পড়ুন মসলা চায়ের সফল উদ্যোক্তা সালমা পারভীনের সফলতার গল্প

news paper

ফয়েজ রেজা

প্রকাশিত: ৪-৫-২০২৩ দুপুর ৩:৬

57Views

ইউনানী আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ থেকে পড়াশোনা করেছেন সালমা পারভীন। ভেসজ ও হারবাল বিষয়ে লেখা পড়ার জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে পেশা জীবনে সফল হওয়ার চেষ্টা করেছেন। আজকের দিনে বলা যায়, সে চেষ্টায় অনেকটাই সফল তিনি। ছোটবেলা থেকে রান্না করতে পছন্দ করতেন। রান্না করার নেশাকেও পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। বর্তমানে অনলাইনে ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে হারবাল পণ্য ও খাবার উপকরণ এবং খাদ্য সামগ্রি বিক্রি করছেন তিনি। অনলাইনে তাঁর নতুন উদ্যোগের নাম ‘প্রকৃতির ছোঁয়া’ আর একটি ‘ত্রিনয়না’। সকালের সময় এর কাছে তাঁর জীবনের সরল গল্পটি বলেছেন সালমা পারভীন। 
নতুন কিছু উদ্ভাবন করার চেষ্টা ছিলো তাঁর ছোটবেলা থেকেই। তিনি যখন ক্লাস সিক্সে পড়েন, তখনই জাতীয় বিজ্ঞান মেলায় অংশ নিয়েছিলেন। প্রথমবার অংশ নিয়েই পেয়েছিলেন ২য় পুরস্কার। এভাবেই শুরু। স্কুল থেকে কলেজ। কলেজে পড়ার সময়ও বিজ্ঞান মেলায় অংশ নিয়ে প্রথম হলেন। বারবার প্রথম হওয়ার ফলে নিজের মধ্যে একটি আত্মবিশ্বাস কাজ করতে শুরু করলো। তিনি নিজে কিছু করতে চাইলে পারবেন, এ আত্মবিশ্বাস জন্মালো তাঁর মনে। এরপর রচনা প্রতিযোগিতা ,আবৃত্তি, যা করেছেন, সব জায়গায় একটি পজিশনে থাকতেন। লেখাপড়া  শেষ হওয়ার আগেই বিয়ে হয় তাঁর। তারপরও প্রথম স্থান পেয়ে লেখাপড়া শেষ করেন। ইন্টার্নি শেষ করেন তাঁর ১ম সন্তানকে সাথে নিয়ে। 
পড়াশোনা শেষ করে চাকুরি শুরু করেছিলেন একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হয়ে। চাকুরি করলেও কিছু করার ইচ্ছা তাঁর ভেতরে ছিল। চাকুরি করার সময় সন্তানের কাছ থেকে দূরে থাকতে হতো দিনের অনেকটা সময়। মায়ের দিকে তাকিয়ে ছেলে হাসতে ভুলে যাচ্ছে দেখে চাকুরি ছেড়ে দিলেন। এরপর সন্তানের যত্ন ও সংসারের কাজ করতে করতে ভুলতেই বসেছিলেন নিজের পেশাকে। আবারও পড়তে শুরু করলেন। নিজের ভেতরে আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর চেষ্টা করলেন- ‘আমি পারব’। এরপর এমপিএইচ সম্পন্ন করেন। একটি চেম্বারে বসতেও শুরু করলেন। এভাবে ধীরে ধীরে সাধারণ সংসার জীবন থেকে কর্মজীবনে ফেরেন সালমা পারভীন। বাইরে কাজের পাশাপাশি তাঁর নেশা ছিল রান্না করার। নতুন নতুন কিছু রান্না করতেন নিজের আইডিয়া দিয়ে।
করোনার সময় যখন সারাদেশের সব কিছু বন্ধ, নিজের চেম্বারে যখন বসতে পারতেন না, সে সময় ঘরে বসে থাকতে একঘেয়েমি চলে এসেছিল। তখন তিনি শুরু করেন অনলাইনে চিকিৎসা সেবা। সেই সাথে ভাবতে থাকেন  কিভাবে ইমিউনিটি বৃদ্ধি করা যায়। সে ভাবনা থেকে তৈরি করেন মাসালা চা। তখন সে মসলা চা নিয়ে যুক্ত হন উইমেন এন্ড ই-কমার্স ট্রাস্ট (উই) গ্রুপ এর সাথে। অনলাইনে পণ্য বিষয়ে সবার লেখা পড়ে পড়ে নিজেও তাঁর পণ্য বিষয়ে লিখতে শুরু করেন। মাসালা চা দিয়ে তাঁর উদ্যোক্তা জীবনের নতুন গল্পটি শুরু হয়। ভেসজ পণ্য নিয়ে পড়ার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তৈরি করেন মাসালা চায়ের নিজস্ব রেসিপি।  
নতুন উদ্যোগ হওয়ার ফলে শুরু থেকেই সবার কাছ থেকে অনেক ভালো রেসপন্স পেলেন। মাসালা চা আর স্পঞ্জ রসগোল্লা দিয়ে যাত্রা শুরু করেন তিনি। উই গ্রুপে পণ্য বিক্রি করে লাখপতি হলেন। নিজের যে একটা কিছু করার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছেন উই এর মত প্ল্যাটফর্ম এর জন্যেই। এ জন্য উই এর প্রেসিডেণ্ট নাসিমা আক্তার নিশাকে ধন্যবাদ দিতে চান তিনি। নাসিমা আক্তার নিশার কাছ থেকে অনেক শিখেছেন। অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। কিভাবে উদ্যোক্তা হওয়া যায়, তা জেনেছেন। এর আগে উদ্যোক্তা কি? এই সম্পর্কে তাঁর কোন ধারণা ছিল না। কিভাবে অনলাইন বিজনেস করতে হয়? তা জানতেন না। উই থেকে বিভিন্ন ওয়ার্কশপ এবং মাস্টার ক্লাসের মাধ্যমে অনেক খুঁটিনাটি বিষয় জেনেছেন। তা তিনি উদ্যোগের কাজে লাগিয়ে যাচ্ছেন।
শরীরের ইমিউনিটি বৃদ্ধি করে এমন সব পণ নিয়ে তাঁর উদ্যোগ। পণ্যের মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যকর এবং সুস্বাদু স্পঞ্জ রসগোল্লা, ডাবের পুডিং, মাসালা চা এবং ভেষজ সবুজ চা, সুস্বাদু রসুনের আঁচার, কালোজিরা, কালো জিরার গুঁড়া, ইসবগুলের ভুসি, চিয়া সিড, শেরপুরের ব্র্যান্ডিং তুলসী মালা চাল, খেজুরের গুড় ইত্যাদি। তারমধ্যে মাসালা চা তাঁর সিগনেচার পণ্য। এই রেডি মসলা চা খুব সহজেই অল্প সময়ে তৈরি করা যায়। 
মাসালা চা এমন নাম শুনলে অনেকেই জানতে চান- এটি আবার কেমন চা? এটি কি চায়ের মসলা? না। এটি কোন চায়ের মসলা নয়। এটি বিভিন্ন রকমের মাসালা আর চা এর সমন্বয়ে তৈরি। যার আছে নানা ওষধি গুণ।  মাসালা চায়ে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর পরিমাণ বেশি থাকে। যা শরীরের ইমিউনিটি বৃদ্বি করে। যা খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
সালমা পারভীন জানান- দীর্ঘদিনের মাইগ্রেন সমস্যা দূর করতে, অ্যালার্জি জনিত শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমা রোগ সারাতে অনেক উপকারী। মাসালা চা শরীরকে সতেজ করে।
২ হাজার ৪০০ টাকায় শুরু করেছিলেন ব্যবসা। সে টাকা রোলিং করে করে আজ মাসালা চা নিয়ে ৩ বছর ধরে কাজ করছেন। ক্রেতাদের কাছ থেকে অনেক ভালো সাড়া পাচ্ছেন। যারা একবার এই চা নিয়েছে, তারা বারবার নিচ্ছেন। এমন অনেক ক্রেতা আছেন, যারা নিজের জন্যে নেন। পাশাপাশি আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবকে উপহার দেওয়ার জন্যেও নিয়ে থাকেন। সালমা পারভীন জানান- ‘ক্রেতাদের কাছে পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির প্রধান কারণ কোয়ালিটি এবং এর উপকারিতা।’ যারা তাঁর পণ্য একবার নিয়েছেন, তারা প্রথমে মাসালা চা এর ঘ্রাণে মুগ্ধ হয়ে যান। কারণ এটি সেরা মানের উপাদান দিয়ে তৈরি। কোলিটির ক্ষেত্রে কোনো আপস করেন না তিনি। সব সময় নিজে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে বাছাই করে কিনে আনেন উপকরণগুলো। তিনি যাদের কাছ থেকে এই উপাদানগুলো সংগ্রহ করেন, তারাও বারবার বেছে বেছে টেস্ট করে দেখার জন্যে উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করেন, এগুলো দিয়ে আপনি কি করেন?  যখন বলি মাসালা চা বানাবো, তখন তারা খুব আগ্রহ প্রকাশ করে তাদের জন্যে যেন চা টা পাঠাই।’
ইউনানী চিকিৎসকের পেশা ছেড়ে ব্যবসা শুরু করার পর অনেকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বলেছেন- চিকিৎসক হয়ে উদ্যোক্তা! তোমার জায়গা কোথায়? আর নিজেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ? সালমা পারভীন বলেন- ‘তখন খারাপ একটু লেগেছিল। কিন্তু কারো কথায় তেমন কষ্ট পাইনি। শুধু মনে মনে একটা কথা বলেছি, একদিন তোমাদের কাছে মনে হবে আমি ভালই করেছি উদ্যোক্তা হয়ে।’ এত আত্মবিশ্বাসের পেছনে কি কারণ ছিল? উত্তরে সালমা পারভীন বলেন- আমার পেশা আমার নেশা দুটোকে কম্বিনেশন করে আমার উদ্যোগ।

 

 


আরও পড়ুন