কদর বাড়ছে পুষ্টিবিদের

news paper

ফয়েজ রেজা

প্রকাশিত: ১৯-১-২০২৩ দুপুর ১২:৬

52Views

আগে স্বাস্থ্য সেবাখাত ছিল শুধুমাত্র সেবামূলক। রোগীদের সেবা প্রাপ্তি  ও প্রত্যাশার মধ্যে ছিল বিস্তর ফাঁক। গেল দশ বছরে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এমন অনেক হাসপাতাল, প্রতিষ্ঠান হিসেবে যারা কর্পোরেট মানদণ্ড মেনে চলছে। ফলে এসব হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার মান বেড়েছে। হাসপাতালে তৈরি হয়েছে বিভিন্ন ধরনের কাজের ক্ষেত্র। হাসপাতালে নতুন তৈরি এসব পেশা এবং পেশার প্রতি বেড়েছে তারুণ্যের আগ্রহ। পুষ্টিবিদ পেশা, তার একটি। 

রোগীর সকালের খাদ্য তালিকায় কি থাকবে? ডিম একটি থাকবে না দুটি? সেদ্ধ থাকবে না ভাঁজা, দুপুরের খাবারের মেন্যু কি হবে? মুরগির মাংস ঠিক কয় টুকরো থাকবে? ফল থাকবে খাবারের পরে না দুই ঘন্টা গ্যাপে? রাতের খাবারের ডায়েট চার্ট কি?খাবারের গুণগত মান ও মানুষের প্রতিদিনের পুষ্টির চাহিদা যাচাই করে  ইত্যাদি বিষয় নির্ধারণ করাই পুষ্টিবিদের কাজ। ফরাজী হাসপাতাল বারিধারার পুষ্টিবিদ নাহিদা আহমেদ জানান- ‘যে কোন অসুখের চিকিৎসায় ওষুধের সাথে যদি সঠিক পরিমাপের খাবার খাওয়া যায়, পুষ্টি বিবেচনা করে যদি খাবার পরিবেশন করা হয়, তাহলে রোগীর অসুখ দ্রুত ভালো হয়। রোগী স্বাভাবিক ও সুস্থ্য জীবনে ফিরে আসতে পারে। সুস্থ্য হওয়ার পর মানুষ যদি সঠিক ডায়েট চার্ট বা প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা মেনে চলে, তাহলে বেশিদিন সুস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবন যাপন করা যায়। হাসপাতালে একজন পুষ্টিবিদ এসব বিষয় নিয়ে কাজ করেন।’ 

তিনি জানান- কোন অসুখে আপনি কি ওষুধ খাবেন, সে পথ্য বা পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। আর কোন অসুখের সময় কোন ধরণের খাবার আপনার জন্য ক্ষতিকর, তা নির্ধারণ করেন পুষ্টিবিদ।' তিনি বলেন- 'মানুষের শরীরে এমন অনেক অসুখ আছে, যা শরীরে ভর করলে সঠিক ডায়েট চার্ট মেনে চলা জরুরি। যেমন- ডায়াবেটিস। আপনার যদি ডায়াবেটিস হয়, তাহলে আপনি যদি তা নিয়ন্ত্রণে না রাখেন, তাহলে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে। একটি এসুখের উপর ভর করে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে আরও অনেক অসুখ। ডায়াবেটিসের মাত্রা যদি নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারেন, তাহলে সেসব অসুখ থেকেও সহজে আরোগ্য লাভ সম্ভব নয়। আর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রধান অবলম্বন হচ্ছে পুষ্টিমান ও প্রয়োজন বিবেচনা করে খাবার খাওয়া। সঠিক পুষ্টিমানের খাবার খাওয়ার জন্য দরকার একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ। এটি হাসপাতাল বা সাধারণ অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে।


যারা সুস্থ্য স্বাভাবিক জীবনে আছেন, স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, বেশি মোটা হয়ে গিয়েছেন, শরীরে ওজন ঝরাতে পান, অথবা বাড়াতে চান শরীরের ওজন। শুধু ব্যায়াম বা খাবার কম বেশি খেলে হবে না। পরিপূর্ণ সুস্থ্য থাকার জন্য মেনে চলতে হবে সঠিক ডায়েট চার্ট। এ ডায়েট চার্ট তৈরি করতে হবে খাবারের গুণগত মান বা পুষ্টিগুণ বিবেচনা করে। আর এ কাজের জন্য সহযোগিতা নিতে হবে পুষ্টিবিদের।   

পুষ্টিবিদ নাহিদা আহমেদ জানান- একালে একজন পুষ্টিবিদের কাজের জায়গা শুধু হাসপাতালে নয়, প্রতিটি মানুষের ঘরে, খাবারের টেবিলে। এ সময়ে হাসপাতাল, ডায়াগনেস্টিক সেন্টার, ফিটনেস সেন্টার যেমন পুষ্টিবিদের কাজের জায়গা, তেমনি আছে অনেক কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান। যেখানে কর্মীদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকা তৈরি করেন পুষ্টিবিদ। হোটেল রিসোর্টেও পুষ্টিবিদের চাহিদা আছে। কারণ অতিথীরা যে খাবার গ্রহণ করবেন, তা যদি সঠিক পুষ্টিমানের না হয়, তাহলে প্রতিষ্ঠানের সুনাম বাড়বে না। এর বাইরে এমন অনেক কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে খাদ্যপণ্য প্রস্তুত করা হয়। বিশেষ করে শিশুখাদ্য ও খাদ্যজাতীয় পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে পুষ্টিবিদরা কাজ করতে পারেন।'  

পুষ্টিবিদ নাহিদা আহমেদ এর আগে কাজ করেছেন গুলশান ডায়াবেটিক কেয়ার, ভেল্লা লেজার কেয়ার সেন্টার ও জাস্ট ফিট হেলথ কেয়ার সেন্টারে। দীর্ঘ দিনের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন- 'আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে পুষ্টিবিদের চাহিদা অনেক বেশি। একালে অনেক ছোট ছোট হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠানেও পুষ্টিবিদের চাহিদা আছে। দেশে এবং দেশের বাইরে কাজ করার সুযোগ আছে।' 

পুষ্টিবিদ হিসেবে কখন কাজ শুরু করতে পারবেন? পুষ্টিবিদ নাহিদা আহমেদ কাজ শুরু করেছেন শিক্ষাজীবন সমাপ্ত হওয়ার আগে। স্নাতক পাশের আগেই তিনি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পুষ্টি পরামর্শক হিসেবে যুক্ত হয়েছিলেন। সে সময় তিনি ছিলেন এ পেশায় নতুন। অনেক সময় সঠিক পরামর্শ দিতে সমস্যা হতো। সে সময় তাঁর শিক্ষক বা অভিজ্ঞদের কাছ থেকে শোনে বোঝে পরামর্শ দিতেন তিনি। কাজ করতে করতে দক্ষতা তৈরি হয়েছে তাঁর। বেড়েছে পুষ্টি বিষয়ে পড়াশোনার পরিধি। নিজের পড়াশোনা ও জ্ঞান বাড়ানোর জন্য পুষ্টি বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সংবাদপত্র ও কাগজে নিয়মিত লেখেন তিনি। কোনো একটি বিষয় ধরে লেখার আগে অনেক বই পড়তে হয়। তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। এতে সে বিষয়ে তাঁর নিজের জ্ঞান যেমন বাড়ছে, তেমনি উপকার পাচ্ছে তাঁর পাঠক ও সাধারণ মানুষ।  

একালে পেশা হিসেবে পুষ্টিবিদ যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি আছে সম্মানজনক উপার্জন, কাজের জায়গাও প্রসারিত। আপনি যদি পুষ্টিবিদ হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চান, প্রস্তুতি নিতে হবে উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর থেকে।


আরও পড়ুন