যানবাহন সংকটে নাকাল নগরবাসী

news paper

মো. আব্দুর রব সুজন

প্রকাশিত: ১৬-১-২০২৩ রাত ৮:২২

16Views

বিশ্ব ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের বহনকারী যানবাহনের চাপে দুপুর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে তীব্র হয় যানজট। একই সঙ্গে গণপরিবহন সঙ্কট ছিল অসহনীয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও গাড়িতে উঠতে পারেনি বিপুল মানুষ। তারা বাধ্য হয়ে বিকল্প যানবাহন সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেল কিংবা পিকাপে চড়েছেন। প্রায় সব বাসেরই গেট বন্ধ ছিল। সেগুলোতে ছিল ইজতেমার রিজার্ভ যাত্রী। ভাগ্য গুণে কেউ বাসে উঠতে পারলেও সিট পাননি। বাধ্য হয়ে কেউ কেউ বাসায় ফিরেছেন। সব মিলিয়ে নাকাল ছিল রাজধানীবাসী।

সরোজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রোববার সকাল থেকে মহাখালী থেকে বিমানবন্দর-উত্তরা হয়ে গাজীপুর পর্যন্ত এমন চিত্র দেখা যায়। তবে দুপুরে ছিল তীব্র যানজট। উত্তরা থেকে মহাখালী, রামপুরা, মিরপুর ও তেজগাঁও এলাকায় তীব্র যানজট দেখা যায়। এছাড়া রাজধানীর মতিঝিলসহ পুরো শহরে ছিল যানজট। বিশেষ করে মহাখালী ও প্রগতি সরণি থেকে বিমানবন্দর হয়ে উত্তরাগামী রাস্তায় যানচলাচল একদম বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি কোথাও কোথাও প্রধান সড়ক থেকে অলিগলিতেও ছিল যানজট। বিমানবন্দর সড়কের উন্নয়নমূলক কাজ এবং ইজতেমার কারণে ইপিজেড-আশুলিয়া-টঙ্গী সড়ক বন্ধ করে দেয়ায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তবে যানবাহন চলাচল সচল রাখার চেষ্টা করেন ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা। সবমিলে মহাখালী থেকে বিমানবন্দর সড়ক ও উত্তরামুখী মানুষের কষ্টের অন্ত ছিল না। ঘণ্টা পর ঘণ্টা গাড়িতে বসে থেকে অতিষ্ঠ হয়ে অনেক যাত্রী হেঁটে গন্তব্যের দিকে রওনা হন। এছাড়া বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের পাশাপাশি অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে নিতেও ধকল সইতে হয়েছে।

উত্তরা থেকে ফার্মগেটের দিকে আসা শহিদুল ইসলাম বলেন, উত্তরা থেকে ফার্মগেট যাওয়ার জন্য বাসে উঠেছি। উত্তরা থেকে মহাখালী পর্যন্ত আসতে প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লাগলো। কিন্তু মহাখালী ফ্লাইওভারের কাছে এসে গাড়ি আর নড়ছে না।  বাধ্য হয়ে হেঁটেই অফিসে রওনা হয়েছি। এই যানজট নিরসনে বিকল্প চিন্তা করার দরকার ছিল। তাহলে এত দুর্ভোগে পড়তে হতো না আমাদের মত সাধারণ মানুষের।

বেলা তখন এগারোটা, ফরিদপুরের মাকে নিয়ে যাচ্ছিলেন ডাক্তার দেখাতে রাজধানীর শ্যামলি এলাকায় যাচ্ছিলেন আরমান। তিনি বলেন, ফরিদপুর থেকে এসে গাড়ি পারিবর্তন করে গুলিস্তান থেকে শাহাবাগ পর্যন্ত আসতে তাদের দুই ঘন্টা সময় লেগেছে। অসুস্থ মাকে নিয়ে কখন শ্যামলী পৌঁছাবো সে চিন্তা। এ সময় আরমানের অসুস্থ মা বলেন, এমন দিন যেন কারও জীবনে না আসে। যানজটে আমার খুব কষ্ট হয়েছে। সঠিক চিকিৎসা নিয়ে গ্রামে দ্রুত ফিরতে পারলেই বাঁচি।

কাশেম নামের একজন ব্যবসায়ী বলেন,  সকাল দশটায় গুলশান থেকে পল্টন আসার জন্য বের হয়েছি। কিন্তু এই পথে আমার তিন ঘণ্টায় আসতে হয়েছে। পথে থেমে থেমে প্রাইভেট গাড়ি নিয়ে ছুটে আসেন পল্টনে। সপ্তাহে তিন দিন হাতিরঝিল হয়ে পল্টন এলাকায় যাতায়াত করি। কিন্তু আজকের (রোববার) যানজট বিপাকে ফেলে দিয়েছিল। একজন বিদেশি বায়ারের সঙ্গে জরুরি মিটিং ছিল সকাল ১১টায়। কিন্তু সেটি ধরতে পারিনি। পরে সেই ব্যক্তির কাছে ক্ষমা চাইতে হয়েছে।

মিরপুর ১০ নং এলাকায় কথা হয় মাসুম নামে আরেকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তিনি বলেন, জরুরি কাজে সকাল সকালেই বের হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম রাস্তাঘাট ফাঁকা পাবো। পুরান ঢাকা থেকে মিরপুর ১০ নং আসতে আমার সময় লাগেছে চার ঘণ্টা। যে কাজের জন্য আসছিলাম সে কাজ করে কখন বাসায় ফিরবো তা বলা যাচ্ছে না।

ইজতেমা থেকে আসা মো. কালাম মিয়া জানান, দুদিন আগে বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিতে টঙ্গীতে এসেছিলেন। এখন আখেরি মোনাজাত শেষে রাজধানীর কদমতলী যাবেন। কিন্তু তিনি কোনো যানবাহন পাচ্ছেন না। দু-একটা মোটরসাইকেল পেলেও ভাড়া বেশি। যানবাহন নেই। যে দু-একটা আছে বাড়তি ভাড়া চাচ্ছে।

প্রগতি সরণির মশিউর রহমান নামের একজন রিকশা চালকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘এমন জ্যাম আমি আমার জীবনেও দেহি নাই। সকাল থাইক্কাই জ্যাম শুরু হইছে। সারা দিনে খ্যাপই মারতে পারতাছি না। বিশ্বরোড, নদ্দা, বাড্ডা-পুরাডা জ্যাম।’


আরও পড়ুন