সাটুরিয়ায় হলুদ বরণে সেজেছে মাঠ: বাম্পার ফলনের স্বপ্ন সরিষা চাষীদের

news paper

হৃদয় মাহমুদ রানা, মানিকগঞ্জ

প্রকাশিত: ২২-১২-২০২২ দুপুর ১:৫৬

111Views

আবহমানকাল থেকে মানুষ ভোজ্য তেল হিসেবে সরিষার তেল ব্যবহার করে আসছেন। সরিষা তেল দিয়ে ভর্তা,ভাজি,মুড়ি সবারই পছন্দ। মাঝখানে সয়াবিন তেলের কারনে সরিষার তেল ব্যবহারে ভাটা পড়েছিল। কিন্তু ইদানিং পুষ্টিবিদ, ডাক্তার সবাই সয়াবিন তেলে ট্রান্সফ্যাটের কারনে সরিষা তেল ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন এবং স্বাস্থ্য সচেতন অনেকেই এখন আবার সরিষার তেলের দিকে ঝুঁকছেন। তাছাড়া সয়াবিন তেল আমদানি করতে সরকারকে বছরে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হয়।

এসকল বিষয় বিবেচনা করে কৃষি ক্ষেত্রে সরিষার উৎপাদন বাড়াতে ইতোমধ্যে প্রয়োজনিয় প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় সাটুরিয়া উপজেলায় সরিষার আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে প্রয়োজনিয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর। উপজেলায় সরিষা  চাষ শত ভাগ বাস্তবায়নের লক্ষে পর্যায়ক্রমে মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণসহ বীজ ও সার বিনামুল্যে বিতরণ কাজ অব্যাহত রেখেছেন তারা। কৃষি অধিদপ্তরের দাবি উপজেলায় সরিষার চাষ শতভাগ নিশ্চিত করতে পারলে, সরিষার তেলের চাহিদা মিটিয়ে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে।

এদিকে উপজেলা কৃষি অফিসের তরারকি ও সহযোগীতায় উপজেলায় সরিষার আবাদ অনেক ভাল হয়েছে। উপজেলার কৃষকদের মুখে ফিরেছে হাসি। তারা কৃষিতে আশার স্বপ্ন দেখছেন। উপজেলার কৃষকরা আশা করছেন আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার তারা সরিষার ভাল ফলন উৎপাদন করতে পারবে। 

বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ। যেদিকে চেয়ে দেখি শুধু হলুদ আর হলুদ বরণে সেজেছে প্রকৃতি। চলতি মৌসুমে সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছেন উপজেলার কৃষকরা। তাদের দাবী, পুরো আবহাওয়া সরিষা চাষের অনুকূলে থাকলে সরিষার বাম্পার ফলন পাওয়া যাবে। আর যদি সরিষার বর্তমান বাজার অব্যাহত থাকে তাহলে এবার সরিষার দামও ভালো পাওয়ার আশা করছেন উপজেলার সরিষা চাষিরা।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়,কৃষকদেরকে সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করার জন্য গ্রুপ মিটিং,উঠান বৈঠক,মাঠ দিবসে নানা ভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। এই কাজ বাস্তবায়ন করার জন্য রোপা আমন মৌসুমে কৃষকদেরকে বিনামূল্যে স্বল্পজীবন কালীন উচ্চ ফলনশীল ব্রিধান ৭৫, বিনাধান ১৭ জাতের ৫মে.টন বীজ বিনামূল্যে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে যাতে করে কৃষক দ্রত ধান কেটে  আগাম সরিষা চাষ করতে পারেন। এরপর রোপা আমন ধান কাটার পরপরই কৃষকদেরকে উন্নত জাতের প্রায় ১৫০০ কেজি সরিষা বীজ ( বারি সরিষা ১৮,বারি সরিষা ১৪) কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। যার ফলে রবি ২০২২-২৩ মৌসুমে সাটুরিয়ার গত বছরের তুলনায় ৫৪৫ হেক্টর (৩৮%  বেশী ) বেশী আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া ভলো থাকলে গত বছরের তুলনায় প্রায় ৮৬০ মে.টন বেশী সরিষা উৎপাদন হবে যা থেকে প্রায় ৩৭০ হাজার লিটার সরিষার তেল পাওয়া যাবে যার বাজারমুল্য প্রায় ১০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। তাছাড়া যে পরিমান বাইপোডাক্ট পাওয়া যাবে তার মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর।

ধুল্যা গ্রামের মনোয়ার হোসেন ,গফুর ও রজ্জব আলী জানান,তারা জমিতে বছরে শুধু দুইটা ধান (বোরো ও রোপা আমন) করতেন। কৃষি বিভাগের পরামর্শে তারা ধুল্যা  গ্রামের পুরো মাঠ জুড়ে (৩০০ বিঘা) বোরো ধানের পর হাইব্রিড আউশ ধান করে তারপর বারি সরিয়া ১৮ চাষ করেছেন। আউশ ধান পেয়েছেন বিঘায় ২২ মন এবং সরিষা আবাদ খুব ভালো হয়েছে এবং ভালো ফলন আশা করছেন তারা।

ফুকুরহাটি গ্রামের মোঃ রুবেল হোসেন, বাবুল হোসেন জানান, যে তারা কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবার প্রথম সরিষা আবাদ করেছেন। জান্না ডিপের মোড়ের বেলাল হোসেন, লোকমান এবং সাখাওয়াত হোসেন জানান, যে তারা এ মাঠে বোরো ও রোপা আমন ধান  ব্যতীত কখনো সরিষা চাষ করতেন না কিন্তু কৃষি বিভাগের পরার্মশে জান্না ডিপের  মাঠে সবাই সরিষা চাষ করেছেন। এখন তারা একই জমি থেকে দুটো ধান এবং একটি সরিষা ফসল পাবেন।

সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ খলিলুর রহমান জানান, আগামী তিন বছরে ভোজ্য তেল আমদানি  ৪০% কমিয়ে আনার জন্য জাতীয় পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি  অফিস, আগামী তিন বছরে তেল ফসল বিশেষ করে সরিষা  আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এই পরিকল্পনার আওতায় ২০২২-২৩ মৌসুমে সরিষা আবাদ বৃদ্ধির বিশেষ কার্যক্রম হাতে  নিয়েছে। এরই আওতায় উপজেলার অনাবাদি পতিত জমিতে  সরিসষার চাষ, বোরো- রোপা আমন শস্য বিন্যাসে সরিষা ফসল অর্ন্তভূক্তির মাধমে সরিষা (নতুন শস্য বিন্যাস সরিষা-বোরো-রোপা আমন) আবাদ বৃদ্ধি,তামাক বাদ দিয়ে সেখানে সরিষা চাষ, আন্তফসল হিসেবে সরিষার  চাষ, ফল বাগানে সরিষার চাষ ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহনের ফলে সরিষার আবাদ গত বছরের তুলনায় ৫৪৫ হেক্টর বৃদ্ধি পেয়েছে।


আরও পড়ুন