মানবিক মানুষ সৃষ্টিতে আলো ছড়াচ্ছে মজিবুর রহমান স্মৃতি গ্রন্থাগার

news paper

এম.এ মালেক, ধামইরহাট

প্রকাশিত: ৭-৬-২০২১ বিকাল ৬:০

43Views

আধুনিক যুগে ডিজিটাল মোটিভেশনে মোবাইল, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, আর ইন্টারনেটের দাপটে যে সময় যুবসমাজের মন-প্রাণ প্রযুক্তিনির্ভর ডিভাইসের দিকে আসক্ত; ঠিক সেই সময়ে যুবসমাজকে জ্ঞানার্জনের জন্য বইমুখী করতে নওগাঁ জেলার ভারতীয় সীমান্তের কোলঘেঁষে অবস্থিত ধামইরহাট উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা আগ্রাদিগুন গ্রামের স্বপ্ন মানব পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও গ্রীন ভয়েস বাংলাদেশ-এর প্রতিষ্ঠাতা আলমগীর কবির নিজ উদ্দোগে লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করে কালজয়ী এক নজির সৃষ্টি করেছেন। বিলুপ্ত সামাজিক বিচার ব্যবস্থায় যুবসমাজ এখন ধ্বংসের দিকে। ডিজিটাল যুগে পড়ালেখার অজুহাতে কেউ ছুটছে ডিভাইসের দিকে, কেউ ছুটছে মাদকের দিকে, কেউবা দুটোর দিকেই। লাইব্রেরিতে বসে পড়ার চর্চা গত প্রায় একযুগ থেকে স্থিমিত হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় ক্ষতিকর আসক্তি থেকে ফেরাতে যুবসমাজ ও শিক্ষানুরাগীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত এই লাইব্রেরি ইতোমধ্যেই সাড়া ফেলেছে প্রত্যন্ত ওই এলাকায়। আলমগীর হোসেন ও তার ভাই-বোন পিতার স্মৃতিকে ধরে রাখতে পিতার নামে ‘মজিবুর রহমান স্মৃতি গ্রন্থাগার’ রাখা হয়েছে বলে জানান। নিয়মিত পাঠক সৃষ্টি করতে ইতোমধ্যেই পার্শ্ববর্তী ৪২টি গ্রাম থেকে ১১০ জন পাঠক নিয়ে ১০টি গ্রুপ করা হয়েছে, যারা নিয়মিত গ্রন্থাগারে আসবে এবং ১০টি গ্রুপ কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে অন্যদের বই পাঠে আগ্রহী করবে। পাশাপাশি কবি-সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের জন্ম-মৃত্যু দিবস পালন ও তাদের জীবনালেখ্য চর্চা করবে।     

গ্রন্থাগারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক আলমগীর কবির জানান, করোনার চাপ সহনীয় মাত্রাই এলে শিক্ষণীয় বিভিন্ন সিনেমা ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হবে। উপজেলার ২৬টি হাই স্কুল থেকে মাসে ‍এক দিন করে নির্দিষ্টসংখ্যক শিক্ষার্থীকে শিক্ষণীয় ডকুমেন্টারি প্রদর্শন, বইপড়া, ছড়া-কবিতা, বিতর্ক, গান পরিবেশ সুরক্ষায় গ্রন্থাগারের গুরুত্ব ইত্যাদি বিষয়ে বিনোদনের মাধ্যমে উপস্থাপন এবং দিন শেষে মূল্যায়নের মাধ্যমে ভালো ফলাফলকারীদের পুরস্কৃত করা হবে। শিক্ষার্থীদের বইমুখী করতে এসব কাজ করা হবে গ্রন্থাগারের খরচে। গ্রন্থাগারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে সামাজিক সম্প্রীতি ও বন্ধন সৃষ্টি সহজতর হয়। কারণ আজকের ছাত্র আগামীদিনে জাতির কাণ্ডারি। গত কয়েক বছর যাবৎ উপজেলার ২৬টি হাই স্কুল, ১৬টি প্রাথমিক ও ৩টি মাদ্রাসার ট্যালেন্টপুলে ফলাফলকারীদের ‘মজিবুর রহমান ফাউন্ডেশন’-এর মাধ্যমে নিয়মিত শিক্ষাবৃত্তি প্রদান অব্যাহত রয়েছে।

মজিবুর রহমান গ্রন্থাগারের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম মজিবুর রহমানের জেষ্ঠ্য পুত্র আলমগীর কবির কয়েকটি সামাজিক সেবামূলক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণি-পেশার মানুষ গ্রন্থাগারে আকৃষ্ট হয়ে পাঠে সময় ব্যয় করছেন।

চকময়রাম সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খেলাল-ই-রব্বানী  গ্রন্থাগার বিষয়ে বলেন, গ্রন্থাগার সৃষ্টি নিঃসন্দেহে মহৎ উদ্যোগ। গ্রন্থাগার মনুষ্যত্ব সৃষ্টির অন্যতম মাধ্যম আর মনুষ্যত্বের মাধ্যমেই মানুষ পূর্ণতা পায়।

আগ্রাদ্বিগুন ইউনিয়নের প্রবীণ গুণীজন ও সাপাহার উপজেলার চৌধুরী চান মোহাম্মদ মহিলা ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. আব্দুল জলিল বলেন, মজিবুর রহমান গ্রন্থাগার তার নিজস্ব স্বকীয়তায় জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে মাদকমুক্ত, প্রতিহিংসামুক্ত, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে বিচক্ষণ জ্ঞানদীপ্ত সমাজ গঠনে অবদান রাখবে এবং পরবর্তী প্রজন্মের কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও তাদের দেখে লাইব্রেরিমুখী হবে বলে আমি মনে করি।

ধামইরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার গনপতি রায় বলেন, একজন স্বপ্ন মানব আলমগীর কবির, যিনি তার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। তৈরি করছেন আলোকিত মানুষ। মজিবুর রহমান স্মৃতি পাঠাগার প্রত্যন্ত অঞ্চলে যে জ্ঞানের ‍আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে, ইউনিয়ন পর্যায় পেরিয়ে পুরো ধামইরহাট উপজেলায় মানবিক মানুষ তৈরিতে এই পাঠাগার অনন্তকাল ভূমিকা রাখবে, এটিই সকলের প্রত্যাশা।


আরও পড়ুন