ইউপি চেয়ারম্যান দেবেশের ব্যক্তিগত অফিসে ধর্ষণের শিকার কিশোরী, ধর্ষক গ্রেফতার

news paper

মৃনাল কান্তি দেব, খালিয়াজুরী

প্রকাশিত: ২৬-৫-২০২২ দুপুর ১১:৫০

108Views

নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার নগর ইউনিয়নে ১৪ বছরের কিশোরীকে নগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেবেশ তালুকদারের নিজস্ব অফিসে ধর্ষণের অভিযোগে খালিয়াজুরী থানায় বুধবার (২৫ মে) বিকেল পৌনে ৫টায় ধর্ষিতার বাবা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনাটি ঘটে গত ৫ মে রাত ৮টার দিকে।

জানা গেছে, ধর্ষিতার বাড়ি থেকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ইউনিয়নের উদয়পুর গ্রাম হতে নয়াগাঁও বাজারস্থ দেবেস তালুকদারের নিজস্ব অফিসকক্ষে রাত ১০টা থেকে ৩টা পর্যন্ত একাধিকবার দৈহিক সম্পর্ক করে রাতেই পালিয়ে যায় ধর্ষক। ধর্ষিতা কিশোরী অত্র উপজেলার নগর ইউনিয়নের উদয়পুর গ্রামের অসহায় দিনমজুর হরিধন সরকারের মেয়ে রিমা সরকার (১৪)।

মামলার বাদী হরিধন সরকার এজাহারে উল্লেখ করেন, ধর্ষক লিটন সরকার (৪০) সুনামগঞ্জের জামালপুর উপজেলার বিষ্টপুর গ্রামের বাসিন্দা ও বিবাহিত। ধর্ষক লিটন সরকার খালিয়াজুরী উপজেলার বল্লভপুর গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে থেকে ধান কাটার কাজ করত। উদয়পুর গ্রামে ধান কাটার রেশ ধরেই ধর্ষিতা রিমার সাথে পরিচয় এবং মোবাইলে কথাবার্তা চলত। মোবাইলে প্রায়ই তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিত এমনকি তাকে নিয়ে ঘর-সংসার করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৫ মে রাত ৮টায় রিমাকে  নিয়ে দেবেশের অফিসে গিয়ে রিমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোরপূর্ব্বক ধর্ষণ করে হৃদয় তালুকদার এবং বাড়ি আদমপুর বলে ধর্ষক পালিয়ে যায়। ওই দিন সকালে হৃদয়কে না পেয়ে রিমা বাজারের লোকদের জিজ্ঞাসা করে আদমপুরের হৃদয়ের বাড়ি কোনটা? ধর্ষিতা রিমা আদমপুরে হৃদয় সরকারের বাড়ি গিয়ে বসে থাকে।

বিষয়টি জানাজানি হলে নগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেবেশ তালুকদার সালিশের মাধ্যমে শেষ করে দেবে বলে আশ্বাস দিলে অত্র ইউনিয়নের উদয়পুর গ্রামের ইউপি সদস্য পল্টু সামন্ত ধর্ষিতা রিমাকে নিয়ে তার গ্রামের বাড়ি চলে যান।  কিন্তু ১৫ দিনেও কোনো বিচার না পেয়ে ধর্ষিতা রিমার বাবা খালিয়াজুরী থানায় এজাহার করেন। 

এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে, ধর্ষক লিটন সরকার নগর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান দেবেশের আত্মীয়। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে  ইউপি সদস্য পল্টু সামন্ত ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ধর্ষিতা রিমাকে চেয়ারম্যানের নির্দেশে আদমপুর থেকে নিয়ে এসেছি সত্য। রাতের বিষয়টি আমি সঠিক বলতে পারব না। 

মামলার বাদী ধর্ষিতার বাবার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অনেক ঘুরেও চেয়ারম্যানের কাছে বিচার না পেয়ে থানার আশ্রয় নিয়েছি। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। 

ঘটনাটির বিষয়ে নগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেবেশ তালুকদারের কাছে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার অফিস আদমপুর। তবে বাজারে যে রুম আছে তা বিট পুলিশিংয়ের কার্যক্রমের জন্য রাখা। তাতে কে বা কারা মিথ্যা পরিচয় দিয়ে জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছে, তা আমার বোধগম্য নয়। সালিশের জন্য সময় ক্ষেপণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনার বিচার তো আমার করা সম্ভব নয়। তাই অপরাধী যেই হোক, তদন্তসাপেক্ষে তার বিচার দাবি করছি। অপরাধী আপনার আত্মীয়- বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।  

খালিয়াজুরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুজিবুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ৯(১) ২০০০ সালের  নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে (সংশোধনী ২০২০) ধর্ষণের অপরাধে মামলা রুজু করে ধর্ষককে আদালতে পাঠানো হয়েছে।


আরও পড়ুন