অগ্রগামী

শেষ বয়সের নিঃসঙ্গতা এড়াতে যৌবনে উদ্যোক্তা হয়েছেন

news paper

তানভীর সানি

প্রকাশিত: ১৩-৫-২০২৩ দুপুর ৩:১৬

8Views

 জাহ্ রা হাসিনা পারভীন

নব্বই দশকের কথা। সবেমাত্র ঢাকা শহরে উন্নতির ছোঁয়া লেগেছে। ঢাকায় তখনও ছিলো না, এতো অফিস কিংবা কারখানা। এখনকার মতো এতো ঘনবসতি, অ্যাপার্টমেন্ট, যানজটে পরিপূর্ণ ছিলো না ঢাকা। ছিলো না এতো হোটেল, রেস্তোরা, ক্যাফে বা সুপারশপ শপ। ঢাকার বহু মানুষ তখনও যৌথ পরিবারে বসবাস করেন। সে সময় জাহ্রা হাসিনা পারভীন ঢাকায় একটি সাধারণ যৌথ পরিবারে বাস করতেন। সংসারে স্বামী, এক ছেলে ও এক মেয়ের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করতেন তিনি। ছেলেমেয়ের লেখাপড়াও তিনি নিজেই করাতেন। জাহ্রা হাসিনা পারভীন এর বাবা আব্দুল করিম ভূইঞা মারা যান ১৯৮৬ সালে। তারপর তিনি বাসায় দেখেছেন তাঁর মাকে নিঃসঙ্গে জীবন যাপন করতে। মায়ের নিঃসঙ্গ জীবন দেখে তাঁর মনে হলো এক সময় এমন নিঃসঙ্গ জীবন আসতে পারে তাঁর জীবনেও। নিজের ভবিষ্যৎ জীবনের নিঃসঙ্গতা এড়ানোর জন্য কিছু একটা করার তাড়না আসে তাঁর ভেতরে। কি করা যায়? আর কিভাবে শুরু করা যায়? এই নিয়ে ভেবেছেন অনেক দিন। তাঁদের বাসায় তখন অনেক আত্মীয় স্বজন আসতেন। তার এক প্রবাসী আত্মীয় এরই মধ্যে তাঁদের বাসায় আসেন। তাদেরকে রান্না করে অ্যাপায়ন করার পর একজন বললেন- তুমি এতো ভালো রান্না করো। একটি ক্যাটারিং সার্ভিস চালু করো না কেন? যেহেতু জাহ্রা পারভীনের মনের ভিতর কিছু করার অভিপ্রায় ছিলো। তিনি নিজেও বিভিন্ন ধরনের খাবার রান্না করতে পছন্দ করতেন।  তিনি তার লক্ষ পেয়ে গেলেন। তিনি ক্যাটারিং সার্ভিস চালু করার সিদ্ধান্ত নিলেন।  
শুরু করলেন সানিডেল স্কুলের শিক্ষার্থীদের খাবার পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। এরপর পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন এনজিও, বেক্সিমকো, সিটি ব্যাংকসহ বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে খাবার সরবরাহ করতেন। এরই মধ্যে তিনি ২ টি মেলাতেও অংশগ্রহণ করেন। একসময় সিদ্ধান্ত নিলেন একটি দোকান নেওয়ার। ১৯৯৬ সালের সেপ্টম্বর মাসে শুরু হলো জাহারা’স কিচেনস এর পথ চলা। 
আজকের দিনে এসে জাহ্রা পারভীন নিজেও স্বাীকার করেন, শুরুর গল্পটি মোটেও সহজ ছিল না। তিনি বলেন, স্বপ্ন, সাধনা, অনেকটা যুদ্ধ করেই আমাকে শপটি নিতে হয়েছে। যেহেতু যৌথ পরিবার ছিলো। স্বামী, সংসার ছেলেমেয়েদের সবাইকে সামলিয়ে দোকান পরিচালনা করতে হয়। এমনকি এখনো তা করছেন তিনি। ‘সবাইকে মানিয়ে নিয়েই আমি আমার শপ চালিয়ে নেই। চলার পথে কিছু অসুবিধার সম্মুখিন হয়েছেন তিনিও। যার জন্য যতটুকু এগিয়ে যাবার কথা ছিলো, ততটুকু এগুতে পারেননি। 
তিনি বলেন, ‘মেয়েদের কাজ করায় এই সময়েও কিছুটা সমস্যা আছে। যেমন- মেয়েদের পরিবারের সদস্যদের মতামত নিয়েই কাজ করতে হয়। মতের ভিন্নতা হলেই ঝামেলার সৃষ্টি হয়। সেসব ঝামেলাগুলো সামাল দিয়ে আমাদের কাজ করে যেতে হচ্ছে। ছেলেদের মতো চট করে আমরা কোনো কাজের সাপোর্ট পাইনা।’ 
জাহ্রা পারভীন নব্বইয়ের দশকে যে উদ্যোগ শুরু করেছিলেন, তার হাল ধরে রেখেছেন এখনও। আজকের দিনে এসে তাঁর মন্তব্য- ‘আমি আমার কাজকে ভালোবাসি। চিন্তাও করতে পারিনা কাজ ছাড়া আমি থাকবো।’
দীর্ঘ জীবন ঘরের বাইরে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বলেন- ঘরের বাইরে মেয়েদের কাজ করা এখনও কঠিন। বাইরে কাজ করতে গেলে কিছু সমস্যা এখনও সইতে হয় নারীদের। আগের চেয়ে সমস্যা হয়তো কিছুটা কমেছে। এখনও মেয়েদের সংসার করে, স্বামী সন্তানের দেখভাল করে বাইরে কাজ করতে হয়। বাইরে কাজ করতে হলে পরিবারের প্রত্যেকটি মানুষের মতামত নিয়ে কাজ করতে হয়। মতের অমিল হলেই সংসারে সংকট সৃষ্টি হয়। 
ব্যবসা পরিচালনায় কার সহযোগিতা বেশি পেয়েছেন? প্রশ্নের উত্তরে জাহ্রা পারভীন বলেন- ‘আমার কাজের সার্পোট আমাকে একাই করতে হয়। আমার দুই সন্তান আছে, এক ছেলে ও এক মেয়ে। দুই সন্তান আমাকে যথেষ্ট সাপোর্ট করে। আমার সাথে আমার ছেলের বউ আছে। সে যথেষ্ট সহযোগিতা করে। তারপরও বলব- আমি নিজেই নিজেকে সহযোগিতা করি। কাজকে আমি ভালোবাসি। কে কি বললো, সেটা আমি শুনি না । তাই বলে আমি তাদের অবজ্ঞা করি, ব্যাপারটি এমন না। আমি সবাইকে মানিয়ে নিয়েই আমার কাজ চালিয়ে যাই।’ জাহ্রা পারভীন নিজে যে কাজ করেন, কাজকে শতভাগ ভালোবাসেন বলেই আজ এ পর্যন্ত আসতে পেরেছেন। ব্যবসা ধরে রাখতে পেরেছেন বহু প্রতিকূলতার মধ্যে। 
কাজের ধরন সম্পর্কে বলেন, আমি যে কাজ করি সে কাজটি শতভাগ ভালোবেসে করি। আমি মনে করি এজন্যই আমি এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। ব্যবসা শুরু করেছিলেন নিরবিচ্ছিন্ন এবং ফ্রেশ খাবার পরিবেশনের স্বপ্ন নিয়ে। গেল তিন দশকে ঢাকার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের সংখ্যা যেমন বেড়েছে তেমনি সংকুচিত হয়েছে ফ্রেশ খাবার প্রাপ্তির জায়গা। খাবার তৈরির সমস্ত উপাদান ফ্রেস খোঁজে পাওয়া এখনও দুস্কর। তাই জাহ্রা পারভীনকে প্রতিদিন সংগ্রাম ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখিন হতে হয় ফ্রেস খাবার পরিবেশনের জন্য। এ চেষ্টায় তিনি সফল হতে চান প্রতিদিন।
 লেখক- তানভীর সানি

 


আরও পড়ুন