশ করেছিলাম। কিন্তু সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী বলেন, তিনি মেয়েটিকে চেনেন না। এ সময় মেয়েটির খালা বলেন, অনেকদিন ধরে ঘুরছি। তারপরও আপনি চেনেন না বলছেন কেন? তিনি ওই নারীর সাথে দুর্ব্যবহার করেন। উপজেলার হিসাবরক্ষক বলেন, সব কাগজ ঠিক আছে। আপনি প্রত্যয়নপত্র দিলে মেয়েটি পেনশন পেতে পারে। মূলত আমি প্রত্যয়নপত্র দিতে সুপারিশ করায় তিনি আমার উপর ক্ষিপ্ত হন এবং সবার সামনে আমার সাথে দুর্ব্যবহার করেন। বলেন- আপনারা যা পারেন করেন। যার কাছে ইচ্ছা লেখেন। ডিসির কাছে লেখেন, জেলা রেস্ট্রিারের কাছে লেখেন। যেখানে খুশি যান। পরে আমরা চলে আসি। তিনি বলেন, ইউসুফ আলী দুর্নীতিবাজ। আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে তার সামনে চেয়ারম্যানরা তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন। এ সময় তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করে ক্ষমা চেয়েছেন। এর আগে ঘুস দাবি করায় দলিল লেখকরা তাকে ধাওয়া করেছিলেন। তখন তিনি ইউএনও অফিসে আশ্রয় নেন। ছয় মাসের মতো সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয় বন্ধ ছিলো। পরে বিষয়টি মীমাংসা হওয়ায় তিনি অফিস করছেন। তার দুর্নীতির বিষয়ে রেজ্যুলেশন আছে। এটা আমার মুখের কথা নয়। সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী সেবাগ্রহীতাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন বলেও দাবি করেন ইউএনও আবুল হায়াত।  
সাব-রেজিস্ট্রারের ঘুস বাণিজ্যের প্রতিবাদে মানববন্ধন: শিবগঞ্জ থেকে আব্দুল কাদির জানান, শিবগঞ্জে সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীর অনিয়ম, ঘুস বাণিজ্য ও জনসাধারণকে হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা। মঙ্গলবার দুপুরে শিবগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, জনসাধারণকে হয়রানি ও ঘুস বাণিজ্যের অভিযোগে ভুক্তভোগীদের হামলার শিকার হন সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ওপর দায় চাপানোর অপচেষ্টা মুক্তিযোদ্ধারা মেনে নেবে না। অবিলম্বে দুর্নীতিবাজ সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জোর দাবি জানান বক্তারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বজলুর রশিদ সনু, সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আবদুল হামিদ, জেলা কমান্ডের সহ-সাংগঠনিক কমান্ডার তরিকুল ইসলাম ও সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্ধা তসলিম উদ্দিনসহ অন্যরা। এছাড়াও শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ মানববন্ধনে অংশ নেন।  


আরও পড়ুন