পিঠা শিল্পী জান্নাতুল ফেরদৌস

ব্যবসায় বিক্রি বাড়ানোর কৌশল

news paper

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৭-২-২০২৩ বিকাল ৫:৫৮

198Views

পণ্য উৎপাদন করলাম আর বেচে দিলাম, তা ব্যবসা নয়। ব্যবসায় বিক্রি বাড়ানোর জন্য বিক্রেতাকে সাধার কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হয়। যারা নতুন ব্যবসা শুরু করেছেন,  তাদের জন্য একটি পণ্য বিক্রি হওয়া অনেক বড় কিছু। নতুন উদ্যোক্তার কাছে ব্যবসায় লাভ লোকশানের চিন্তার চেয়ে পণ্য বিক্রি হওয়ার বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পায়। পণ্য বেচা হলেই তারা মহা খুশি।
 
আর যারা পুরাতন, অভিজ্ঞ ও দক্ষ বিক্রেতা, তারা তাদের পণ্য, সেবা এবং মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট কার্যকারী নিয়ম প্রয়োগ করেন। এতে করে তারা সহজে সফলতা পায়। নতুনরা যেহেতু এসব কৌশল তখনো আয়ত্বে নিতে পারে না, তাই সফলতা তাদের কাছে সোনার হরিণ হয়ে দাঁড়ায়।
 
নতুন বা পুরাতন, যে ব্যবসায়ী হোন না কেন, ব্যবসায় সফলতা পেতে হলে কিছু কৌশল অবলম্বন করতেই হবে ।
 
যেমন: সবার প্রথমে উদ্যোক্তাকে কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে হবে। ধরুন- আপনার পণ্যের কোন দিকটি সবচেয়ে ভালো, এটি আপনাকে জানতে হবে। জানতে হবে কাস্টমাররা আপনার পণ্যের বা সার্ভিসের কোন দিকটি বেশি পছন্দ করে। আপনার ক্রেতারা কি পরিমান টাকা ব্যয় করতে সক্ষম? সে দিকটিতেও খেয়াল রাখতে হবে। আপনি যদি এসব বিষয় সুন্দরভাবে, পরিচ্ছন্ন ভাবে তুলে ধরতে পারেন, তাহলে আপনার পণ্য  বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। যদি আপনি এ সম্পর্কে বিক্রেতাদের সঠিক ধারণা দিতে না পারেন, আপনার মধ্যে যদি দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করে, তাহলে আপনার বিক্রির ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
 
আর আপনাকে বিক্রয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে আপনার পণ্য যেন ক্রেতার প্রয়োজনীয় জিনিস হয়। কোন অপ্রয়োজনীয় পণ্য বা সেবা আপনার কাছ থেকে কোনো ক্রেতা নিবে না। তাই আপনি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে বিক্রেতা বা কাস্টমারের প্রয়োজন খুঁজে বের করুন এবং সে প্রয়োজনের দিকে গুরুত্ব দিন।
 
মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে ও আপনাকে হতে হবে অনেক সচেতন। পণ্য বিক্রয়ের জন্য মূল্য নির্ধারণ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পণ্যের মূল্যের উপর নির্ভর করে বিক্রয় বৃদ্ধি বা হ্রাস। 
 
অনেকে মনে করে পণ্যের দাম কমিয়ে দিলে বিক্রি বেড়ে যাবে। আসলে এটা সঠিক নয়। পণ্যের মূল্য বেশি থাকার পরেও বিক্রয় বেশি হয়। এক্ষেত্রে পণ্যের মান প্রভাব ফেলে। 
ধরুন একজন একটি পণ্য কম দামে বিক্রি করছে। সে পণ্য আপনি বেশি দামে ও অনেক পরিমাণ বিক্রয় করতে পারবেন। আপনার পণ্য কাস্টমার বা ক্রেতা যতটুকু আশা নিয়ে উচ্চমূল্যে কিনবে, সেই আশা যদি আপনি পূরণ করতে পারেন। 
 
তাই পণ্যের মূল্য নির্ধারণের  ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই কাস্টমার বা ক্রেতার প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দিতে হবে। আর যখন কোন ক্রেতা আপনার কাছে আপনার পণ্যের মূল্য সম্পর্কে জানতে চাইবে, তখন অবশ্যই ক্রেতাকে আপনার পণ্যের ভালো-মন্দ খুঁটিনাটি বিষয় বুঝিয়ে বলতে হবে, কিসের জন্য আপনার পণ্যের দাম বেশি বা কম।
 
আপনার ব্যবসার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই তিনটি পদক্ষেপ মেনে চলতে হবে, যেমন- জিজ্ঞাসা করুন শুনুন এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। আপনি যদি সঠিকভাবে জেনে নিতে পারেন কাস্টমারের প্রয়োজন কি? কাস্টমার কি চায়? তাহলে কাস্টমারকে সঠিক সম্মান দিতে পারবেন। কাস্টমারকে সন্তুষ্ট করতে পারবেন। এতে করে আপনার স্বাভাবিক বিক্রয় বৃদ্ধি পাবে।
 
নেতিবাচক মনোভাব, কনফিডেন্সের অভাব, আগ্রহের অভাব, কাস্টমারের প্রতিক্রিয়া ইতিবাচকভাবে না নেওয়া, বিক্রিত পণ্য ফেরত না দেওয়া, কাস্টোমার এর প্রতি অল্পতে বিরক্ত হওয়া, কাস্টমারকে সম্মান না দেওয়া, ইত্যাদি বিষয় আপনার পণ্য বিক্রয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এতে করে কাস্টমারের সাথে আপনার সম্পর্ক ঠিক থাকবে না। দূরত্বের সৃষ্টি হবে। এ জন্য আপনাকে কাস্টমারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
 
আপনার প্রতিষ্ঠান যদি কর্মী নির্ভর হয়, তাহলে অবশ্যই মনে রাখতে হবে- কর্মীরা হলো আপনার প্রতিষ্ঠানের সম্পদ। তাদের সঠিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। কিভাবে কাস্টমারদের সাথে কথা বলতে হবে, কিভাবে কাস্টমারদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে ইত্যাদি ধারণা কর্মীদের দিতে হবে।  কর্মীরা যদি পণ্য বা সেবা সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখে, তাহলে কাস্টমারদের প্রভাবিত করতে পারবে। সবক্ষেত্রে তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করার চেষ্টা করবেন।
 
উপরোক্ত কারণগুলো ছাড়াও আপনার পণ্যের মান আপনার সার্ভিস যদি ভালো হয়, তাহলে কাস্টমার তা অন্যের কাছে শেয়ার করতে পছন্দ করবে। আপনার পণ্যের ভালো-মন্দ নিয়ে আলোচনা করবে। এতে করে আপনার বিক্রয় বৃদ্ধি পাবে। শুধু এই বিষয়ের উপর ভরসা করে বসে না থেকে মাঝেমধ্যেই ক্রেতাদেরকে অনুপ্রাণিত করতে হবে। তাদেরকে বলতে হবে- আপনার পণ্য বা সার্ভিস যদি তার পছন্দ হয়, সে যেন এটি অন্যদের সাথে শেয়ার করে। বিষয়টি আপনার বিক্রয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
 
মাঝে মাঝে কাস্টমারদের জন্য কিছু  উপহারের ব্যবস্থা করতে হবে, যাকে ব্যবসার ভাষায় বলা হয়- কাস্টমার খাতির। তাহলে কাস্টমার আপনার প্রতি সদয় থাকবেন। আপনার বিষয়ে ইতিবাচক কথা বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের সাথে বলবেন। এতে করে আপনার কাস্টমার সংখ্যা বেড়ে যাবে। কাস্টমার বেড়ে যাওয়া মানে আপনার বিক্রয় বেড়ে যাওয়া।
 
আরো একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে- কম লাভ বেশি বিক্রি। তাহলে আপনার কাস্টমার বাড়বে। পণ্য বেশি বিক্রি হলে আপনার লাভের পরিমাণ বেড়ে যাবে।

আরও পড়ুন