সিংগাইর থানার ওসির বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ : দালাল সিন্ডিকেটের কারসাজি
প্রকাশিত: ১৫-১-২০২৫ রাত ৯:৬
সম্প্রতি মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সিংগাইর থানার ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন কাজী আরিফুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। আর সে অভিযোগের প্রেক্ষিতে কয়েকটি মিডিয়ায় কোন প্রকার সরেজমিনে না গিয়ে বিনা তদন্তে ঢালাওভাবে ওসি জাহিদুর রহমান জাহাঙ্গীরকে নিয়ে একতর্ফা শুধুমাত্র বাদীর অভিযোগের ভিত্তিতেই রিপোর্ট করে বসে তার বিরুদ্ধে।
আর সে রিপোর্টটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জনমুখে দেখা দেয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। দলে দলে সিংগাইরের বিভিন্ন জায়গা হতে থানা থেকে বিনা পয়সায় সেবা পাওয়া অনেকেই এসে পুলিশ সুপার বরাবর যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে সেটির সত্যতা নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য তোলেন। এদিকে এলাকার অসহায় পরিবারকে সহযোগীতার করার নামে থানা পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে এতদিন যে একটি দালাল সিন্ডিকেট ছিল ওসি জাহিদুল ইসলামের হুঙ্কারে সেটি অনেকটা নড়বরে হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক পদ পদবী ব্যবহার করে তারা এ সিন্ডকেট তৈরী করে দালালি করে বেড়ানোই তাদের অর্থ আয়ের একমাত্র প্রধান উৎস।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সম্প্রতি সিংগাইর পৌর এলাকা চর আজিমপুরের কাজী গোলাম হোসেনের ছেলে কাজী শরীফুর রহমান প্রবাস হতে বাড়িতে আসে। অতপর গত ০৪ জানুয়ারী কাজী আবদুল্লাহ নামের ০৭ বছরের এক পুত্র সন্তান রেখে স্বামীর বাড়ি হতে পালিয়ে গিয়ে নিখোঁজ হয় স্ত্রী চাঁদনী। কোথাও না পাওয়াতে চাঁদনীর বাবা সিদ্দিক খান এ ঘটনায় থানায় একটি জিডি করেন পরের দিন ০৫ জানুয়ারি যাহার জিডি নম্বর ২৭৫। সেই সূত্রে পুলিশ সিদ্দিক খানের অভিযোগের সূত্র ধরে কাজী শরীফের পরিবারের কাছে চাঁদনীর সন্ধান জানতে যোগাযোগ করেন। চাঁদনীর বাবা সিদিদক খানের জিডির প্রেক্ষিতে শ্বশুর বাড়ির লোকজনদের আসামি হিসেবে গন্য করা এটা স্বাভাবিকভাবে ভিক্টিম উদ্ধারের প্রক্রিয়া মাত্র বলে দাবি পুলিশের। রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় একদল দালাল সিন্ডিকেট থানায় আগত লোকজনদের ভুলভাল বুঝিয়ে টাকা কামানোই নেশা। এবার শক্ত হাতে ওসি জাহিদুল ইসলাম এ সিষ্টেম বন্ধে ঘোষণা দিলে শুরু হয় তাদের মাথা গরম। পেশায় পুলিশ বিধায় কৌশল খাটিয়ে থানা থেকে তাকে (জাহিদুল) বিদায় করে পুনরায় আগের দালালি ব্যবসায় ফিরে যেতে ওসির বিরুদ্ধে এহেন অভিযোগ করিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিমত্তা দিয়ে।
অভিযোগকারী কাজী আরিফুর রহমান বলেন, প্রায় ০৭ বছর যাবৎ আমার ছোট ভাই শরীফুর রহমান বিদেশ করে। আর সে সুযোগে চাঁদনী আমাদের পরিবারের কারও কমান্ড না মেনে সেচ্ছাচারিনী হয়ে ওঠে। বিভিন্ন তালবাহানা দিয়ে একা একা যখন ইচ্চা তখনই চলে যেতে এখানে সেখানে। দীর্ঘ সময় পরে বাড়ি ফিরত। থানার ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ কেন করলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ছোট ভাইয়ের বউ গেছে আরেক পোলার সাথে ভাইগ্যা। বাড়ি থেকে অনেক টাকা পয়সা ও স্বর্ণ গহনা নিয়ে গেছে। ০৭ বছরের এক ছেলে আছে আমার ভাই কাজী শরীফুর রহমানের। এ বিষয়ে অভিযোগ করতে গেলে আমাদের অভিযোগ না নিয়ে উল্টো আমাদের বিভিন্ন জেরা করতে থাকে চাঁদনী ব্যাপারে। আমাদের কোন দামই দেয় নাই থানায় থেইক্যা। তাই এসপি অফিসে অভিযোগ করছি।
এদিকে সিদ্দিক খানের সাথে আগত থানা সেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক সাব্বির আহমেদ রজ্জব বলেন, আমার বাড়ির পাশেই চাঁদনীর বাবার বাড়ি। থানায় ঐ দিন আমি ও জয়মন্টপ ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবক দলের নেতা পিন্টুও ছিলাম। চাঁদনীর সাথে ছিল ১৬ হাজার টাকা সামথিং, একটি মোবাইল. একটি আংটি ও রুপার নুপুর। তা আমাদের সবার সামনেই চাঁদনী তার কাছ থেকে নামিয়ে রেখে ভিডিও করার পর পুনরায় তা নিয়ে তার বাবা সিদ্দিক খানের সাথে চলে আসে। তাছাড়া আগের থেকে থানা পুলিশের অনেক সুনাম বেড়েছে বলে তিনি স্বীকারও করেন। বিশেষ করে ওসি (জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর)।
সিংগাইর থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক মোতালেব বলেন, ওসি (তদন্ত) মোশারফ হোসেন স্যার কে নিয়ে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে লোকেশন নির্নয় করে সাভারের বিরুলিয়া হতে চাঁদনীকে উদ্ধার করা হয়। পরে তার সাথে থাকা নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার উপস্থিত তার গার্ডিয়ানের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়।
সিংগাইর থানার ওসি জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর বলেন, এ থানায় যোগদানের পরেই চুরি-ডাকাতি রোধ, বিভিন্ন অপরাধ ও সামাজিক বিভিন্ন কাজকর্ম যেমন নাগরিক কমিটি, সভা-সেমিনার এবং প্রত্যেক ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ন বিভিন্ন পয়েন্টে স্থানীয়দের নিয়ে মত বিনিময় সভা পরিচালনার মাধ্যমে জনগনকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ সেটা তুলে ধরে ছোট বড় অপরাধ দমনে সফল হয়েছি। আমি থাকতে এ থানায় দালালি চলবেনা, এ কথা ছড়িয়ে পড়লে দালাল শ্রেণীর টাউট-বাটপারদের চোখের বালিতে পরিণত হয়েছি। আমার বিরুদ্ধে কাজী আরিফুর রহমানের এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। সবই দালালদের মনগড়া মন্তব্য। আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একদল কু-চক্র মহল তাদের স্বার্থ হাছিল না হওয়াতে আমার বিরুদ্ধে এ মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে। তিনি আরও বলেন, এ অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি। দোষী হলে আমার বিচার হোক, আর না হলে সরকারি অফিসারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে অযথা হয়রানি করার অপরাধের বিচার হওয়া দরকার।
