চার বছরেও শেষ হয়নি হাবিপ্রবি’র দশ তলা একাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজ

news paper

আবু সাহেব, হাবিপ্রবি

প্রকাশিত: ৫-১০-২০২২ দুপুর ১২:৭

17Views

নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার চার বছর পার হলেও এখনো শতভাগ নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) দশ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবনের। আধুনিকতার এই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষা হচ্ছে গবেষণা এবং বাস্তবমুখী ব্যবহারিক কর্মক্ষেত্রের ফসল। 

এরই ধারাবাহিকতায় দেশ তথা বিশ্বের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিকভাবে প্রয়োগমূলক গবেষণার জন্য গত ২০১৮ সালের ২৭মে  প্রায় ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি ও উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) ১০ (দশ) তলা বিশিষ্ট এই একাডেমিক ভবনের নির্মাণের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করা হয়। 

দশ তলা বিশিষ্ট এই একাডেমিক ভবনটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. মু. আবুল কাসেম। তবে ৪ বছর পার হলেও ভবনটির নির্মাণ কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয় নি। মহামারী করোনা ভাইরাসের সময় নির্মাণ কাজ ব্যাহত হলেও পরবর্তীতে এই ভবনটির সম্পূর্ণ নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার জন্য মেয়াদ ধার্য করা হয়েছিল ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত। 

তবে পূর্ব ঘোষিত মেয়াদের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে না পারায় পরবর্তীতে আবারও সে মেয়াদ বৃদ্ধি করে ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে সে নির্দিষ্ট সময়েও নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয় নি। এদিকে ক্লাস-রুম সংকট, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মিলনায়তনে জায়গা সংকট, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়াসহ বিভিন্ন ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ক্লাসরুম সংকটের কারণে অনেক সময় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সময় মতো ক্লাস করতে নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।

তবে ইতোমধ্যে গত ১৩ মার্চ ২০২২ ইং তারিখে ১০ তলা এই নির্মাণাধীন একাডেমিক ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গবেষণাগার উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি এমপি। ১০ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজের বর্তমান অবস্থা ও নির্মাণ কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে নির্মাণ কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট বর্তমান দায়িত্বরত ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুল করিম জানান, “১০ তলা একাডেমিক ভবনের ভিতরের বড় ধরনের সব কাজ শেষ হয়েছে এবং ভবনটিতে ইতোমধ্যে রং এর কাজও শেষ। 

কয়েকদিন আগে রুমগুলোতে সিলিং ফ্যান লাগানো হয়েছে। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইতালি থেকে লিফট আসতে দেরি হওয়ায় শুধু লিফটের কাজটি সম্পন্ন করা হয় নি। গত মাসের ২৬ তারিখে লিফটগুলো বাংলাদেশে এসেছে। এখন আগামী ৫-৭ দিনের মধ্যে পোর্টের বিভিন্ন জায়গার কাগজপত্রের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেই লিফট ইন্সটলেশন এর কাজ আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যেই সম্পন্ন হয়ে যাবে। লিফট ইন্সটলেশন কাজের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাক্তিরাও ইতোমধ্যে চলে এসেছে। আমি আশা করছি যে আগামী দুই মাসের মধ্যেই ১০ তলা একাডেমিক ভবনের আনুষঙ্গিক সকল নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে"।

একাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজের বর্তমান অগ্রগতি ও নির্মাণ কাজের মেয়াদ কত দিন বৃদ্ধি করা হয়েছে এবিষয়ে জানতে চাইলে ১০ তলা নির্মাণাধীন একাডেমিক ভবনের প্রকল্প ম্যানেজার রানা সেন বলেন, “ ১০ তলা ভবনের নির্মাণ কাজ মোটামুটি শেষ পর্যায়ে এবং লিফট বসানোর কাজটি প্রক্রিয়াধীন। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। নির্মাণ কাজের মেয়াদ কতদিন বৃদ্ধি করা হয়েছে এবিষয়ে আমি সঠিক বলতে পারছি না”।

একাডেমিক ভবনটি কি ভাবে সজ্জিত করা হবে এবং কোন কোন অনুষদকে এই ভবনে স্থানান্তর করা ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে-এ সকল বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস শাখার পরিচালক প্রফেসর ড. এ. টি. এম. শফিকুল ইসলাম বলেন, “নির্মণাধীন ১০ তলা একাডেমিক ভবনের বিভিন্ন তলায় কি ভাবে সাজানো হবে বা কোন কোন অনুষদের জন্য নির্ধারিত করা হবে এবিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করো”। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ তলা একাডেমিক ভবন কবে নাগাদ উদ্বোধন হতে পারে এবং কিভাবে একাডেমিক ভবনেটি সজ্জিত করা হবে এসকল সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মোঃ সাইফুর রহমান বলেন, “আমি ১০ তলা একাডেমিক ভবনের বিষয়ে কিছুই জানি না এবং আমার কাছে এবিষয়ে কোন কাগজপত্র নেই। আমি ১০ তলা একাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজ বিষয়ক সংশ্লিষ্ট কোন মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলাম না। 

অনেকদিন আগে শুধু একবার শুনছিলাম যে ১০ তলা একাডেমিক ভবনের বিভিন্ন বিষয় দেখভাল করার জন্য কয়েকজন নিয়ে একটা কমিটি গঠন করা হয়েছিলো, তবে কমিটিতে কে আছে না আছে এবিষয়ে বিস্তারিত কিছুই জানি না। তাই, ভবনটি কবে উদ্বোধন হবে এবিষয়ে ডকুমেন্টস ছাড়া আমার মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তবে এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ল্যানিং ডেভেলপমেন্ট এন্ড ওয়ার্কশ সেকশন ও ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশন যেহেতু সংশ্লিষ্ট একাজের দায়িত্বে আছে এবং এখনো দায়িত্ব হস্তান্তর করে নি, তাই সেখানে যোগাযোগ করলে বেশি ভালো হবে"।

নির্মাণ কাজের বর্তমান অবস্থা, নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ও কবে নাগাদ এই একাডেমিক ভবনটি শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত বা উদ্বোধন হবে এই সকল সার্বিক বিষয় নিয়ে জানতে চাওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার পরিচালক সুপারিন্টেন্ডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মোঃ তারিকুল ইসলাম বলেন," নির্মণাধীন দশ তলা বিশিষ্ট এই একাডেমিক ভবনের কাজ মোটামুটি শেষ পর্যায়ে। বড় ধরনের তেমন কাজ বাকি নাই শুধু লিফটগুলো বসানো বাকি রয়েছে। 

১০ তলা একাডেমিক ভবনে মোট ৭টি লিফট বসানো হবে, এটা একটা সময়ের ব্যাপার। সব কিছু ঠিক থাকলে এই মাসের মধ্যে  কিংবা সর্বোচ্চ আগামী নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে নির্মাণাধীন এই একাডেমিক ভবনের কাজ সম্পন্ন হবে আশা করি। তবে এই একাডেমিক ভবন কবে নাগাদ শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত বা উদ্বোধন করা হবে এবং কোন কোন অনুষদ স্থানান্তর করা হবে এবিষয়ে আমি কিছু জানি না"।

উল্লেখ্য, নির্মাণাধীন এই ১০ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবনের নাম এখনো চূড়ান্ত হয় নি। দশ তলা বিশিষ্ট এই একাডেমিক ভবনটি প্রতিটি তলা ৪ হাজার স্কয়ার মিটার নিয়ে মোট ৪০ হাজার স্কয়ার মিটার জায়গায় নিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। গবেষণা ও ক্লাসরুম সংকট সমাধানে ১০ তলা বিশিষ্ট এই একাডেমিক ভবনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য থাকছে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা। প্রতিটি তলায় যাতায়াতের জন্য থাকছে উন্নতমানের লিফট ৭ টি লিফট। প্রতিটি তলায় থাকবে ক্লাস রুম ও ল্যাব। ডীন, চেয়ারম্যান ও অন্যান্য শিক্ষকদের জন্য থাকবে নিজস্ব চেম্বার। 

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য নিচ তলায় থাকছে অত্যাধুনিক কেন্দ্রীয় গবেষণাগার সুবিধা। হাবিপ্রবি’র অত্যাধুনিক এই কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে থাকবে ডিএনএ ও আরএনএ এক্সট্রাকশন রুম, জেল ডকুমেন্টেশন রুম, পিসিআর ও আরটি-পিসিআর রুম, উন্নতমানের রেফ্রিজারেটর (-২০ ডিগ্রি সে.), বায়োসেফটি ক্যাবিনেট লেভেল-২, রেফ্রিজারেটেড টেবিল টপ সেন্ট্রিফিউজ, ভরটেক্স মিক্সার, ন্যানো ড্রপ ওয়ান মাইক্রোভলিউম ইউভি-ভিস স্পেক্ট্রোফটোমিটার, বেঞ্চ টপ পিএইচ মিটার, জিনোম সিকুয়েন্সিং রুমের যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি।

এছাড়াও নিচতলায় শিক্ষার্থীদের জন্য থাকছে উন্নতমানের ক্যাফেটেরিয়া ও শিক্ষার্থীরা ক্লাস শেষে পড়াশোনা সম্পর্কে বিভিন্ন আলোচনা ও ক্লাসের অবসর সময়ে বিনোদনের জন্য থাকছে স্টুডেন্ট গেদারিং পয়েন্ট। ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য থাকছে পৃথক পৃথক নামাজ ঘর ও ওজুখানার ব্যবস্থা এবং ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য থাকছে আলাদা কমনরুমেরও ব্যবস্থা। 

এছাড়াও থাকছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য সেমিনার রুম এবং কনফারেন্স রুম। অনলাইন নির্ভর এই প্রযুক্তির যুগে এই একাডেমিক ভবনে থাকছে নন-স্টপ ওয়াইফাই সুবিধা। তবে ৪র্থ তলা ডিজাইনিং সহ বিভিন্ন সুবিধার জন্য আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টের জন্য নির্ধারিত করা হয়েছে।এছাড়াও প্রাধান্যের দিক দিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের জন্য ইঞ্জিনিয়ারিং হল রুম হওয়ার কথা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য থাকছে অনুষদভিত্তিক গ্রন্থাগার। এছাড়াও অগ্নি নির্বাপণের জন্য থাকছে উন্নতমানের ব্যবস্থা এবং সাব স্টেশন। 


আরও পড়ুন