ধরাছোঁয়ার বাইরে চক্রের সদস্যরা

দুবাই থেকে অনলাইন জুয়া পরিচালনা করছে কাইয়ূম

news paper

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯-১১-২০২৩ বিকাল ৫:৪৮

106Views

আড়াই বছর আগেও যাঁর নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা ছিলো। সে যুবক এখন স্বপরিবারে দুবাই থাকেন।  এসব কথা দুবাই প্রবাসী আব্দুল কাইয়ূম মিয়ার (৩০) । সেখান থেকেই তিনি অনলাইন জুয়া পরিচালনা সংক্রান্ত সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছেন ।

জুয়ার টাকায় গ্রামের বাড়িতে ফার্ম, পুকুর, ডুপ্লেক্স বাড়ি করাসহ বিভিন্ন ব্যবসা দিয়েছেন। একই সঙ্গে গ্রামের প্রায় ২০ জন যুবক কাইয়ূমের সিন্ডিকেটের সদস্য। তারাও অল্প কিছুদিনে কোটিপতি বনে গেছেন। এমন দৃশ্যটি কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার গজারিয়া গ্রামের। সরেজমিন অনুসন্ধান, এলাকাবাসী ও কাইয়ুমসহ তার সহযোগী যুবকদের নিকটাত্মীয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

কাইয়ূম যেভাবে অনলাইন জুয়ায় জড়ান:
তিন বছর আগেও স্বল্প শিক্ষিত কাইয়ূম একটি বেসরকারি কম্পানিতে অল্প বেতনে কাজ করতেন। ওই সময় থেকে অনলাইন জুয়ার বেটিং সাইটের একটি এজেন্ট চালানো শুরু। এক পর্যায়ে জুয়া খেলা থেকে বড় অঙ্কে অর্থ আসতে শুরু করলে চাকরি ছেড়ে গ্রামের বাড়ি চলে আসেন।  প্রাথমিকভাবে গ্রামের  ৮-১০ জন যুবককে দিয়ে বিকাশে এজেন্ট নেওয়ায়ন।  

জুয়া খেলায় জড়ানোর এক বছরের মধ্যে গ্রামের বাড়ি গজারিয়ায় প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে একটি আধুনিক ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেন। সম্প্রতি প্রায় আড়াইকেটি টাকা দিযে  একজনের কাছ থেকে  বিশাল পুকুরসহ একটি ফার্ম কিনে নেন। তার ব্যাবসায়ীক অংশীদার বলে পরিচিত হাবিবুর রহমান বকুল সেখানে বর্তমানে মৎস চাষ করছেন। তার রয়েছে আরো একাধিক ব্যবসা। এসব জুয়ায় টাকা দিয়ে রাতারাতি সম্পত্তি কেনা ও ব্যবসা দেওয়ায় এলাকাবাসী অবাক হতেন থাকেন। 

কাইয়ুমসহ তার সহযোগীরা অনলাইনে  জুয়া সরাসরি খেলেন না। তারা পরিচালনা করেন। তারা বেলকি, বাঁজি ৩৬৫ ও লাকি উইনসহ বেশ কিছু অ্যাপ দিয়ে খেলিয়ে থাকেন। এর সবকিছু দুবাই থেকে নিয়ন্ত্রণ করছেন মাস্টার মাইন্ড কাইয়ূম।

এলাকাবাসীর ধারণা কাইযূম এখন শত কোটি টাকার মালিক। তার  দুবাই থাকার মূল কারণ নিরাপত্তা। কাইয়ূমের একাধিক ঘনিষ্টজন জানিয়েছে, এভাবে অল্প সময়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়ায়, স্থানীয় প্রশাসনসহ এলাকাবাসী সকলে হতবাক। যেকোন সময় আইনি ঝামেলায় পড়তে পারেন, এজন্য নিরাপত্তা জন্যই দুবাই চলে যান। গত জুলাই মাসে দেশে বেড়াতে এসে মাদকসহ কটিয়াদি থানা পুলিশের কাছে কাইয়ূম তার সহযোগী ছয়জন গ্রেপ্তার হন। পরে ৬ দিন কারাগানের থাকার পর ছাড়া পেয়ে দ্রত আবার দুবাই চলে যান। 

কাইয়ুমের সিন্ডিকেটে রয়েছে যাঁরা:
গজারিয়া গ্রামে অনন্ত ২০ জন যুবক কাইয়ূমের হয়ে কাজ করেন। তাদের কাছে নামে বেনামে ৩০ টির বেশি বিকাশ এজেন্ট সিম রয়েছে। এগুলো থেকে প্রতিদিন বিপূল অঙ্কের টাকা কাইয়ূমের কাছে পাঠানো হয়। 

দেশে তার প্রধান সহকারী হিসেবে জুয়া ও আর্থিক লেনদেনের কাজকর্ম পরিচালনা করে সোহাগ মিয়া। তার পিতা একজন দিনমজুর, তিনিও বর্তমানে কোটি টাকার মালিক বনে গেছে, কটিয়াদি বাজারে প্রায় কোটি টাকার বিনিয়োগ কাপড়ের শোরুম করেছেন।

সোহাগের ভাই খাশালা গজারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি হুমায়ুন কবিরও তাদের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছে।এছাড়া কাইয়ুম মিয়ার ব্যাবসায়ীক অংশীদার হিসেবে পরিচিত হাবিবুর রহমান বকুল এলাকাতে বিপুল অঙ্কের টাকার সম্পদসহ একাধিক ব্যাবসা পরিচালনা করছেন। যা মুলত কাইয়ুম মিয়ার অর্থায়নে। হাবিবুর রহমান বকুলের মাধ্যমে কাইয়ূম বর্তমানে ১০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে বলে জানিয়েছে বিশ্বস্ত একাধিক সূত্র। এত স্বল্প সময়ে কীভাবে তারা কোটি কোটি টাকা উপার্জন নিয়ে গজারিয়াবাসীর কাছে বিশেষ গুঞ্জন রয়েছে। তাছাড়া দুবাইয়ে কাইয়ুমের  বিলাশ বহুল জীবন নিয়েও তাদের আলোচনা রয়েছে। এালাকাবাসীর বলছে-লাকি উইন নামের অনলাইন প্লাটফর্মটির মালিক হিসেবে রয়েছেন কাইয়ুম নিজেই,। এলাকাবাসীর ধারণা এই সাইটটিতে সাধারণ তরুন ও যুবকরা যে অর্থ বিনিয়োগ করছে তা কাইয়ুম ও তার সিন্ডিকেটের সদস্যরা যেকোন সময় বন্ধ করে দিতে পারে। এতে আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়ে যাবে ব্যাবহারকারীরা। হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচারের কথাও আলোচনায় রয়েছে এলাকাবাসীর মধ্যে।

এলাকাবাসীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী কাইয়ূমের সহকারীদের মাধ্যমে প্রতিদিন আনুমানিক ৪০-৫০ লাখ টাকা লেনদেন হয়ে থাকে। এসব অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে পাচারের অভিযোগ রয়েছে কাইয়ুম মিয়া সিন্ডিেেকটর বিরুদ্ধে। 

ওই গ্রামের এক প্রবাসী বলেন,  কাইয়ূম ও তার সহযোগীরা কী এমন আয়ের উৎস পেল অল্প সময়ে কোটিপতি হয়ে গেল, সকলের মাঝে রহস্যজনক বিষয়টি। তাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অনুরোধ যদি তারা অবৈধ কোনো কিছু করে তাহলে যেন আইনের আওতায় নিয়ে আসেন। 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কাইয়ূমের প্রধান সহকারী সোহাগ ও সকল কিছুর তদারক হাবিবুর রহমান বকুল অভিযোগ গুলো এড়িয়ে যান এসব বিষয়ে কথা বলতে চাননি। কাইয়ূমের বাবা-মা জানান, কাইয়ূম তিন ভাইসহ দুবাই থাকে। সেখানে কম্বলের ব্যবসা করে। অথচ, বিদেশ যাওয়ার আগেই বাড়িসহ অন্যান্য সম্পত্তি কেনেন।

অনলাইন জুযার বিষয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডির মুখপাত্র (মিডিয়া) পুলিশ সুপার মো. আজাদ রহমান বলেন, অনলাইন জুয়ায় জড়িতরা বিদেশে অর্থ পাচার করছে। সিআইডি বিভিন্ন সময়ে তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে  আসছে। আমাদের এই অভিযান চলমান। সারাদেশের যেকোন জায়গায় এসব চক্রের সন্ধ্যান পেলে তাৎক্ষণিক তদন্তের মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।


আরও পড়ুন