সংগঠন
দশ বছরে ওমেন কালিনারি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ
প্রকাশিত: ১৩-৫-২০২৩ দুপুর ২:৩৯
অনেকেই বলেন শহরের নারীরা রান্না করতে পারেন না। তা ভুল প্রমাণ করার জন্য কাজ করছে কালিনারি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। শহরের নারীদের রান্না শেখানো, খাবারের পুষ্টি উপাদানসহ গুণগত মান সঠিক রেখে সুন্দর পরিবেশনা কৌশল শেখানোর জন্য ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ওমেন কালিনারি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালনা ও নারীদের স্বাবলম্বী করাসহ বিভিন্ন সফল কার্যক্রম পরিচালনা করে দশ বছরে পদার্পণ করেছে ওমেন কালিনারি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। দীর্ঘ দশ বছরের পথ চলার গল্প বলেছেন ওমেন কালিনারি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি নাজমা হুদা। স্বাক্ষাৎকার নিয়েছেন- তানভীর সানি
সকালের সময়: ওমেন কালিনারি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ দশ বছরে পদার্পণ করেছে। সংগঠনটি কেন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?
নাজমা হুদা: আজকের দিনে সম্মানজনকভাবে বেঁচে থাকার প্রধান হাতিয়ার শক্তিশালী অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। আমাদের দেশে অনেক সম্পদ ও জনশক্তি আছে। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। দেশের অর্থনীতির অগ্রগতিতে নারীরা যেন সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে, সেজন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ওমেন কালিনারি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি পুরুষের পাশাপাশি নারী যেন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা শক্তিশালী করতে অবদান রাখতে পারে।
সকালের সময়: উদ্যোগের আরও অনেক বিষয় আছে। সংগঠন প্রতিষ্ঠা করার জন্য উদ্যোগ হিসেবে রান্না ও খাবারের উদ্যোক্তাদের নিজে কাজ করার জন্য আগ্রহী হলেন কেন?
নাজমা হুদা:
দেশে এখন নতুন নতুন হোটেল রেস্টুরেন্ট হচ্ছে। এসব রেস্টুরেন্ট পরিচালনার জন্য দক্ষ মানব সম্পদের সংকট আছে। বর্তমানে দেশে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি বছর উচ্চ শিক্ষা সম্পন্ন করছে হাজার হাজার নারী শিক্ষার্থী। এ সকল শিক্ষার্থীদের পেশাগত দক্ষতার অভাবের কথা বিবেচনা করে আমরা কালিনারি সেক্টরে কাজ করতে আগ্রহী হয়েছি। রান্নার বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি ভাষাগত দক্ষতা বাড়ানোর জন্যেও কাজ করছি আমরা।
সকালের সময়: আপনাদের শিক্ষার্থী সাধারণত কারা?
নাজমা হুদা: সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অথবা যারা শিক্ষা সমাপ্ত করেছে, তারা। শিক্ষার্থীরা যেন রান্নায় পারদর্শী হয়ে উঠে, রান্না শেখার পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে দেশের অর্থনীতির অগ্রগতিতে অবদান রাখার বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করি। তাই যারা নিজে স্বাবলম্ভী হতে চায়, তারা আমাদের কাছে প্রশিক্ষণ নিতে আসে।
সকালের সময়: ওমেন কালিনারি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল ট্রেইনিং ইনস্টিটিউট অব কালিনারি আর্টস (আইটিআইসিএ) নামের একটি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছেন আপনি।
নাজমা হুদা: নারীদের সহযোগিতা করার জন্য এবং রন্ধনশিল্পের উন্নায়ন ঘটাতে ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেইনিং ইনস্টিটিউট অব কালিনারি আর্টস (আইটিআইসিএ)। এখানে যারা প্রশিক্ষণ নেয়, তারা প্রশিক্ষণ শেষ করার পরপরই চাকরি পেয়ে যাচ্ছে দেশের প্রায় সব নামিদামী হোটেলে। আইটিআইসিএ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বিদেশেও চাকরি করছে শিক্ষাথীরা। প্রতিষ্ঠানটি কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত। এ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী এখান থেকে পাশ করে বেরিয়েছে। পাশাপাশি কাজ করছেন বাংলাদেশ সরকারের (এস ই আই পি) প্রজেক্টে। যেখান থেকে ৮টি ব্যাচ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। ৪ মাসের ট্রেনিং শেষে আন্তর্জাতিক মানের সনদপত্র ও ইন্টার্নি করার সুযোগ করে দিচ্ছে ওমেন কালিনারি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। আমরা চেষ্টা করছি ৬ মাসের ডিপ্লোমা কোর্স চালু করার।
সকালের সময়: প্রশিক্ষণ ছাড়া আর কি বিষয়ে কাজ করে ওমেন কালিনারি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ?
নাজমা হুদা: ওমেন কালিনারি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর উদ্যোগে বছরে অন্তত ২ টি মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১০ বছরে ২০টি মেলা আয়োজন করেছে ওমেন কালিনারি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। সারাদেশের প্রায় ৫ শতাধিক সদস্য কাজ করছেন সংগঠনটিতে। আমরা সম্প্রতি ভারতের কলকাতায় এপার ওপার বাংলার রান্নাঘর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করেছি। সেখানে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারের রেসিপি তৈরি করা শিখিয়েছি আমরা। এবার ওমেন কালিনারি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর ১০ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে বাংলাদেশে আসছেন ভারতের প্রখ্যাত রন্ধনশিল্পী রুকমা দাক্ষী, শুভজিৎ ভট্টাচার্য্য, পাঞ্চালী দত্ত, অমিত ঘোষ দস্তিদার, রঙ্গন নিয়োগী। এপার বাংলা ওপার বাংলার রন্ধন শিল্পীদের সাথে সখ্যতা বাড়াতে ভারতের রন্ধনশিল্পীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে কালিনারি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।