তারুণ্যে সূচনা হোক জীবনের নতুন বানান
প্রকাশিত: ৬-৮-২০২২ দুপুর ১১:৪২
কথায় আছে, একটি সুন্দর উক্তি রত্নের চেয়েও মূল্যবান। একটি অনুপ্রেরণামূলক উক্তি দূর্বল মানুষের শক্তি যোগায়, দিশেহারা মানুষকে দেখায় পথ দেখায়, অন্ধকারে জ্বালায় আলোর মশাল। হতাশা, ব্যর্থতা, বঞ্চনা, গ্লানির বিষাদময় অনুভূতিগুলো যখন ঘিরে ধরে, তখন প্রতিটি মানুষের কাছে ঘুরে দাঁড়ানোর সম্বল হয়ে উঠে একটুখানি আশা, একটুখানি সম্ভাবনার হাতছানি। আমাদের উচিত জীবনের কঠিন সময়গুলোতে মনোবল ধরে রাখা।
জীবন মানে নিরন্তর ছুটে চলা। হাজার কষ্টের পরেও তা কাউকে বুঝতে না দিয়ে মুখে হাসি নিয়ে সামনে অগ্রসর হওয়ার নামই জীবন। আমরা কেউই শুধুশুধু আমাদের জীবনটাকে কাটিয়ে দেওয়ার জন্য এই পৃথিবীতে আসিনি। আমার মনে হয়, এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের প্রত্যেকের একটা উদ্দেশ্য থাকে। কেউ হইতো সেই উদ্দেশ্যটাকে সফলতায় রূপ দিতে সক্ষম হয়, কেউ হইতো সক্ষম হয়না। কেউ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে আবার কেউ পারেনা। কিন্তু সবাই চেষ্টা তো করে একটা। আমার কাছে সেই চেষ্টার দাম অসীম। আমি সেই চেষ্টাটাকে সম্মান করি। প্রতিষ্ঠিত তো হয় ১০০ জনের মধ্যে ১জন, বাকি ৯৯ জন? তারাও কিন্তু সমানভাবে লড়াই করে। আমি সেই লড়াইটাকে সমর্থন করি।
আমরা আমাদের অনেকটা সময় পিছিয়ে আছি, আমাদের অনেকটা সময় পার করে এসেছি।অনেকেই এই সময়টা অনেক মানুষের সাথে ইগোতে নষ্ট করে ফেলি। আমরা বরাবরই আমাদের আশেপাশের মানুষকে বুঝাতে পারিনা যে, আমরা আসলে কি চাই বা কি চেয়ে এসেছি। যেখানে আমরা সারেন্ডার করে নয় বরঞ্চ লড়াই করে বাঁচতে চাই সেখানে চারপাশের মানুষগুলো ভেবে থাকে ঠিক উল্টোটা। কিন্তু যারা লড়াই করে তারা তো জানে যে, আসলে তারা কি চাই, তাদের এই লড়াইয়ে কি আছে। জীবনের প্রতিটি লড়াইয়ের সাথে অনেক আনন্দ থাকে, থাকে অনেক উত্তেজনা। আমাদের জীবনে চলার পথে হেরে গিয়ে থেমে থাকা উচিত নই, যেমন তেমন করে জীবন কাটানোর কোনো মানে হয়না। প্রতিটি মানুষের উচিত জীবন যুদ্ধে লড়াই করে সবধরনের প্রতিকূল পরিবেশে নিজের অস্তিত্বকে বাঁচিয়ে রাখা।
আমাদের সবারই ছোট- বড় কোনো না কোনো স্বপ্ন থাকে। সবাই চাই নিজ নিজ স্বপ্ন পূরন করতে। আমাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কাজের মধ্য দিয়ে এক একটি ধাপ অতিক্রম করি। কিন্তু সবাই কি পারে গন্তব্যে পৌঁছাতে? তবে, সবাই গন্তব্যে না পৌঁছালেও সবাই সবার কাজের মাধ্যমে কিংবা অন্য কোনোভাবে দিনের পর দিন অনেক কিছু শিখে থাকি, নতুন নতুন জিনিসের সংস্পর্শে নতুন করে বেঁচে উঠি আমরা। একজন ডাক্তারের কথা চিন্তা করা যাক, সে কি পারে তাঁর সব রোগীকে আরোগ্য করতে? পারেনা তো। কিন্তু সে সবসময় আপ্রাণ চেষ্টা করে যায় তাঁর সব রোগীকে সুস্থ করে তোলার, ভালো রাখার। কয়জন রোগীকে সুস্থ করতে পারলো সেটা নই বরঞ্চ সব রোগীকে ভালো করার, ভালো রাখার যে প্রাণপণ চেষ্টা করে যায় সেটা দেখার মানসিকতা থাকতে হবে আমাদের।
জীবন তো একটাই। এই জীবনটা চলে গেলে আর কি ই বা থাকবে। একটা মানুষের মধ্যে যদি কোনো ট্যালেন্ট থাকে, তাহলে সে তাঁর ট্যালেন্টটাকে মানুষের মধ্যে প্রকাশ করবেনা কেন? কেন সে নিজেকে সবার মাঝে নিয়ে যাবেনা? এতে অপরাধ টা কোথায়? পৃথিবীর সবকিছু আমাদের হাতে নেই- এটা চির সত্য। কিন্তু কিছুকিছু জিনিস যা চেষ্টার মাধ্যমে সাধনার মাধ্যমে আমরা অর্জন করতে পারি। এই বিষয়টাও আমাদের বুঝতে হবে। যা কিছু নেই, যা কিছু কখোনোই হবেনা সেই সব অবান্তর ভাবনাগুলো ভাবা বন্ধ করে দিয়ে যা কিছু আছে, যা অর্জন করা সম্ভব সেইসব নিয়ে নিজেকে ভালো রাখতে উৎসাহিত করতে হবে। আমাদের ভালো থাকাটা, ভালোভাবে বাঁচাটা ভীষণ দরকার।
অনেক সময় আমাদের কিছুকিছু মানুষের সাথে কথা বলেই তাদের ভীষণ পছন্দ হয়, ভালোলেগে যায়। কিন্তু কেন? কারন হিসেবে হরহামেশাই আমরা মনে করে থাকি যে, ভালোভাবে, সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলে তাই ভালোলাগে। কিন্তু আমার কাছে তা একদমই মনে হয়না। আমার মনে হয়, আমরা হয়তো তাদের মধ্যে কোথাও শিক্ষার একটা ছাপ দেখতে পাই, হয়তো তাদের ভাবনা-চিন্তায় তার প্রতিফলন ছিল। চারপাশের আট- দশ জন সাধারণ মানুষের মতো হওয়া স্বত্তেও যদি কারো মধ্যে সেই প্রতিফলনটা থাকে এবং সেটা আমাদের চোখে ধরা দিলে সেই মানুষটাকে তখন আমরা পছন্দ করি, তাদের প্রতি একটা ভালোলাগা কাজ করে। যদি ঐ মানুষটার মধ্যেও বাকি সাধারণ মানুষগুলোর মতো চিন্তা ভাবনার প্রতিফলন না থাকতো, সে যদি ফোকাস না হতো, তাঁর জীবনে যদি কোনো লক্ষ্য না থাকতো, তাঁর কোনো নিজস্ব মতামত না থাকতো তাহলে বোধহয় আমরা সেই মানুষটাকে পছন্দ করতাম না।
আমরা অধিকাংশই নিজের মধ্যে অনেক ভ্রান্ত ধারনা পোষণ করে থাকি। আমরা যখন কোনো কাজ করে থাকি তখন ভাবি যে, লোকে যদি আমাদের সফল বলে তবেই আমরা সফল হবো। কিন্তু এই ধারণাটাই আমাদের সবচেয়ে বড় ভুল। লোকে আমাদের কাজের প্রশংসা করবে, সব লোকের কাছে আমাদের কাজ ভালোলাগবে তবেই আমরা সফল হবো- বিষয়টা কখোনোই এমন না। পৃথিবীতে সবার মন যুগিয়ে চলা অসম্ভব। যদি আশেপাশের সব মানুষের ভালোলাগা, মন্দ লাগাকে প্রাধান্য দেয় তবে জীবন থেকে সফল হওয়ার চিন্তাটি ছেঁটে ফেলতে হবে। নিজের স্বপ্ন পূরন করতে চাইলে আগে নিজের ভালোলাগাকে প্রায়োরিটি দিতে হবে, যে কাজ ই করিনা কেন অবশ্যই কাজটি নিজের জন্য করছি এমন মানসিকতা নিয়ে করতে হবে, ভালোবেসে করতে হবে, নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে করতে হবে। আশেপাশের কে কি বললো তা কানে নেওয়া যাবেনা, কোনো পিছুটান রাখা যাবেনা। জীবনের বর্ণময়যাত্রাতে যারা সেকেন্ড ধরে ধরে জীবনকে রাঙ্গাতে পারে, কষ্টকে বাস্তব জীবনে নিয়ে সামনের দিকে এগোতে পারে, তারাই তো সাফল্যের শীর্ষে পা রাখে, তারাই তো একটি সুন্দর অর্থবহ জীবন কাটাতে সক্ষম হয়।
লেখক: শিক্ষার্থী, রসায়ন বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
সদস্য, জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি ফিচার, কলাম এন্ড কন্টেন্ট রাইটার্স।