প্রেমের টানে ভিনদেশীর বাংলাদেশে আগমন, ভয়াবহ সর্বনাশে ঘটনার পরিসমাপ্তি

news paper

পিংকু চন্দ্র পাল

প্রকাশিত: ১৯-২-২০২৩ দুপুর ৩:২১

12Views

সম্প্রতি ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট কিংবা টেলি মিডিয়ায় সচেতনভাবে চোখ বুলালেই একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় সেটা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবারে বাংলাদেশী তরুণ/তরুণীর সাথে ভিনদেশী যুবক/যুবতীর  পরিচয়। পরিচয়ের একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে গড়ে ওঠে স্রেফ বন্ধুত্ব। পরবর্তীতে সেটা কেবলই বন্ধুত্বের সরল সহজ রুপটিতে স্থির থাকে না, ধীরেধীরে সেটা রুপ নেয় চিরায়ত মানবীয় নর-নারী প্রেমে।
 
পরিচয়ের প্রথমদিকে ভিনদেশী মানুষটি থাকে সহজাত ভাবেই ভালো, সে হয়- উদার, পরোপকারী ও মানবিকতার গাঢ় আবরণে মোড়ানো। সাধারণত অবিবাহিত,  জীবনের জটিলতম রুপ সম্পর্কে সম্পূর্ণই অনভিজ্ঞ বাংলাদেশী যুবক বা যুবতীর কাছে অপরিচিত সেই মানুষটি হয়ে উঠে তার দেখা সবচেয়ে ভালো মানুষ এবং অবশ্যই একান্ত নির্ভরযোগ্য। নির্ভরতার মাত্রা এতোটাই বেশি হয় যে, সে অনায়াসে অবলীলায় নিজের ব্যক্তিগত কিংবা পারিবারিক যাবতীয় তথ্য তার সাথে শেয়ার করে আদ্যোপান্ত কিছু না ভেবেই। তথ্যই শুধু নয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তালিকায় যুক্ত হয় একান্ত মূহুর্তের নিতান্তই গোপনীয় ছবি কিংবা ভিডিও।
 
ডিভাইসের অপরপ্রান্তে থাকা মানুষটির আচরণে কোনো পরিবর্তন আসে না, পাওয়া যায় না বিশ্বাস ভঙ্গের কোন নমুনা। সম্পর্ক চলতেই থাকে স্বাভাবিক নিয়মে পরষ্পরের প্রতি (!) ভালবাসা বেড়ে চলে জ্যামিতিক নিয়মে।
 
একপর্যায়ে বিদেশি বন্ধুটি বাংলাদেশে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করে, এদেশে এসে বিবাহের মাধ্যমে স্বীকৃতি দিতে চায় নিজের প্রেমকে। এদিকে ডিভাইসের এ প্রান্তে, একটি সফল প্রেমের বিয়ে নামক সুন্দর মীমাংসার স্বপ্নে বিভোর বাংলাদেশী তরুণ/তরুণী বিষয়টি জানায় নিজের পরিবারকে। শুরু হয় বিশ্বাস অবিশ্বাস, স্বপ্ন আর বাস্তবতার মধ্যে একটি অনিবার্য সংঘাত। পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ কিংবা সমবয়সী বিচক্ষণ ব্যক্তিরা বোঝাতে চেষ্টা করেন প্রেমে অন্ধ সে স্বজনটিকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেটা হয় না। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে সহজসরল কথামালার আড়ালে সর্বনাশের ভয়াল ফাঁদ প্রতারিত করে স্বজনদেরও, চূড়ান্ত বিপর্যয়ের পথে এগিয়ে চলে অসঙ্গত সম্পর্ক। 
 
ফলে তাই হয়, অপরিণামদর্শী সম্পর্ককে অযথাই বেশি প্রশয় দিলে যা হওয়ার কথা।
 
একপর্যায়ে ভিনদেশী প্রেমিক/প্রেমিকা মানবতার মূর্তিমান/মূর্তিমতী প্রতীক হয়ে বাংলাদেশে পদার্পণ করেন অনেকটাই উৎসবমুখর পরিবেশে সঙ্গীহীন, একাকী। তারপর বাংলাদেশী তরুণ/তরুণীর পরিবারকে নিয়ে  কখনো বা পরিবারের বাহিরে স্বল্প পরিচিত দুজন ভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষের বিয়েটা হয়ে যায়। কখনো সখনো ধর্মের মিল খুঁজে পাওয়া গেলেও সংস্কৃতির বিশাল ব্যবধানটা অবশ্যই থেকে যায় অলক্ষ্যে, অগোচরে।
 
বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি কিংবা ভিডিও সংরক্ষিত হয় বাংলাদেশী পরিবারের পারিবারিক এলবামে, শোভা পায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে,  মাঝেমধ্যে প্রিন্ট ইলেকট্রনিক কিংবা টেলিমিডিয়ায়। নবদম্পতি বাংলাদেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘুরে বেড়ান সানন্দে, সোৎসাহে। বাংলাদেশী তরুণ/তরুণীটির চোখে থাকে সহজেই ইউরোপ কিংবা আমেরিকায় যাওয়ার স্বপ্ন, থাকে সম্ভাব্য আরামদায়ক বিলাসী জীবনের হাতছানি।
 
একপর্যায়ে ভিনদেশী প্রেমিক/প্রেমিকার স্বদেশে ফিরে যাওয়ার সময় হয়ে আসে, ভিসার মেয়াদও প্রায় শেষের দিকে। বাংলাদেশী স্ত্রী/স্বামীকে নিজ দেশে নেওয়ার প্রস্তাব করে ভিনদেশী সঙ্গীটি, তড়িঘড়ি শুরু হয়। পাসপোর্ট করা হয়ে গেলে ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পূর্বেই বিদেশী তরুন/তরুণী উড়াল দেয় আকাশপথে।
 
নিজ দেশে গিয়েও কিছুদিন যোগাযোগ রাখে হতভাগা বাংলাদেশী সঙ্গীটির সাথে। ভিসা প্রসেসিং সংক্রান্ত বিষয়ে চলে লম্বা আলোচনা,  খরচের প্রসঙ্গও আসে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উন্নত দেশের অধিবাসী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর বাংলাদেশীকে ভিসা প্রসেসিং সংক্রান্ত ব্যয় মেটানোর জন্য টাকা পাঠাতে হয়, ভিটেমাটি বন্ধক রাখতে হয় কিংবা বিক্রি করতে হয়, অনেকক্ষেত্রেই হতে হয় সর্বস্বান্ত।
 
আরও কিছুদিন পর সেই বিদেশীর ফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়,  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শতসহস্র বার নক করেও সাড়া মেলে না। শুরু হয় বিষন্নতার বেলা,  নিরানন্দের দুঃসহ প্রহর।
 
প্রথমদিকে অদূরদর্শীতার জন্য, অবোঝ হওয়ার জন্য, একঘেয়েমির জন্য পরিবারের সদস্যরা বকাঝকা করেন ভৎসনা করেন হতভাগ্য  তরুণ/তরুণীটিকে। কিন্তু একেবারেই ছেড়ে যান না, পাশে থাকেন স্বান্তনা দেন স্বহৃদয়তার সাথে। সময়ের ব্যবধানে শোক প্রশমিত হয় কিছুটা, স্বাভাবিকতা আসে জীবনে, শুধু হৃদয়ের গহীনে থেকে যায় বিশ্বাসভঙ্গের একটুকরো আর্তনাদ। কেউ কেউ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়, কেউ আবার দিশেহারা হয়ে বেছে নেয় আত্মহননের পন্থা, অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুতে খুঁজে অবাঞ্চিত সম্পর্ক হতে মুক্তির পথ।
 
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এরকমটা হয়, খুব কম ক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম ঘটে। সুখী হয় নিতান্তই নগন্য সংখ্যক দম্পতি। অবশ্যই ব্যতিক্রমী উদাহরণ  আছে কারণ ভালোমন্দ মানুষের সংমিশ্রণেই গড়ে ওঠে সমাজ।কখনো আবার (খুব কম ক্ষেত্রে) বাংলাদেশী তরুণ/তরুণীর দ্বারা প্রতারিত হচ্ছে বিদেশীরা।  কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় সুখেরও দেখা পায় কেউ কেউ। যদিও সে সংখ্যাটা খুবই কম, একেবারেই উল্লেখযোগ্য নয়। 
 
তবুও প্রতিনিয়ত এহেন সম্পর্কে জড়াচ্ছেন অনেকেই, সৃষ্টি হচ্ছে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি। তাই বিষয়টি নিয়ে আরও একটু বেশি করে ভাববার,  আর একটু বেশি সচেতন হবার এখনই সময়।
 
পিংকু চন্দ্র পাল
শিক্ষক, ফুলতলা বশির উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়
ফুলতলা, জুড়ী, মৌলভীবাজার। 

আরও পড়ুন