মেয়ের বিয়ে দিতে পারল না প্রধান শিক্ষক জহুর আহমেদ
প্রকাশিত: ১৮-৯-২০২৩ বিকাল ৫:৫৬
সারাদিন মেয়ের বিয়ের চিঠি বিলি করা হয়েছে। বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টে উপজেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় গতকাল (সোমবার) সকালে জেলা পর্যায়ে খেলায় অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে খেলা উপলক্ষে স্কুল বন্ধ রাখার জন্য নেওয়া হয়েছে সংরক্ষিত ছুটি। অংশ নিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত উন্নয়ন মেলায়ও। কাজ শেষে বিকেলে বাড়ি পৌঁছে পারিবারিক জায়গা সংক্রান্ত বিরোধে নিজ ছেলের সাথে প্রতিবেশীর ঝগড়া শুরু হয়। ঝগড়া থামাতে ঘটনাস্থলে গেলে হঠাৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরে সেখান থেকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত ব্যক্তি হলেন জহুর আহমেদ চৌধুরী (৫৭)। তিনি সাতকানিয়া উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর মুহুরীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। গত রোববার নিজ বাড়ি ধর্মপুর মুহুরী পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তিনি মরহুম মাস্টার সিদ্দিক আহমেদ চৌধুরীর সন্তান।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে জানা যায়, ঘটনার দিন বিকেলে মৃত প্রধান শিক্ষক জহুর আহমেদ এর নিজ বাড়ির প্রতিবেশির সাথে দীর্ঘদিন ধরে চলমান জায়গা-জমির বিরোধ নিয়ে ছেলে তোফায়েল আহমেদ এর সাথে বাড়ির সামনে রাস্তায় ঝগড়া শুরু হয়। বিষয়টি শুনে ঘর থেকে বের হয়ে ঝগড়া থামাতে গেলে হঠাৎ তিনি (জহুর) মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত শিক্ষক জহুরের ছেলে তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমি অফিস শেষে বাড়ি ঢুকার আগে রাস্তায় বিনা উস্কানিতে নাসির উদ্দীনের ছেলে মো. সাইমন, ফরিদ উদ্দিনের ছেলে মো. ফয়সাল ও জাহিদ হোসেনের ছেলে মো. তাসহিব পূর্ব বিরোধের অংশ হিসেবে আমার সাথে তর্ক লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে তারা আমাকে ব্যাপক মারধর শুরু করে। পরে সাইমনের চাচা মো. বেলাল ও আব্দুল মান্নান দা নিয়ে আমার দিকে তেড়ে আসে। তাসহিব ও ফয়সাল লোহার রড নিয়ে আমাকে মারতে উদ্যত হয়। খবর পেয়ে আমার বাবা ঝগড়া থামাতে গেলে বাবাকেও তারা গাছের বাটাম দিয়ে মারতে যায়। এক পর্যায়ে বাবা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বাবাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তোফায়েল আরও বলেন, আমরা ২ ভাই ও ৩ বোন। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর আমার ছোট বোনের বিয়ের কথা পাকাপাকি হয়েছে। এজন্য অনেক বাজারও সওদা করা হয়েছে। বিগত তিন বছর আগে বাবার ওপেন হার্ট সার্জারি হয়েছে।
ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সাতকানিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম মাহবুব বলেন, বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টের জেলা পর্যায়ে অংশ নিতে এক দিনের সংরক্ষিত ছুটিও নিয়েছে আমার কাছ থেকে। এ ছাড়া মেয়ের বিয়ের চিঠিও বিলি করছে সারাদিন। অংশ নিয়েছে উন্নয়ন মেলায়। এখন নিজ হাতে বিয়ে দিতে পারলনা মেয়েকে এবং নিজের প্রিয় শিক্ষার্থীদের জেতাতে পারলনা ফুটবলে। এমন মৃত্যু খুবই হৃদয়বিদারক ও বেদনাদায়ক।
স্থানীয় ধর্মপুর ইউনিয়ন (ইউপি)পরিষদের চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন টিপু বলেন, পারিবারিক জায়গা-জমি সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধে ঝগড়া শুরু হয়। তবে, শিক্ষক জহুর কিভাবে মারা গেছে, তা পরিস্কার করে বলা যাচ্ছে না।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.ইয়াসির আরাফাত বলেন, লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের নিকট লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। মৃত শিক্ষকের পরিবার থেকে কোন অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট না পাওয়ার আগে মৃত্যুটা কিভাবে হয়েছে তা বলা যাচ্ছে না। তবে, সুরতহাল রিপোর্টে মৃত শিক্ষকের শরীরে আঘাতের কোন চিহ্ন পাওয়া যায়নি।