পদযাত্রা থেকে হরতাল অবরোধের দিকে ঝুকলে বিএনপির লাভ-ক্ষতি

news paper

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া

প্রকাশিত: ১৪-২-২০২৩ দুপুর ২:৭

7Views

সরকারের পদত্যাগ ও ১০ দফা দাবি আদায়ে চার দিন নীরব পদযাত্রা শেষে ঢাকায় আবারও দুই দিন পদযাত্রা করে বিএনপি। ৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আয়োজনে গোপিবাগ ব্রাদার্স ক্লাব মাঠ থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাব পর্যন্ত পদযাত্রা করা হয়। ১২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আয়োজনে পদযাত্রা করা হয় শ্যামলী ক্লাব মাঠ থেকে রিংরোড, শিয়া মসজিদ, তাজমহল রোড, নূরজাহান রোড, মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড হয়ে বসিলা পর্যন্ত। বিএনপির এ কর্মসূচিতে জনগণ তো নয়ই, তাদের সাধারণ যে কর্মী, তারাও সামিল হয়নি ঠিক মত । আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো শক্তি প্রদর্শনের প্রতিযোগিতায় মেতেছে। বিএনপিসহ বেশ কিছু দল মুখে নির্বাচনে না যাওয়ার কথা বললেও দলকে চাঙ্গা রাখতে প্রায়ই রাজপথে কর্মসূচি দিচ্ছে। রাজনীতির এই মাঠ গরমের খেলায় নাকাল অবস্থা সাধারণ মানুষের। রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো আরেকটু সচেতনভাবে এবং সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে ছুটির দিনগুলোতে এবং নির্দিষ্ট কোথাও আয়োজনের পরিকল্পনা করা যায় কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন রাজধানীবাসী সহ সারাদেশ এর ভুক্তভোগী জনগন।

বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেশের রাজনৈতিক নেতাদের দেওয়া ভাষণে, বক্তব্যে-জনস্বার্থে, জনগণের জন্য, জনগণের মঙ্গলের জন্য, জনবান্ধব- এমন শব্দগুলো অহরহ শোনা যায়। কার্যত এই শব্দগুলোর বাস্তবিক চর্চা এসব কর্মসূচির মাধ্যমে কতটা প্রতিফলিত হয় তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে এর অনেক ক্ষেত্রেই যে জনদুর্ভোগের নজির সৃষ্টি হয় তা বর্ণনাতীত। বিশেষ করে রাজপথে যে রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো পালিত হয়, সেগুলোর ক্ষেত্রে জনস্বার্থের কথা যে বিবেচনায় রাখা হয় না তা বেশ জোর দিয়েই দাবি করা যায়। বৈশি^ক সংকটে এরকম আন্দোলন জনগণ ইতিবাচকভাবে গ্রহন করেনা।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এর সময় বিএনপির নেতৃত্বে বিরোধীদলীয় জোট এবং জামায়াত-শিবির চক্র এই নির্বাচন বন্ধের জন্য কয়েক মাস ধরে হরতাল-অবরোধ থেকে শুরু করে পেট্রলবোমা-ককটেল ছুড়ে বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ট্রাকে আগুন দেওয়ার মতো চরম সহিংস আন্দোলন কোনোটাই বাদ রাখেনি। অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। প্রতিবাদের ভাষা কী হবে, বিশেষত নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর, সে বিষয়ে বিএনপির কাছে মানুষ দায়িত্বশীল অবস্থানই আশা করে। কিন্তু এটা দুঃখজনক যে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপট বিবেচনায় না নিয়েই বিএনপি-জামায়াত জোট একাদিক্রমে হরতাল-অবরোধ ডেকে চলেছে। নির্বাচনের আগে অনির্দিষ্টকালের জন্য যে অবরোধ ডাকা হয়েছিল, সেটা তো আছেই, উপরন্তু হরতালও ডাকা হচ্ছে। এর পরিণাম ভোগ করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বিচ্ছিন্ন বোমা হামলায় মানুষের শরীর ঝলসে দিয়েছে। 

লক্ষণীয় যে বিরোধী দল হরতাল-অবরোধ আহ্বান করলেও রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ শহরে তা কেউ মানে নাই। ওই সময় মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল ভেঙে বেরিয়ে পড়তে থাকলে কর্মসূচি অকার্যকর হয়ে পড়ে। সে ক্ষেত্রে বিএনপির মতো একটি দলের সেই কর্মসূচি দেওয়ার যৌক্তিকতা  নিয়েই প্রশ্ন ওঠে । এটা স্পষ্ট যে সহিংস আন্দোলন কোনো ফল দেবে না।

বিএনপি  প্রথম থেকেই উস্কানি দিয়ে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। বিএনপির ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মসূচি দেওয়ার মাধ্যেমে সহিংসতা তৈরি করেছে। বিএনপি চেষ্টা করছে দেশকে অনিশ্চয়তার দিকে নিয়ে যেতে। বিএনপি’র উদ্দেশ্যে হল সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করা। বিএনপি বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে তারা গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, কর্মসূচি দিয়ে তারা দেশের স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করার চেষ্টা করছে। তারা চেষ্টা করছে একটা অনিশ্চয়তার দিকে দেশকে নিয়ে যেতে। বিএনপির কর্মসূচিতে সরকার কখনো বাধা দেয়নি। গণঅবস্থান কর্মসূচির নামে বিএনপি জনদুর্ভোগ সৃষ্টি এবং ধংসাত্মক কাজ করে সবসময়। তাদের বিগত সব কর্মসূচিতে সহিংসতা হয়েছে। রাষ্ট্রকে আবার ক্ষমতা পেলে তারা ধ্বংস করবে। এই দেশের গণতন্ত্র বাঁচবে না, তারা ক্ষমতায় এলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাঁচবে না। তারা ক্ষমতায় এলে স্বাধীনতার আদর্শ বাঁচবে না। এই অপশক্তি জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষক, সাম্প্রদায়িকতার পৃষ্ঠপোষক। গণঅবস্থান কর্মসূচি থেকে বলা হয়েছে সরকারের পতন না ঘটিয়ে ঘরে ফিরবেন না। সরকারের পতন হবে না। কারণ এই সরকার জনগণের সরকার। এই সরকার শাস্তির সপক্ষের সরকার, এই সরকার উন্নয়নের সরকার। যারা জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করতে পারে, যারা জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করতে পারে; তারা আর যাই হোক এ দেশের মঙ্গল কামনা করতে পারে না। ওরা খুনি। বাংলাদেশের জনগনের উচিত তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করা উচিত।

অনেক সময়ই সরকারের বিরোধিতার নামে সাধারণ মানুষের জীবনকে তুচ্ছ মনে করে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে থাকে। সেকি ভোগান্তি! এমনকি হরতালের নামে যানবাহনে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ানোর মতো ঘটনাও ঘটতে দেখেছি। দেশ আর মানুষের কল্যাণেই যদি তাদের রাজনীতি, তাহলে কোন অধিকারে তারা এসব কাজ করে ? আসলেই কি তারা জনগণের ভালো-মন্দ আর কল্যাণ নিয়ে ভাবে?  এই প্রশ্ন গুলো আজ বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষের মনে বিরাজমান।পদযাত্রা থেকে হরতাল অবরোধের দিকে বিএনপি ঝুকলে জনগন সেটি কখনই ইতিবাচকভাবে গ্রহন করবেনা। যে অন্দোলনে জনগনের সম্পৃক্ততা নেই সেটি কখনও ফলপ্রসু হয়না। এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশে কোন ষড়যন্ত্রকারীদের ঠাঁই নেই। 


আরও পড়ুন