স্মার্ট বাংলাদেশের প্রধান কারিগর প্রকৌশলীরা: এস এম মঞ্জুরুল হক
প্রকাশিত: ১৯-৬-২০২৩ দুপুর ৩:২৫
চার ভিত্তির ওপর তৈরি হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ। এর প্রধান কারিগর দেশের ইঞ্জিনিয়াররা। তাদের হাত ধরেই হবে উন্নত ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ। এ বিষয়ে কথা হয় ইঞ্জিনিয়ার ইনিস্টিউশনের সাধারণ সম্পাদক এস এম মঞ্জুরুল হক মঞ্জুর সঙ্গে।
তিনি সকালের সময়কে বলেন, প্রকৌশলীরাই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার কারিগর। স্মার্ট শিক্ষা, স্মার্ট স্বাস্থ্যসেবা, স্মার্ট কৃষি, স্মার্ট বাণিজ্য, স্মার্ট পরিবহন বাস্তবায়ন করতে হলে প্রকৌশলীদের লাগবেই। স্মার্ট গর্ভমেন্ট অনেকাংশ বাস্তবায়ন হয়ে গেছে। সরকারের টেন্ডার সব কিছুই এখন অনলাইনে হয়। যে কেউই কাজ পায় স্বচ্ছতার মাধ্যমেই। স্মার্ট সোসাইটি গড়ার লক্ষ্যে আইইবি সব সময়ই কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে স্মার্ট প্রকৌশল সমাজ তৈরি করার জন্য আইইবির ইঞ্জিনিয়ারিং স্টাফ কলেজের সাথে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ, সিম্পোজিয়াম, সেমিনারের আয়োজন অব্যাহত আছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ইঞ্জিনিয়ার ইনিস্টিউশনে তার অফিসে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে প্রকৌশলী সমাজ কীভাবে ভূমিকা রাখবে? মঞ্জুরুল হক বলেন, বর্তমানে দেশের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে শিক্ষা, অফিস-আদালত, ব্যাংক, সভা-সেমিনার, কনফারেন্স ইত্যাদি অনলাইনভিত্তিক করার পাশাপাশি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনাকাটা ঘরে বসেই করতে পেরেছেন। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তিতে তথ্যসেবা, টেলিমেডিসিন সেবা, সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য জরুরি খাদ্য সহায়তাও এখন অনলাইনে করা হচ্ছে। প্রযুক্তির এই সহজলভ্যতার কারণে সকল ধরনের বিল ও আর্থিক লেনদেন ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে করা সম্ভব হচ্ছে। যা স্মার্ট ইকোনমিই বহিঃপ্রকাশ। এই সকল কর্মযজ্ঞে প্রকৌশলীদের নিপুন ছোঁয়া রয়েছে।
স্মার্ট বাংলাদেশ ও আইইবির ভূমিকা কিভাবে দেখবেন?
‘উন্নত জগত গঠন করুন’ এ সুমহান আদর্শকে সামনে রেখে জাতীয় উন্নয়ন তথা দেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে ১৯৪৮ সালের ৭ মে ইনস্টিটিউশন যাত্রা শুরু করে। প্রকৌশল শিক্ষার মানোন্নয়ন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধন, বিশ্বের নিত্য নতুন, আধুনিক প্রযুক্তির সাথে প্রকৌশলীদের পরিচয় করে দেয়া, বিদেশি প্রযুক্তিকে দেশোপযোগী করে প্রয়োগ, বিভিন্ন কারিগরি ইস্যু, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সরকারকে পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত প্রণয়নে সহযোগিতা করা এবং প্রকৌশলীদের মেধা ও সৃজনশীলতার বিকাশ সাধনে ইনস্টিটিউশন ৭৫ বছর ধরে অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। এই কাজগুলো আইইবি ১৮টি কেন্দ্র, ৩৪টি উপকেন্দ্র, ১৪টি ওভারসিজ চ্যাপ্টার, ৭টি প্রকৌশল বিভাগ, আইইবি নিয়ন্ত্রিত ৫টি বোর্ড যথা ইঞ্জিনিয়ারিং স্টাফ কলেজ, বাংলাদেশ প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং রেজিস্টেশন বোর্ডম, বাংলাদেশ বোর্ড অব এক্রিডিয়েশন ফর ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বাংলাদেশ বোর্ড টেকনিক্যাল এডুকেশন, ওকুপেশনাল সেফটি বোর্ড আব বাংলাদেশ, গ্যাস ইথিকস বোর্ড দ্বারা পরিচালনা করে। এছাড়াও আইইবি’র রয়েছে বেশ কয়েকটি স্ট্যান্ডিং কমিটি এবং টাস্ক ফোর্স। দীর্ঘদিন যাবত আইইবি সাফল্যজনকভাবে অগওঊ কোর্স পরিচালনা করে আসছে যা স্নাতক ডিগ্রির সমতূল্য। আইইবি প্রকাশিত টেকনিক্যাল জার্নাল বিভিন্ন ভ্রাতৃপ্রতিম ইনস্টিটিউশন ও আন্তর্জাতিক প্রকৌশল সংস্থায় ইতোমধ্যে যথেষ্ঠ সুনাম অর্জন করেছে। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ৬টি আন্তর্জাতিক প্রকৌশল সংস্থার সদস্য। এগুলো হলো ওয়ার্ল্ড ফাউন্ডেশন অব ইঞ্জিনিয়ারিং অর্গানাইজেশন, কমনওয়েলথ ইঞ্জিনিয়ারর্স কাউন্সিল, ফেডারেশন অব ইঞ্জিনিয়ারিং ইনিস্টিউশন অব আউথ এন্ড সেন্ট্্রাল এশিয়া, ফাউণ্ডেশন অব ইঞ্জিনিয়ারিং ইনিস্টিউশন অব ইসলামিক সেন্ট্রাল কান্ট্রিস, ফাউণ্ডেশন অব ইঞ্জিনিয়ারিং ইনিস্টিউশন অব এশিয়া প্যাসেফিক, দি এশিয়ান সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কড্রিনেটিং কাউন্সিল। ২৩টি দেশের ইঞ্জিনিয়ারিং অর্গানাইজেশনের সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি রয়েছে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)-এর। আইইবি’র মূল কাজ হচ্ছে প্রকৌশল পেশার মানোন্নয়ন, পেশাজীবীদের বিভিন্ন সমস্যাবলীর সমাধানকল্পে কাজ করা, শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা, সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করা, আন্তর্জাতিক কারিগরি সহায়তার সুযোগ সৃষ্টি করা এবং জাতীয় কারিগরি ইস্যুতে সরকারকে পরামর্শ দেয়া।
সরকার, স্মার্ট নির্বাচন ব্যবস্থা ও আইইবি একই সূতায় কিভাবে আনবেন?
গাজিপুরসহ আজ পর্যন্ত বর্তমান সরকারের অধীনে করা নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরাপদভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এর কারণ হলো, ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে হওয়ার ফলেই সম্ভব হয়েছে। টেকসই ও নিরাপদ বিশ্ব তৈরিতে আমরা কাগজবিহীন একটি আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা তৈরি করতে হবে। উন্নত দেশে নির্বাচন ব্যবস্থায় এসেছে আধুনিকায়ন। আমেরিকা যুক্তরাজ্যসহ উন্নত দেশগুলোতে দেখবেন, আপনি যেখানেই থাকেন না কেন ভোট প্রদান করতে পারবেন। সময় ও অর্থ সাশ্রয় হয়। কাগজ অপচয়রোধ করা যায়। আইইবির কম্পিউটার বিভাগের কয়েকজন মেধাবী প্রকৌশলীরাই ইভিএম আবিস্কার করেছে। স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ইভিএমই সম্ভব। তাছাড়া সরকার চাইলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন স্মার্ট নির্বাচনের জন্য যেকোন সহযোগিতা করবে।
রাষ্ট্রের সমস্যা সমাধানে পেশাজীবী প্রতিষ্ঠানগুলো কোন ধরনের ভূমিকা পালন করে?
পেশাজীবীদের বলায় রাষ্ট্রের তৃতীয় নয়ন। সরকার ও পেশাজীবীদের মধ্যে সমন্বয় করে একে অপরকে সহযোগীতা করেই সুদৃঢ় সম্পর্ক তৈরি করে এগিয়ে যায়। সরকার ভুল করলে তার সমালোচনা ও করে থাকে পেশাজীবীরা। আবার সরকারের যেকোন ভাল কাজে সাধুবাদও জানায় পেশাজীবীরা। সরকারের ডিসিদের প্রকল্প প্রণয়ণ,প্রক্কলন ও মনিটরিং করার সিদ্ধান্তেও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিশন প্রতিবাদ জানিয়েছিল। আবার সরকারের সাহসী উদ্যোগ যেমন পদ্মাসেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে আমরাই শুভেচ্ছা ও সাধুবাদ দিয়েছি। পেশাজীবী প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ করে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিশন সব সময়ই দেশের যেকোনো সমস্যায় পেশাজীবীদের মতামত, অভিজ্ঞতা ও গবেষণাগুলো তুলে ধরে। যেমন- দূর্যোগ প্রশমন বিষয়েও সম্প্রতি আইইবি ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়রকে প্রধান অতিথি করে একটি সেমিনারের আয়োজন করে। এ বছর হাওরের বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানি সম্পদ নিয়েও আমাদের একটি টাস্কফোর্স দিনব্যাপী সেমিনারের আয়োজন করেছে।