ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা নিয়ে শঙ্কা

news paper

ফাহিম, শেকৃবি

প্রকাশিত: ১৫-১০-২০২৪ দুপুর ১:৫৮

86Views

দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও প্রকৃতপক্ষে রাজনীতিমুক্ত শেকৃবি ক্যাম্পাস হতে পারবে কি-না সে প্রশ্নের সমাধান মেলেনি এখনো। মূলত ক্যাম্পাসে সকল ধরনের লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার পর গত ৭ অক্টোবর আবরার ফাহাদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ছাত্রদলের ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে শোক পালন, মিছিল এবং রাজনৈতিক বক্তব্য প্রদানকে কেন্দ্র করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে বহুমুখী প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।

আওয়ামী সরকারের পতনের পরে গত ৫ সেপ্টেম্বর সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সব ধরনের দলীয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় তখনকার অন্তর্বর্তীকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের সিগনেচারকৃত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ক্যাম্পাসে শিক্ষা ও গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সকল ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। একই সাথে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও সকল ধরনের দলীয় ও লেজুড়বৃত্তিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড (প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ) নিষিদ্ধ করা হলো।

রাজনীতি নিষিদ্ধের এই সিদ্ধান্তের একমাস অতিক্রান্ত না হওয়ার মধ্যেই ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রকাশ্য কর্মসূচি সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা বাংলাদেশের যেই সময়ের ছাত্ররাজনীতি নিয়ে গর্ববোধ করি সেই সময়ের ছাত্ররা লেজুড়বৃত্তির ছাত্ররাজনীতি করতো না। তখন ক্যামব্রিজ-অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সংসদভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি বিদ্যামান ছিল এবং তারা ছিল ক্লাসের সেরা ছাত্র। কিন্তু বর্তমানে যেভাবে ছাত্র রাজনীতি শুরুর পাঁয়তারা দেখছি তা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পূর্বের লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির অনুরূপ বলেই মনে হচ্ছে। রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস করা যদি অসম্ভবই হয়, তাহলে সংসদবিত্তিক রাজনীতি চালু থাকুক। কিন্তু লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি কোনোভাবেই কাম্য নয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রধান সমন্বায়ক তাওহিদ আহমেদ আশিক বলেন, ইতিপূর্বে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যে ধরনের রাজনীতি দেখেছি, তা শিক্ষার্থী কিংবা ক্যাম্পাসের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনেনি। ক্যাম্পাসের সামগ্রিক গঠনমূলক পরিবর্তনের থেকে বরং শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ ধ্বংসে বেশি ভূমিকা রেখেছে । আমরা আমাদের ক্যাম্পাসকে এ ধরনের লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে মুক্ত রাখতে চাই। আমাদের প্রত্যাশা, সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ক্যাম্পাসের সামগ্রিক পরিবেশ ঠিক রাখতে এবং গঠনমূলক পরিবর্তনের স্বার্থে সব ধরনের লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত পুর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়নে বর্তমান প্রশাসন দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বায়ক আল রাকিব বলেন, একক আধিপত্যের ছাত্র রাজনীতি ক্যাম্পাসে চাই না। ছাত্র রাজনীতি থাকবে মুক্ত। যেখানে ছাত্র সংগঠন গুলোর মাঝে ভালো কাজের,দেশ গঠনের প্রতিযোগিতা থাকবে।বিগত দিনগুলোর মতো লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির পুনরাবৃত্তি না হোক সেটাই কাম্য।

ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের পরে রাজনৈতিক ব্যানারে প্রোগ্রাম করার কারণ জানতে চাইলে শেকৃবির ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন,আমাদের প্রোগ্রামটি মূলত রাজনৈতিক প্রোগ্রাম ছিল না।এটি মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফরহাদের স্মরণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে আয়োজিত একটি প্রোগ্রাম ছিল।তিনি আরও বলেন,আমরা শেকৃবিতে রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের কোনো লিখিত পত্র পাই নি।নিষিদ্ধের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল তা মৌখিক ও ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।রাষ্ট্রীয়ভাবে গৃহীত কোনো সিদ্ধান্ত নয়।আমরা মনে করি রাজনীতি বাংলাদেশের মানুষের সাংবিধানিক অধিকার।

উল্লেখ্য,গত ৫ সেপ্টেম্বর শেকৃবির রেজিস্ট্রার সিগনেচারকৃত বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাম্পাসে সকল ধরনের রাজনীতি এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত জানানো হয়।আয়োজিত ছাত্রদলের এই প্রোগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি ব্যতিরেখে হয়েছে এবং উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে এবিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে অবহিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি।

ক্যাম্পাসে রাজনীতির ভবিষ্যৎ কেমন হওয়া উচিত প্রশ্নে অধ্যাপক আবুল ফাইয়াজ মো. জামাল উদ্দিন বলেন,বর্তমানে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশ সংস্কারের দিকেই সবার মনোযোগী হওয়া উচিত।আপাতত রাজনীতি না থাকাই ভালো।দেশ সংস্কার এবং কাক্ষিত পরিবর্তন অর্জিত হলে পরবর্তীতে গঠনমূলক রাজনীতি থাকতে পারে।

শেকৃবি ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল লতিফ বলেন,শিক্ষার্থীরা যেভাবে তাদের ক্যাম্পাসকে দেখতে চাইবে,যে গঠনমূলক পরিবর্তন গুলো প্রত্যাশা করবে সেগুলোই হবে আগামীর শেকৃবি ক্যাম্পাস।আর ছাত্ররাজনীতি বন্ধের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল তা ক্যাম্পাসে কার্যকর রয়েছে।ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ থাকায় ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলাম আশাকরি সামনে শিক্ষার্থীদের চাওয়ার বাইরে কিছু হবে না।


আরও পড়ুন