মার্কিন ‘আধিপত্য’ কমছে

news paper

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২-২-২০২৩ বিকাল ৫:২৮

27Views

বিশ্বমোড়লখ্যাত ‘মাকির্নী’দের আধিপত্য অনেকটাই কমে গেছে। অন্যভাবে বললে বিশ্বকে শাসন করার অধিকার হারাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র। কিছুদিন আগেও বিভিন্ন দেশকে নানা সময়ে কখনও পরোক্ষ. কখনও প্রত্যেক্ষভাবে শাসন করেছেন। বিশ্বপরাক্রমশালী এই দেশের মনমতো না চললে উড়িয়েও দিয়েছেন কোনো কোনো দেশকে। শাসিয়েছেন, শোষণ করেছেন, নানানভাবে নাক গলিয়েছেন, ইনিয়ে-বিনিয়ে লোভ দেখিয়েছেন-প্রভাবও খাটিয়েছেন নানাভাবে। মার্কিনীদের সেই রমরমা দিন এখন আর নেই। এখন সময় বদলেছে। অন্যদেশগুলোও এখন মার্কিনপ্রভাবমুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছেন। অনেক দেশ তো সরাসরি এড়িয়ে চলছে মার্কিনীদের। 

এক সময় পৃথিবীর ৭০টির মতো দেশে আমেরিকার ষড়যন্ত্রে সামরিক শাসন ছিল। এখনো যেসব রাষ্ট্রে সামরিক শাসন আছে, সেখানেও আছে আমেরিকার হাত। এখন নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া বাইডেন সরকার। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর ওপর খড়গহস্ত হচ্ছেন কখনও কখনও। মানবাধিকার, মুক্তবাক, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, ক্ষমতায়ন, অর্থনৈতিক মুক্তিসহ নানাবিধ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠ দেশ এবং সকল দেশের অভিভাবক হতে মরিয়া। চাইলেই তো আর সবকিছু হয় না। তাছাড়া সময়ও বদলেছে। হঠাৎ বিপরীতমুখী কেন মার্কিনী প্রভাব? তাহলে কি পতন শুরু হচ্ছে বিশ্বপরাক্রমশালী এই দেশটির? নাকি অন্য কোনো কারণ, আসুন সেসব নিয়েই আলাপ করি।

সম্প্রতি ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে চলমান যুদ্ধ নিয়ে মার্কিন সাময়িকী নিউজউইকের সঙ্গে কথা বলেছেন বোস্টন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইগর লিউকস। পূর্ব ইউরোপের রাজনীতি ও সমসাময়িক প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সম্প্রসারণ নীতির মধ্যে লুকিয়ে আছে পশ্চিমাদের হুমকি। প্রফেসর ইগর লিউকস বলছেন, ‘পুতিন ক্রিমিয় জয় করে যখন দোনবাসে হস্তক্ষেপ শুরু করেছিলেন, তখন পশ্চিমরা এই আশায় কিছুতেই করেনি যে, তিনি (পুতিন) তার সাম্প্রতিক অগ্রযাত্রায় সন্তুষ্ট থাকবেন।

অথচ পুতিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, ক্রিমিয়া তার জন্য যথেষ্ট নয়, তাই তিনি বাকি অংশের দখল নিতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। তিনি আরও বলেন, এ অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া দরকার যে, আগ্রাসনকারী থেকে পিছু হটলে শান্তি নিশ্চিত হয় না। বরং এটি তাকে নিরুৎসাহিত করে এবং তার ঘরোয়া প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে তাকে দুর্বল করে দেয়।  চলমান ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং সামরিক জোট ন্যাটো। এর ফলে এক প্রকার ঝুঁকিতে রয়েছে ইউরোপ। এ নিয়ে খোদ ন্যাটোর মহাসচিব সতর্ক করে বলেছেন, পেছনে ফেরার সুযোগ  নেই। তার মতে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন যদি যুদ্ধে বিজয়ী হন, তাহলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়বে ইউরোপ। ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, যখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে, তখন ঝুঁকিমুক্ত বিকল্প কিছু নেই। বরং ঝুঁকি আরও বেশি হবে, যদি রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এই যুদ্ধে জয়ী হন। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে ন্যাটোর মহাসচিব বলেন, পুতিন যদি এই যুদ্ধে জয়ী হন, তা হলে অন্য স্বৈরশাসকরা তাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য বল প্রয়োগে উৎসাহিত হবে। এর ফলে একদিকে যেমন বিশ্ব বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পড়বে, তার চেয়েও বেশি ঝুঁকিতে পড়বে ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্রগুলো। সুতরাং এ মুহূর্তে ইউক্রেনকে শুধু নৈতিকভাবে সমর্থন করাই যথেষ্ট নয়; বরং এটি আমাদের নিরাপত্তার স্বার্থের বিষয়, বলেছিলেন স্টলটেনবার্গ।

এদিকে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করায় মার্কিন ধনকুবের জর্জ সোরেসের ব্যাপক সমালোচনায় মজেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে এক আলোচনা সভায় জর্জ সোরেসের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জয়শঙ্কর তাকে ‘বুড়ো, ধনী, জেদি ও বিপজ্জনক’ আখ্যা দিয়েছেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নিউইয়র্কে বসে থেকে এ ধরনের মানুষ ভাবেন, তাদের ইচ্ছেমতো পৃথিবী চলবে। তারা মনে করেন, যদি তাদের পছন্দমতো ব্যক্তিরা জেতেন, তা হলে নির্বাচন ভালো হয়েছে। আর তা না হলে সংশ্লিষ্ট দেশের গণতন্ত্র খারাপ। জর্জ সোরেসের মন্তব্যের পরপরই ভারতের  কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি কড়া ভাষায় তার সমালোচনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, সোরেস ভারতবিরোধী চক্রান্তের সঙ্গে যুক্ত। তিনি ভারতীয় গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চান। সোরেসকে উপযুক্ত জবাব দেওয়ার জন্য তিনি প্রত্যেক ভারতবাসীকে এক জোট হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। 

বুদ্ধিবৃত্তিক বিবেচনায় সব মানুষ সমান নয়। এই সভ্যতা ক্রমাগত বিকশিত হচ্ছে নানা জ্ঞানগত আবিষ্কার আর অগ্রগতির জন্য। মানব জাতির জানা প্রায় দশ হাজার বৎসরের ইতিহাস বিবেচনা করলে ইউরোপীয় রেনেসাঁ আর শিল্প বিপ্লব আগে পর্যন্ত সময়কালের সমগ্র উন্নয়ন আর অর্জন একত্র করলেও তা রেনেসাঁ আর শিল্প বিপ্লব পরের বিগত তিন-চার শত বৎসরের অর্জনের তুলনায় কিছুই না। এই অর্জনের পুরোটাই এসেছে শেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে।   দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিস-পত্র থেকে বেঁচে থাকার সামগ্রী সবই এসেছে ইউরোপীয় শেতাঙ্গ বিজ্ঞানীদের আবিষ্কারের মাধ্যমে।  অতএব সার্বিক বিচারে শেতাঙ্গ মানুষেরা অন্যদের তুলনায় শ্রেষ্ঠ।  এই শ্রেষ্ঠত্বের এই বিশ্বাস থেকেই শেতাঙ্গ আধিপত্যবাদ জন্ম নিয়েছে। আর শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য সংস্কৃতি হলো সেই  মতাদর্শ যা শ্বেতাঙ্গ মানুষ এবং তাদের ধারণা, চিন্তাভাবনা, বিশ্বাস এবং কাজগুলো অন্যান্য বর্ণের লোকদের ধারণা, ভাবনা, বিশ্বাস এবং কর্মের  চেয়ে উচ্চতর। সাদা আধিপত্য সংস্কৃতি আমাদের সমাজের সব প্রতিষ্ঠান যথা মিডিয়া, শিক্ষাব্যবস্থা, সরকার পরিচালনা, অর্থব্যবস্থা এবং জ্ঞান যা মূলত পাশ্চাত্য বিজ্ঞান চর্চার একটি বহিঃপ্রকাশ এই প্রতিটি উপাদানকে স্বীয় শেতাঙ্গ আধিপত্যের সংস্কৃতিকে উচ্চতর বলে মানতে বাধ্য করে।  শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যের ধারণা পৃথিবীব্যাপী আমাদের এটা ভাবতে শিখিয়েছে যে, শ্বেতাঙ্গরা হলো স্মার্ট, আধুনিক, জ্ঞানী, মানবতাবাদী, গণতন্ত্রমনা আর পৃথিবীর জন্য মঙ্গলজনক। এর বিপরীতে বাকি সবাই। তাই শ্বেতাঙ্গরা সবকিছুর নিয়ন্ত্রক থাকলেই সবার জন্য ভালো। বাস্তবে এই সংস্কৃতি হলো একটি কৃত্রিমভাবে বহু বৎসরের চেষ্টায়   নির্মিত সংস্কৃতি যা শ্বেতাঙ্গদের এই ন্যায্যতা দেয় যে তারাই পৃথিবীকে শাসন করার যোগ্য। এরই একটি উৎকট বহিঃপ্রকাশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য ব্যবস্থা। বিশ্বমোড়ল হিসেবে তারাই এখন সমস্ত শ্বেতাঙ্গদের নেতৃত্ব দিয়ে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখার চেষ্টায় নিয়োজিত। 

হিটলারের জার্মানি যেমন চেয়েছিল ইহুদী মুক্ত বিশুদ্ধ রক্তের আর্য জাতি গড়তে, অধুনা মিয়ানমার যেমন জাতিগত ছাঁকনের দিকে ঝুঁকে নন-মঙ্গলয়েড রোহিঙ্গাদের রাখছে মূলধারার বাইরে, তেমনই পথে হেঁটেছে আর্জেন্টিনা। শাসকগোষ্ঠী সবসময়ই দেশটিকে বানাতে চেয়েছে ‘সাদাদের দেশ’ । সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুকের হিসেবে আর্জেন্টিনার বর্তমান জনসংখ্যার ৯৭% ভাগ জনগণই হলেন স্প্যানিশ ও ইতালীয় বংশোদ্ভূত শ্বেতাঙ্গ। যার ফলে আর্জেন্টিনা পরিণত হয়েছে লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে ‘সাদাদেশ’-এ। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধ (১৮৬১-১৮৬৫) হলো যুক্তরাষ্ট্রে সংগঠিত এক আঞ্চলিক বিরোধ যা মূলত মার্কিন ফেডারেল সরকার আর বিপ্লবী ১১ টি দাস-নির্ভর প্রদেশের মাঝে দাসপ্রথা বিলোপের জন্য সংগঠিত হয়। রাষ্ট্রপতি জেফারসন ডেভিস এর নেতৃত্বে এই ১১টি প্রদেশ পূর্বেই নিজেদেরকে মূল যুক্তরাষ্ট্র হতে আলাদা ঘোষণা করেছিল এবং নামকরণ করেছিল কনফেডারেট স্টেটস অব আমেরিকা। এদের বিরুদ্ধে ছিল রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিঙ্কন-এর ইউনিয়ন সরকার আর মার্কিন রিপাবলিকান দল, যারা দাস-প্রথার বিস্তারের ঘোর বিরোধী ছিল ।  চার বছর ব্যাপী এই যুদ্ধে ৬০০,০০০ এর ও বেশি সৈন্য মারা যায় এবং দক্ষিণের বেশীরভাগ স্থাপনা ধ্বংসের সম্মুখীন হয়। কনফেডারেসি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, দসপ্রথা বিলুপ্ত হয় একই সাথে শুরু হয় জাতীয় ঐক্য এবং সদ্য স্বাধীন দাসদের তাদের প্রতিশ্রুত অধিকার দেবার অত্যন্ত কঠিন পুনঃনির্মাণ প্রক্রিয়া। 

এছাড়া মার্টিন লুথার কিং বা মার্টিন লুথার কিং, জুনিয়র বিখ্যাত আফ্রিকান-আমেরিকান মানবাধিকার কর্মী। তার খ্রিস্টীয় ধর্মবিশ্বাস ও মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আন্দোলন দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি নাগরিক ও মানবাধিকার আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যান। আমেরিকায় নাগরিক ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলনের জন্য ১৯৬৪ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। বুশ পরিবার আমেরিকান উচ্চ বংশীয় পরিবার, যা প্রতিষ্ঠিত রাজনীতি, সংবাদ, খেলাধুলা, বিনোদন, এবং ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে বিশিষ্ট ওবদিয়া বুশ এবং হ্যারিয়েট স্মিথ রাজনীতিতে জড়িত থাকার জন্য সুপরিচিত এই পরিবারটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটরসহ চারটি প্রজন্ম জুড়ে বিভিন্ন জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় দফতরের অধিবেশন করেছে, প্রেসকোট বুশ একজন রাজ্যপাল, জেব বুশ এবং দুই মার্কিন রাষ্ট্রপতি  একজন হলেন জর্জ এইচ ডাব্লিউ বুশ।  অন্য একজন গভর্নর ছিলেন, জর্জ ডাব্লি বুশ। বুশ পরিবার মার্কিন রাজনীতির অসম্ভব প্রভাবশালী এই পরিবার শেতাঙ্গ আধিপত্য বিশ্বাসী এবং তার বাস্তবায়নে সদা তৎপর। 

নিওলিবারেলিজম, বা নব্য-উদারনীতি, একটি শব্দ যা মুক্ত-বাজার পুঁজিবাদের সাথে যুক্ত ১৯-২০ শতকের পুনরুত্থানকে বর্ণনা করতে ব্যবহৃত হয়। স্বাধীনতাবাদী সংগঠন, রাজনৈতিক দল এবং থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এবং তাদের দ্বারা প্রধানত সমর্থন করা হয়, এটি সাধারণত অর্থনৈতিক উদারীকরণের নীতির সাথে যুক্ত, যার মধ্যে বেসরকারীকরণ, নিয়ন্ত্রণহীনতা, বিশ্বায়ন, মুক্ত বাণিজ্য, মুদ্রাবাদ, কঠোরতা এবং সরকারী ব্যয় হ্রাসসহ অর্থনীতি ও সমাজে বেসরকারি খাতের ভূমিকা বাড়ানোর জন্য। চিন্তা ও অনুশীলন উভয় ক্ষেত্রেই নব্য উদারনীতির সংজ্ঞায়িত বৈশিষ্ট্যগুলি যথেষ্ট পাণ্ডিত্যপূর্ণ বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

যাই হোক, আমেরিকা বিশ্বের সুপার পাওয়ার দেশ। বিশ্বে এমন কোনো রাষ্ট্র নেই, যে রাষ্ট্র আমেরিকাকে সমীহ করে না; আমেরিকার ষড়যন্ত্র, ক্ষমতা ও অস্ত্রবাজিকে ভয় পায় না। সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা পরধন লোভের বশে সারা বিশ্বে যুদ্ধ ছড়িয়ে দেওয়ার অভিনব কৌশল এঁটেছে। আরব বসস্তের নামে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে তাণ্ডব চালিয়ে অসংখ্য মানুষ হত্যা করেছে। গাদ্দাফি, সাদ্দাম হোসেনকে শুধু হত্যাই করেননি, তাদের পুরো পরিবার তছনছ করে দিয়েছে। মার্কিন ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদ। মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকা যে আগুন লাগিয়েছিল, সে আগুনের তাপ শেষ হতে না হতেই ইউরোপজুড়ে আবার জ্বলে উঠেছে ভয়ংকর যুদ্ধের লেলিহান শিখা। আমেরিকার  কোনো চরিত্র নেই, সে চেনে শুধু টাকা, তার কাজ হলো লুণ্ঠন। এ লুণ্ঠনের সুবিধার্থে সে দেশে দেশে সামরিক শাসন আনে। 

ন্যাটোর কাঁধে চড়ে আমেরিকা অনেক দেশকে সর্বস্বান্ত করেছে; এশিয়ার দেশগুলোকে যেভাবে একের পর এক ধ্বংস করেছে, তার সহিংসতা ও নির্মমতা চেঙ্গিস খান কিংবা হালাকু খানকেও হার মানিয়েছে। তারা চায় পৃথিবীর সব দেশ তাদের কথায় ওঠবস করবে। কিন্তু ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের ঘটনা পুরো পৃথিবীতে আমেরিকার মুখোশ খুলে দিয়েছে। এ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে প্রতিদিনই দর্পচূর্ণ হচ্ছে আমেরিকার। 

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসাবে আত্মপ্রতিষ্ঠা লাভ করে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আমরা দেখেছি কীভাবে পাকিস্তানি সাম্প্রদায়িক সামরিক-আমলাতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারাকে আমেরিকা সমর্থন করেছে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিঘ্নিত করার জন্য অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছে; এমনকি অন্যায়ভাবে সপ্তম নৌবহর পাঠানোর চেষ্টা করেছে, যা প্রতিহত করেছে রাশিয়া। আমেরিকার মাথায় সারাক্ষণ দুষ্টবুদ্ধি খেলা করে। তারা একদিকে গণহারে মুসলমান হত্যা করে, আবার অন্যদিকে মুসলিম সাম্প্রদায়িকতাকে জিইয়ে রাখার কৌশল অবলম্বন করে। তালেবান, আলকায়দা, আইএস-এসব তাদেরই সৃষ্টি। এক মুখে যে কতভাবে মিথ্যা কথা বলা যায়-আমেরিকাকে না দেখলে কেউ তা বিশ্বাস করবে না। বাংলাদেশে যতগুলো জাতীয় দুর্যোগ সংঘটিত হয়েছে, তার সবগুলোর পেছনেই ছিল আমেরিকার গোপন ষড়যন্ত্র। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ট্র্যাজেডি, জেলখানায় জাতীয় চার নেতা হত্যা, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, ১/১১-এর সেনাসমর্থিত ইয়াজউদ্দিন, ফখরুদ্দিন, মইন ইউ আহমদের তথাকথিত পুতুল সরকারসহ সবখানেই রয়েছে আমেরিকার প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ চক্রান্ত। বাংলাদেশে নিযুক্ত আমেরিকার রাষ্ট্রদূতরা যতটা না কূটনৈতিক, তার চেয়ে অনেক বেশি ভূমিকা পালন করেন গোয়েন্দা ও ষড়যন্ত্রকারী হিসাবে। বাংলাদেশের সব বিষয় নিয়ে কথা বলার অধিকার আমেরিকার রাষ্ট্রদূত রাখেন না। তারপরও তারা কথা বলে যান অবিরত, অনবরত। বিগত দিনে আমরা ম্যারি অ্যান পিটার্স নামের আমেরিকান রাষ্ট্রদূতকে  দেখেছিলাম বাংলাদেশের মসজিদের ইমামদের প্রশিক্ষণে হাফ স্কার্ট পরে হাজির হয়ে ছবক দিতে। তিনি জামায়াতের নেতাদের সঙ্গেও স্পেশাল স্কার্ট অর্থাৎ ফুলহাতা জামা পরে দেখা করেন এবং জামায়াতিদের ‘মডারেট ডেমোক্রেটিক মুসলিম’ বলে অভিহিত করেন। এরপর দেখলাম ড্যান ডব্লিউ মজিনার ৬৪ জেলায় আকস্মিক সফর। তার এ ভ্রমণের মানে কি বাংলাদেশ  প্রেম? মোটেই তা নয়। তিনি ভ্রমণ করেছিলেন সবকিছু সরেজমিন গিয়ে দেখতে ও চক্রান্তের জাল বিস্তার করতে। মিত্র রাষ্ট্রের ক্ষতি করে নিজের উন্নতি করতে চাইলে সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার পাশে কেউ থাকবে না। আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জ করে বিশ্বে নতুন শক্তির উদয় হচ্ছে। 

বিগত দিনে আমেরিকা বাংলাদেশকে নিয়ে অনেক খেলা খেলেছে, এখনো খেলছে। বাংলাদেশবিরোধী শিবিরে গিয়ে সে এখন নির্বাচন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে কথা বলছে। বাংলাদেশে দু-একটি অনাকাঙ্ক্ষিত হত্যাকাণ্ড ঘটলে আমেরিকা হইচই করে। অথচ আমেরিকাতে এমন কোনো দিন নেই, যেদিন এ রকম হত্যাকাণ্ড না ঘটে। ওদের স্কুলগুলোতে কোমলমতি শিশুদের গুলি করে হত্যা করা হয়, কৃষ্ণাঙ্গদের মারা হয়। এসব বহুবিধ কারণে 
আমেরিকাকে পাশবিক আচরণ পরিহার করে মানবিক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে গোটা বিশ্ব। আমেরিকা মুখে মানবতা ও গণতন্ত্রের কথা না বলে সত্যি সত্যি ওই পথে হাঁটবে-এটাই প্রত্যাশা।


আরও পড়ুন