রাজধানীর চকবাজার সোনালী ব্যাংকের ব্যাবস্থাপক ওবায়দুর রহমানের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ

news paper

আফিয়া আফরোজা

প্রকাশিত: ২-৬-২০২৫ রাত ১১:০

8979Views

চকবাজার সোনালী ব্যাংকের কর্পোরেট শাখায় স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার এখন ওপেন সিক্রেট বিষয়। ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন। অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ব্যাংকের বর্তমান ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) এসএম ওবায়দুর রহমান। এসএম ওবায়দুর রহমান, (ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার)’এর বিরুদ্ধে ভুয়া চার্জেস ভাউচারে অর্থ আত্মসাৎ, ব্যাংকের মোবাইল ক্রয়ের টাকা আত্মসাৎ, ভুয়া ঋণ প্রদানে চাপ প্রদান, অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতির মাধ্যমে অল্প সময়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছেন বলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)’এ এক অভিযোগ করা হয়েছে।
বিগত ২১ এপ্রিল দুদকে প্রেরিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, সোনালী ব্যাংক চকবাজার কর্পোরেট শাখা, ঢাকা’তে বিগত ১৯ মে ২০২৪ ইং তারিখে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার আওয়ামী লীগের চিহ্নিত দোসর এসএম ওবায়দুর রহমান [এজিএম (ডিজিএম ইন চার্জ), বর্তমানে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার]. শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগদানের পর থেকেই প্রতিনিয়ত ব্যাংকের আর্থিক ক্ষতি করে আসছেন এবং ক্রমান্বয়ে দিন দিন তার এসকল কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। যোগদানের পর থেকেই ভুয়া ঋন প্রদানে চাপ প্রদান, ভুয়া ভাউচারে অর্থ আত্মসাৎ, অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার, অফিসে অনুপস্থিতি থেকে গোপালগঞ্জে ব্যাবসায়িক কাজে অবস্থান ও প্রকাশ্যে দুর্নীতি করেন। বিগত ১৩ মার্চ ২০২৫ তারিখে এসএম ওবায়দুর রহমান ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সোনালী ব্যাংক পিএলসি, চকবাজার কর্পোরেট শাখা, ঢাকা হতে স্যামসাং এ-৫৫ মোবাইল ক্রয় না করেই  ভূয়া  ভাউচারের  মাধ্যমে  ৪০ হাজার টাকা উত্তোলন করে ভ্যাট  ট্যাক্স হিসাবায়নের পর অবশিষ্ট ৩৪,৫৪৬ টাকা তার নিজ একাউন্টে জমা করণের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেন। অথচ মোবাইল সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য (সিরিয়াল নং, আইএমইআই নাম্বার, ওয়ারেন্টি ইত্যাদি) শাখার ডেড স্টক রেজিস্ট্রারে এন্ট্রি নাই এবং মোবাইল ফোন ব্যাংকের সম্পদ হিসেবে দুই বছর তা সংরক্ষণ করার নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে তার কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। বিগত ৬ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে শাখার ষ্টেশনারী খাত হতে  ৩,৩৬০/- টাকা, ৬মার্চ ২০২৫ তারিখে ৩,৩৬০ টাকা, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে ৩,৩৬০ টাকা, ৯ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে ৩,৩৬০ টাকা, ৬ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে  ৩,৩৬০  টাকা, ২৯ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে ৩,৩৬০ টাকা, ৭ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে ৩,৩৬০ টাকা, ১৫ সেপ্টেম্বর২০২৪ তারিখে ৩,৬২৫ টাকা অর্থাৎ শুধুমাত্র শাখার ষ্টেশনারী খাত হতে ২৭,১৪৫ টাকা অবৈধভাবে অর্থ আত্মসাৎ করেন। ব্যাংকের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খাত থেকে ১২,২৬৬ টাকা ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেন (ভাউচারে সোফা মেরামতের কথা উল্লেখ থাকলেও সরেজমিনে গিয়ে তা দেখা যায়নি)। শাখার সংস্থাপন বিভাগ থেকে তাকে অনুরোধ করা হয় ভুয়া ভাউচারে অর্থ উত্তোলন না করার জন্য। তারপরেও তিনি ভুয়া ভাউচারে অর্থ আত্মসাৎ করেন এবং এই ব্যাপারে ভুয়া ভাউচার ছাড়ার জন্য সংস্থাপন ইনচার্জকে ক্রমাগত চাপ প্রয়োগ করেন, (বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন)  এ ক্ষতি করা, বদলির হুমকি প্রদান করেন। বিগত ০৭/০১/২০২৫ তারিখে স্টাফ হাউজ বিল্ডিং লোন বিতরণ করে ৪ (চার) লাখ টাকা ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করেন যার ৩ (তিন) লাখ টাকা পরবর্তী ১৩/০১/২০২৫ ইং তারিখে তার স্বহস্তে লিখিত ভাউচারের মাধ্যমে তার নিকটাত্মীয়ের হিসাবে নগদ জমা করেন এবং তার নিজ ক্রেডিট কার্ডে নগদ ৮০,০০০ টাকা জমা করেন। কর্মচারী গৃহ নির্মাণ ঋণ নীতিমালা ২০০৯ অনুযায়ী শাখায় প্রাপ্ত বরাদ্দের ২০% জমি ক্রয় খাতে,৪০% পূর্বের ঋণ সীমা বর্ধিতকরণ খাতে, অবশিষ্ট ৪০% নতুন নির্মাণ ঋণ খাতে প্রদানের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও এস এম ওবায়দুর রহমান এর তোয়াক্কা না করেই অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে সম্পূর্ণ বরাদ্দ নতুন নির্মাণ ঋণ খাতে প্রদান করেন। উল্লেখ্য বর্ধিতকরণ খাতে ৪০% বরাদ্দ প্রদানের কথা থাকলেও শাখায় বর্ধিতকরণের আবেদন থাকা সত্ত্বেও এ খাতে কোনো বরাদ্দ প্রদান করেনি,যা নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। শাখায় কর্মরত একজন কর্মকর্তা জানান ঋণ সংশ্লিষ্ট সকল কাগজপত্র ও দলিলাদি সঠিক থাকার পরও ঘুষ না পাওয়ায় কর্মকর্তাদের অযাচিত হয়রানি করেন। শাখার পরিদর্শন অর্ডার মোতাবেক বিগত ২১ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে এসএম ওবায়দুর রহমান, লিটন মিয়া, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার, মো. আলাউদ্দিন সরকার, প্রিন্সিপাল অফিসার, আনোয়ার হোসেন, সিনিয়র অফিসার ও  তৌসিফ মোহাম্মদ, সিনিয়র অফিসার-সহ ঋন আবেদনকারী আফাজ এন্টারপ্রাইজ, প্রোপাইটর-মো: মেহেদী হাসান, পশ্চিম বাসনা, ধামরাই, ঢাকায় পরিদর্শন করা হয়। পরিদর্শনে অন্যের প্রতিষ্ঠানে নামসর্বস্ব নামের পোস্টার থাকায় ও কোনরূপ ব্যবসা না থাকায় অর্থাৎ ভুয়া প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত হওয়ায় সকলের সামনে এসএম ওবায়দুর রহমান অফিসারদের সাথে চিৎকার, চেচামেচী ও বাজে ভাষায় খারাপ আচরন করেন, যার প্রমাণ পরিদর্শনে উপস্থিত সকল অফিসার। পরবর্তী ২২অক্টোবর ২০২৪ তারিখে উক্ত ভুয়া ব্যবসা উল্লেখ না করে সম্পত্তির অতি মূল্যায়ন করে পরিদর্শন প্রতিবেদন তৈরির জন্য চাপ দিতে থাকেন, যা ব্যাংক স্বার্থে কর্মকর্তারা মেনে নেননি। পরবর্তীতে উক্ত পরিদর্শন প্রতিবেদন শাখা ব্যবস্থাপক কর্তৃক গ্রহন করা হয়নি। শত বাধা উপেক্ষা করে অফিসাররা ব্যাংক স্বার্থে সত্য তথ্য উপস্থাপন করে পরিদর্শন রিপোর্ট প্রদান করেন, যার প্রেক্ষিতে এসএম ওবায়দুর রহমান এর চক্ষুশীল হয়ে পড়েন।ঋণ সংশ্লিষ্ট কাজে জড়িত একজন কর্মকর্তা বলেন আর্থিক সুবিধা না পেলে তিনি কোনো ঋণ প্রদান করেন না। ঋন বিতরন, নবায়ন বাবদ বিভিন্ন কৌশলে টাকা হাতিয়ে নেন এস, এম, ওবায়দুর রহমান যেমন : সিনহা এন্টারপ্রাইজ (এসএমই ঋণ গ্রহীতা থেকে আইনি মতামত ও সিআইবি বাবদ কৌশলে ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। ঋন বিতরন ও  নবায়নে ইন্সুরেন্স বাবদ ইন্সুরেন্স এর ৫০শতাংশ টাকা ইন্সুরেন্স প্রতিষ্ঠান থেকে আঁতাত করে হাতিয়ে নেন। এই ব্যাপারে অনেক ঋনগ্রহীতা নিরুপায় হয়ে থাকেন।এসএম ওবায়দুর রহমান অবৈধ উপায়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বেআইনীভাবে অর্থ  উপার্জনের  মাধ্যমে গত ১৩মার্চ ২০২৫ তারিখে ছোট দিয়াবাড়ি মৌজায় ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে একটি নতুন ফ্ল্যাট ক্রয় করেন। তিনি কর্মদিবসে শাখায় উপস্থিত না থেকে প্রধান কার্যালয়ে আছেন এমন মিথ্যা তথ্য দিয়ে  গোপালগঞ্জে ব্যাবসায়িক কাজে অবস্থান করেন। বিগত ২৯-০৫-২০২৫ তারিখে এসএম ওবায়দুর রহমানকে অডিট এন্ড ইন্সপেকশন ডিভিশন ১, প্রধান কার্যালয়, ঢাকাতে বদলী করা হয়।যেখানে ন্যায়পালে তার নামে আরেকটি গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ তদন্তনাধীন রয়েছে।এমতাবস্থায় তার মতো এমন দুর্নীতিবাজ লোককে এমন একটি স্পর্শকাতর ডিভিশনের দায়িত্ব দেয়া হলে সেখানে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হুমকির মুখে পড়ে। এই ব্যাপারে সোনালী ব্যাংক পিএলসি এর ডিজিএম  মহিউদ্দিন মিয়া এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে ব্যাবস্থা নেওয়ার কথা জানান। বাংলাদেশ সরকার যেখানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে সেখানে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক দুর্নীতিবাজ দের আশ্রয় প্রশ্রয়ের স্থান হয়ে উঠেছে। অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপারে সাংবাদিক এসএম ওবায়দুর রহমানের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি তাদেরও ঘুষ প্রদানের চেষ্টা করেন।বৈষম্য বিরোধী বাংলাদেশে এখনো আওয়ামী দোসররা দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন।


আরও পড়ুন