কুতুবদিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

দায়িত্বে অবহেলা ও অক্সিজেনের অভাবে নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ

news paper

নজরুল ইসলাম, কুতুবদিয়া

প্রকাশিত: ৭-১০-২০২২ দুপুর ৩:৫৩

19Views

কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বে অবহেলা ও অক্সিজেনের অভাবে এক নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। নবজাতকের পিতা দায়িত্বরত চিকিৎসকের অনুপস্থিতি ও কর্মচারীদের ব্যবসায়িক মনোবৃত্তির অভিযোগ এনে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কক্সবাজার সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ধুরুং ছমদিয়া আলিম মাদ্রাসার সিনিয়র সহকারী শিক্ষক জাকের হোসাইন গত ১ অক্টোবর নবজাতকের বাবা হন। ভূমিষ্ঠের পর  নবজাতক কয়েকবার কান্না করে। কিছুক্ষণ পর নবজাতকের শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা দেখা দিলে তিনি নবজাতক নিয়ে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। কিন্তু জরুরি বিভাগে কোনো চিকিৎসক না পেয়ে তিনি মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। এতে দীর্ঘ সময়ক্ষেপণ হয়। নিরুপায় হয়ে তিনি একজন নার্সকে জরুরিভাবে অক্সিজেন দিতে অনুরোধ করেন। নার্স হাসপাতালে অক্সিজেন নেই জানিয়ে বািইরে থেকে ব্যবস্থা করতে বলেন। ফলে তিনি আরো বেকাদায় পড়ে যান। চারদিকে তিনি পাগলের মতো অক্সিজেন খুঁজতে থাকেন। এদিকে নবজাতকের অবস্থা খারাপ হতে থাকে। যখন তিনি অক্সিজেন নিয়ে হাসপাতালে আসেন ততক্ষণে একজন মহিলা চিকিৎসক নবজাতককে মৃত বলে ঘোষণা দেন। এতে তিনি বাকশক্তি হারান।

অভাগা পিতা নবজাতকের এই মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছেন না কোনোভাবেই। পিতৃত্বের স্বাদ পেয়েও যেন অধরা থেকে গেল সন্তানের ভালোবাসা। তার দাবি, হাসপাতালে অক্সিজেন থাকা সত্ত্বেও দেয়া হয়নি। চিকিৎসক ডিউটির সময়ে দায়িত্ব পালন না করে অতিরিক্ত আয়ের জন্য হাসপাতালের বাইরে থাকায় তার সন্তান চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু হলে নবজাতককে বাঁচানো যেত। তিনি বিষয়টি সঠিক তদন্তসাপেক্ষে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।

রোগীর আত্মীয়স্বজন ও সচেতন মহল জানিয়েছেন, কুতুবদিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও কর্মচারীদের স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। দিন দিন কুতুবদিয়া হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবার মান তলানিতে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা। হাসপাতালে তৈরি হওয়া সিন্ডিকেট ভেঙে শৃঙ্খলা ফেরাতে যথাযথ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সচেতন মহল। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তও দাবি করেছেন তারা।

হাসপাতালে অক্সিজেনের না থাকার বিষয়ে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রেজাউল হাসান জানান, হাসপাতালে অক্সিজেনের যে সেন্ট্রাল লাইন আছে তা শুধু বিদুৎ থাকলে (রাতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে) সরবারহ দেয়া যায়। সিলিন্ডারের অক্সিজেন শেষ হলে চট্টগ্রাম থেকে আনতে হয়। সিলিন্ডার আনতে সরকারিভাবে যে পরিবহন খরচ দেয়া হয়, ব্যয় হয় তার চেয়ে বেশি। এক সময় তিনি আর সাবেক ইউএইচএন্ডএফপিও অতিরিক্ত খরচ পকেট থেকে দিয়ে অক্সিজেনের সিলিন্ডার মজুদ রাখতেন। এখন কেউই অতিরিক্ত খরচগুলো বহন করতে না চাওয়ায় হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শাহিন আবদু রহমান জানিয়েছেন, বাচ্চাটি বাসায় ট্রেডিশনাল ডেলিভারির মাধ্যমে জন্মগ্রহণ করেছিল। শিশুটিকে মৃত অবস্থায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়েছে।


আরও পড়ুন