পিরোজপুরে গৃহবধূ লামিয়ার হত্যান্ডের রহস্য উন্মোচন : হত্যাকারী স্বামী গ্রেপ্তার

news paper

অমিত বিশ্বাস, পিরোজপুর

প্রকাশিত: ১৮-৩-২০২৩ বিকাল ৫:৬

10Views

পিরোজপুরের নাজিরপুরে নিখোঁজের চার মাস পর বালি চাপা দেয়া গৃহবধুর লামিয়ার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় রহস্য উন্মোচন কররেছে পিবিআই। এ ঘটনায় অভিযুক্ত আসামী লামিয়ার স্বামী তরিকুল ইসলামকে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ সব তথ্য জানান পিবিআই, পিরোজপুর কার্যালয়।
গ্রেপ্তার স্বামী মোঃ তরিকুল ইসলাম (২২) পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার দক্ষিণ চিথলিয়া গ্রামের মিজান খানের পুত্র। 
পিবিআই পিরোজপুর কার্যালয়ের সাব ইন্সপেক্টর (নি:) রিফাত ইমরান জানান, গত সোমবার একটি চিরকুটের মাধ্যেমে ৪ মাস ধরে নিখোঁজ গৃহবধূর গলিত একটি লাশ জেলার নাজিরপুর উপজেলার সাতকাসেমিয়া গ্রামের মোজাহার মোল্লার বাড়ির পশ্চিম পাশে বালুর মাঠ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে এ ঘটনায় থানা পুলিশের পাশাপাশি ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেপ্তারের ছায়াতদন্ত করে পিবিআই, পিরোজপুর টিম। পরবর্তীতে ১৬ মার্চ পিবিআই, পিরোজপুর জেলা মামলাটি স্ব-উদ্যোগে গ্রহণপূর্বক মামলার তদন্তভার ইন্সপেক্টর (নিঃ) মোঃ বায়েজীদ আকন এর উপর অর্পণ করে। 
সাব ইন্সপেক্টর (নি:) রিফাত ইমরান আরো জানান, তদন্তভার প্রাপ্তির ২৪ ঘন্টার মধ্যে বৃহস্পতিবার ১২.০৫ ঘটিকায় ঢাকার মোহাম্মদপুর থানাধীন জাফরাবাদ এলাকার সাদেক খান রোডস্থ মোহাম্মদ আলী খানের ভাড়া বাসা থেকে ভিকটিম লামিয়া আক্তারের স্বামী মোঃ তরিকুল ইসলাম গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আসামি তরিকুল ইসলাম নিজের দোষ স্বীকার করে পুলিশকে জানায় ২০১৯ সনের শেষের দিকে ভিকটিম লামিয়ার সাথে তরিকুলের প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। তখন আসামী তরিকুল ইসলাম দশম শ্রেনীর ছাত্র এবং লামিয়া ৮ম শ্রেনীর ছাত্রী ছিল। গত বছর ২০২২ সনে মে মাসের শেষের দিকে ঈদের ছুটি শেষে যেদিন বাড়ি থেকে আসামী ঢাকায় যাবে সেদিন ভিকটিম লামিয়া আসামীর বাড়িতে এসে ওঠে। ফেইসবুকে “তানিশা তানজিম” নামক একটি আইডি থেকে লামিয়ার দুটি নগ্নছবি ছড়িয়ে পরার কারণে লামিয়া আসামীকে দায়ী করায় এবং স্থানীয় লোকজনের চাপে ঐদিন সন্ধ্যায় আসামী তরিকুল ভিকটিম লামিয়াকে বিয়ে করে। উক্ত বিয়েতে আসামী তরিকুলের পিতা-মাতার অসম্মতি ছিল। তাদের বিবাহ মেনে না নেয়ায় বিয়ের পর লামিয়া তার বাবার বাড়ীতেই থাকত। সেখানে আসামীর যাতায়াত ছিল। বিয়ের সাত মাস পর লামিয়াকে তার বাপের বাড়ী থেকে শশুর বাড়ীতে তুলে নিতে না চাইলে লামিয়া ও তরিকুলের মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। গত ২০২২ সালের ৬ নভেম্বর রাত অনুমান ১১.০০ ঘটিকার সময় আসামী তরিকুল লামিয়ার সাথে সঙ্গোপনে দেখা করে। তরিকুল ভিকটিম লামিয়ার বাপের বাড়ী গিয়ে ঘরের বাইরে থেকে লামিয়কে ডাক দিলে লামিয়া ঘরের বাইরে এসে তরিকুলের সাথে দেখা করে এবং ঘরের পাশের কলপাড়ে বসে তাদের সম্পর্কের বিচ্ছেদ নিয়ে কথা বলে। কথা বলার এক পর্যায়ে লামিয়ার মা ও নানী বাইরে থেকে বাড়ীতে চলে আসে তখন ভিকটিম বাড়ীর ভিতর চলে যায়। পরবর্তীতে লামিয়ার মা ও নানী ঘুমালে লামিয়কে পুনরায় বাড়ী থেকে বের হয়ে তরিকুলের সাথে দেখা করে। তারা কথা বলার এক পর্যায়ে লামিয়া রাগান্নিত হয়ে বলে, ছাড়াছাড়ি হলে লামিয়া তরিকুলের বিরুদ্ধে মামলা করে দিবে। এরপর তারা হাটতে হাটতে হিমু খাঁর দোকানের কাছে যায়।ঐদিনই রাত অনুমান ১২.০০ টার পর হিমু খাঁর দোকানে বসে কথাবার্তার একপর্যায়ে তরিকুল রাগে লিামিয়ার গলা টিপে হত্যা করে। এরপর লামিয়ার লাশ খালে ফেলে টেনে বালুর মাঠে নিয়ে যায়। মাঠের পাশের এক বাড়ির গোয়াল ঘর থেকে একটি বেলচা নিয়ে সেখানে বালু খুড়ে লাশ বালু চাপা দিয়ে রাখে। রাত অনুমান ০২.০০ ঘটিকার সময় আসামী তার বাড়ী চলে যায়। পরবর্তীতে ঘটনার ০৪ (চার) মাস পর গত ১১ মার্চ আসামী তরিবুল মানসিক পীড়ায় অতিষ্ট হয়ে ভিকটিমের লাশ তার পরিবারের দৃষ্টি গোচরে আনার জন্য নাজিরপুর বাজারের একটি দোকান থেকে দুটি গ্লভস কিনেন। তারপর রাত অনুমান ১১.০০ ঘটিকার সময় পুনরায় ঘটনাস্থলে গিয়ে বালুর ঢিবিতে বেলচা দিয়ে খোড়ার পর লাশের হাত দেখতে পেয়ে লাশের হাত ধরে ওঠানোর চেষ্টা করলে লাশের হাত দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে হাতটা গর্তে রেখে পুনরায় লাশ বালু চাপা দিয়ে আসে। পরদিন রাতে আসামী তরিকুল একটি চিরকুট লিখে লামিয়ার ঘরের চালে ঢিল মারে। তখন ঘর থেকে লামিয়ার খালা ও নানী বাইরে বের হয়ে চিরকুট দেখতে পায়। আসামী তখন খালের অপর পাড়ে বসে ছিল। এরপর লামিয়ার পরিবারের লোকজন টর্চ লাইট মারলে আসামী দৌড়ে উক্ত স্থান ত্যাগ করে। ঐ রাতে কালিবাড়ির একটি বাগানে অবস্থান করে পরদিন ৩.০০ টায় আসামী তরিকুল ঢাকায় তার বাবার বাসায় চলে যায়।
উল্লেখ্য, নিখোঁজের চার মাস পর সোমবার (১৩ মার্চ) দুপুরে জেলার নাজিরপুর উপজেলার সাতকাসেমিয়া গ্রামের মোজাহার মোল্লার বাড়ির পশ্চিম পাশে বালুর মাঠ থেকে অর্ধগলিত অবস্থায় গৃহবধূ লামিয়া আক্তার উদ্ধার করে পুলিশ।
গৃহবধূ লামিয়া আক্তার (১৯) জেলার নাজিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের চিথলিয়া গ্রামের নজরুল ইসলামের কন্যা এবং মোঃ তরিকুল ইসলামের স্ত্রী। 


আরও পড়ুন